ইউটিউবের বিস্তারিত!!

 


কিভাবে ইউটিউব থেকে টাকা আয় করা যায়?

ইউটিউবে ভিডিও আপলোড এবং তার মাধ্যমে টাকা আয়ের জন্য প্রথমেই আপনার প্রয়োজন একটি নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেল। ইউটিউব যেহেতু Google এর অঙ্গ প্রতিষ্ঠান তাই ইউটিউবের সকল কাজ করার জন্য একটি গুগল একাউন্ট প্রয়োজন। তাই প্রথমেই আপনার গুগল একাউন্ট দিয়ে ইউটিউবে লগ ইন করতে হবে। এতে করে আপনি ইউটিউব পূর্ণাঙ্গ রুপে ব্যবহার করতে পারবেন। তবে গুগল একাউন্ট দিয়ে সাইন ইন করলে স্বয়ংক্রিয় ভাবে চ্যানেল তৈরি হয় না। তার জন্য অনুসরণ করতে হবে আরো কিছু ধাপ।

ধাপ ১ঃ গুগল একাউন্ট দিয়ে লগ ইন করুন

গুগল একাউন্ট দিয়ে সাইন ইন করতে প্রথমেই Youtube.com এ যান। অতঃপর ‘SIGN IN’ বাটনে ক্লিক করুন।

ধাপ ১ঃ গুগল একাউন্ট দিয়ে লগ ইন করুন

‘SIGN IN’ এ ক্লিক করলে নিচের মতো আরেকটি দৃশ্য দেখতে পাবেন। সেখানে নিজের ইমেইল একাউন্ট ও পাসওয়ার্ড দিয়ে সাইন ইন করুন।

ইমেইল একাউন্ট ও পাসওয়ার্ড দিয়ে সাইন ইন করুন

ধাপ ২ঃ বিজনেস বা ব্র্যান্ডের নামে ইউটিউব চ্যানেল খুলুন

ইউটিউবে গুগল একাউন্ট সাইন ইন করার পর যেখানে ‘SIGN IN’ লেখা ছিল সেখানে আপনার একাউন্টের প্রোফাইল পিকচার দেখতে পারবেন। তার উপর ক্লিক করুন। ক্লিক করার পর নিচের মতো একটি চিত্র দেখতে পাবেন। চিত্রে চিহ্নিত ‘Create A Channel’ বাটনে ক্লিক করে নিজের একটি চ্যানেল খুলে ফেলুন। আপনি চাইলে চ্যানেলের নাম হিসেবে আপনার গুগল একাউন্টের নাম দিতে পারেন। অথবা ভিন্ন কিছু ও দিতে পারেন।

যেহেতু আপনার মূল উদ্দেশ্য ইউটিউব থেকে টাকা আয় তাই আপনার উচিত একটি ব্র্যান্ড চ্যানেল খোলা। কারণ ব্র্যান্ড চ্যানেলের মাধ্যমে Youtube Analysis সেবা ব্যবহার করে অনেক কিছু করতে পারবেন যা ব্যাক্তিগত চ্যানেলে পারবেন না। ইউটিউব মূলত ব্র্যান্ড চ্যানেল তৈরিই করেছে আয় করার প্রক্রিয়াটি আরো নিপুণ করার জন্য। ব্র্যান্ড চ্যানেল খুলতে আপনার ইউটিউবে গিয়ে আবার নিজের প্রোফাইল পিকচার/ আইকন এ ক্লিক করুন। এরপর ‘Settings’ এ ক্লিক করুন। সেখানে নিচের চিত্রের মতো দৃশ্য দেখতে পাবেন।

নিজস্ব ব্র্যান্ড চ্যানেল তৈরি

উপরের চিত্রের ন্যায় ‘Create a new channel’ অথবা একই স্থানে থাকা ‘Add or manage your channel(s)’ এ ক্লিক করলে আপনি একটি ব্র্যান্ড চ্যানেল খুলতে পারবেন। সেখানে আপনার ব্র্যান্ড চ্যানেলের নাম দিলেই তৈরি হয়ে যাবে নিজস্ব ব্র্যান্ড চ্যানেল।

ধাপ ৩ঃ চ্যানেল সাজিয়ে গুছিয়ে তুলুন

চ্যানেলকে সফল করতে চাইলে অবশ্যই চ্যানেলটিকে সাজিয়ে গুছিয়ে আকর্ষণীয় ভাবে উপস্থাপন করতে হবে। প্রাথমিক ভাবে কিছু জিনিস যুক্ত করা সবচেয়ে বেশি জরুরী। সেগুলো হলো চ্যানেলের প্রোফাইল পিকচার, ব্যানার ও ভিডিও ওয়াটারমার্ক। প্রোফাইল পিকচার আপনার চ্যানেলের পরিচয় বহন করবে। ব্যানার কভার ফটোর মতো ব্যবহৃত হবে যার মাধ্যমে আপনার চ্যানেলকে ফুটিয়ে তুলতে পারবেন। অপর দিকে চ্যানেলের সকল ভিডিওর উপর আপনার মালিকানা বোঝাতে ভিডিও ওয়াটারমার্ক ব্যবহৃত হবে। এ সকল জিনিস চ্যানেলে যুক্ত করতে  হলে, যেতে হবে studio.youtube.com এ। সেখানে ইউটিউব একাউন্টের জিমেইল দিয়ে সাইন ইন করলেই নিজের চ্যানেলকে আকর্ষণীয় করে তোলার সকল উপায় পেয়ে যাবেন।ইউটিউব স্টুডিয়

ইউটিউব পার্টনার প্রোগ্রামে যুক্ত হোন

ইউটিউব পার্টনার প্রোগ্রাম (Youtube Partner Program- YPP) হলো ইউটিউব থেকে আয় করার শ্রেষ্ঠ মাধ্যম। ইউটিউব পার্টনার প্রোগ্রামে যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে আপনি আনুষ্ঠানিক ভাবে ইউটিউবের একজন ‘পার্টনার’ হবেন। এটি বাদে সরাসরি ইউটিউব কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে টাকা আয়ের দ্বিতীয় কোন উপায় নেই।

ধাপ ১ঃ ইউটিউব পার্টনার প্রোগ্রাম এর যোগ্যতা অর্জন করুন

ইউটিউব পার্টনার প্রোগ্রামে যুক্ত হতে চাইলে আপনার নূন্যতম চারটি যোগ্যতা থাকতে হবে।

  • প্রাপ্তবয়ষ্ক হওয়া অর্থাৎ ১৮ বছর বয়স।
  • চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবার নূন্যতম ১,০০০ হতে হবে।
  • আবেদনের পূর্বে গত ১২ মাসের ওয়াচ টাইম নূন্যতম ৪,০০০ ঘন্টা হতে হবে।
  • একটি এডসেন্স (AdSense) একাউন্ট থাকতে হবে।

ওয়াচ টাইম (Watch Time) হলো আপনার চ্যানেলে দর্শকরা কতটুকু সময় ভিডিও দেখেছে তার হিসাব। অর্থাৎ ভিডিওতে শুধু ভিউ (View) থাকলেই চলবে না বরং আরো ভিডিও যাতে মানুষ বেশি সময় ধরে দেখে তা লক্ষ্য রাখতে হবে।

ধাপ ২ঃ এডসেন্স একাউন্ট খুলুন

এডসেন্স একাউন্ট খোলাকে গুগল থেকে আয় করার প্রথম ধাপ বলা চলে। গুগল বছরে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার তার পার্টনারদের কে দিয়ে থাকে। আর এই ডলার আয় করার একমাত্র মাধ্যম হলো এডসেন্স একাউন্ট। আপনি ইউটিউব থেকে শুরু করে গুগল এর অন্যান্য সকল পরিষেবার মাধ্যমে যেই ডলার আয় করবেন তার সবটুকু জমা হবে এই এডসেন্স একাউন্ট এ। নূন্যতম ১০০ ডলার জমা হলে সেই ডলার আপনি তুলতে পারবেন।

এডসেন্স একাউন্ট খোলার জন্য প্রাথমিক সাইট হল এটিঃ Google AdSense। কিন্তু যেহেতু আপনি ইউটিউব চ্যানেল থেকে আয় করতে চান তাই সরাসরি ইউটিউব থেকেই এডসেন্স একাউন্ট খুলতে পারবেন। সেক্ষেত্রে এই লিংকে প্রবেশ করে জিমেইল একাউন্ট সাইন ইন করতে হবে। অতঃপর আপনার চ্যানেলের সাহায্যে এডসেন্স একাউন্ট খুলতে পারবেন কি না; তা বুঝতে পারবেন।

ধাপ ২ঃ এডসেন্স একাউন্ট খোলা

ইউটিউব পার্টনার প্রোগ্রামে যুক্ত হওয়ার যোগ্যতা আগেই উল্লেখ করেছি। সেই সকল শর্ত পূরণ করতে না পারলে ‘NOTIFY ME WHEN I’M ELIGIBLE’ বাটন উঠে থাকবে। শর্ত পূরণের পরে ওই একই স্থানে ‘Review Partner Program terms’ নামক একটি কার্ড (অপশন) দেখবেন। তার পাশে ‘Start’ বাটনে ক্লিক করলেই আপনাকে ইউটিউব পার্টনার প্রোগ্রামের সকল নীতিমালা দেখানো হবে। সে সকল নীতিমালা ভাল ভাবে পড়ে তাতে সম্মতি দিতে হবে। সম্মতি দিলে কার্ডে ‘Done’ লেখা উঠবে। অতঃপর এডসেন্স একাউন্ট খোলার জন্য ‘Sign up for Google AdSense’ নামক আরেকটি কার্ড আসবে। তাতে ক্লিক করলেই গুগল এডসেন্স একাউন্ট খোলার প্রক্রিয়া শুরু হবে।

গুগল এডসেন্স খুলতে মূলত তিনটি জিনিসের প্রয়োজন।

১) একটি গুগল একাউন্ট

২) ফোন নম্বর ও ঠিকানা; যা আপনার ব্যাংক একাউন্টের সাথে সংযুক্ত।

৩) সাইটের সাথে এডসেন্স যুক্ত করা

উপরিউক্ত তিনটি জিনিসের মধ্যে প্রথম ও তৃতীয়টি ইতোমধ্যে আপনার সম্পন্ন হয়ে থাকবে। যেহেতু আপনি ইউটিউব চ্যানেলের সাহায্যে এডসেন্স একাউন্ট খুলছেন। তবে ফোন নম্বর, ঠিকানা ও ব্যাংক একাউন্টের তথ্যাবলী অবশ্যই নির্ভুল ভাবে দিতে হবে।

ধাপ ৩ঃ রিভিউড (Reviewed) হওয়া

এডসেন্স একাউন্ট খুলে মনেটাইজেশনের জন্য আবেদন করার পর কিছুকাল অপেক্ষার প্রহর গুণতে হবে। সাধারণত চূড়ান্ত আবেদনের দিন থেকে এক মাসের মধ্যে রিভিউ সম্পন্ন হয়। তবে আবেদনের সংখ্যা অনেক বেশি হলে অথবা কোন কারিগরি সমস্যা থাকলে আরো সময় লাগতে পারে। ইউটিউব রিভিউ টিম যদি আপনার চ্যানেলের সব কিছু তাদের নীতিমালা অনুযায়ী সঠিক মনে করে তবেই আপনি মনিটাইজেশন পাবেন।

ধাপ ৪ঃ ঠিকানা নিশ্চিত করা

এডসেন্স একাউন্ট খোলার সময় আপনি যেই ঠিকানা গুগল কে দেবেন সেটি তারা পরীক্ষা করে দেখবে। এই প্রক্রিয়া শুরু হবে মনেটাইজেশনের জন্য মনোনীত হওয়ার পরে। আপনার একাউন্টে ১০ ডলার জমা হলে তারা আপনার ঠিকানায় একটি PIN পাঠাবে। তার ৪ মাসের মধ্যে অবশ্যই আপনাকে পিনের সাহায্য নিজের ঠিকানা নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় আপনার এডসেন্স একাউন্ট অকার্যকর হয়ে পড়বে।

সর্তকীকরণ

আগে থেকেই এডসেন্স একাউন্ট থাকলে ইউটিউব চ্যানেলের জন্য নতুন এডসেন্স একাউন্ট খোলার কোন প্রয়োজন নেই। একটি এডসেন্স একাউন্টের সাহায্যেই সকল সাইট এবং একাধিক ইউটিউব চ্যানেল থেকে আয় করতে পারবেন। কিন্তু কেউ যদি নতুন এডসেন্স একাউন্ট খোলে তবে তার আগের একাউন্ট অথবা নতুন একাউন্ট অকার্যকর হয়ে পড়বে। কারণ এক ব্যাক্তির নামে শুধু একটি এডসেন্স একাউন্টই কার্যকর থাকতে পারে।

ইউটিউব থেকে আয় করা টাকার উৎস

বর্তমানে অনেক ইউটিউবারই ঘরে বসে ভালো পরিমানের আয় করে। ইউটিউব থেকে টাকা আয় করতে চাইলে শুধু ইউটিউব পার্টনার প্রোগ্রামে যুক্ত হলেই হবে না। বরং কিভাবে এই পার্টনার প্রোগ্রাম কাজ করে তা বুঝতে হবে। এটির টাকার উৎস সম্পর্কে জানতে হবে। মূলত পার্টনার প্রোগ্রামের পুরো প্রক্রিয়াটাই একটি বিজ্ঞাপন ভিত্তিক প্রক্রিয়া। প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ মানুষ ও প্রতিষ্ঠান গুগলে তাদের বিজ্ঞাপন  দিচ্ছে। ইউটিউব সেই বিজ্ঞাপন  গুলোই আপনার ভিডিওতে দেখিয়ে থাকে। ফলে বিজ্ঞাপন  দাতারা যেই টাকা বিজ্ঞাপনের জন্য খরচ করেছে তার বড় একটি অংশ আপনি পাবেন। মূলত ইউটিউব বর্তমানে একটি বিশাল বিজ্ঞাপন কেন্দ্র। আর আপনার মনিটাইজ করা ভিডিও গুলো সে বিজ্ঞাপনের  ক্ষেত্র। তবে ইউটিউব আপনাকে কেন টাকা দেবে সেটি বোঝার পাশাপাশি কতটুকু টাকা দেবে তা বোঝাও জরুরী। আর সেজন্যই সিপিএম ও আরপিএম সম্বন্ধে জ্ঞান থাকা আবশ্যক।

সিপিএম ও আরপিএম (CPM & RPM) 

সিপিএম (CPM) 

CPM এর অর্থ Cost Per Mile. তবে এটি সর্বাধিক পরিচিত Cost per Thousand নামে। মূলত সিপিএম হলো প্রতি ১০০০ হাজার বিজ্ঞাপনের জন্য বিজ্ঞাপন দাতা যেই অর্থ খরচ করবে তার পরিমাণ। সিপিএম টার্মটি আসলে বিজ্ঞাপন দাতাদের সাথে বেশি জড়িত। ধরা যাক একটি প্রতিষ্ঠান গুগলে/ ইউটিউবে বিজ্ঞাপন দিতে চায়। সেই বিজ্ঞাপন গুলো আপনার চ্যানেলে দেখানো হবে। তাদের বিজ্ঞাপনটি আপনার ভিডিও গুলোয় প্রতি ১০০০ হাজার বার দেখানো হলে তারা ইউটিউবকে যেই পরিমাণ ডলার দেবে তাই হলো সিপিএম। অর্থাৎ সিপিএম এর ক্ষেত্রে লেনদেন হয় বিজ্ঞাপন দাতা ও ইউটিউবের মধ্যে।

সিপিএম এর তারতম্য

সিপিএম কী তা পূর্বেই ব্যাখা করেছি। কিন্তু সকল ইউটিউবারের সিপিএম এক হয় না। কিছু কারণে সিপিএম এর বিশাল পার্থক্য হয়ে থাকে যা জানা জরুরী।

ভৌগলিক অবস্থানঃ সিপিএম এর সবচেয়ে বেশি পার্থক্য দেখা যায় ভৌগলিক অবস্থানের কারণে। বিশ্বের ভিন্ন ভিন্ন প্রান্তে মানুষের আর্থিক সক্ষমতা ভিন্ন রকম। আর সেজন্যই বিজ্ঞাপনের খরচও ভিন্ন রকম। গত বছর গড়পড়তায় সবচেয়ে বেশি সিপিএম ছিলো কানাডাতে। পর্যায়ক্রমে পরের দেশ গুলো হলো অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রিয়া, জার্মানি ও সুইজারল্যান্ড। এসব দেশের তুলনায় বাংলাদেশ বা এই অঞ্চলের দেশ গুলোর সিপিএম একেবারেই নগণ্য।

সময়ঃ বছরের বিভিন্ন সময়ে সিপিএম পার্থক্য খুব সহজেই চোখে পড়ে। সিপিএম নির্ভর করে বিজ্ঞাপন দাতার উপর। ঈদ, পূজা, বড়দিন ইত্যাদি উৎসবের আগে বেশি বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়ে থাকে। ফলে স্বভাবতই সিপিএম বেড়ে যায়।

চ্যানেলের ধরনঃ চ্যানেলের ধরণের ওপর সিপিএম অনেকটুকুই নির্ভর করে। সকল ধরণের ভিডিও বিজ্ঞাপন দাতাদের সমান ভাবে আকৃষ্ট করে না। যে ধরণের ভিডিও বিজ্ঞাপন দাতার বেশি পছন্দ সেগুলোতে সিপিএম তুলনামূলক বেশি। সাধারণত ই-কমার্স, রিয়েল এস্টেট, ইনসুরেন্স, ব্যবসা, মার্কেটিং, মেক আপ, ফিটনেস এই ধরণের  ভিডিওতে সিপিএম বেশি হয়ে থাকে। উপরের দুইটি বিষয়ে ইউটইউবারের কোন কিছু করার না থাকলেও চ্যানেলের ধরন নির্ভর করে ব্যক্তির উপর। প্রয়োজনে শুরু থেকেই উচ্চ সিপিএম রয়েছে এমন ধরণের ভিডিও বানাতে পারেন। তবে মনে রাখতে হবে যে সিপিএম স্থায়ী কিছু নয় ও সময়ের সাথে পরিবর্তনশীল।

আরপিএম (RPM)

RPM এর অর্থ Revenue Per Mile। মূলত আপনার ভিডিওতে প্রতি ১০০০ বিজ্ঞাপন দেখানোর জন্য আপনি কত ডলার পাবেন তাই হলো আরপিএম। সিপিএম দ্বারা মূলত ইউটিউব বিজ্ঞাপন দাতা থেকে কত ডলার নেবে তা জানা যায়। কিন্তু ইউটিউব সেই অর্থ থেকে ৪৫% নিজেদের শেয়ার হিসেবে কেটে রাখে। এটিকে বলে ‘রেভিনিউ শেয়ার’। অর্থাৎ বিজ্ঞাপন দাতা আপনার চ্যানেলের সিপিএম অনুযায়ী যা ডলার দেবে আপনি পাবেন তার ৫৫%। এটিই হবে আপনার ইউটিউব থেকে আয়ের পরিমাণ।

সিপিএম এর সাথে আরপিএম এর অমিল 

অনেক ক্ষেত্রেই ইউটিউবরারা সিপিএম ও আরপিএম এর অসামঞ্জস্যতার মুখোমুখি হয়। কারণ অনেকেই সিপিএম দেখে তার ৫৫% পাওয়ার সরল হিসাব করেন। কিন্তু আসলে হিসাবটা আরেকটু জটিল। আপনি কত ডলার পাবেন তা মূলত নির্ধারণ করে আরপিএম। সিপিএম এর সাথে নানা কারণে এর অমিল থাকতে পারে। ধরা যাক সিপিএম অনুযায়ী আপনার চ্যানেলে ১০০০ বিজ্ঞাপন দেখানোর জন্য বিজ্ঞাপন দাতাকে দিতে হবে ১০ ডলার। সে হিসেবে প্রতি ১০০০ ভিডিও ভিউ এর জন্য আপনার আরপিএম হওয়া উচিত ৫.৫ ডলার। কিন্তু তা এর কম বা বেশি হতে পারে। কারণ আরপিএম হলো আপনার ভিডিওতে প্রতি ১০০০ বিজ্ঞাপন দেখানোর জন্য পাওয়া ডলারের পরিমাণ। অর্থাৎ আপনার যদি ১০০০ ভিডিও ভিউ হয় অথচ কোন বিজ্ঞাপন দেখানো না হয় তাহলে আরপিএম হবে শূন্য। একই ভাবে মাত্র ৫০০ ভিডিউ ভিউ হলেও যদি প্রত্যেক ভিডিওতে দুটি করে বিজ্ঞাপন দেখানো হয় তাহলে আরপিএম হবে ৫.৫ ডলার। অর্থাৎ আরপিএম পুরোপুরি নির্ভর করে আপনার চ্যানেলে কতটি বিজ্ঞাপন দেখানো হয়েছে তার ওপর। তাই ভিডিও ভিউ বেশি হলেই আরপিএম বেশি হবে এমন বাধ্যবাধকতা নেই।

উপরিউক্ত পুরো হিসাবটুকুই বিজ্ঞাপন অর্থাৎ এড রেভিনিউ থেকে কত ডলার পাবেন তার ওপর। তবে এড রেভিনিউ ছাড়াও ইউটিউবের মাধ্যমে আরো নানা ভাবে টাকা আয় করা সম্ভব। যা আর্টিকেলের পরবর্তী অংশে বিস্তারিত বলা হয়েছে।

নিজস্ব পণ্য বিক্রি করা

নিজস্ব পণ্য বিক্রি করা অনেক ইউটিউবারের প্রধান আয়ের উৎস। আগেই বলেছি ইউটিউব নিজেই একটি বিজ্ঞাপন কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে। ইউটিউব আপনার ভিডিওর সাহায্যে অন্যের বিজ্ঞাপন করছে। ঠিক একই ভাবে আপনি নিজেই নিজের বিজ্ঞাপন করতে পারেন। গোটা বিশ্বের অসংখ্য জনপ্রিয় ইউটিউবার এখন এই পদ্ধতি অনুসরণ করে। এই পদ্ধতিতে আপনাকে তিনটি ধাপে এগোতে হবে।

জনপ্রিয়তা অর্জনঃ ইউটিউবের সাহায্যে নিজের পণ্য বিক্রির প্রথম শর্তই হলো জনপ্রিয়তা অর্জন। আপনি যতটা জনপ্রিয় হবেন; আপনার পণ্য তত বেশি বিক্রি হবে। অনেক ইউটিউবার প্রথমে জনপ্রিয়তা অর্জন করে পরে তা কাজে লাগিয়ে পণ্য বিক্রি করেন। অনেকে শুরু থেকেই এই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে। কোন পন্থা বেছে নেবেন তা আপনার সিধান্ত।

পণ্য উৎপাদনঃ কোন কিছু বিক্রি করতে চাইলে আগে চাই তার উৎপাদন। এক্ষেত্রে আপনি আপনার চ্যানেলের সাথে সামাঞ্জস্য রেখে কোন পণ্য বেছে নিতে পারেন। তা হতে পারে, টিশার্ট, ব্যাগ, বই, ক্যাপ, জুতা, মেকআপ কিংবা যেকোনো কিছু। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় বাংলাদেশের জনপ্রিয় দুজন ইউটিউবার আয়মান সাদিক ও অন্তিক মাহমুদ এর নাম। তারা কিন্তু তাদের বই এর বেশিরভাগ বিক্রি নিশ্চিত করেছে ইউটিউবের সাহায্যেই।

পণ্য বিক্রয়ের প্ল্যাটফর্ম তৈরিঃ অনেক ইউটিউবার ভিডিওতে তাদের পণ্য কেনার জন্য শুধু উৎসাহিত করেন। আবার অনেকেই সরাসরি বিক্রির ব্যবস্থাও রাখেন। বাইরের দেশে ‘ইউটিউব শেলফ’ নামক সুবিধা রয়েছে। এতে করে সরাসরি ইউটিউব থেকেই জিনিস বিক্রি করা যায়। কিন্তু বাংলাদেশে এ সুবিধা না থাকায় আলাদা সাইটে বিক্রির ব্যবস্থা করতে হয়। সেজন্য যে ভিডিওতে আপনার পণ্য কিনতে বলবেন তার ডেসস্ক্রিপশন (Description) এ আপনার ফেসবুক পেজ বা সাইটের লিংক দিয়ে দিতে পারেন। এতে পণ্য বিক্রির সম্ভাবনা অনেকটাই বেড়ে যাবে।

স্পন্সরশিপ ও অ্যাফিলিয়েটেড মার্কেটিং এর মাধ্যমে আয় 

স্পন্সরশিপ হতে পারে আপনার আয়ের আরেকটি বড় মাধ্যম। সাধারণত সবচেয়ে জনপ্রিয় ইউটিউবাররাই স্পন্সর পেয়ে থাকে। তবে ইদানীং অনেক ছোট ছোট ব্র্যান্ড তুলনামূলক কম বিখ্যাত ইউটিউবারদেরও স্পন্সর করছে।

স্পন্সরশিপঃ স্পন্সরের সাহায্যে আয়ের মূল বিষয়টাও আসলে বিজ্ঞাপন। একটি প্রতিষ্ঠান আপনাকে স্পন্সর করার অর্থ আপনাকে সেই প্রতিষ্ঠান বা তার পণ্যের গুণগান করতে হবে। তবে এর জন্য আপনার বেশ কৌশলী হওয়া প্রয়োজন। কারণ হুট করে ভিডিওর মাঝখানে কারো গুণগান করলে তা দৃষ্টিকটু লাগে। এজন্য ভিডিওর মধ্যে প্রাসঙ্গিক ভাবে স্পন্সর বা তার পণ্যের কথা তুলে ধরার কৌশল জানতে হবে।

অ্যাফিলিয়েটেড মার্কেটিংঃ অ্যাফিলিয়েটেড মার্কেটিং স্পন্সরশিপেরই পরবর্তী রুপ। এর মাধ্যমে আপনি সরাসরি আপনার দর্শককে নির্দিষ্ট পণ্য কেনার জন্য উৎসাহিত করেন। সাধারণত ইউটিউবাররা ভিডিওতে পণ্যর কথা বলে ডেসস্ক্রিপশনে তা কেনার লিংক দিয়ে দেয়। এক্ষেত্রে সুবিধা হলো সেই নির্দিষ্ট লিংক থেকে ঢুকে পণ্যে কিনলে ক্রেতারা কিছু ছাড় পায়। অনেক সময় কিছু কুপন কোড ও ব্যবহার করা যায়। সেভাবেও কিছু লাভ ক্রেতাদের হয়ে থাকে। একই সাথে যখন আপনার দেওয়ার লিংক বা কুপন কোড ব্যবহার করে তারা কিছু কিনবে তখন কিছু পরিমাণ লাভবান আপনিও হবেন। মূলত এভাবেই অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কাজ করে। তা হতে পারে দেশি অথবা বিদেশি যেকোনো প্রতিষ্ঠানের সাথে।

তবে একটি বিষয় মনে রাখা জরুরী। যেকোনো প্রতিষ্ঠান থেকে স্পন্সরশিপ নেওয়া বা অ্যাফিলিয়েট করার আগে অবশ্যই তাদের সম্পর্কে যাচাই করে নেওয়া উচিত। প্রতিষ্ঠানটির সার্ভিস কেমন, তারা কেমন মানের পণ্য ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করছে তা স্পষ্ট ভাবে জানা উচিত। এ সব সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা না থাকলে এ পথে না এগোনোই ভাল। কারণ ওই প্রতিষ্ঠানের পণ্য খারাপ হলে বিজ্ঞাপনকারী হিসেবে কিন্তু তার দায় ইউটিউবারের ওপরেও বর্তাবে।

ইউটিউব চ্যানেলের আইডিয়া

ইউটিউব থেকে আয় করার জন্য আপনার চ্যানেলটি জনপ্রিয় হওয়াটাই সবচেয়ে জরুরী। আর জনপ্রিয় হতে হলে আপনাকে এমন একটি বিষয় বেছে নিতে হবে যার প্রতি মানুষের আগ্রহ আছে। নিচে ইউটিউব চ্যানেলের কিছু জনপ্রিয় আইডিয়া উল্লেখ করছি।

টেকনোলজিঃ টেকনোলজি বর্তমানে ইউটিউবের ট্রেন্ডিং বিষয়। গত দুই – তিন বছর যাবত মানুষ কোন ইলেক্ট্রিকাল পণ্য কেনার আগে ইউটিউবে রিভিউ খোজে। বর্তমানে টেকনোলজি ভিত্তিক চ্যানেল ইউটিউবে এতটাই জনপ্রিয় যে এর জন্য ‘টেকটিউবিং’ নামক একটি আলাদা টার্মই গড়ে উঠেছে। আপনার যদি ইলেক্ট্রিকাল বিভিন্ন পণ্য যেমন মোবাইল, ল্যাপটপ, ডেস্কটপের বিভিন্ন পার্টস, ক্যামেরা ইত্যাদি সম্পর্কে ভাল জ্ঞান থেকে থাকে তবে আপনি একটি টেকনোলজি ভিত্তিক চ্যানেল খুলতে পারেন। তবে এ ক্ষেত্রে যেই বাধাটির সম্মুখীন হতে হয় তা হলো টাকা। বড় বড় চ্যানেল গুলোকে কোম্পানি থেকেই বিভিন্ন ইউনিট সরবরাহ করা হয় রিভিউ এর জন্য। কিন্তু নতুন চ্যানেল হলে প্রথমে আপনাকে নিজে টাকাতেই জিনিস কিনে রিভিউ করতে হবে। যা অনেকটাই খরচ সাপেক্ষ। তবে যদি ভাল যোগাযোগ থেকে থাকে তাহলে হয়তো না কিনেও রিভিউ করতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে আরেকটি পদ্ধতি হতে পারে রিভিউ না করে বিভিন্ন জ্ঞানমূলক ভিডিও বানানো। অর্থাৎ টেকনোলজিকাল নানা জিনিস ভিডিওর সাহায্যে ব্যাখা করতে পারেন। অথবা নির্দিষ্ট কোন কাজের টিউটোরিয়াল ভিডিও বানাতে পারেন। তবে রিভিউ ভিডিও এর তুলনায় এ ধরণের ভিডিওতে দর্শক কম পাবেন।

গেমিংঃ যত দিন যাচ্ছে, ই-স্পোর্টস তথা গেমিং মানুষের মনে ততটাই স্থান দখল করে নিচ্ছে। দীর্ঘদিন যাবত কম্পিউটার গেমসভিত্তিক অসংখ্য চ্যানেল নিয়মিত ভিডিও বানিয়ে যাচ্ছে। তবে ইদানীং মোবাইল গেমি ও দারুণ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। ফ্রি ফায়ার ও পাবজির মতো গেমস গুলো অনেকেই স্ট্রীম করছে এবং মানুষ তা প্রচুর পরিমাণে দেখছে। এমনকি সবচেয়ে বেশি সাবস্ক্রাইবার সম্বলিত ইউটিউব চ্যানেলের তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থান আছে একটি গেমিং চ্যানেল। PewDiePie নামক চ্যানেলটির সাবস্ক্রাইবার ১০৯ মিলিয়ন। এটি দীর্ঘদিন প্রথম স্থানও অধিকার করে ছিল। অর্থাৎ বুঝতেই পারছেন গেমিং বর্তমানে ইউটিউব চ্যানেলের জন্য কতটা জনপ্রিয় টপিক। তবে এ ধরণের  চ্যানেল বানাতে চাইলে আপনার চাই অসাধারণ দক্ষতা। কারন লক্ষাধিক গেমার ইউটিউবে তাদের ভিডিও আপলোড দিয়ে থাকে। তাদের ভীড়ে নিজের স্থান করে নেওয়াটা অনেকটাই মুশকিল।

ভ্লগিংঃ ইউটিউবের আরেকটি জনপ্রিয় বিষয় হলো ভ্লগিং। কোন একটি কাজ করার সময় পুরো ব্যাপারটি যদি সুন্দর ভাবে ভিডিওতে তুলে ধরতে পারেন তবেই তা একটি ভ্লগে রুপ নেয়। এটি যেকোনো বিশেষ কাজ এমনকি সাধারণ দৈনিক কাজের সময়েও করা যায়। অনেক সেলিব্রেটিরা তাদের দৈনিক কাজের ভিডিও ইউটিউবে দিয়েও লাখ ভিউ পান। তবে সাধারণ মানুষ হিসেবে আপনার উচিত কোন বিশেষ কাজের ভিডিও করা। যেমন ভ্রমণ ভ্লগ। বর্তমানে মানুষ কোথাও ঘুরতে যাওয়ার আগে সে সম্পর্কে ভ্লগ দেখে নেয়। আপনার ভিডিওগ্রাফি, উপস্থাপন ও এডিটিং যদি ভাল হয় তাহলে একজন জনপ্রিয় ভ্লগার হতে পারবেন সহজেই।

লাইফস্টাইল, রান্না ও মেকআপঃ বর্তমানে যেসব টপিকের ভিডিওর ওপর বেশি সিপিএম পাওয়া যায় তার মধ্যে  মেকআপ অন্যতম। মেকআপ ভিডিও প্রধানত দেখে থাকে মেয়েরা। এবং এই ধরণের  ভিডিওর ভিউ ও অনেক বেশি হয়ে থাকে। এছাড়াও দৈনন্দিন জীবনের নানা বিষয় নিয়েও ভিডিও বানানো যায়। তার মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হলো রান্নার ভিডিও। এ প্রজন্মের প্রায় সকল তরুণ- তরুণীরাই রান্নার আগে ইউটিউবে টিউটোরিয়াল ভিডিও দেখতে পছন্দ করে। এবং রান্না যেহেতু একটি আবশ্যক বিষয় তাই এসব ভিডিওর চাহিদ কখনোই ফুরিয়ে যায় না। তাই লম্বা সময়ের চ্যানেলের জন্য এটি হতে পারে ভাল একটি টপিক।

ফিটনেস বা স্বাস্থ্যঃ রান্না অথবা মেকআপের মতই ব্যায়ামের জন্যও মানুষ অনেকটাই ইউটিউবের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। বিশেষত এমন অনেক মানুষ আছেন যারা জীমে না যেয়ে ঘরে বসে কিছুটা ব্যায়াম করতে চান। এমন মানুষের সংখ্যা অনেক বেশি বলেই ফিটনেস ইউটিউবের অন্যতম জনপ্রিয় একটি বিষয়। বিশেষত বাংলা ভাষায় এই ধরণের ভিডিও বেশ কম। তাই কম প্রতিযোগিতার মধ্যে এটি হতে পারে বেশ ভাল একটি টপিক। যদিও এর জন্য থাকা চাই ভাল স্বাস্থ্য ও জানা চাই ব্যায়াম করার নানা প্রক্রিয়া।

শিক্ষাঃ শিক্ষামূলক ইউটিউব চ্যানেলও বর্তমানে বেশ জনপ্রিয়। যতই দিন গড়াচ্ছে পড়ালেখা যেন অনলাইনের দিকে ঝুকে পড়ছে। বিশেষত ২০২০ সাল হতে করোনা মহামারির কারণে শ্রেণিতে পাঠদান প্রায় বন্ধ। ভবিষ্যৎ পড়ালেখা যে অনেকটাই অনলাইন ভিত্তিক হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে খুব সহজেই একটি শিক্ষামূলক চ্যানেলকে বিশাল আকৃতি দেওয়া সম্ভব।

ফানি ভিডিওঃ ইউটিউবের সবচেয়ে সাধারণ টপিক গুলোর মধ্যে একটি। ইতোমধ্যেই এই ধরণের প্রচুর চ্যানেল রয়েছে। নানা ধরণের প্র্যাংক ভিডিও বা রোস্টিং ভিডিওর মাধ্যমে অনেকেই এই পথে হাটছেন। তুলনামূলক ভাবে এ পথে প্রতিযোগিতা অনেক বেশি। তবুও এখন অবধি এটি ইউটিউবারদের কাছে জনপ্রিয় কারণ এ ধরণের ভিডিও করতে তেমন মূলধন লাগে না। তাই অনেক ইউটিউবারই এই বিষয়টি বেছে নেন।

ভিডিওতে কি কি রাখা যাবে না

ইউটিউবে কি ধরণের ভিডিও আপলোড করা যাবে না তার জন্য ইউটিউবের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা রয়েছে। একে বলে ইউটিউব কমিউনিটি গাইডলাইনস। কিন্তু আপনি যদি ইউটিউব থেকে টাকা আয় করতে চান তাহলে কমিউনিটি গাইডলাইন সহ আরো কিছু নিয়ম মানতে হবে। যাকে বলে এডসেন্স গুগল পাবলিশার পলিসি। এই পলিসির ব্যাপারে গুগল এবং ইউটিউব খুবই কড়া। মনে রাখবেন, আপনার আয় হবে মূলত বিজ্ঞাপন দেখানোর ডলার থেকে। কিন্তু আপনার ভিডিওটি যদি বিজ্ঞাপন দেখানোর উপযোগী না হয় তাহলে আপনার মনিটাইজেশন  আংশিক বা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে। চলুন জানা যাক মনিটাইজেশন বন্ধ হওয়া থেকে বাঁচতে কি কি করণীয়ঃ

  • কোন ধরণের বাজে ভাষা ব্যবহার করা যাবে না। 
  • কোন ধরণের হিংস্রতা বা ধ্বংসাত্নক জিনিস দেখানো যাবে না। 
  • অতিরিক্ত যৌনতা থাকা যাবে না। 
  • বিপদজনক ও ক্ষতিকারক কিছু দেখানো যাবে না। 
  • অন্যের প্রতি ঘৃণা বা বিদ্বেষ ছড়ায় এমন কিছু দেখানো যাবে না।
  • তামাক, মাদক কিংবা আগ্নেয়াস্ত্র সম্পর্কিত কিছু থাকা চলবে না। 
  • বিতর্কিত ও স্পর্শকাতর বিষয় এড়িয়ে চলতে হবে।

শেষকথা

সর্বোপরি মনে রাখতে হবে যে, ইউটিউব এখন একটি প্রতিষ্ঠিত মাধ্যম। এতে রয়েছে অনেক প্রতিষ্ঠিত কন্টেন্ট ক্রিয়েটর যাদের অবস্থান অনেকটাই শক্ত। তাই নতুন হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠতে চাইলে অবশ্যই চাই কঠোর পরিশ্রম। একটি চ্যানেল খোলার আগে অবশ্যই ভাবতে হবে সে ধরণের চ্যানেল আপনি ভাল ভাবে চালাতে পারবেন কিনা। একই সাথে থাকা চাই ভিডিওগ্রাফি, ভিডিও এডিটিং এসব সম্পর্কে প্রাথমিক জ্ঞান ও দক্ষতা। তাই সকলের সে বিষয়েই চ্যানেলই খোলা উচিত যাতে তার মেধা রয়েছে। তা হতে পারে টেকনোলজি, শিক্ষা, গেমিং, ভ্লগিং কিংবা ফানি ভিডিও। তবে যে ধরণের চ্যানেলই খুলুন না কেন, আর্টকেলটির নির্দেশনা গুলো সব ধরণের চ্যানেলের জন্যই কার্যকর।

Previous Post Next Post