পুলিশ ভেরিফিকেশন কী?
পুলিশ ভেরিফিকেশন (Police Verification) হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যার সাহায্যে একজন বাংলাদেশী নাগরিকের দাপ্তরিক ক্ষেত্রে দেওয়া সকল তথ্য সঠিক কিনা তা যাচাই করা হয়। জীবনের প্রতিটি ধাপেই একজন নাগরিকের বিভিন্ন যায়গায় নিজের সম্পর্কে তথ্য দিতে হয়। কিন্তু অনেক সময়ই সেই সকল তথ্য যে পুরোপুরি সত্য ও নির্ভুল এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের একটি নিশ্চয়তা প্রয়োজন। সেই নিশ্চয়তা বিধান করে থাকে বাংলাদেশ পুলিশ। মূলত পুলিশ প্রশাসন কর্তৃক আপনার সকল তথ্য নিশ্চিত হওয়া ও আপনার সামাজিক অবস্থান এবং পূর্বের ইতিহাস যাচাই করাকেই বলে পুলিশ ভেরিফিকেশন।
যেসব ক্ষেত্রে পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রয়োজন
বাংলাদেশী নাগরিকদের অনেকেই জানেন না যে ঠিক কখন পুলিশ ভেরিফিকেশনের প্রয়োজন পড়তে পারে। সেজন্যই অনেক নাগরিক নানা রকম অপ্রীতিকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হন। জীবনে চলতে হলে অনেক গূরুত্বপূর্ণ ধাপেই প্রয়োজন পুলিশ ভেরিফিকেশনের।
যেসব কাজে পুলিশ ভেরিফিকেশনের প্রয়োজন পরেঃ
- চাকরি
- পাসপোর্ট
- লাইসেন্স
চাকরি প্রাপ্তি
সরকারি চাকরি কিংবা আধাসরকারি ও স্বায়ত্বশাসিত চাকরির ক্ষেত্রে সাধারণত পুলিশ ভেরিফিকেশন করতে হয়। বিশেষত সরকারি চাকরির একটি প্রধান ধারা হলো বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে সরকারি চাকরিতে যোগদান। একজন পূর্ণাঙ্গ বিসিএস ক্যাডার হিসেবে গেজেটভুক্ত হওয়ার আগে অবশ্যই আপনার বর্তমান ও অতীতের সকল তথ্য বিশেষ ভাবে যাচাই করা হবে। তার পাশাপাশি নন-ক্যাডারভুক্ত অন্যান্য সরকারি চাকরি, স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান যেমন বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি ও আধাসরকারি চাকরিতেও পুলিশ ভেরিফিকেশনের প্রয়োজন পড়ে। তাই চাকরির আবেদন ফরম পূরণ করার আগেই বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। এমনকি অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নিরাপত্তাজনিত কারণেও প্রার্থীর পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেটের প্রয়োজন বোধ করে।
পাসপোর্ট প্রাপ্তি
বাংলাদেশের নাগরিকদের যেসকল কারণে পুলিশ ভেরিফিকেশন করাতে হয় তার মধ্যে অন্যতম প্রধান কারণ এটি। একজন নাগরিকের ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে হলে নিজের সকল তথ্য নিশ্চিত বা যাচাই বাছাই করতে হয়; যা পুলিশ প্রশাসন কর্তৃক ভেরিফিকেশনের মাধ্যমে করা হয়ে থাকে। আর বর্তমানে এই ভেরিফিকেশন ছাড়া পাসপোর্ট পাওয়াটা এক কথায় অসম্ভব বলা চলে।
লাইসেন্স প্রাপ্তি
সরকার কর্তৃক ইস্যু করা বিভিন্ন ধরণের লাইসেন্স নেওয়ার পূর্বে অবশ্যই আপনাকে পুলিশ ভেরিফিকেশন করাতে হবে। যার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত হবে যে আপনি লাইন্সেন্স ব্যবহার করে অন্যায় কিছু করবেন না।
যেসকল লাইসেন্সের জন্য প্রয়োজন পরেঃ
(১) ড্রাইভিং লাইসেন্স।
(২) অস্ত্রের লাইসেন্স।
এছাড়াও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা (কেপিআই) ব্যবহার করতে পুলিশের ভেরিফিকেশন প্রয়োজন হবে।
পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট পাওয়ার শর্তাবলী
পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট পাওয়ার জন্য প্রতিটি নাগরিককে কিছু নির্দিষ্ট শর্তাবলী পূরণ করতে হয়, যেমনঃ
- প্রার্থীর বর্তমান ও স্থায়ী দু’টি ঠিকানাই বাংলাদেশ পুলিশের আওতাধীন হতে হবে। অর্থাৎ যেকোনো মেট্রোপলিটন পুলিশ অথবা জেলা পুলিশের এখতিয়ারভুক্ত অঞ্চলে প্রার্থীর বাড়ি হলে শুধু তবেই তিনি পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট পেতে পারেন।
- এম আর পি অর্থাৎ মেশিন রিডেবল পাসপোর্টে যদি ঠিকানা উল্লিখিত না থাকে তবে ঠিকানা প্রমাণের জন্য জাতীয় পরিচয় পত্র / জন্ম নিবন্ধন সনদ / ওয়ার্ড কাউন্সিলর এর সনদ পত্রের একটি ফটোকপি দাখিল করতে হবে। এক্ষেত্রে ফটোকপিটি অবশ্যই ১ম শ্রেণীর সরকারি গেজেটেড কর্মকর্তা কর্তৃক সত্যয়িত করা থাকতে হবে।
- যেই পাসপোর্ট নম্বরটি দিয়ে পুলিশ ভেরিফিকেশনের জন্য আবেদন করবেন তা অবশ্যই অব্যাবহৃত হতে হবে। একই নম্বর দিয়ে পূর্বে ভেরিফিকেশনের চেষ্টা করা হলে তা ধরা পড়বে ও আবেদন গৃহীত হবে না। এছাড়া আগের আবেদনের ড্রাফট কপি থাকলেও আবেদন করতে পারবেন না। এক্ষেত্রে আগের ড্রাফট আবেদনটি ডিলিট করে নতুন আবেদন করুন। অপাগারতায় পুলিশ হেল্প লাইনের সাহায্য নিন।
- বিদেশে থাকলেও পুলিশ ভেরিফিকেশন করা সম্ভব। সেক্ষেত্রে ঐ বাংলাদেশী নাগরিককে তিনি যেই দেশে থাকেন সেই দেশের দূতাবাস অথবা কমিশনের সাহায্যে নিজের পাসপোর্টের তথ্য পাতার সত্যায়িত কপি দাখিল করতে হবে।
এছাড়াও কোন বিদেশী নাগরিকও চাইলে অনলাইনে আবেদন করতে পারেন। উল্লেখ্য যে, আপনি যদি সাধারণ চাকরির জন্য পুলিশ ভেরিফিকেশন করাতে চান তাহলে অনলাইনে আবেদন করার কোন প্রয়োজন নেই। সেক্ষেত্রে সরাসরি জেলা অথবা সিটি এসবি শাখায় যোগাযোগ করলেই হবে। তবে বিসিএস পরীক্ষার্থীদের পুলিশ ভেরিফিকেশোন মনোনয়ন পদ্ধতির অংশ হিসেবেই হয়।
পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেটের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র/ডকুমেন্টস
- অনলাইনে সঠিক ভাবে পূরণকৃত আবেদনপত্র।
- ১ম শ্রেণীর গেজেটেড কর্মকর্তা (গ্রেড ১ থেকে গ্রেড ৯) কর্তৃক সত্যায়িত পাসপোর্টের তথ্য পাতার স্ক্যানড কপি। অথবা বিদেশে অবস্থানকারী যাদের বাংলাদেশি পাসপোর্ট রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে সে দেশের বাংলাদেশ দূতাবাস দ্বারা সত্যায়িত পাসপোর্টের তথ্য পাতার স্ক্যানড কপি, কিংবা বিদেশি নাগরিকদের নিজ দেশের জাস্টিস অব পিস কর্তৃক সত্যায়িত তথ্য পাতার স্ক্যানড কপি।
- বাংলাদেশী নাগরিকদের স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানার বিদ্যুৎ বিল / পানির বিল / ফোন বিল ইত্যাদ কাগজ। ঠিকানা যাচাই এর সময় এসবের প্রয়োজন পড়তে পারে।
- আবেদন ফি পরিশোধ করে তার ট্রেজারি চালান দাখিল করতে হবে।
পুলিশ ক্লিয়ারেন্স আবেদন ফরম
পুলিশ ক্লিয়ারেন্স আবেদন ফরম পূরণের ক্ষেত্রে অনেকেই ফরমটি আগে থেকে দেখতে পছন্দ করেন। এতে করে কি কি তথ্য কোথায় পূরণ করতে হবে তা নিয়ে পরিষ্কার ধারণা তৈরি হয়। ফলে কোন ভুল হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে আসে। লেখার এই অংশে একটি পুলিশ ভেরিফিকেশন ফরম এর নমুনা শেয়ার করা হলোঃ
পুলিশ ভেরিফিকেশন ফরম পিডিএফ ডাউনলোড করুন এখান থেকেঃ Police Verification Form (1).pdf
পুলিশ ভেরিফিকেশনের আবেদনের নিয়মাবলী
পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেটের জন্য আবেদন করতে চাইলে এর নিয়মাবলী সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকা প্রয়োজন। অনেকেই সঠিক ধারণা না নিয়ে আবেদন করতে যেয়ে ভুল করে ফেলেন। যা সংশোধন করা পরবর্তীতে কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়।
একাউন্ট খোলা
পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট পেতে হলে আগে বাংলাদেশ পুলিশের ভেরিফিকেশন সংক্রান্ত সাইটের একাউন্ট রেজিস্ট্রেশনের জন্য এই লিংকে প্রবেশ করতে হবে। প্রবেশ করার পর নিম্নের মতো একটি ইন্টারফেস দেখতে পারবেন।
এই ইন্টারফেসটিতে আপনার নাম, ইমেইল এড্রেস, মোবাইল নম্বর, ভোটার আইডি কার্ড নম্বর ও একটি নতুন পাসওয়ার্ড দিয়ে একটি একাউন্ট রেজিস্টার করতে হবে। তবে আবেদনকারী বিদেশী বা বাচ্চা হলে জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বরের জন্য নির্ধারিত ঘরের পাশে ‘Foregin/Child’ বাটনে টিক দিতে হবে। নিচে ডান দিকের ‘Continue’ বাটন চাপ দিলে প্রাথমিক ভাবে আপনার একাউন্ট খোলা হবে।
একাউন্ট নিশ্চিতকরণ
প্রাথমিক ভাবে একাউন্ট খোলার পর অবশ্যই আপনাকে একাউন্ট নিশ্চিত করতে হবে। নাহলে এই একাউন্ট দিয়ে কোন কাজ করতে পারবেন না। একাউন্ট ভেরিফাই তথা নিশ্চিত করতে ফোনের ম্যাসেজ অপশনে গিয়ে ‘২৬৯৬৯’ নম্বরে ম্যাসেজ পাঠিয়ে একাউন্টের ফোন নম্বরটি নিশ্চিত করতে পারবেন। তবে এক্ষেত্রে ইমেইল এড্রেস এর সাহায্যে একাউন্ট নিশ্চিত করা ভাল। কারণ ইমেইলে নিশ্চিতকরণের যে লিংক আসবে সেখানে ক্লিক করলে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই আপনার একাউন্ট সক্রিয় হয়ে যাবে।
সফল ভাবে একাউন্ট নিশ্চিতকরণের পর এবার নিচের ধাপ গুলো অনুসরণ করে আপনি পুলিশ ভেরিফিকেশনের জন্য আবেদন করতে পারেন।
ধাপ-১ঃ Personal Information
এই ধাপে আপনার সমস্ত ব্যাক্তিগত তথ্য পুলিশের ডাটাবেজে প্রবেশ করাতে হবে। পাসপোর্ট নম্বর প্রবেশ করালে আপনাকে একটি রেফারেন্স কোড দেওয়া হবে। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পরবর্তীতে হেল্প লাইনে কল দিলে এই কোডটি চাইবে, তাই এটি সংরক্ষণ করুন।
ধাপ-২ঃ Personal Address
এই ধাপে আবেদনকারীকে তার স্থায়ী ও বর্তমান দু’টি ঠিকানাই দিতে হবে। মনে রাখবেন, পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হবে আপনার বর্তমান ঠিকানায়। তাই যদি স্থায়ী ঠিকানাতেই করাতে চান তাহলে স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা দু’টিই এক দিন।
ধাপ-৩ঃ Documents
আবেদনের এই ধাপে আপনাকে প্রয়োজনীয় সকল কাগজের স্ক্যান কপি আপলোড করতে হবে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল পাসপোর্টের তথ্য পাতার স্ক্যান কপি। কপিটি অবশ্যই স্পষ্ট হতে হবে এবং এর সাইজ ১৫০ কিলোবাইটের কম থাকতে হবে। অনেকেই ১৫০ কিলোবাইটের চেয়ে বড় ফাইল আপলোড দেয় বলে আপলোড সম্পন্ন হয় না।
ধাপ-৪ঃ Confirmation
এই ধাপে আপনি যে সকল তথ্য দিয়েছেন তা আপনার সামনে উপস্থাপন করা হবে। প্রতিটি তথ্যই গুরুত্বপূর্ণ ও সব কয়টিই পরে যাচাই করা হবে। তাই অতি সাবধানতার সাথে প্রতিটি তথ্য ও তার বানান খুটিয়ে খুটিয়ে পরীক্ষা করুন। একাধিকবার পরীক্ষা করে নিশ্চিত হলে এরপরে আবেদনটি সাবমিট করুন।
ধাপ-৫ঃ Payment
আবেদনটি প্রাথমিক ভাবে সাবমিটের পরে এবার আবেদন ফী দেওয়ার পালা। যতক্ষণ অবধি ফি দেওয়া হবে না ততক্ষণ অবধি পুলিশ ভেরিফিকেশনের প্রক্রিয়া শুরু হবে না। পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেটের জন্য ফি হল ৫০০ (পাঁচশ) টাকা মাত্র। যদি কোন কারণে পরে ফি দিতে চান তাহলে পিসিসি এর সাইটে লগ ইন করে ‘My Account’ এ ক্লিক করলেই একটি ড্যাশবোর্ড (Dashboard) পাবেন। ড্যাশবোর্ড থেকে ‘Pending for Payment’ এ ক্লিক করলেই আপনি পরবর্তী প্রক্রিয়ায় যেতে পারবেন।
পুলিশ ভেরিফিকেশনের ফি দুই ভাবে দেওয়া সম্ভব। বাংলাদেশ ব্যাংক / সোনালী ব্যাংকের যে কোন শাখা থেকে (১-৭৩০১-০০০১-২৬৮১) কোডে ৫০০ টাকা মূল্যমানের ট্রেজারি চালান অথবা অনলাইনে ক্রেডিট কিংবা ডেবিট কার্ডের সাহায্যে ফি প্রদান করতে পারেন। চালানের তথ্য ইনপুট করার সময় যে তথ্য গুলো ইনপুট করতে হবেঃ (১) Bank Name, (২) Bank District, (৩) Branch, (৪) Chalan Date, (৫) Scroll No। এক্ষেত্রে যথাক্রমে কোন ব্যাংকের অধীনে চালান জমা দিয়েছেন তার নাম (বাংলাদেশ ব্যাংক অথবা সোনালী ব্যাংক); ব্যাংকটি যেই জেলায় অবস্থিত, ব্র্যাঞ্চের নাম, চালান জমা দেওয়া তারিখ ও স্ক্রল নং (ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত একটি নম্বর) এসব তথ্য প্রবেশ করাতে হবে। অতঃপর পাশের নীল ‘Check Chalan, বাটনে ক্লিক করার পর চালান কপির একটি স্পষ্ট ছবি আপলোড করুন। এর সাইজ হতে পারবে সর্বোচ্চ ৩০০ কিলোবাইট।
উল্লেখ্য যে ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়ার পরবর্তী কর্মদিবসে অন্তত বেলা ১১ টার পরে চালান তথ্য ইনপুট করুন। এছাড়া অনলাইনে টাকা জমা দিলেও চালান তথ্য পূরণ করার প্রক্রিয়া একই রকম।
আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে নির্দিষ্ট কিছু ধাপ অতিক্রম করার পরে আপনার কাঙ্খিত সার্টিফিকেটটি পেয়ে যাবেন, নিচে সে সম্পর্কে আলোচনা করা হল।
পুলিশ ক্লিয়ারেন্স অনলাইনে চেক/যাচাই
পুলিশ ভেরিফিকেশনের জন্য আবেদন করার পরে কোন অবস্থায় রয়েছে তার স্ট্যাটাস অনলাইনে যাচাই করা যায়। সরাসরি সাইটে ঢুকে নিজের একাউন্টে লগ ইন করলেই নিচের কোন ধাপে আবেদনটি রয়েছে তা স্পষ্ট ভাবে দেখতে পারবেন এবং সকল ধাপ সম্পন্ন হবার পরে সার্টিফিকেটটি হাতে পাবেন।
যেসকল ধাপ অতিক্রম করার পরে সার্টিফিকেট হাতে পাবেন
আবেদনের ধাপ গুলো শেষ হওয়ার পরেও পুরো প্রক্রিয়ার রয়েছে আরো বেশ কিছু ধাপ। এই ধাপ গুলো সম্পর্কে জানা অত্যন্ত জরুরী কারণ প্রতিটি ধাপের আলাদা তাৎপর্য রয়েছে।
ধাপ-১ঃ Pending for Payment Verification
আপনি আবেদন সাবমিট করে টাকা জমা দেওয়ার পরে আপনার আবেদনের স্ট্যাটাস ‘Pending for Payment’ থেকে ‘Pending for Payment Verification’ এ চলে যাবে। অর্থাৎ টাকা জমা হওয়া ও অন্যান্য প্রাথমিক যাচাই এর প্রক্রিয়া চলছে। এই ধাপের পরে আপনার আবেদন নিম্নোক্ত তিনটি ধাপের যেকোনো একটিতে যেতে পারে।
ধাপ-২ঃ Payment Received
এর অর্থ আপনার আবেদনটিতে প্রাথমিক ভাবে কোন সমস্যা পাওয়া যায় নি এবং এটি সংশ্লিষ্ট থানায় জমা হয়েছে। তবে যদি আপনি ফি প্রদান জনিত কোন গন্ডগোল করেন তাহলে ‘Payment Refused’ নামক স্ট্যাটাস আস্তে পারে এ সমস্যা নানা ধরনের হতে পারে। অনেকেই চালান সংখ্যা ভুল করে। ফলে স্বভাবতই ফি প্রদান ব্যর্থ হয়। এছাড়াও ফি সম্পর্কিত অন্যান্য তথ্য দেওয়ার সময় ভুল করলে বা চালানের ছবি ঝাপসা হলে এ সমস্যা ঘটে থাকে। তাই এই অবস্থা এড়াতে সাবধানতা অবলম্বন করুন।
ধাপ-০৩ঃ Under Verification
এর অর্থ আপনার আবেদনটি এখন পূর্ণাজ্ঞ রুপে যাচাই বাছাই এর কাজ চলছে। এই ধাপে আপনার আবেদনটি সংশ্লিষ্ট পুলিশ অফিস / থানার অধীনে চলে আসে। আপনার পুলিশ ভেরিফিকেশনের জন্য একজন অফিসার দায়িত্ব পান। তিনি আবেদনের সংশ্লিষ্ট সকল তথ্যাবলী যাচাই বাছাই করেন। কি কি তথ্য যাচাই করা হয় সে ব্যাপারে বিস্তারিত লেখার পরবর্তী অংশে রয়েছে। সকল যাচাই বাছাই এর পরে সব কিছু ঠিক থাকলে আপনাকে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট দেওয়া হবে।
ধাপ-০৪ঃ Ready for Print
রেডি ফর প্রিন্ট স্ট্যাটাস এর অর্থ হলো আপনার ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে এবং সার্টিফিকেটটি প্রিন্ট করার জন্য প্রস্তুত হয়েছে। কিন্তু এই ধাপে আবারো সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। সাধারণত আবেদনের তথ্যে কোন ভুল থাকলে তা সাবমিটের পূর্বেই ঠিক করে নেওয়া উচিত। কিন্তু অনেক সময় আবেদনকারি বা তদন্তকারী অফিসার দুই জনের চোখ এড়িয়েই কিছু ভুল থেকে যেতে পারে। যেমন কোন নামের বানান। সেক্ষেত্রে সার্টিফিকেট একবার প্রিন্ট করে ফেললে কোনই লাভ হবে না। তাই এই ধাপে এসে শেষবারের মতো সব কিছু যাচাই করে নিন। কোন ভুল পেলে সংশ্লিষ্ট অফিসার বা হেল্প লাইনে যোগাযোগ করুন।
ধাপ-০৫ঃ Certificate Printed
সার্টিফিকেট প্রিন্টেড এর অর্থ হলো আপনার সার্টিফিকেটটি ছাপা হয়েছে। তবে ছাপা হলেই তা সাথে সাথে সংগ্রহ করা যায় না। তার জন্য আরো তিনটি ধাপ অপেক্ষা করতে হয়।
ধাপ-০৬ঃ Signed By OC
ওসি মানে হল অফিসার ইন চার্জ। সংশ্লিষ্ট থানার ওসি তদন্তকারী অফিসারের সাথে কথা বলে থানার সকল সার্টিফিকেট স্বাক্ষর করেন।
ধাপ-০৭ঃ Signed By DC / SP
ডিসি অর্থ ডেপুটি কমিশনার ও এসপি অর্থ সুপারিনটেন্ডেন্ট অফ পুলিশ। মেট্রোপলিটন অঞ্চলে ডিসি ও জেলা পর্যায়ে এসপি উর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসেবে সকল পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট গুলোতে স্বাক্ষর করেন। যেসব ভেরিফিকেশন পাসপোর্টের সাথে সম্পর্কিত সেসব সার্টিফিকেট গুলো চলে যায় সরাসরি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। সেখান থেকে সিলমোহর প্রদান করে সকল সার্টিফিকেট গুলো আবার জেলা পর্যায়ে পৌছে দেওয়া হয়।
ধাপ-০৮ঃ Ready for Delivery
এটিই হলো পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট পাওয়ার শেষ ধাপ। আপনার আবেদনের স্ট্যাটাস ‘Ready for Delivery’ হওয়া মানেই তা আপনার হাতে আসার জন্য সম্পূর্ন প্রস্তুত। সাধারণত দুই ভাবে এই সার্টিফিকেট পৌছানো হয়ে থাকেঃ
১) কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে।
২) হাতে হাতে।
কুরিয়ার সার্ভিস এর মাধ্যমে নিতে চাইলে সরাসরি আপনার বাসা অথবা বাসার কাছে কুরিয়ার সার্ভিসের অফিসে পৌছে যাবে। সেক্ষেত্রে কয়েক দিন সময় বেশি লাগবে। হাতে হাতে নিতে চাইলে চলে যেতে হবে জেলার পুলিশ সুপার অথবা মেট্রোপলিটনের পুলিশ কমিশনার এর কার্যালয়ে। এরই মাধ্যমে শেষ হবে আপনার পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া।
পুলিশ ভেরিফিকেশনের সময় যে সকল বিষয়ে তদন্ত করা হয়
পুলিশ ভেরিফিকেশন সম্পর্কে এত কিছু জানার পরে স্বভাবতই মনে একটি প্রশ্ন আসে। প্রশ্নটি হল, আবেদন করার পরে ঠিক কি কি বিষয়ে তদন্ত করা হয়। সেই প্রশ্নের উত্তর নিচের ছবিটি দেখলেই জানতে পারবেন।
পুলিশ ভেরিফিকেশনে ব্যার্থতার কারণ
পুলিশ ভেরিফিকেশনে ব্যর্থ হওয়ার নানা কারণ রয়েছে। তা হতে পারে ছোট বা বড়। সাধারণত যেসব কারণে আবেদন ব্যর্থ হয় তা হলঃ
- আপনার বর্তমান ঠিকানার পক্ষে ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কাছ থেকে একটি সনদ পত্র প্রয়োজন। অনেকেই এই সনদ পত্র আবেদনের সাথে সাবমিট করেন না বলে প্রাথমিক যাচাই এ বাদ পড়েন।
- পাসপোর্টের জন্য পুলিশ ক্লিয়ারেন্স চাইলে যদি পাসপোর্ট এ যেই ঠিকানা দিয়েছেন তার সাথে আবেদনের ঠিকানার মিল না থাকে তবে ব্যর্থ হবেন।
- পাসপোর্টের ফটোকপি ও অন্যান্য কাগজ যথাযথ ভাবে ১ম শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা দ্বারা সত্যায়িত না করলে আবেদন ব্যর্থ হবে।
- আপলোডকৃত কাগজ ঝাপসা হলে আবেদন ব্যর্থ হবে।
- কোন রকম ভুল বা অসত্য তথ্য দিলে আবেদন ব্যর্থ হবে।
- আবেদন ব্যর্থ হওয়ার সবচেয়ে বড় কারণ হল থানায় আবেদনকারীর নামে কোন মামলা থাকা। কারো নামে মামলা চলমান থাকলে মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া অবধি কোন ভাবেই সে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট পাবে না।
এছাড়াও আরো নানা কারণে আবেদন ব্যর্থ হতে পারে। আবেদন ব্যর্থ হলে তার কারণ একাউন্ট স্ট্যাটাস এর পাশে উল্লিখিত থাকে।
শেষকথা
পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। প্রত্যেক নাগরিকের জীবনের কোন না কোন ধাপে এটির প্রয়োজন পড়ে। তাই আগে থেকেই এ সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা রাখা উচিত। পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়ায় মূলত আপনার নৈতিক ও সামাজিক অবস্থানই সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে। তাই পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট ঝামেলাবিহীন ভাবে পেতে চাইলে একজন সুনাগরিক হিসেবে জীবন যাপন করাটাই সবচেয়ে আদর্শ উপায়।
অনবরত জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী
১) পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট পেতে কতদিন সময় লাগে?
উত্তরঃ এটি নির্ভর করে ভেরিফিকেশনের জন্য কত যায়গায় তদন্ত করতে হয় তার ওপর। যেমন একটি পুলিশ অধিক্ষেত্রের মধ্যে ভেরিফিকেশন করা যায় তাহলে ৩ দিনের মধ্যে ই সম্পন্ন হতে পারে। আবার বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা আলাদা হলে এবং চাকরি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আলাদা আলাদা স্থানে হলে ১৫ দিন বা তারও বেশি সময় লাগতে পারে।
২) পুলিশ ভেরিফিকেশনে কোন হয়রানির শিকার হলে কি করতে পারি?
উত্তরঃ এক্ষেত্রে জাতীয় হেল্প লাইনঃ ‘৯৯৯’ এ ফোন করে সাহায্য চাইতে পারেন অথবা নিয়ন্ত্রণকারী অফিসারের নিকট লিখিত অভিযোগ করতে পারেন। এছাড়াও পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসেবে বিশেষ পুলিশ সুপার বা অতিরিক্ত আইজিপি বরাবর লিখিত বা মৌখিক অভিযোগ জানাতে পারেন।
৩) পুলিশ ভেরিফিকেশনের সময় কি থানায় যেতে হয়?
উত্তরঃ সাধারণত যেতে হয় না। তদন্তকারী অফিসার নিজেই আপনার বাসস্থানে আসবেন। তবে বিশেষ কোন পরিস্থিতির উদ্ভব হলে যাওয়া লাগতে পারে।
৪) তদন্ত কী গোপনে হবে নাকি প্রকাশ্যে?
উত্তরঃ তদন্ত দুই ভাবেই হয়। তবে অন্তত একবার তদন্তকারী অফিসার সরাসরি আপনার বাসায় আসবেন।
৫) কোন বাসায় ভাড়া থাকলে তা কি স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে ব্যবহার করা যাবে?
উত্তরঃ না। স্থায়ী ঠিকানা এমন থাকতে হবে যেখানে আপনার পৈতৃক বা নিজস্ব ভূসম্পত্তি রয়েছে।
৬) অনলাইনে আবেদনের পরে পাসওয়ার্ড ভুলে গেলে কি করণীয়?
উত্তরঃ পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করতে যেই নম্বরের সাহায্যে একাউন্ট খুলেছেন সেই নম্বরে ব্যবহার করে 26969 নম্বরে “PCC PR” লিখে ম্যাসেজ পাঠান। ফিরতি ম্যাসেজে নতুন একটি পাসওয়ার্ড পেয়ে যাবেন।
৭) যেই নম্বর দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করেছি তা হারিয়ে ফেলেছি। এখন কী করণীয়?
উত্তরঃ সিম উদ্ধার করুন। নম্বর ব্যাতীত পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রায় অসম্ভব। নিতান্তই নিরুপায় হলে হেল্প ডেস্কে যোগাযোগ করুন।
৮) থানা নির্বাচন করতে পারছি না। এক্ষেত্রে কি করণীয়?
উত্তরঃ থানা নির্বাচন করতে একটি সাধারণ ভুল হল জেলা ও মেট্রোপলিটন অঞ্চলের মধ্যে গুলিয়ে ফেলা। ঢাকা মেট্রোপলিটনে বসবাসকারী অনেক নাগরিক পুলিশ ভেরিফিকেশনের জন্য ঢাকা জেলা নির্ধারণ করেন। সেজন্য নির্দিষ্ট থানা খুজে পান না। জেলা ও মেট্রোপলিটনের মধ্যে সাবধানতার সাথে নির্ধারণ করুন।
৯) একবার আবেদন বিফল হলে কি আবার ফি জমা দিতে হয়?
উত্তরঃ আবেদনের স্ট্যাটাস ‘Rejected’ হলে আবার ফি দিতে হয় না। ভুল সংশোধন করে আবারো আবেদন করতে পারবেন। কিন্তু আবেদন ‘Closed’ হয়ে গেলে পরবর্তীতে আবার টাকা জমা দিয়ে আবেদন করতে হবে।
তথ্যসূত্রঃ