ঘরোয়া চিকিৎসা অনিদ্রার

  ঘরোয়া চিকিৎসা অনিদ্রার: রাতের খাবার খেয়ে তাড়াহুড়ো করে শুয়ে পড়েছেন এটা সত্য, কিন্তু অনেক দেরিতে যেমন সকাল হয়ে যাচ্ছে এদিকে খবরই রাখছেন না। পাখির মধুর ডাক শুনে শুনে আবার বিছানা ছাড়তে হলো। এভাবে রাতটা কেটে গেল কিন্তু ঘুমতো আর হলো না। এই অভ্যাসটি যদি একদিন হতো তাহলে মেনে নেওয়া যেতো, এটা অনেকের ক্ষেত্রে দিনের পর দিন ঘটে, তার অর্থ দাঁড়ায় আপনি অনিদ্রায় ভুগছেন। যার ফল স্বরূপ সারাদিন আপনার কোন কাজ করতে ভালো লাগছে না। তাই ঘুমের প্রাকৃতিক ঔষধ আপনার প্রয়োজন।



 ঘরোয়া চিকিৎসা অনিদ্রার

অনিদ্রা হলো ঘুম না আসাজনিত একটি সমস্যা। ঘুমের এই রোগটি স্বল্পমেয়াদী বা দীর্ঘমেয়াদী হয়ে থাকে। খিটখিটে ভাব, অবসাদ, ক্লান্তি, অমনোযোগ ও মাথাব্যথা অনিদ্রার কিছু প্রভাব। সময়ের উপর ভিত্তি করে অনিদ্রা ব্যাধিকে আবার দু’ভাগে ভাগ করা হয়েছে- (১) তীব্র অনিদ্রা এবং (২) দীর্ঘস্থায়ী অনিদ্রা।

স্বল্প মেয়াদের জন্য যে ঘুম না আসার সমস্যাটি হয় তাকে তীব্র অনিদ্রা বলা হয়। এই ধরনের অনিদ্রায় কয়েক দিন থেকে কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। তাছাড়া এই সমস্যাটি এক মাস বা বেশি সময়ের জন্য হলে তখন তাকে দীর্ঘস্থায়ী অনিদ্রা বলে। তবে, এ ক্ষেত্রে নিচে উল্লেখ করা পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করলে অনিদ্রা থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে, আসুন জেনে নেই পদ্ধতিগুলো কি?

কলা: পটাশিয়ামের রাজা বলা কলাকে যাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম। আর মানুষের শরীরে পটাশিয়ামের উপস্থিতি, রাতে ঘুম কত ভালো হবে সেটি নিয়ন্ত্রণ করে। তাছাড়া রাতে ঘুম হতে সাহায্য করে কলার ট্রাইপটোফ্যান এবং ম্যাগনেসিয়াম। তাই নিয়মিত কলা খেয়ে বিছানায় যেতে পারেন, এতে ঘুমের ওষুধ আর খেতে হবে না আপনাকে। একদম প্রাকৃতিক উপায়ে ঘুম হবে, অনিদ্রার ঘরোয়া চিকিৎসা হবে নিশ্চিত!

দুধ: দুধে ট্রিপটোফ্যান এমিনো এসিড বিদ্যমান যা সেরোটোনিন হরমোনের নিঃসরণকে বাড়িয়ে দেয় এবং ভাল ঘুমের জন্য সাহায্য করে। তাছাড়া দুধের ক্যালসিয়াম অনিদ্রা দূর করতে সাহায্য করে। ঘুমুতে যাওয়ার ১ ঘন্টা পূর্বে একটা গভীর ঘুমের জন্য, ১ গ্লাস গরম দুধের সাথে ১ চা চামচ দারুচিনির গুড়াই যথেষ্ট।

দই: দুধ জাতীয় খাবারের মধ্যে দইয়ে রয়েছে সবচেয়ে বেশি ক্যালসিয়াম। দই ঘুমে সাহায্যকারী ট্রাইটোফ্যান এবং মেলাটোনিন হরমোন বাড়াতে সাহায্য করে। তাই রাতে ঘুমানোর পূর্বে দই খাওয়ার অভ্যাস করতে পারলে ভালো ঘুম হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তবে দই অবশ্যই খাঁটি হতে হবে। খাঁটি গরুর দুধ দিয়ে বানানো দই খেলেই অনিদ্রাজনিত রোগের উপকার হবে।

মধু: মধুর হাজারো উপকারিতা রয়েছে তন্মধ্যে সবচেয়ে বড় উপকারিতা হচ্ছে এটা অনিদ্রা দূর করতে সাহায্য করে। ঘুমাতে যাওয়ার আধা ঘন্টা পূর্বে হালকা গরম দুধের সঙ্গে এক চা চামচ মধু মিশিয়ে খেতে পারেন। মধু স্নায়ু শীতল করতে সহযোগিতা করে। ফলে রাতে ঘুম হয় অনেক ভালো ঘুম।

বাদাম: অনিদ্রাজনিত ব্যাধিতে উপকার পেতে আরেকটা কার্যকরী খাবার হচ্ছে বাদাম। বাদাম শরীরে সেরোটোনিন হরমোনের পরিমাণ বাড়াতে সাহায্য করে। এই হরমোন কাজ হচ্ছে মস্তিষ্ককে সুখের অনুভূতি সৃষ্টি করতে সাহায্য করে। বাদামেও রয়েছে ট্রাইপটোফ্যান এবং ম্যাগনেসিয়াম। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার পূর্বে ১০/১৫টি বাদাম ভালো ঘুম হতে সাহায্য করবে।

ভিটামিন: কিছু ভিটামিন সঠিকভাবে ঘুমের জন্য বেশ প্রয়োজনীয়। শরীরে যদি এদের ঘাটতি হয়, তবে অনিদ্রার সমস্যা দেখা দেয়। অনিদ্রাজনিত রোগে যে ভিটামিনগুলো দায়ী সেগুলো নিচে দেয়া হলো:

ঘুম ও স্মৃতিশক্তির ক্ষেত্রে ভিটামিন এ মস্তিষ্কের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখে। দুধ, ডিম, মুরগি ও গরুর মাংসতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ থাকে।

ভিটামিন বি৩, বি৫, বি৯ ও বি১২ এর ঘাটতি অনিদ্রার সমস্যার সাথে জড়িত। এই ভিটামিনগুলোর অভাবে দুর্বলতা, অবসাদ এবং অনিদ্রা দেখা দেয়। এ ভিটামিনগুলো পাবেন ডিম, মুরগি ও দুগ্ধজাত পণ্যে, তাই এগুলো খাওয়ার চেষ্টা করুন।

ভিটামিন সি এবং ই হলো শক্তিশালী অক্সিডেটিভ স্ট্রেস এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রতিরোধে সাহায্য করে। তাই পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন ই এবং টক জাতীয় ফল খান।

আমাদের শেষ কথা: এই পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করেও যদি অনিদ্রাজনিত সমস্যা থেকে যায়, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।

Previous Post Next Post