ফ্রিল্যান্সিং তথা মুক্তপেশা, যা কিনা বর্তমান যুগে বেকারত্বের জাঁতাকলে পরা অনেক তরুণের কাছেই এখন হয়ে উঠেছে আশার আলো। সারা পৃথিবী জুড়ে লক্ষ লক্ষ মানুষ ফ্রিল্যান্সিং কে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছে এবং নিচ্ছে। ফ্রিল্যান্সিং (Freelancing) শব্দটির ফ্রী (Free) অংশটিই কিন্তু এ পেশার মুক্ততাকে নির্দেশ করে। ফ্রিল্যান্সিং কোন একক পেশা নয়। এটি অসংখ্য পেশার সমন্বিত একটি রূপ। ফ্রিল্যান্সিং অনেক প্রকারের হতে পারে, যেমন- ফ্রিল্যান্স ফটোগ্রাফি, ফ্রিল্যান্স সাংবাদিকতা, ইত্যাদি। ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে আপনি ঠিক কত ধরনের কাজ করতে পারবেন তার কোন শেষ নেই। সবচেয়ে দারুণ বিষয় হলো এই প্রক্রিয়াতে আপনিই সর্বেসর্বা। আপনার মাথার ওপর ছড়ি ঘোরানোর কেউ নেই, নেই নিয়মিত ৯টা-৫টা অফিস করার বাধ্যবাধকতা। আপনি কাজ করতে পারবেন যেকোনোভাবে, যেকোনো স্থানে বসে, প্রয়োজনে যে কারো সাথে। অর্থাৎ আপনার কাজটি আপনি সম্পূর্ণ মুক্তভাবে করবেন। এছাড়াও এ ধরনের কাজের জন্য আপনার বিশাল অফিসেরও কোন প্রয়োজন নেই। স্বল্পপরিসরে অল্প কিছু দরকারি জিনিস নিয়েই মূলত নিজের দক্ষতাকে কাজে লাগিয়েই আপনি হতে পারবেন একজন সফল ফ্রিল্যান্সার। এক্ষেত্রে কম্পিউটার আর ইন্টারনেট সংযোগের বিষয়টিও মাথায় রাখত হবে। আর এভাবেই আপনি অবসান ঘটাতে পারবেন নিজের বেকারত্বের। আয় করতে পারবেন আশাতীত অংকের টাকা। তবে মনে রাখতে হবে, যদিও এটি মুক্তপেশা কিন্তু একজন ভাল ও সফল ফ্রিল্যান্সার হতে হলে কাজের প্রতি আপনার আন্তরিকতা ও পরিশ্রমী মনোভাব অনেক অনেক বেশি জরুরী।
আগেই বলেছি, ফ্রিল্যান্সিং অনেক ধরনের হতে পারে, তবে আজকের এই লেখায় আমরা অনলাইন ভিত্তিক ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে আলোচনা করবো।
অনলাইন ভিত্তিক ফ্রিল্যান্সিং এর কাজ কী কী?
এ জাতীয় ফ্রিল্যান্সিং এ মূলত ঘরে বসে কম্পিউটার ও ইন্টারনেটের সাহায্যে আরেকজন মানুষ বা আরেকটি কোম্পানির জন্য নির্দিষ্ট কাজ করা হয়। অনলাইন ভিত্তিক ফ্রিল্যান্সিং এ আসলে এত বেশি পরিমাণ কাজের সুযোগ রয়েছে যে কাজের তালিকা হয়তো দিয়ে শেষ করা যাবে না। বর্তমানে সবচেয়ে জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্স সাইটগুলোর মধ্যে একটি হলো আপওয়ার্ক (Upwork)। আপওয়ার্কে প্রবেশ করলে সন্ধান মিলবে অসংখ্য কাজের। যেমনঃ
- ওয়েব ডেভেলপিং
- ওয়েব ডিজাইন
- সফটওয়্যার ডেভেলপিং
- গ্রাফিক্স ডিজাইন
- ভিডিও এডিটিং
- ডাটাবেজ এন্ট্রি
- অনুবাদ
- টাইপিং
- প্রুফ রিডিং
- এস-ই-ও ব্লগিং
- কন্টেন্ট রাইটিং
- ইঞ্জিনিয়ারিং জব
- ফটোগ্রাফি
- কাস্টমার কেয়ার জব
এখানে যেসব কাজের কথা উল্লেখ করা হয়েছে তা সবই মূল ধারার কাজ। এর বাইরেও রয়েছে অসংখ্য কাজ, আবার এসব কাজের ভেতরেও রয়েছে নানা ধরণের শাখা-উপশাখা। আপাতদৃষ্টিতে কঠিন লাগলেও রয়েছে অনেক সহজ কাজ যা খুবই স্বল্প চেষ্টায় আয়ত্তে আনা যায়।
ফ্রিল্যান্সিং কিভাবে শিখবেন?
যেকোনো পেশাতেই আপনার প্রয়োজন সেই পেশা সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট জ্ঞান এবং স্পষ্ট দক্ষতা। ফ্রিল্যান্সিং তার ব্যতিক্রম নয়। যেহেতু আগেই বলেছি, ফ্রিল্যান্সিং এ আপনি অসংখ্য বিষয়ে কাজ করতে পারেন, তাই প্রথমেই আপনার ঠিক করে নিতে হবে কি ধরনের কাজ আপনি করবেন। এরপরে আপনাকে ধারণা নিতে হবে সে কাজ সম্পর্কে। সব শেষে আপনার এর উপরে সঠিক প্রশিক্ষণ নিতে হবে ।
ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ
যে বিষয়ে আপনি কাজ করবেন, সে সম্পর্কে যদি আপনি দক্ষ হয়ে থাকেন অথবা পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে থাকে তাহলে আপনার খুব একটা মাথা ঘামানোর দরকার নেই। যেমনঃ ফটোগ্রাফি, গ্রাফিক্স ডিজাইন, অথবা অনুবাদ করা, ইত্যাদি। পূর্বের জ্ঞানের সাথে সাথে হালকা পরিচর্যা করে নিলেই আপনি শুরু করতে পারবেন। তবে পূর্ব জ্ঞান না থাকলে প্রশিক্ষণ গ্রহণ বাধ্যতামূলক। এর জন্য দুটি উপায় অনুসরণ করতে পারেন।
- অনলাইনে ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ
- অফলাইনে ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ
অনলাইনে ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ
সত্যি বলতে বর্তমান দুনিয়ায় ফ্রিল্যান্সিং এর জন্য অনলাইন প্রশিক্ষণই সবচেয়ে ভাল মাধ্যম। সাধারণ ইউটিউবে বা গুগলে সার্চ করলেই হাজার হাজার টিউটোরিয়াল পাবেন। এছাড়াও এসব শেখানোর মতো অনেক স্বনামধন্য সাইটও আছে। যেমনঃ
এসব সাইট থেকে একটু ধৈর্য্য থাকলেই প্রায় বিনামুল্যে প্রচুর কাজ শেখা যায়। যদিও কিছু কিছু ক্ষেত্রে সার্টিফিকেট পেতে হলে গুনতে হতে পারে বেশ কিছু টাকা। তবে সার্টিফিকেট থাকলে ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ারে আপনি অনেকটাই এগিয়ে থাকবেন। এই সাইটগুলোর এক একটা থেকে এক এক ধরনের প্রশিক্ষণ আপনি নিতে পারবেন। প্রতিটিরই কোন না কোন বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদানের দিক থেকে সুখ্যাতি রয়েছে। যেমন ধরুন, আপনি এইচটিএমএল (HTML) হাতে কলমে শিখতে চান। সে ক্ষেত্রে দাব্লুথ্রি স্কুলস (W3Schools) হবে আপনার জন্য সেরা। আবার ভিডিও দেখে শিখতে চাইলে লিনডা (Lynda)।
ইডিএক্স (edX) থেকে আপনি চাইলে এসবের পাশাপাশি ইঞ্জিনিয়ারিং ভিত্তিক টপিকের কোর্স অবধি করে ফেলতে পারেন। অনলাইনে কোর্স করার সবচেয়ে বড় সুবিধা এটিই। আপনার আগে থেকে কোন ডিগ্রির প্রয়োজন নেই। পুরোটাই নির্ভর করবে নির্দিষ্ট কোর্সে আপনার কর্মদক্ষতার ওপর। তবে আপনাকে বুঝতে হবে যে কোন কোর্সে ঢুকলে তা আসলেই আপনি সম্পন্ন করতে পারবেন।
অফলাইনে ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ
অনলাইন সাইটের পাশাপাশি অফলাইনেও দেশের অনেক স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান থেকে আপনি নির্দিষ্ট বিষয়ে কোর্স করতে পারবেন। বর্তমানে বাংলাদেশে এরকম বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান আছে। যারা নিজস্ব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে হাতে কলমে কাজ করার প্রক্রিয়া শিখিয়ে থাকে। তবে অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোর মতো শুধু সার্টিফিকেটের জন্য টাকা নয় বরং কোর্সে ভর্তি ফি বাবদ আপনাকে টাকা প্রদান করতে হবে। কোর্স শেষে পাবেন ঐ প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রদত্ত সার্টিফিকেট। এছাড়াও অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের ছাত্র-ছাত্রীদের কোর্স শেষ হওয়ার পরেও বিভিন্ন কাজের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সাহায্য করে থাকে।
কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করবেন?
কাজ শেখা ও জানার কথা তো হলো, কিন্তু একটি সফল ক্যারিয়ারের জন্য চাই একটি সুন্দর শুরু। আপনাকে কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে। যেমনঃ
- একদম প্রথম দিকে আপনি হয়তো মনমতো কাজ নাও পেতে পারেন। তবে যদি ধৈর্য্য ধরে লেগে থাকেন, তাহলে একসময় অবশ্যই আশানুরূপ এমনকি আশাতীত কাজও পাওয়া সম্ভব।
- পারিশ্রমিকের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা একটা বড় ব্যাপার। আপনার অভিজ্ঞতা যত বাড়বে আপনার পারিশ্রমিক আপনি সেমতো বাড়িয়ে নিতে পারবেন।
- তবে প্রথম প্রথম দক্ষতা অর্জনের জন্য কিছু কাজ বিনামূল্যে করে দিতে পারেন। তবে মাথায় রাখবেন এমন কাজের পরিমাণ যেনো খুব বেশি না হয়ে যায়। তাহলে আপনার মূল্য কমে যেতে পারে।
- ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার সবচেয়ে সুন্দর একটি উপায় হলো ফ্রী সোর্স ব্যবহার করে কাজ করা। যেমন, আমরা বর্তমানে অনলাইন দুনিয়ায় যা কিছুই ব্যবহার করি তার বেশিরভাগই কিন্তু টাকা দিয়ে কিনতে হয়। কিন্তু যে জিনিসটা শুরু থেকেই আইনত ফ্রী, তাই হলো ফ্রী সোর্স।
- ফ্রী সোর্স সফটওয়্যার বা ফ্রী সোর্স কোন প্রজেক্টে কাজের মাধ্যমে একইসাথে যেমন আপনার কাজের অভ্যাস হবে, নিজের ঘাটতিগুলো বুঝতে পারবেন, অভিজ্ঞতা বাড়বে ঠিক তেমনি অনেক বড় বড় ফ্রিল্যান্সারদের সাথে সুসম্পর্ক তৈরি হয়ে যাবে। আর তাদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখলে পরবর্তীতে অনেক কঠিন পর্যায়ে তা আপনার কাজে দেবে।
ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার
আপনি যদি দক্ষ হন তাহলেই আপনি আপনার ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার শুরু করতে পারেন । বিস্তারিত বলার আগে ক্যারিয়ার কি তা সম্পর্কে একটু পরিষ্কার হয়ে নেওয়া যাক। অনেকেই মনে করেন ‘পেশা’ এবং ‘ক্যারিয়ার’ একই জিনিস। বিষয়টি আসলে এমন নয়। আপনি যেই কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করবেন তা হলো আপনার পেশা। আর সেই পেশাতে আপনি যা যা করবেন, যত অর্জন বা ব্যর্থতা থাকবে তাই হলো ঐ পেশায় আপনার ক্যারিয়ার।
ফ্রীল্যান্সিং করার জন্য কাজ কোথায় পাবেন?
ফ্রিল্যান্সিং এ কাজ পাওয়ার জন্য অবশ্যই কোন না কোন অনলাইন প্ল্যাটফর্ম তথা ওয়েবসাইটের সাথে যুক্ত থাকতে হবে। ফ্রিল্যান্সিং এর জন্য বর্তমানে অসংখ্য সাইট রয়েছে। ফ্রিল্যান্সিং এর শুরুতে আপনার প্রথম কাজই হবে এ সকল সাইটে নিজের অ্যাকাউন্ট খোলা। তবে অসংখ্য সাইটে একসাথে অ্যাকাউন্ট খোলার দরকার নেই। বেছে বেছে নিজের পছন্দ অনুযায়ী কিছু জনপ্রিয় সাইটে অ্যাকাউন্ট খুললেই চলবে।
অ্যাকাউন্ট খোলা শেষ হলে আপনার নিজের প্রোফাইলটিকে ভালভাবে সাজাতে হবে। সেখানে অবশ্যই আপনার নাম ও ছবির পাশাপাশি আপনি কি কি কাজ ভাল পারেন, কোন কোন সফটওয়্যারে এক্সপার্ট, কত বছরের অভিজ্ঞতা, শিক্ষাগত যোগ্যতা কী এসবের উল্লেখ করতে হবে। তবে অনেকেই নিজের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নিয়ে হীনমন্যতায় ভোগে। এটি অমূলক। কারণ ক্লায়েন্ট দেখবে আপনার কাজ। আপনি কাজ ভালভাবে করতে পারেন কিনা সেটিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। নিচে স্বনামধন্য কিছু ফ্রিল্যান্সিং সাইটের নাম দিয়ে দিচ্ছি।
তবে এসকল ফ্রিল্যান্সিং সাইটে কাজ করার জন্য পারিশ্রমিকের ভিত্তিতে ভিন্ন ভিন্ন কিছু পদ্ধতি রয়েছে, যেমনঃ
১। আওয়ারলি রেট (Hourly rate)
২। বিড করে কাজ (Bidding)
৩। প্রজেক্ট অনুসারে কাজ(Project Base)
১। আওয়ারলি রেটে কাজ (Hourly Rate)
ফ্রিল্যান্সিং সাইটগুলোতে আপনি কত টাকায় কাজ করবেন তা ঠিক করতে পারবেন। এর নানা ধরনের পদ্ধতি আছে। একটি পদ্ধতি হলো আওয়ারলি রেট (Hourly rate) অর্থাৎ প্রতি ঘন্টা কাজে আপনি কত টাকা নেবেন তা ঠিক করে দেওয়া। এক্ষেত্রে কোন ধরা বাঁধা নিয়ম নেই, কিন্তু আপনাকে অবশ্যই বাজার যাচাই করে নিজের পারিশ্রমিক ঠিক করতে হবে। আপনার অভিজ্ঞতা, কাজের ধরণ এসব বিচার করে আপনার পারিশ্রমিক ঠিক করবেন যাতে অন্যদের চাওয়া পারিশ্রমিকের সাথে আপনার সামঞ্জস্য থাকে। এক্ষেত্রে নতুন ফ্রিল্যান্সাররা সাধারণত কম পারিশ্রমিক চেয়ে থাকে। কিন্তু অভিজ্ঞ ফ্রিল্যান্সার অনেকেই কাজভেদে প্রতি ঘন্টার জন্য ৫০-১৫০ ডলার পর্যন্ত আয় করে।
২। বিড করে কাজ (Bidding)
আরেকটি পদ্ধতি হলো বিড (Bid) করে কাজ পাওয়া। এই বিড প্রক্রিয়াতে যিনি কাজ দেবেন তিনিই পারিশ্রমিকের রেঞ্জ ঠিক করে দেবেন। সেই রেঞ্জের মাঝে সমস্ত ফ্রিল্যান্সাররা বিড করবে। ব্যাপারটা অনেকটা নিলামের মতো। যে সর্বনিম্ন ডাক দেবে তার কাজটা পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কিন্তু এক্ষেত্রে কত টাকায় কাজ করলে আপনার পোষাবে তাও আপনাকে মাথায় রাখতে হবে। এবং খুব কম বিড দিলে ক্লায়েন্ট আপনাকে অনভিজ্ঞ ভাবতে পারে। ফলে কাজ হারাবেন। একইভাবে খুব বেশি বিডও দেওয়া যাবে না। অর্থাৎ সামগ্রিকভাবে একটি ভারসাম্য বজায় রেখে চলতে হবে। প্রথম প্রথম বিড করে কাজ না পেলে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। বার বার বিভিন্ন কাজে বিড দিতে থাকলে অবশ্যই কাজ পাবেন। এবং আপনার কাজের সংখ্যা যত বাড়বে, ভবিষ্যতে কাজ পাওয়ার সম্ভাবনা ততটাই বেড়ে যাবে।
৩। প্রজেক্ট অনুসারে কাজ (Project Base)
অনেক সময়ই ফ্রিল্যান্সাররা সরাসরি ক্লায়েন্টদের সাথে যুক্ত হয়ে একটি নির্দিষ্ট সময়ের ভিত্তিতে এবং একটি নির্দিষ্ট পারিশ্রমিকের মাধ্যমে চুক্তিবদ্ধ হয়ে বিভিন্ন ধরনের প্রজেক্টে অংশ নেন। এমন অনেক প্রজেক্ট রয়েছে যা শুধুমাত্র একজন ফ্রিল্যান্সারের পক্ষে সম্পূর্ণ করা প্রায় অসম্ভব। এ ধরনের বড় কাজগুলো সাধারণত কোন কোম্পানি দিয়ে থাকে এবং অনেকজন ফ্রিল্যান্সার মিলে কাজটি শেষ করে। এটিই হলো প্রজেক্ট। একজন ফ্রিল্যান্সারের যদি নির্দিষ্ট অভিজ্ঞতা থেকে থাকে তাহলে তিনি কোন প্রজেক্টে যোগ দিতে পারেন। এতে করে যতদিন প্রজেক্টটি শেষ না হবে ততদিন তিনি সেখানে কাজ করে যাবেন। সাধারণত পারিশ্রমিকের ব্যাপারটা প্রজেক্ট শুরু করার আগেই ঠিক করে নেওয়া হয়।
প্রজেক্ট অনুযায়ী কেউ কেউ আবার দিনভিত্তিক কাজ করে থাকে। অর্থাৎ যতদিন প্রজেক্ট চলবে প্রত্যেকদিনের জন্য পারিশ্রমিক প্রদান করবে ক্লায়েন্ট। আবার কেউ কেউ পুরো প্রজেক্টটি শেষ করার বিনিময়ে একটি বড় অংকের টাকা নিয়ে থাকে।
একজন প্রতিষ্ঠিত ফ্রিল্যান্সার হবেন কিভাবে?
যেকোনো পেশাতেই প্রতিষ্ঠিত হতে হলে সে পেশায় লেগে থাকা ছাড়া উপায় নেই। মনে রাখতে হবে, ‘পরিশ্রমই উন্নতির চাবিকাঠি’। আপনি নিয়মিত কাজের জন্য বিড করলে এবং যেসব কাজ পাবেন তা যদি সুন্দরভাবে করে দেন তাহলে ক্লায়েন্ট আপনাকে ভাল একটি রেটিং(Rating) দেবেন। ফলে ভবিষ্যতে অধিক ক্লায়েন্ট পাওয়াটা আরো সহজ হয়ে যাবে। আপনি যত বেশি কাজ করবেন এবং রেটিং বাড়াবেন আপনার অবস্থান তত ওপরে উঠে আসবে। একটা সময় ক্লায়েন্টরা নিজেই আপনার সাথে যোগাযোগ করে কাজ দেবে। এভাবে কয়েক বছর লেগে থাকলে আপনাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হবে না। কয়েক বছর সময়টা অনেক বেশি মনে হলেও চিন্তা করলেই বুঝতে পারবেন যে অন্যান্য পেশায় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সময়ের তুলনায় ফ্রিল্যান্সিং এ সময় লাগতে পারে অনেক কম।
যখন আপনি একজন প্রতিষ্ঠিত ফ্রিল্যান্সার হবেন এবং নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে কাজ করবেন তখন আপনার নিজস্ব পারিশ্রমিক ঠিক করা থাকবে। এমন অনেক ফ্রিল্যান্সার আছে যারা লক্ষ টাকাও পারিশ্রমিক নেন। এছাড়াও অনেক ফ্রিল্যান্সার আলাদা করে নিজের নামে ওয়েবসাইট খোলেন, এমনকি এলএলসি (LLC) ধরনের অনলাইনভিত্তিক ছোটখাটো কোম্পানি খুলেও অনেকে ফ্রিল্যান্সিং করেন। অর্থাৎ এই ব্যাপারটা একদম পরিষ্কার যে আপনি যদি নিজেকে যোগ্য করে গড়ে তুলতে পারেন তাহলে বাংলাদেশের সাধারণ আয়মাত্রার চেয়ে অনেক বেশিই আয় করতে পারবেন।
এছাড়াও বর্তমানে বাংলাদেশের অনেক সাধারণমানের ফ্রিল্যান্সার কিন্তু ফ্রিল্যান্সিং করে স্বচ্ছলভাবে জীবন নির্বাহ করছে। যা কিনা প্রযুক্তিগতভাবে বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে অনেকটাই পিছিয়ে থাকা বাংলাদেশের মতো একটি ছোট ও উন্নয়নশীল দেশের জন্য খুবই গৌরবের বিষয়। ঢাকা ট্রিবিউন পত্রিকার ভাষ্যমতে ২০২০ সালে বাংলাদেশে মোট ফ্রিল্যান্সারের সংখ্যা প্রায় ৭,০০,০০০ এর কাছাকাছি এবং সক্রিয় ফ্রিল্যান্সার রয়েছে প্রায় ৫,০০,০০০ এর কাছাকাছি, যারা নিয়মিত কাজ করছেন। বিশ্ব ফ্রিল্যান্সারদের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান বর্তমানে ৩য়। যা বলতে গেলে প্রায় অবিশ্বাস্য।
দেশীয় ফ্রিল্যান্সিং সাইট
বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সাররা সারা বিশ্বে বিশাল এক মার্কেট দখল করে রাখলেও আমাদের নিজেদের দেশের জন্য তেমন ভাল কোন ফ্রিল্যান্সিং সাইট নেই। এদেশে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে কিন্তু ক্লায়েন্টের অভাবে সেগুলো ঠিক সফল হতে পারে নি। বিল্যান্স (Belance), ট্রুল্যান্সার (TrueLancer), স্বাধীন কাজ (ShadinKaj), সহ বাংলাদেশ সরকারেরও এমন কিছু উদ্যোগ ছিল। কিন্তু যে পরিমাণ অর্থ ও পরিশ্রম একটি মার্কেটপ্লেস গড়ে তুলতে প্রয়োজন তার অভাবে হয়তো আজ অবধি বাংলাদেশের নিজের একটি বলার মতো ফ্রিল্যান্সিং সাইট নেই। তবে এক্ষেত্রে দমে যাওয়ার কিছু নেই, আন্তর্জাতিকভাবে কাজ করেআর ১০জন সফল ফ্রিল্যান্সারদের মতো আপনিও নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবেন।
শেষ কথা
আশা করি এই আর্টিকেল থেকে আপনার ফ্রিল্যান্সিং কি, কেন এবং কিভাবে শুরু করবেন এ সম্পর্কে ভালো ধারনার সন্ধান মিলেছে। পরিশেষে এটুকুই বলা যায় বাংলাদেশের বেকার সমস্যা দূরীকরণে আসলে ফ্রিল্যান্সিং এর চেয়ে ভাল সমাধান এখন আর নেই। বেকারত্বের অভিশাপ যে কি তা শুধুমাত্র একজন বেকারই বোঝে। আর বর্তমান বৈশ্বিক মহামারির সময়ে অনেক ছোটখাটো কোম্পানিই মুখ থুবড়ে পড়েছে, হাজার মানুষ হয়েছে বেকার। এ পরিস্থিতি খুব দ্রুত স্বাভাবিক হবে না। আর এ মন্দার দুনিয়ায় টিকে থাকতে হলে যত দ্রুত সম্ভব নেমে পড়ুন নিজের দক্ষতা বাড়াতে। আর এটি যে শুধুমাত্র বেকারদের জন্য এমনটিও নয়।
চাইলে বাচ্চা থেকে বুড়ো সবাই নিজের অবসর সময়কে কাজে লাগিয়ে মোটা অংকের টাকা আয় করে নিতে পারে।