মোটা বা ওবেসিটির জন্য নানা রকম সমস্যা (Problem of Obesity):
মোটা বা ওবেসিটি হলে আপনি অস্বস্তি বোধ করবেন এবং আপনার দৈনন্দিন কাজ কর্মে বাধাপ্রাপ্ত হবেন। আপনার শ্বাস- প্রশ্বাস এর অসুবিধা হতে পারে, বিরক্তিবোধ হবেন। চলা ফেরা বা শারীরিক কাজ কর্ম করতেও অসুবিধা বোধ করবেন। আপনার শরীর অনুযায়ী সঠিক মাপের জামা কাপড়ও পাওয়া মুশকিল সেই নিয়ে চিন্তা হবে। সামান্য কাজ করার পরে মোটা মানুষরা ঘেমে ওঠেন।
যদি আপনি মোটা হন, তাহলে তা নিয়ে আপনার মন খারাপও হতে পারে। আপনার আত্মসম্মানে আঘাত লাগতে পারে, নিজের উপরে আস্থাও কম হতে পারে। কিছু মানুষ আপনার মোটা হওয়া বা ওবেসিটি নিয়ে বিদ্রূপ করতে পারে, আপনি প্রত্যাখ্যাত হতে পারেন। নিজেকে দোষী, লজ্জিত এবং এমনকি বিষণ্ণও হতে পারেন। এই সমস্ত সামাজিক অসুবিধাগুলি কাটিয়ে ওঠার জন্য আমরা আপনাকে মোটা বা ওবেসিটির কারণগুলি কি (causes of obesity), এবং কি করে এর মোকাবিলা বা চিকিৎসা (obesity treatment) করবেন। তা পরবর্তী অধ্যায়গুলিতে জানাতে চাই কিছু চিকিৎসা তথা ঘরোয়া টিপস (weight loss tips)। এতে আপনি এই অসুবিধাগুলি থেকে কাটিয়ে উঠে সুস্থ জীবন যাপন করতে সক্ষম হবেন।
ওবেসিটি বা মোটা হওয়া আসলে কি
মোটা হওয়া বা ওবেসিটি (What is Obesity) এই শব্দটি শোনার পর আমাদের মনে যা আসে তা হল একজন “মোটা মানুষ” যার শরীরে প্রচুর ক্যালোরি, মেদ এবং অত্যধিক ওজন। এবং খুব বেশি শারীরিক পরিশ্রম করতে পারে না। মোটা ব্যক্তি মানে কিন্তু আমাদের অনেকেই জানি না যে এটি একটি রোগ। এই রোগে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় অতিরিক্ত মেদ জমা হয়। ফলে শারীরিক ওজন অত্যধিক বৃদ্ধি পায়। এই বাড়তি ওজন স্বাস্থ্যের উপরে বিভিন্ন রকম ভাবে খারাপ প্রভাব ফেলে।
কি করে জানবেন যে এক জন ব্যক্তির ওজন বেশি অথবা সে মোটা হয়েছে বা ওবেসিটি তে ভুগছে?
এর উত্তর হল তার বডি মাস ইনডেক্স (BMI) এর হিসেব। বি-এম-আই এমন একটি পরিমাপ যা আপনার উচ্চতা এবং ওজন থেকে পাওয়া যায়। একজন ব্যক্তিকে মোটা তখন বলা যায় যখন তার দেহের ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে অন্তত ২০-২৫% বেশি হয়। যদি আপনার বি-এম-আই (BMI) ২৫-২৯.৯ এর মধ্যে হয় তাহলে মনে করা হবে যে আপনার অত্যধিক ওজন আছে। যদি আপনার বি-এম-আই ৩০ বা তার বেশি হয় তাহলে অবশ্যই ডাক্তার এর পরামর্শ নেওয়া উচিত।
এটা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ কারণ মোটা হওয়া বা ওবেসিটি থেকে অন্যান্য অনেক রোগের সূচনা হতে পারে। যেমন, মধুমেহ (ডায়াবেটিস), হার্টের সমস্যা, উচ্চ রক্ত চাপ (হাইপারটেনশন), অবস্ট্রাকটিভ ঘুমের রোগ, গাঁটের বাত (Arthritis), ইত্যাদি। এই সব রোগের মোকাবিলা করার জন্য প্রথম পদক্ষেপ হবে মোটা হওয়ার আসল কারণ কি (causes of obesity) তা জানা। যায়গায়
মোটা হওয়া বা ওবেসিটি এর উপসর্গ বা লক্ষ্মণ
কিছু সাধারণ উপসর্গগুলি হল:
১. অত্যধিক ওজন বৃদ্ধি। কিভাবে বুঝবেন? তার জন্য BMI চেক করুন। BMI চেক করার জন্য BMI লিখার উপর ক্লিক করুন।
২. অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তের চাপ (High Blood Pressure বা হাইপারটেনশন)
৩. অত্যধিক শারীরিক ওজনের জন্য গাঁটে ব্যথা।
৪. দৈনন্দিন স্বাভাবিক কাজ কর্মের সময়ে শ্বাস কষ্টের অনুভব করা।
৫. অত্যাধিক ওজনের জন্য স্ট্রেস এবং ক্লান্তি অনুভব করা।
৬. অত্যধিক উদ্যমহীনতা।
৭. অনিয়ন্ত্রিত ক্ষুধার যন্ত্রণা।
৮. উচ্চ কোলেস্টেরলের মাত্রা।
কখন চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে
চিকিৎসার ক্ষেত্রে মোটা হওয়া জরুরী অবস্থা নয় ঠিকই। কিন্তু কিছু পরিস্থিতিতে এবং লক্ষ্মণ বা উপসর্গের উপর নির্ভর করে আপনি বিবেচনা করবেন যে কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কিছু চিকিৎসক গবেষকরা বলেন যে মানসিক এবং সামাজিক কারণে একজন মানুষ চিকিৎসকের কাছে যেতেও দ্বিধাবোধ করেন। এটাও দেখা গিয়েছে যে এই অবহেলার ফলে রোগ আরও বৃদ্ধি পায়।
যদি আপনার দেহের ওজন বৃদ্ধির কারণে নিচের দেওয়া উপসর্গগুলি দেখা দেয় তাহলে তৎক্ষণাৎ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন:
১. সিঁড়ি বেয়ে ওঠার সময় শ্বাস কষ্ট অনুভব করা।
২. উচ্চ রক্ত চাপ এবং শ্বাসের গোলযোগ।
৩. খুব কম পরিমাণে হাঁটা, দৌড়ানোর ক্ষেত্রেও ক্লান্তি।
৪. কোনরকম চোট ছাড়াই হাঁটু এবং কোমরে ব্যথা।
৫. উচ্চ কোলেস্টেরলের মাত্রা, যার ফলে হার্টের সমস্যা।
৬. বুকে ব্যথা ও বুক ধড়ফড় করা। গরমের সময় বিশেষ করে বেশি লক্ষ্য করা যায়।
৭. ঘুম কমে যাওয়ার সাথে ক্ষুধা পাওয়া।
৮. নিজেকে অপদার্থ মনে করা এবং একা থাকার প্রবণতা বৃদ্ধি।
৯. পেট, যকৃৎ এবং পিত্তকোষের সমস্যা। এবং সাথে হজমের সমস্যা।
১০. রক্তে সুগার এর পরিমাণ বৃদ্ধি বা মধুমেহ (ডায়াবেটিস)।
১১. অত্যাধিক বিষণ্ণতা এবং উচ্চ মাত্রার মানসিক চাপ।
এসব তো গেলো বিভিন্ন ধরনের লক্ষ্মণ বা উপসর্গ, এবার কিছু চিকিৎসা বা ঘরোয়া প্রতিকার লক্ষ্য করব।
আমাদের যাদের ওজন বাড়ার ধাত আছে, তাদের পক্ষে ওজন কমানোটা (weight loss) একটা চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার। বিভিন্ন ওয়েবসাইটে অনেক রকমের ওজন কমানোর উপায় (weight loss) আছে। এমনকি একদিনে বা ৭দিনে রোগা হয়ে যান। বা একটা নির্দিষ্ট পরিমান ওজন কমানোর উপায়ও (weight loss tips) আপনি খুঁজে পাবেন।
কিন্তু এক্ষেত্রে বলে রাখা ভালো যে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই উপায়গুলো (weight loss tips) কোনো কাজ করে না। কারণ ঝটপট করে প্রকৃতির বিরুদ্ধে গিয়ে ওজন কমানোর (weight loss) চেষ্টা করলে বেশিরভাগ সময়েই তা উল্টো ফল দেয়। আপনি হয়তো ওজন কমিয়ে (weight loss) নিলেন। কিন্তু দেখা গেলো যে অন্য কোনো শারীরিক অসুবিধে আপনার জীবনে আসতে শুরু করলো। তাই তাড়াহুড়ো না করে স্বাভাবিক নিয়মে প্রতিনিয়ত যদি আপনি আপনার ওজন কমানোর (weight loss) চেষ্টা করেন, তাহলে সেটা কার্যকরীও হবে এবং দীর্ঘস্থায়ীও হবে। শুধু কয়েকটা নিয়ম মেনে চলতে হবে একটু ব্যাস আর কিছু না। নিচের পদ্ধতি গুলো পড়ুন অবশ্যই কাজে দিবে-
স্বাভাবিকভাবে ঘরোয়া পদ্ধতিতে ওজন কমানোর কিছু উপায় বা টিপস (Weight Loss tips in Bengali)
১. সঠিক সময়ে পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমানো (কমপক্ষে 6-8 ঘণ্টা):
এটা আমরা কেউই করে থাকি না, এখন তো সোশ্যাল মিডিয়া, বিভিন্ন ধরনের ভিডিও গেম তথা PUBG, COD, FREE FIRE তো আছেই। আর তাতেই ঘুমের বারোটা বেজে যায়।
ওজন কমানোর (weight loss) জন্য এবং সঠিক ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য ঘুমোনোটা খুব খুব খুবই প্রয়োজন। যদি ঘুম সম্পূর্ণ না হয়, তাহলে সারাদিন একটা ক্লান্তিভাব থাকে আর কোনো কাজ করতে ইচ্ছে করে না। মনোযোগ থাকে না কাজে। আর আপনি কি জানেন, ঘুম কম হলে খিদেও বেশি পায়? তাছাড়া ঘুম কম বা বেশি হলে হজমের সমস্যা হয়। তখন কিন্তু ওজন কমাতে (weight loss) পারবেন না কোন ভাবেই। তাই ঠিক সময়ে শুতে যান এবং সকালে তাড়াতাড়ি উঠুন। রাতের বেলায় ৬ থেকে ৮ ঘন্টা ঘুমোন। কিন্তু দিনের বেলায় কখনোই ঘুমোবেন না। কারন বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে দিনের বেলায় ঘুমোলে ওজন বাড়ার সম্ভাবনা ১০০% পর্যন্ত বেড়ে যায়। খাবার খাওয়ার পর সঙ্গে সঙ্গেই বিছানাই যাবেন না, কমপক্ষে ১ ঘণ্টা পরে শুতে যান।
২. সঠিক খাদ্য সঠিক পরিমাণে সঠিক সময়ে খাওয়া:
সকালের ব্রেকফাস্ট যদি দুপুরে খান, বা বিকেলে কিছু না খেয়ে একেবারে রাত্রিতে সারাদিন এর খাবার খেলেন তাহলেই সমস্যা। সকালের খাবার সকালেই এবং দুপুরের খাবার দুপুরেই এই ভাবে খাবার খান। এছাড়া একেবারে গলা ভর্তি খাবার খাবেন না। কম কম করে বেশি বার ধরে খাবার খান, এতে হজম খুব ভালো হয়। মোটামুটি ৪ বার ধরে সারাদিন এর খাবার খান। এবং গলা ভর্তি করে না, কিছু খালি রেখে খান।
৩. নিয়মিত ব্যায়াম করুন (Exercise Regularly to Weight loss):
দেখুন, ওজন কম করতে (weight loss) হলে একটু তো খাটতেই হবে তাই না? এক্সারসাইজ বা ব্যায়াম করাটা সে জন্য খুব দরকার। শুধু ওজন কমানোর জন্যই না, ব্যায়ামের ফলে শরীরের প্রচুর উপকার হয়। নিয়মিতভাবে এক্সারসাইজ করুন, সেটা জিমে গিয়েই হোক কিংবা বাড়িতে ফ্রি-হ্যান্ড এক্সারসাইজ করেই হোক। সেরকম হলে সকালবেলা বাড়ির পাশেই কয়েকপাক দৌড়ে আসুন। আর যদি আপনি ফিটনেস নিয়ে একটু বেশি সিরিয়াস হন, তাহলে তো কথাই নেই। সাঁতার কাটাও কিন্তু একটা ভালো এক্সারসাইজ। দিনে অন্তত এক ঘন্টা ব্যায়াম করুন। দ্রুত ওজন কমানোর জন্য প্রতিদিন সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে হাটুন অথবা দৌড়ান। হাঁটাহাঁটি করলে কমপক্ষে ৫ কিমি এবং দৌড়ানোর ক্ষেত্রে ১-২ কিমি। ব্যায়াম শরীর কে যেমন ফিট রাখে তেমনি মানসিক শান্তিও প্রদান করে।
৪. জল খান:
জল খেলে ওজন কমে (weight loss) কিন্তু তা বলে শুধু কি আর জল খেয়ে থাকতে বলছি আপনাকে? জল খাবার পরিমানটা বাড়াতে হবে, আর নির্দিষ্ট সময়ে জল খেতে হবে। সকালে ঘুম থেকে উঠে ২ গ্লাস জল খান, এতে আপনার ডাইজেস্টিভ সিস্টেম ক্লিয়ার হয় এবং শরীরে জমে থাকা টক্সিন বেরিয়ে যেতে সাহায্য করে। যখনি খাবার খাবেন, তার আগে এক গ্লাস জল খান, এতে আপনার পেট ভরা ভরা লাগবে এবং আপনি প্রয়োজনের তুলনায় বেশি খাবার খাবেন না। তা ছাড়া অনেক সময় আমরা তেষ্টা পেলে সফ্ট-ড্রিঙ্কস বা শরবত খেয়ে নি, তার বদলে জল খেয়ে তেষ্টা মেটান। এতে আপনার শরীরে এক্সট্রা ক্যালোরিও ঢুকলো না আবার তেষ্টাও মিটলো!
৫. বেশি করে প্রোটিন জাতীয় খাবার খান:
আমাদের অনেকেরই ধারণা আছে যে কম খেলে বা না খেয়ে থাকলে তাড়াতাড়ি ওজন কমে (weight loss) । এই ধারণাটা সম্পূর্ণ ভুল এতে অনেক ক্ষতি হয়ে যায় শরীরের। পেট খালি রাখলে ফ্যাট (fat) জমার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। আর শরীরে যথেষ্ট পুষ্টির (nutrition) অভাবে আপনি দুর্বল হয়ে পড়বেন। ফলস্বরূপ, আপনার ইমিউনিটি (immunity) শক্তি কমতে থাকে এবং অসুস্থ হবার সম্ভাবনা অনেক বেশি হয়ে যায়। তাই খাওয়া বন্ধ করবেন না। বরং খাবারে প্রোটিন যোগ করুন। সয়াবিন , ছোটমাছ ইত্যাদি প্রোটিন জাতীয় খাবার বেশি করে খান।
৬. রাতের বেলায় ভাত একদম নয় (Avoid Rice at Night to Weight loss):
ওজন কমাতে চাইলে রাতের বেলায় ভাত একদম খাবেন না। এমনিতেই আমরা শর্করা জাতীয় খাবার বেশিই খায়। তাই ভাতের বদলে রুটি খান। ভাত দ্রুত ওজন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। সুতরাং রাত্রিতে ভাতের বদলে ৩-৪ টি রুটি খাবেন।
৭. মিষ্টি না খেলেই ভালো:
মিষ্টি খেতে আমরা অনেকেই ভালোবাসি আর মিষ্টি কিন্তু ওজন কমানোর (weight loss) পথে একটি বড় বাধা! মিষ্টি মানে যে কোনো রকমের মিষ্টিই – সে চিনি থেকে আরম্ভ করে ক্যান্ডি। যে কোনো রকমের মিষ্টি জিনিস খাওয়া বন্ধ করুন। যদি একান্তই খুব কষ্ট হয়, তাহলে মাসে একদিন অল্প স্বল্প খেতে পারেন। কিন্তু চা-কফিতে চিনির পরিমান কমিয়ে ফেলুন আজ থেকেই।
৮. লেবু জলের সাহায্য নিন:
ওজন কমানোর জন্য লেবু জলের জুড়ি মেলা ভার। লেবুতে থাকে সাইট্রিক অ্যাসিড যা দেহের অতিরিক্ত ফ্যাট কমিয়ে দেয় ফলে দেহের ওজন দ্রুত কমে যায়। এবং টক্সিন কে শরীর থেকে বেরিয়ে যেতে সাহায্য করে। সকাল বেলা ব্যায়াম করা হয়ে গেলে ২০ থেকে ২৫ মিনিট বিশ্রাম করুন। এরপর একগ্লাস হালকা গরম জল নিন। এবার একটি পাতি লেবুর রস এই জলের সাথে মিশিয়ে নিন। এর পর একচামচ মধু জলের সাথে মিশিয়ে ভালো করে চামচ দিয়ে নেড়ে এই জল পান করুন। প্রতিদিন নিয়ম করে লেবুজল পান করলে নিশ্চিত ভাবে খুব দ্রুতই ওজন আপনার কমবে।
৯. গ্রিন টি এর সাহায্যে ওজন কমানোর উপায়:
গ্রিন টি ব্যয় বহুল হলেও ওজন কমাতে গ্রিন টি এর জুড়ি মেলা ভার। গ্রিন টি ওজন কমাতে দ্রুত টনিকের কাজ করে। গ্রিন টি তে থাকে একটি বিশেষ ধরণের এন্টিঅক্সিডেন্ট যা দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং দেহের অতিরিক্ত ফ্যাট দূর করে এবং ক্ষুধা কমিয়ে দেয়। স্বভাবতই খাওয়া কমে গেলে এবং দেহ থেকে অতিরিক্ত ফ্যাট কমে গেলে ওজন কমতেও বাধ্য। তবে গ্রিন টি কখনোই চিনি দিয়ে তৈরি করবেন না। শোবার আগে এক কাপ গ্রিন-টি অবশ্যই খান। গ্রিন-টি মেটাবলিসম বাড়াতে সাহায্য করে আর ঘুমের মধ্যেও ফ্যাট বার্ন হতে থাকে।
১০. প্রসেসড (Processed) এবং Canned খাবার একদম না:
সত্যি কথা বলতে কি আমরা সবাই এখন এতটাই ব্যস্ত যে নিজেদের জন্য সময় বার করা খুবই কষ্টকর। তার ওপর যদি আবার রান্না করতে হয়, সে সময় নেই কারো কাছেই। তাই অনেকসময়ই আমরা প্রসেসড (Processed) এবং Canned খাবার খেয়ে নিই। সময়ও বাঁচে আর খাবার গুলো খেতেও খুব একটা খারাপ না, খুবই সুস্বাদু। কিন্তু আপনি কি জানেন যে এই প্রসেসড (Processed) এবং Canned খাবার আপনার কতটা ক্ষতি করছে? আর আপনি যদি ওজন কমাতে (weight loss) চান, তাহলে কিন্তু আপনার এই ধরণের খাবার একেবারেই খাওয়া চলবে না।
১১. সিঙ্গেল ইনগ্রেডিয়েন্ট খাবার খান (single-ingredient food):
সিঙ্গেল ইনগ্রেডিয়েন্ট খাবার সেটা আবার কি? না, শুধু একটা খাবার খেতে বলছি না। সিঙ্গেল ইনগ্রেডিয়েন্ট ফুড অর্থাৎ যে খাবারগুলো প্রসেস (Processed) করা নয়, সেই খাবার খান। রোজকার খাবার যেগুলো আমরা বাড়িতে তৈরী করে খাই, যেমন ডাল, ভাত, রুটি, মাছ, সবজি এসব ফ্রেশ খাবার খান। আপনি যদি ডায়েটের দিকে বেশি নজর দিতে চান তাহলে সাদা ভাতের বদলে ব্রাউন রাইস খেতে পারেন। ব্রাউন রাইসে পুষ্টি (nutrition) বেশি এবং যেহেতু এটি রিফাইন্ড বা পালিশ করা হয় না তাই শরীরে কোনো ক্ষতিও করে না।
১২. ওজন কমাতে প্রতিদিন ফল ও শাকসবজি খান (Eat More Fruit to Weight loss Fast):
ওজন কমানোর জন্য খাবারের মেনুতে রাখুন অধিক শাক সবজি। ওজন কমাতে ফলের ভূমিকা অপরিসীম। বিভিন্ন ধরণের টক জাতীয় ফল যেমন আঙ্গুর, আপেল, কমলা লেবু, পেয়ারা, ইত্যাদি ফলে থাকে অ্যাসিড যা দেহের চর্বি কম করতে সাহায্য করে। এর ফলে আপনার দেহের ওজন কমবে দ্রুত। খাবারের মেনুতে অবশ্যই শশা, গাজর , টমেটো ইত্যাদি দিয়ে তৈরি স্যালাড রাখুন। এছাড়া যদি সম্ভব হয় প্রতিদিন ২০০ থেকে ৩০০ গ্রাম ফল বা একগ্লাস ফলের রস পান করুন।
১৩. খাবারের মেনু থেকে যে খাবারগুলি বাদ দেবেন:
ওজন কমানোর জন্য খাবারের মেনু থেকে অবশ্যই মশলা জাতীয় এবং চর্বি জাতীয় খাবারগুলোকে বাদ দিতে হবে। অতিরিক্ত মশলা এবং চর্বি জাতীয় খাবার দেহে চর্বি বা মেদ বৃদ্ধি করে এবং দ্রুত ওজন বৃদ্ধি করে। সুতরাং অতিরিক্ত তেল , মশলা এবং চর্বি জাতীয় খাবার যেমন দুধ, ঘি, আইসক্রিম, মাখন ইত্যাদি খাবার একদম এড়িয়ে চলুন।
১৪. খাবার আগে ঝোল বা ডাল জাতীয় খাবার (soup) খান:
সম্প্রতি একটা রিসার্চে জানা গেছে যে খাবার খাওয়ার ৩০-৪৫ মিনিট আগে যদি একবাটি স্যুপ (soup) খেয়ে নেওয়া যায়, তাহলে খিদে কম পায়। এর ফলে আপনি প্রয়োজনের তুলনায় বেশি খান না এবং আপনার পেটও ভর্তি থাকে। ফলে আপনার ওজন কমতে (weight loss) বাধ্য।
১৫. মদ্যপান সীমিত পরিমাণে রাখা:
বর্তমান সমাজ বা যুগে মদ্যপান একটা স্টাইল বা ফ্যাশনে পরিনত হয়ে গেছে। যাইহোক মদ্যপান থেকে বিরত থাকুন। মদ্যপান ওজন বাড়িয়ে শুধু দেয়না, বরং শরীরের বিভিন্ন ক্ষতি করে ও রোগ ডেকে আনে। তাই প্রতিদিন মদ্যপান বন্ধ করে কোন পূজা বা অনুষ্ঠানে খান।
১৬. ঝাল খান:
না, কাঁচা কাঁচা লঙ্কা চিবোতে বলছি না। আপনি যদি ঝাল খেতে পছন্দ করেন, তাহলে জেনে রাখুন লঙ্কা কিন্তু ওজন কমাতে (weight loss) সাহায্য করে। ঝাল খাবার খেলে আমাদের মেটাবলিসম ২৭ শতাংশ বেশি তাড়াতাড়ি কাজ করে। ডিনারে অন্যান্য খাবারের সাথে কাঁচা লঙ্কা খান। এতে ফ্যাট বার্ন হয়।
১৭. রুটিন চেক-আপ:
নিয়মিত ওজন দেখা। বছরে একবার সম্পূর্ণ শরীরের পরীক্ষা করা। প্রতি ছয় মাস অন্তর রুটিন রক্ত পরীক্ষা করা।
১৮. সপ্তাহে অন্তত একদিন উপোস থাকুন:
আধুনিক বিজ্ঞান অনুযায়ী যারা সপ্তাহে অন্তত একদিন দিনের বেলায় ৮ থেকে ও ৯ ঘন্টা না খেয়ে থাকেন বা উপোস থাকেন তাদের দেহে কখনোই মেদ জমতে পারে না। প্রাচীন আয়ুর্বেদ শাস্ত্রেও এর উল্লেখ রয়েছে। এর মূল কারণ হল আমরা যখন না খেয়ে থাকি তখন দেহে জমে থাকা চর্বি গলতে থাকে বা বার্ন আউট হয়ে দেহে শক্তি উৎপন্ন হয়। ফলে দেহে চর্বি জমে থাকতে পারে না এবং দেহের ওজন ও কম হয়ে যায়।
১৯. প্রান খুলে হাসুন:
সবার শেষে প্রান খুলে হাসুন। হাসা একরকমের এরোবিক (Aerobic) এক্সারসাইজ। আপনি কি জানেন? যদি আপনি ১ ঘন্টা প্রাণখুলে হাসেন সারাদিনে, তাতে ঠিক ততটাই ওজন কমে যতটা ৩০ মিনিট ধরে ওয়েট -লিফটিং করলে কমে। প্রতিদিন ১ ঘন্টা প্রানখুলে হাসলে আপনার প্রায় ৪০০ ক্যালোরি খরচ বা বার্ন হয়।
এরপর কিছু মোটা হওয়া বা ওবেসিটির ডাক্তারি চিকিৎসা দেখে নিন
মোটা হওয়া বা ওবেসিটির সমাধানের জন্য খুব একটা ডাক্তার এর প্রয়োজন হয় না। তবে দেখে নিন কখন চিকিৎসার প্রয়োজন হয়-
উপরিউক্ত শর্ত অনুযায়ী আপনার খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন এবং শারীরিক পরিশ্রম করলে আপনি ওজন হ্রাস করতে পারবেন। তবে, কিছু ক্ষেত্রে আপনার চিকিৎসক ওজন কমানোর জন্য ওষুধ দিতে পারেন, অথবা অস্ত্রোপচার করার পরামর্শ দিতে পারেন। এটা বিশেষত তখনই ভাবা হয় যখন খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন এবং ব্যায়াম করেও আপনি ওজন কমাতে পারেন না।
১. শিশুদের ক্ষেত্রে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স এবং হাইপারইনসুলিনেমিয়া থাকে তাহলে মেটফরমিন ব্যবহার করা হয়।
২. আপনার খাদ্যের ফ্যাটকে গ্রহণ করতে শরীরকে বাধা দেয় অরলিস্ট্যাট। যে সমস্ত ব্যক্তির বি-এম-আই 30 কিম্বা তার বেশি এবং জীবনধারার এবং অভ্যাসের পরিবর্তন করেও কোন ফল পাওয়া যায়নি তাদের ক্ষেত্রেই অরলিস্ট্যাট’এর সুপারিশ করা হয়।
৩. হাইপোথ্যালামিক ওবেসিটি থাকলে অক্ট্রেয়োটাইড ব্যবহার করা হয়।
ওবেসিটির জন্য শল্য চিকিৎসা (Surgery for Weight loss treatment)
যখন ওজন হ্রাস করার সমস্ত প্রচেষ্টাই ব্যর্থ হয়েছে এবং অজ্ঞান করে অস্ত্রোপচারের ধকল নিতে রোগী শারীরিক ভাবে সক্ষম। কেবল মাত্র তখনই শল্য চিকিৎসার সুপারিশ করা হয়। সাধারণত বি-এম-আই 50 এর বেশি হলে অস্ত্রোপচারের কথা ভাবা হয়। ডাক্তারি পরিভাষায় এই অস্ত্রোপচারকে বলা হয় ব্যারিয়েট্রিক সার্জারি। সাধারণত দুই ধরনের অস্ত্রোপচার করা হয়, যেমন গ্যাস্ট্রিক ব্যান্ডিং এবং গ্যাস্ট্রিক বাইপাস। একটি ধরণে আপনার পাকস্থলীর আয়তন ছোট করে দেওয়া হয় যাতে। আপনি কম খান, অন্যটিতে আপনার অন্ত্রের একটি অংশে একটি বাই-পাস তৈরি করা হয় যাতে আপনার শরীর কম খাদ্য শোষণ করে। ব্যারিয়েট্রিক অস্ত্রোপচারের পরে আপনাকে দীর্ঘদিন ধরে ঔষধ খেয়ে যেতে হবে।
বিঃ দ্রঃ- কোন ঔষধ ইন্টারনেটের কোন পোস্ট, সোশ্যাল মিডিয়ার কোন পোস্ট দেখে ব্যাবহার করবেন না। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তবেই ব্যাবহার করবেন।