ভাল ছবি কিভাবে ক্যামেরা ফোকাস করবেন!!

ক্যামেরা যত ভাল ছবিও তত ভাল, কথাটা কিছুটা সত্য তো বটেই। কিন্তু সাধারন ক্যামেরা ব্যবহার করেচমকার ছবি উঠানোর উদাহরন কম নেই। দামী এসএলআর হোক আর সাধারন পয়েন্ট এন্ড শ্যুট ক্যামেরা হোক অথবা মোবাইল ফোনের ক্যামেরাই হোক, কিছু নিয়ম মেনে যে কেউ সুন্দর ছবি উঠাতে পারেন। পেশাদার ফটোগ্রাফাররা যে নিয়ম মেনে ছবি উঠান সেগুলি একবার জেনে নিন।

ছবি উঠানোর সময় আপনি কিভাবে আপনার ক্যামেরা বা মোবাইল ধরবেন


ছবির বিষয় ঠিক করুন 
ক্যামেরায় ক্লিক করলে ছবি উঠবে। ক্যামেরার সামনে যা আছে সেটাই পাবেন। তাকে কি ভাল
ফটোগ্রাফ বলা যায়!
ছবি উঠানোর আগে ছবিকে শিল্পীর আকা ছবির সাথে তুলনা করুন। তিনি অনেক ভেবেচিন্তে যা বক্তব্য সেটা ফুটিয়ে তোলেন। ফটোগ্রাফার হিসেবে আপনার সেটাই দায়িত্ব। 
কাজেই ছবি উঠানোর আগে একবার নিজেকে প্রশ্ন করুন, কিসের ছবি উঠাচ্ছি। এর বক্তব্য কি ? কোন ব্যক্তির ছবি উঠালে তার পোষাক, পরিবেশ, আলো এগুলি তারসাথে মানানসই কি-না।
কাজেই ছবি উঠানোর প্রথম নিয়ম, ছবির বক্তব্য ঠিক করুন। যে ছবিই উঠান না কেন, একবার নিজেকে প্রশ্ন করুন কিসের ছবি উঠাচ্ছেন। ছবির বক্তব্য কি। অন্য কোনভাবে উঠালে কি ছবি আরেকটু ভাল হত ? দিনের অন্য সময়ে, কিংবা কৃত্রিম আলো ব্যবহার করে।

তিনের নিয়ম
ছবি উঠানোর সময় ফটোগ্রাফাররা সাধারনভাবে যা করেন, দিগন্ত রেখা ছবির মাঝামাঝি রেখে ফ্রেম করেন। অর্থাত আপনার সামনে যদি মাঠ এবং আকাশ থাকে তাহলে মাঠের জন্য অর্ধেক এবং আকাশের জন্য অর্ধেক এভাবে ভাগ করে নেন। কিংবা সমুদ্র এবং আকাশ থাকে তাহলে অর্ধেক আকাশ এবং অর্ধেক পানি এভাবে ছবি উঠান। একে অনেকে তুলনা করে খেলার ড্র এর সাথে তুলনা করেন। কে বিজয়ী জানা নেই। ফটোগ্রাফির একটি গুরুত্বপুর্ন নিয়ম রুল অব থ্রি এর পরিপন্থী। হাজার বছর ধরে রুল অব থ্রি প্রচলিত।
নিয়ম হচ্ছে, দুভাগ একজনকে বাকি একভাগ আরেকজনক দিন। বিষয়ের গুরুত্ব অনুযায়ী। যদি সমুদ্র গুরুত্বপুর্ন হয় দিগন্তরেখা তিনভাগের দুভাগ ওপরে রাখুন, যদি আকাশ গুরুত্বপুর্ন হয় তাহলে আকাশকে তিনভাগের দুভাগ দিন। অনায়াসে সুন্দর ছবি পাবেন।

পুরো ছবি উঠান
আপনি একটি সুন্দর ফুলের ছবি উঠাতে চান। অনেকগুলি ফুলের মধ্যে একটি ফুল আপনার কাছে গুরুত্বপুর্ন। বাগানের ছবি উঠানোর পর সেই ছবি কাউকে দেখানোর পর লক্ষ্য করলেন তারা সেই বিশেষ ফুলটি লক্ষ্য করছে না। কারন একটিই, আপনি সেভাবে ছবি উঠাননি।
যদি ফুলের ছবি উঠাতে হয় যতটা সম্ভব কাছে থেকে ছবি উঠান। এমনভাবে যেখানে সেই ফুলটিই ছবির অধিকাংশ যায়গা জুড়ে থাকে। অন্য ফুলগুলির কাজ এই বিশেষ ফুলের সৌন্দর্যকে ফুটিয়ে তোলা।
ফুল না হয়ে যদি বিশেষ কোন বস্তু, এমনকি কোন ব্যক্তির বিষয়ও হয় তাহলেও এই নিয়মে ছবি উঠান। নিজেকে বলতে পারেন, ছবি উঠানোর পর ফটোশপে পাশ থেকে বাদ দেয়া যাবে। সেটা না করে ছবি সেভাবে উঠানো অভ্যেস করুন।
ফটোগ্রাফির ক্ষেত্রে একটি বিখ্যাত উক্তি রয়েছে, ছবি ভাল হয়নি কারন আপনি যথেষ্ট কাছে যাননি। কাজেই, ছবি উঠানোর জন্য যতটা সম্ভব কাছে যান, অথবা লেন্স পাল্টান অথবা জুম ব্যবহার করুন।

পোর্ট্রেট মোডে ছবি উঠান
সাধারনত অধিকাংশ ছবি উঠানো হয় ল্যান্ডস্কেপ মোডে, পাশের দিকে বেশি যায়গা রেখে। অথচ ক্যামেরা ঘুরিয়ে সেই ছবিকেই লম্বালম্বিভাবে ছবি উঠানো সম্ভব। একজন দাড়িয়ে থাকা ব্যক্তির ছবি ল্যান্ডস্কেপ মোডে উঠালে পাশে অনেক অপ্রয়োজনীয় যায়গা থেকে যায়। অথচ লম্বলম্বিভাবে উঠালে তাকে আরো ভালভাবে দেখানো সম্ভব। ভুলে যাবেন না, এজন্যই এর নাম পোর্ট্রেট মোড।
কোন ছবি কোনভাবে উঠালে ভাল হবে এর কোন ধরাবাধা নিয়ম নেই। একই ছবি যেকোনভাবেই সুন্দর হতে পারে। সবসময় ল্যান্ডস্কেপ মোডে না উঠিয়ে একবার নিজেকে বলুন, এই ছবিটাই একটা পোর্ট্রেট মোডে তুলে দেখি না কি হয়।

ফ্রেমের মধ্যে ফ্রেম
প্রিন্ট করা ছবি আমরা ফ্রেমে রাখি, ডিজিটাল ছবির চারিদিকেও ফ্রেম ব্যবহার করা হয়। ইচ্ছে করলে ছবি উঠানোর সময় কোনকিছুকে ফ্রেম হিসেবে ব্যবহার করা যায়। প্রকৃতি, গাছের পাতা, দেয়াল থেকে শুরু করে নিজের হাত, যেকোন কিছুই ফ্রেম হিসেবে ছবির সৌন্দর্য বাড়াতে পারে।

ব্যাকগ্রাউন্ডের দিকে দৃষ্টি দিন
ঘরে অথবা বাইরে যেখানেই ছবি উঠান না কেন, পেছনে কি রয়েছে সেদিকে লক্ষ্য রাখুন। ছবি উঠানোর সময় যদি অপ্রয়োজনীয় ব্যক্তির উপস্থিতি থাকে তাহলে কিছুক্ষন অপেক্ষা করুন। পেছন থেকে কেউ উকি দিচ্ছে দেখা গেলে ভাল ছবি হয় না। একইভাবে অপরিস্কার, অগোছালো কিছু থাকলে সেগুলি এড়িয়ে ছবি উঠান। সামান্য সরে গেলেই এই বিষয়গুলি এড়িয়ে ভাল ছবি পাওয়া যাবে।

শুধুমাত্র তাত্ত্বিক জ্ঞানে ভাল ছবি পাওয়া যায় না। ভাল ছবির পাওয়ার সবচেয়ে ভাল পদ্ধতি হচ্ছে ছবি উঠানোর পর সেখানে কোন ত্রুটি আছে কিনা বের করা এবং কি করলে আরো ভাল ছবি পাওয়া যেত সেটা বের করা। কাজেই যত বেশি ছবি উঠাবেন তত ভাল ছবি পাওয়ার সম্ভাবনা।

কখন কোন মোডে ছবি উঠাবেন:

এধরনের প্রশ্ন কেউ করলে বিরক্ত হতে পারেন। এটা কোন প্রশ্ন হল! যে ছবির জন্য যে মোড সেটাই তো ব্যবহার করবেন। এজন্যই পোট্রেট, ল্যান্ডস্কেপ, ক্লোজআপ ইত্যাদি মোড তৈরী করা হয়েছে।
কথাটা ঠিক। এই মোডগুলির পরও রয়েছে এপারচার প্রায়োরিটি এবং সাটার স্পিড প্রায়োরিটি বলে দুটি মোড। এবং সবশেষে ফুল ম্যানুয়েল বলে একটি মোড। যেখানে সাটারস্পিড, এপারচার থেকে শুরু করে সমস্ত সেটিং আপনি ঠিক করে দিতে পারেন।
বর্তমানের প্রায় সব কম্প্যাক্ট এবং এসএলআর ক্যামেরাতেই রয়েছে অনেকগুলি সিন মোড। সাধারনভাবে ছবি উঠানোর সময় আপনার ক্যামেরা থেকে পছন্দের সিন মোড ব্যবহার করবেন এটাই স্বাভাবিক। পেশাদার ফটোগ্রাফাররা সেটিং এরজন্য ক্যামেরার ওপর নির্ভর করেন না। তারা এই নিয়মের বাইরে ছবি উঠান। কারন একটাই, তারা নিজের পছন্দের কিছু চান। এবং শুনে অবাক হতে পারেন, সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয় এপারচার প্রায়োরিটি মোড।
বিষয়টি বোঝার জন্য এপারচার কি কাজ করে একটু দেখে নেয়া যাক।
এপারচার হচ্ছে লেন্সের জানালা। যখন পুরোটা খোলা থাকে তখন বেশি আলো প্রবেশ করে, যখন কম খোলা থাকে তখন কম আলো প্রবেশ করে। এপারচার প্রকাশ করা হয় সংখ্যা দিয়ে। ছোট সংখ্যা বেশি এপারচার বুঝায়। যেমন ৩.৫ এপারচারে ক্যামেরায় যে আরো প্রবেশ করবে ২২ এপারচারে তারথেকে আলো অনেক কম পাওয়া যাবে।
কাজেই, এপারচার কন্ট্রোল করার একটি প্রধান কারন সঠিক আলো ব্যবহার। বাইরে যদি আলো বেশি থাকে তাহলে সেটা স্বাভাবিক পর্যায়ে আনার জন্য এপারচারের মান কমাবেন (সংখ্যায় বাড়াবেন), আবার বিপরীতভাবে আরো কম থাকলে বেশি আলো পাবার জন্য এপারচার বাড়াবেন (সংখ্যা কমাবেন)। এপারচার কতটাগুরুত্বপুর্ন জানার জন্য এসএলআর এর লেন্সের দামের পার্থক্য একটু জেনে নিন। সর্বোচ্চ ৩.৫ এপারচারের লেন্স কেনা যায় কয়েকশ ডলারে, সর্বোচ্চ ২ এপারচারের লেন্সের দাম কয়েক হাজার ডলার।
কাজেই এপারচারের কাজ আলো নিয়ন্ত্রন করা থেকেও বেশি কিছু।  এপারচার যত ছোট হয় ডেপথ অব ফিল্ড তত বেশি হয়। যেমন আপনি ল্যান্ডস্কেপের ছবি উঠাচ্ছেন যেখানে সামনের গাছপালা, দুরের পাহাড়, আকাশে মেঘ সবকিছুই স্পষ্টভাবে  পেতে চান। সেক্ষেত্রে বেশি এপারচার ভাল ফল দেবে। কেউ কেউ নির্দিস্ট করে বলে দেন ল্যান্ডস্কেপের জন্য আদর্শ এপারচার সেটিং হচ্ছে ২২।
আর এপারচার যত বেশি হয় ডেপথ অব ফিল্ড তত কম হয়। একেবারে অল্প কিছু যায়গার বিষয়কে স্পষ্ট দেখা যায়, তারপরই বাকি অংশগুলি ঝাপসা হতে থাকে। আপনি একটি ফুলের ছবি উঠাচ্ছে যেখানে অন্যান্য ফুল-গাছপালাগুলি ঝাপসা দেখা যাবে, এজন্য বেশি এপারচার প্রয়োজন।
আপনি যখন এপারচার প্রায়োরিটি মোডে ছবি উঠাচ্ছেন তখন খুব সহজেই এপারচার পরিবর্তনের সুযোগ আপনার হাতে থাকছে। এপারচার প্রায়োরিটি মোডে এপারচার পরিবর্তনের সাথে মিল রেখে সাটারস্পিড পরিবর্তিত হয়। কাজেই ওভারএক্সপোজার কিংবা আন্ডার এক্সপোজারের ভয় নেই। সেকারনেই এপারচার প্রায়োরিটি মোডের ব্যবহার এত বেশি।
সাটার স্পিড প্রায়োরিটি বিষয়টি বোঝা সেতুলনায় সহজ। আপনি হয়ত উড়ন্ত পাখি কিংবা চলন্ত গাড়ির ছবি উঠাচ্ছেন। সাটার স্পিড বেশি হলে স্পষ্ট ছবি পাওয়া যাবে, কম হলে গতির কারনে চলমান অংশগুলি ঝাপসা হবে। আপনি কোনটি চান সেটা ঠিক করার জন্য সাটারস্পিড প্রায়োরিটি মোড ব্যবহার করবেন। সাটারস্পিড প্রায়োরিটি মোডে পরিবর্তনের সাথে মিল রেখে এপারচার পরিবর্তিত হয় সেদিকেও দৃষ্টি রাখবেন।
আর যখন এপারচার এবং সাটার স্পিড দুটিই নিজের পছন্দমত ব্যবহার করতে চান তখন ম্যানুয়েল মোড। কাজের সুবিধের জন্য এপারচার অথবা সাটার স্পিড যেটা বেশি গুরুত্বপনুর্ন সেটা সিলেক্ট করে ক্যামেরায় অন্যটির মান দেখে নিতে পারেন।

সঠিক এক্সপোজার ব্যবহার করুন:

ছবির দুধরনের সমস্যার সাথে আমরা পরিচিত। আলো কম হওয়া অথবা আলো বেশি হওয়া। অন্ধকার ছবি এবং জ্বলে যাওয়া ছবি এই দুটি শব্দ প্রচলিত এই দুটি বিষয় বুঝাতে, ফটোগ্রাফির ভাষায় Underexposed এবং Overexposed.
আলো কম থাকলে ছবি অন্ধকার দেখাবে এবং আলো বেশি থাকলে জ্বলে যাবে এই ধারনাই স্বাভাবিক। বর্তমান ফটোগ্রাফিতে এই ধারনা অচল। একেবারে কম আলোতেও সঠিক সবি উঠানো যায় কিংবা খুব বেশি আলোতেও আলো কমানোর ব্যবস্থা রয়েছে। ফ্লাশ ব্যবহারের উদাহরনই দেখুন, একেবারে অন্ধকারে ফ্লাশ ব্যবহার করে উজ্বল ছবি পেতে পারেন, যদি কিছুটা আলো থাকে সেটা ফ্লাশের আলোর সাথে যোগ হবে। আবার যত কাছথেকে ফ্লাশ ব্যবহার করবেন আলোর পরিমান তত বেশি হবে, দুরে গেলে ফ্লাশের প্রভাব কমে যাবে। অনেকেই লক্ষ্য করেন না দুরত্ব অনুযায়ী কিংবা প্রয়োজন অনুযায়ী ফ্লাশের আলো কমবেশি করার ব্যবস্থা রয়েছে।
বর্তমান সব ক্যামেরাতেই ছবি উঠানোর সাথেসাথে সেটা দেখে নেয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। দেখে নিয়ে প্রয়োজনে ফ্লাশের আলো কমানো বা বাড়ানোর ব্যবস্থা করে নিন।
যেমন নাইকন ডি৯০ ক্যামেরাতে ফ্লাশের আলো কমবেশি করার জন্য ফ্লাশের বাটন চেপে ধরে কমান্ড ডায়াল ঘুরান। (+) বলতে আলো বাড়ানো এবং (-) বলতে আলো কমানো বুঝায়। কাজেই আপনার সঠিক সেটিং পরিস্থিতি অনুযায়ী ০ হতে পারে কিংবা +২ কিংবা -২ হতে পারে।
ফ্লাশ ছাড়া ছবি উঠানোর জন্য আলো নিয়ন্ত্রন করার জন্য ব্যবহার করবেন এপারচার কন্ট্রোল এবং সাটার স্পিড। এপারচারের মান সংখ্যায় যত বাড়াবেন আলো তত কমবে। যেমন ৫.৬ সেটিং যে পরিমান আলো ব্যবহার করবে ১৬ ব্যবহার করবে তার তুলনায় অনেক কম। আলো বেশি থাকলে এপারচারের মান বাড়িয়ে দিন।
সাটার স্পিড হচ্ছে কতক্ষন সময় এক্সপোজার ব্যবহার করা হবে সেই সময় বলে দেয়া। ১/৬০ সাটার স্পিড অর্থ সেকেন্ডের ৬০ ভাগের ১ ভাগ সময় আলো ব্যবহার করা হবে, ১/৩০ ব্যবহার করবে তার দ্বিগুন সময়। কাজেই যেখানে বেশি আলো প্রয়োজন সেখানে সাটার স্পিড কমিয়ে দিন। আলো বেশি থাকলে সাটার স্পিড বাড়িয়ে সেটা কমানোর ব্যবস্থা করুন। আবার মনে করিয়ে দিতে হচ্ছে, ছবি উঠানোর সাথেসাথেই সেটা দেখে নিন এবং সেই অনুযায়ী পরিবর্তন করুন।
আরেকটি বিষয় হচ্ছে আইএসও। এর মান যত বেশি থাকবে ক্যামেরার সেন্সর তত দ্রুত আলো গ্রহন করবে। আরো কমানোর জন্য আইএসও মান কম ব্যবহার করুন, কম আলোতে আইএসও বেশি ব্যবহার করুন।
বর্তমানের অনেক ক্যামেরাতেই এক্সপোজার কমপেনশেসন বলে আরেকটি ফাংশন রয়েছে। যদি আপনার ক্যামেরায় থাকে তাহলে সেটা ব্যবহার করে এর বাইরেও এক্সপোজার কন্ট্রোল করে আরো ভালো ফল পেতে পারেন। এখানেও (+) বলতে এক্সপোজার বাড়ানো এবং (–) বলতে এক্সপোজার কমানো বুঝায়।
সঠিক এক্সপোজার মানেই ভাল ছবি। কাজেই কম বা বেশি আলোতে ছবি উঠানোর সময় এদিকে গুরুত্ব দিন।

ট্রাইপড কেন ব্যবহার করবেন:

ক্যামেরা নির্মাতা কিংবা লেন্স নির্মাতা তাদের ষ্ট্যাবিলাইজেশনের বর্ননা এমনভাবে দেন যেন আপনি ভুমিকম্পের সময় ছবি উঠালেও তার প্রভাব পড়বে না ছবিতে। আপনি নিখুত ছবি পাবেন। যারা ছবি উঠান তারা খুব ভাল করেই জানেন বাস্তবতা আসলে কি।
তাদের বক্তব্য একেবারে ভুল সেকথা বলা হচ্ছে না। ষ্ট্যাবিলাইজেশন থাকা আর না থাকার মধ্যে পার্থক্য অনেকখানি। তারপরও, ষ্ট্যাবিলাইজেশন সব প্রয়োজন মেটায় না। বিশেষ বিশেষ সময়ে আপনার প্রয়োজন ট্রাইপড নামের একটি বস্তু।
প্রথমে ষ্ট্যাবিলাইজেশন বিষয়টি কি একটু জেনে নেয়া যাক। আপনি যখন ছবি উঠান তখন সাটার রিলিজ চাপ দেয়ার সময় কিছু সময়ের জন্য সেন্সরের সামনে থেকে সাটার সরে যায়, সেন্সরে আলো পড়ে এবং সামনে যাকিছু আছে সেটা আকা হয় সেখানে। এই সময় সেকেন্ডের হাজার ভাহের একভাগ থেকে শুরু করে কয়েক সেকেন্ড পর্যন্ত হতে পারে।
এই সময়ে যদি আপনার হাত কাপে (যা খুবই স্বাভাবিক) তাহলে তার প্রভাব পড়বে ছবিতে। হয়ত ছবিতে বিন্দুর ছবি উঠাচ্ছেন। ছবি উঠানোর এক মুহুর্তে বিন্দুটি এক যায়গা থেকে আরেক যায়গায় সরে গেল হাত কাপার কারনে। যার অর্থ আপনি ছবিতে দেখতে পাবেন বিন্দুটি এক যায়গার পরিবর্তে ঝাপসা হয়ে সরে গেছে। ছবির ধারালো প্রান্ত দেখে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই সমস্যা আপনি নিজেই যাচাই করতে পারেন। সাটার স্পিড যত কম থাকবে এটা ঘটার সম্ভাবনা তত বেশি। আবার দুরত্ব যত বেশি হবে, সামান্য হাতকাপার প্রভাবও সেখানে প্রকটভাবে দেখা যাবে। অথচ আপনার দুরের ছবিও তোলা প্রয়োজন, কম আলোতে ছবি উঠানোর জন্য সাটার স্পিড কম রাখাও প্রয়োজন।
ক্যামেরা নির্মাতারা এর সমাধান দেন নানারকম পদ্ধতি। সেন্সর সিফট ষ্ট্যাবিলাইজেশন, লেন্স বেজড ষ্ট্যাবিলাইজেশন, ডিজিটাল ষ্ট্যাবিলাইজেশন, ডুয়াল ষ্ট্যাবিলাইজেশন ইত্যাদি নানারকম নামে এই কাজ করা হয়। একে কোম্পানী আবার একই কাজকে ভিন্ন ভিন্ন নামে উল্লেখ করে। যেমন ক্যানন যাকে ইমেজ ষ্ট্যাবিলাইজেশন (আইএস) বলে নাইকন তাকে বলে ভাইব্রেশন রিডাকশন (ভিআর), ট্যামরন বলে ভাইব্রেশন কন্ট্রোল (ভিসি)। ষ্ট্যাবিলাইজেশনসহ লেন্সের দাম ষ্ট্যাবিলাইজেশনছাড়া লেন্স থেকে অনেক বেশি।
মুল কথা হচ্ছে আপনার হাত কাপার কারনে যতটুকু বিচ্যুতি ঘটেছে সেটা কমানোর জন্য লেন্স সরে যাওয়ার সাথেসাথেই আলো গ্রহন বন্ধ করে দেয়া। সেইসাথে কম আলোর সমস্যা দুর করার জন্য বিশেষভাবে সেটা প্রসেস করা। ফল হিসেবে সাধারনভাবে যেখানে কম সাটার স্পিড ব্যবহার করার কথা ষ্ট্যাবিলাইজেশন ব্যবহার করে তারথেকে বেশি সাটারস্পিড ব্যবহার করা যায়।
কিছুকিছু কম্প্যাক্ট ক্যামেরা আরো অভিনব পদ্ধতি ব্যবহার করে। তারা খুব দ্রুত কয়েকটি ছবি উঠায়। তারপর সেগুলি হিসেব করে একটি ভাল ছবিতে পরিনত করে। এই ব্যবস্থা নতুন ব্যবহারকারীদের জন্য। এসুযোগ এসএলআর কিংবা প্রফেশনাল ক্যামেরায় থাকে না।
ট্রাইপডের কথায় ফেরা যাক। ট্রাইপড অর্থ যার তিনটি পা। এটা তিন পা বিশিষ্ট ক্যামেরা ষ্ট্যান্ড। তিন পা এর সুবিধে হচ্ছে অসমতল যায়গাতেও অনায়াসে সোজাভাবে রাখা যায়।
ব্যবহারের নিয়ম, এর ওপর ক্যামেরা বসাবেন। ক্যামেরা আটকানোর ব্যবস্থা রয়েছে। ট্রাইপডে রাখা অবস্থায় সহজে ক্যামেরা ঘুরানোর ব্যবস্থা রয়েছে। ক্যামেরা সেকানে রেখে অন্ধকারের ছবিও যদি উঠান তাহলেও ক্যামেরা যেহেতু নড়বে না সেহেতু ছবি ঝাপসা হওয়ার কারন থাকবে না। অনেকে পুরো অন্ধকারেও ছবি উঠান এই পদ্ধতিতে যা নাইট ফটোগ্রাফি নামে পরিচিত।
ট্রাইপডের একটি সমস্যা হচ্ছে ক্যামেরার সাথে একেও বয়ে বেড়াতে হয়। এজন্য নানা আকারের ট্রাইপড পাওয়া যায়। বর্তমানে একেবারে ছোট, পকেটে রাখার মত ট্রাইপডও পাওয়া যায়। গরিলাপড নামের একধরনের ট্রাইপড চেয়ার থেকে শুরু করে গাছের ডাল পর্যন্ত যেকোন কিছুর সাথে আটকে রাখা যায়। এছাড়া মনোপড নামে একপাঅলা ষ্ট্যান্ডও রয়েছে। ব্যবহারের সময় এটা ধরে রাখতে হয়, তারপরও যথেষ্ট ভারসাম্য রক্ষা করা যায়।
বর্তমানে ক্যামেরাগুলি ষ্টিল ফটোগ্রাফিতে সীমাবদ্ধ নেই, প্রায় সবগুলিকে ভিডিও ক্যামেরা হিসেবে ব্যবহার করা যায়। আর আপনি নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন টিভির ভিডিও যতটা স্পষ্ট আপনার করা ভিডিও ততটা স্পষ্ট বা স্থির না।
শুধুমাত্র ক্যামেরা বা লেন্সের ষ্ট্যাবিলাইজেশনের ওপর নির্ভর করে নিখুত ছবি পাওয়া যায় না। এজন্য ট্রাইপড একটি প্রয়োজনীয় বস্তু।
বাংলাদেশে ৩ হাজার টাকার মধ্যে যথেষ্ট ভাল মানের ফটোগ্রাফি/ভিডিও ট্রাইপড পাওয়া যায়।

ফ্লাশ কখন ব্যবহার করবেন না:

মনে হতে পারে এটা অদ্ভুত প্রশ্ন। আলো থাকলে সেখানে ফ্লাশ প্রয়োজন নেই। আলো কম থাকলে ফ্লাশ ব্যবহার করতে হবে। ঘরের মধ্যে ছবি উঠানোর সময় ফ্লাশ ব্যবহার করতে হবে। ফটোগ্রাফি আলো পছন্দ করে। যত বেশি আলো তত ভাল ছবি।
মানুষ ফ্লাশ থেকে যতটা ভাল ফল আশা করে ফ্লাশ ব্যবহারের কারনে অনেক সময়ই ফল হয় ঠিক বিপরীত। কখনো একেবারে সাদা, কখনো কোন কোন যায়গা ঝলসে যাওয়া, কখনো গাঢ় ছায়া। খালিচোখে যা দেখে ছবি উঠিয়েছেন তার ধারেকাছেও না।
আপনি কাছ থেকে ছবি উঠাবেন, ছবি ঝলসে যাবে। ফ্লাশের আলো কজ করবে ১০ ফুট পর্যন্ত। ফল হিসেবে কাছের সবকিছু উজ্বল আর তার পেছনেই হঠাত করে অন্ধকার। আবার ছোট ক্যামেরার ফ্লাশ থেকে তৈরী হয় ভৌতিক সিনেমার মত লাল চোখ (রেড আই)। বিষয়কে আরো জটিল করে তুলেছে অনেক আধুনিক ক্যামেরা। ক্যামেরা নিজেই ধরে নেয় ফ্লাশ প্রয়োজন, সেটা নিজে থেকেই অন হয় এবং নিজে থেকেই জ্বলে। কোন কোন ক্যামেরায় ইচ্ছে করেও বন্ধ রাখা যায় না।
ফ্লাশের অনেক দুর্নাম করা হল। ফ্লাশ অবশ্যই প্রয়োজন হয়। কোনসময় ফ্লাশ ব্যবহার করবেন না সেটা আগে জেনে নিন;
         ১০ ফুটের বেশি দুরত্বের ছবি উঠানোর সময় ফ্লাশ ব্যবহার করবেন না। এতে মানুষ বিরক্ত হবে, ব্যাটারীর শক্তি খরচ হবে, ছবিতে ফ্লাশের প্রভাব পাওয়া যাবে না। আপনি খেলার সময় ষ্টেডিয়ামে কিং কনসার্টের সময় হয়ত বহু ফ্লাশ জ্বলতে দেখেছেন। এরসাথে ছবি উঠানোর কোন সম্পর্ক নেই। শুধুমাত্র ফ্লাশ জ্বালানোর জন্যই জ্বালানো হয়। অনেকেই হয়থ জানে ফ্লাশ জ্বালালে কোন লাভ নেই কিন্তু কিভাবে ফ্লাশ বন্ধ রাখতে হয় জানে না।
          মনে হতে পারে ঘরের মধ্যে ছবি উঠানোর জন্য ফ্লাশ জরুরী। বেশি আলো পাবার জন্য বেশি এপারচার, কম সাটারস্পিড, বেশি আইএসও ব্যবহার করলে গতিশীল বিষয়ের ঝাপসা ছবি পেতে পারেন। তারপরও, সেটা বাস্তবসম্মত। ফ্লাশ ব্যবহার করলে চলন্ত পাখাকে মনে হবে থেমে আছে। তাকে নিশ্চয়ই ভাল ছবি বলে না।

ফ্লাশ কখন ব্যবহার করবেন

        শুনে হয়ত বিষ্মিত হতে পারেন, ফ্লাশ ব্যবহার করবেন উজ্জল রৌদ্রের মধ্যে ছবি উঠানোর সময়। কারন, রৌদ্রে দাড়ানো মানুষের ছবি উঠানোর সময় যে যায়গাগুলিতে ছায়ার কারনে অন্ধকার দেখায় সেই যায়গাগুলি আলোকিত করবে ফ্লাশ।
       যেখানে অসম আলো রয়েছে সেখানে ফ্লাশ ব্যবহার করে ভাল ফল পাবেন।
      কখনো কখনো অবশ্যই আপনি অল্প আলোর মধ্যেই বেশি সাটারস্পিড ব্যবহার করতে চান। সেখানে ফ্লাশ ব্যবহার করুন।

ফ্লাশ সম্পর্কে এই বক্তব্য অবশ্য বিল্ট-ইন ফ্লাশের জন্য কার্যকর। এসএলআর ক্যামেরার জন্য পৃথক ফ্লাশগুলিতে বহু ধরনের কন্ট্রোল রয়েছে। রিমোট ফ্লাশ ব্যবহারের সময় তিনদিকে ৩টি ফ্লাশ রেখে ছবি উঠাতে পারেন। ছবি উঠানোর সময় ৩টি ফ্লাশ সময়মত জ্বলে উঠবে। কোন কোন ফ্লাশে রেড-আই বাদ দেয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। সেগুলোকে এই হিসেবে আনবেন না।
এমনকি অনেক বিল্টইন ফ্লাশেও আলো কমবেশি করার ব্যবস্থা রয়েছে। ৩ ফুট দুরত্বে যে সেটিং ব্যবহার করবেন ৮ ফুট দুরত্বের জন্য ভিন্ন সেটিং ব্যবহার করবেন। ফিল ফ্লাশ, স্লো সিংক ইত্যাদি সেটিং রয়েছে।
ফ্লাশ কিভাবে বন্ধ রাখা যায়, কিংবা আলো কমবেশি করা যায় বিষয়টি নির্দিষ্ট ক্যামেরার ওপর নির্ভরশীল। জানার জন্য ক্যামেরার ম্যানুয়েল দেখে নিন।
শেষকথা হচ্ছে, আরো কম কাজেই ফ্লাশ ব্যবহার করতে হবে এটা ধরে নেবেন না। বরং অধিকাংশ ছবি ফ্লাশ ছাড়াই উঠাতে চেষ্টা করুন। আর ফ্লাশ যখন ব্যবহার করবেনই তখন তাকে শুধুমাত্র আলো জ্বলার যন্ত্র ধরে নেবেন না।আরো যে বিষয়গুলি আছে সেগুলি জেনে নিন।

ডেপথ অব ফিল্ড:

ডেপথ অব ফিল্ড এমন একটি বিষয় যার ওপর ছবির সৌন্দর্য্য নির্ভর করে।
একথা আসলে ডেপথ অব ফিল্ড সম্পর্কে কোন উত্তর দেয় না। আসলেই ডেপথ অব ফিল্ড বিষয়টি পরিমাপ করার ব্যবস্থা নেই। সাধারনভাবে বিষয়টি বোঝানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। আপনি যখন ছবি ওঠান তখন কোন একটি বিন্দুতে ফোকাস করেন। সেই বিন্দুটি সবচেয়ে স্পষ্ট দেখা যায়। কোনকিছু সেই বিন্দু থেকে যতটা দুরে থাকবে তার ঝাপসা হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তত বেশি। তবে এর পার্থক্য রয়েছে।
যেমন আপনি খুব কাছ থেকে একটি ফুলের ছবি উঠিয়েছেন, তার কয়েক ইঞ্চি দুরত্বের আরেকটি ফুল বা পাতা ঝাপসা দেখা যাচ্ছে। আবার আপনি খোলা মাঠে দুরের একটি কুড়েঘরের ছবি উঠিয়েছেন, তারথেকে বহুদুরের গাছপালা কিংবা আকাশ ঝাপসা হয়নি। এই দুই উদাহরন থেকে ডেপথ অব ফিল্ডের পরিচয় দিয়ে বলা যায়, প্রথম উদাহরনে ডেপথ অব ফিল্ড কম, পরের উদাহরনে ডেপথ অব ফিল্ড বেশি।
আপনি প্রশ্ন করতে পারেন কোনটি ভাল।
এর কোন সঠিক উত্তর নেই। আপনি যখন একটি ফুলের ওপর বসা প্রজাপতির ছবি উঠাবেন তখন আপনি চান শুধুমাত্র ফুল এবং প্রজাপতি স্পষ্ট দেখা যাক, এর বাইরের সবকিছু ঝাপসা থাকুক।  ঝাপসা বিষয়গুলি অষ্পষ্ট ব্যাকগ্রাউন্ড হিসেবে মুল বিষয়কে আরো স্পষ্ট করে তোলে। কাজেই এক্ষেত্রে কম ডেপথ অব ফিল্ড ভাল।
আবার পরের উদাহরনের ক্ষেত্রে যদি আকাশ কিংবা দুরের গাছপালা ঝাপসা হয় তাহলে ছবি সম্পুর্ন মনে হবে না। সেক্ষেত্রে বেশি ডেপথ অব ফিল্ড সুবিধেজনক। অবশ্য ল্যান্ডস্কেপের ক্ষেত্রেও ডেপথ অব ফিল্ড কমিয়ে ভিন্নধরনের ছবি পেতে পারেন।
কাজেই আপনি ডেপথ অব ফিল্ড কম নাকি বেশি ব্যবহার করবেন এর কোন ধরাবাধা নিয়ম নেই। ছবির বিষয়ের দিকে দৃষ্টি দিয়ে আপনাকেই ঠিক করে নিতে হবে আপনি কি চান।

এপারচার এবং ডেপথ অব ফিল্ড
আপনি ডেপথ অব ফিল্ড বেশি চান অথবা কম চান, সেটা ঠিক করবেন কিভাবে ?
সবচেয়ে সহজ উপায় এপারচার পরিবর্তন করা। এপারচার যত ছোট (মান বেশি) ডেপথ অব ফিল্ড তত বেশি। অনেকে নির্দিষ্ট করে বলেন ল্যান্ডস্কেপের জন্য এফ/২২ ব্যবহার করার কথা। কম ডেপথ অব ফিল্ডের জন্য ব্যবহার করবেন এফ/৫.৬ কিংবা আরো বেশি (সংখ্যায় কম)।



লেন্স এবং ডেপথ অব ফিল্ড
লেন্সের ফোকাল লেন্থ প্রভাব ফেলে ডেপথ অব ফিল্ডের ওপর। ফোকাল লেন্থ যত কম হবে ডেপথ অব ফিল্ড তত বেশি হবে। যেমন ৫৫ মিমি লেন্সে এফ/৮ এপারচারে যে ডেপথ অব ফিল্ড পাওয়া যাবে একই এপারচারে ২০০ মিমি লেন্সে পাওয়া যাবে তারথেকে অনেক কম। যে কারনে কম ফোকাল লেন্থের লেন্সগুলি ল্যান্ডস্কেপ ফটোগ্রাফির জন্য বেশি উপযোগি।





দুরত্ব এবং ডেপথ অব ফিল্ড
ক্যামেরা থেকে বিষয়ের দুরত্ব যত বেশি ডেপথ অব ফিল্ড তত বেশি। একটি ফুলের একেবারে কাছে থেকে ছবি উঠালে আপনি যেমন একেবারে কম ডেপথ অব ফিল্ড পাবেন, দুর থেকে উঠালে সেটা পাবেন না।



কাজেই ভাল ছবি উঠানোর জন্য ডেপথ অব ফিল্ড বিষয়টির দিকে দৃষ্টি দিন। একই ছবি ভিন্ন ভিন্ন সেটিংএ উঠিয়ে সেগুলি পর্যবেক্ষন করুন। একসময় ঠিক যেমনটি চান তেমনটিই পাবেন।

প্যানোরামা:

আপনি নিশ্চয়ই এমন ছবি দেখেছেন যেখানে বিস্তৃত প্রান্তরের ছবি রয়েছে। আপনি কোথাও দাড়িয়ে মাথা ঘুরিয়ে চারিদিকে দৃষ্টি দিলে যেমন দেখা যায় তেমন। ফটোগ্রাফির ভাষায় এটাই প্যানোরামা। অবশ্যই আপনি একবারে বামদিক, সামনের দিক এবং ডানদিকের ছবি উঠাতে পারেন না। এদেরকে পৃথক পৃথকভাবেই উঠানো হয়, তারপর জোড়া লাগানো হয় (stitch) ফটোশপের মত কোন সফটঅয়্যার দিয়ে। কুইটটাইম এর মত সফটঅয়্যার ব্যবহার করে এথেকে এমন ছবি (ভিআর) তৈরী করা যায় যা ড্রাগ করে ঘুরানো যায়।  মনে হবে আপনি থ্রিডি ছবি ঘুরিয়ে দেখছেন।
যেমন তেমনভাবে উঠানো ছবি যে ঠিকভাবে জোড়া দেয়া যায় না এটা বলে দেয়া প্রয়োজন নেই। আর তখনই প্রশ্ন ওঠে, ঠিক কিভাবে ছবি উঠালে একেবারে নিখুত প্যানোরামা পাওয়া যাবে। সেই বিষয়গুলিই উল্লেখ করা হচ্ছে এখানে।
      ট্রাইপড ব্যবহার করুন। এবিষয়ে এরবেশি বলা প্রয়োজন নেই।
ট্রাইপড ছাড়া প্যানোরামা ছবি উঠাতে পারেন, সেক্ষেত্রে পাশাপাশি তো বটেই, ছবিগুলিকে ওপরে-নিচেও সমান করতে হবে।
     ট্রাইপডকে ভুমির সমান্তরাল করুন। ভাল মানের প্রায় সব ট্রাইপডেই লেভেল কন্ট্রোলের ব্যবস্থা রয়েছে। পানির মত তরল (bubble) রয়েছে যা দেখে বোঝা যায় ট্রাইপড ঠিকভাবে রাখা হয়েছে কিনা।
     ক্যামেরাকেও ভুমির সমান্তরাল রাখুন। অনেকে এজন্য ফ্লাশ হট-সুতে বাবল ব্যবহার করেন। ছোট শিশিতে পানি রেখে আপনি নিজেই এধরনের কিছু তৈরী করে নিতে পারেন।         প্রতিটি ফ্রেমের জন্য কতটুকু যায়গা ব্যবহার করবেন আগেই ঠিক করে নিন। ২০ থেকে ৩০ ভাগ যায়গা একটির ওপর আরেকটি (ওভারল্যাপিং) ব্যবহার করুন। নির্দিষ্ট কোন বস্তু দেখে বিষয়টি ঠিক করে নিতে পারেন। অর্থাত কোন একটি ফ্রেমের ডানদিকে ২৫ ভাগ দুরত্বে যে বস্তু থাকবে সেটা পরবর্তী ফ্রেমের বামদিকে ২৫ ভাগ দুরত্বে রাখুন।
        মিটার দেখে নিন এরপর এক্সপোজার ঠিক করুন ম্যানুয়েল পদ্ধতিতে। অটো কন্ট্রোল ব্যবহার করলে একেক ফ্রেমের এক্সপোজার একেক রকম হতে পারে।         হোয়াইট ব্যালান্স ম্যানুয়েল পদ্ধতিতে ঠিক করে নিন।         সবসময় বামদিকের ফ্রেম থেকে ছবি উঠানো শুরু করুন। কোথায় শুরু কোথায় শেষ নিশ্চিত করার জন্য শুরুতেই দুই প্রান্তের ছবি উঠিয়ে নিতে পারেন।
       এদেরকে জোড়া দেয়ার সময়ও এভাবেই পরপর জোড়া দিন।

সঠিক রঙের জন্য হোয়াইট ব্যালান্স ঠিক করুন:

ছবি উঠানোর সময় এপারচার, সাটার স্পিড, আইএসও ইত্যাদি বিষয় এতটাই গুরুত্বপুর্ন যে হোয়াইট ব্যালান্স বিষয়টি অনেকসময়ই গুরুত্ব পায় না। ফল হিসেবে ছবিতে পাওয়া যায় কখনো নিলচে, লালচে বা সবজেটে ভাব। হোয়াইট ব্যালান্স ঠিক করে এই সমস্যা দুর করা যায় সহজেই।
একচু জেনে নেয়া যাক হোয়াইট ব্যালান্স বিষয়টি কি ?
ছবিতে সবচেয়ে আলোকিত এবং সবচেয়ে অন্ধকার দুটি বিন্দুর কথা চিন্তা করুন। সবচেয়ে আলোকিত অংশের রং হওয়ার কথা একেবারে সাদা, সবচেয়ে অন্ধকার অংশ হওয়ার কথা একেবারে কালো। সাদাকে পুরোপুরি সাদা দেখানোর ব্যবস্থাকে বলে হোয়াইট ব্যালান্স।
এর পেছনে রয়েছে কিছুটা আলো তত্ত্ব। প্রতিটি রঙের রয়েছে সাদার তুলনায় নিজস্ব বৈশিষ্ট। একে পরিমাপ করা হয় কেলভিন তাপমাত্রার স্কেলে এবং নাম কালার টেম্পারেচার। আলট্রাভায়োলেট শর্ট ওয়েব লেন্থের কালার টেম্পারেচার বেশি, যেমন সাদা হচ্ছে ৫৬০০ ডিগ্রী কেরভিন, অন্যদিকে ইনফ্রারেড লং ওয়েভের টেম্পারেচার কম, ২০০০ ডিগ্রী কেলভিন। বেগুলি থেকে লালের দিকে মাঝের রংগুলি ক্রমাম্বয়ে নীল, সবুজ, হলুদ, কমলা ইত্যাদি। বৈজ্ঞানিভাবে কালার টেম্পারেচার হচ্ছে কার্বনকে উত্তপ্ত করলে বিভিন্ন কেলভিন টেম্পারেচারে রঙের যে পরিবর্তন হয় সেটা। যেমন ২০০০ ডিগ্রী তাপমাত্রায় কার্বনের রং লাল। ৫৬০০ ডিগ্রীতে একেবারে সাদা।
সুর্যের উদাহরন বিবেচনায় আনতে পারেন। দুপুরে যখন কালার টেম্পারেচার সবচেয়ে বেশি তখন আমরা সাদা আলো পাই, অন্যদিকে সুর্যোদয় কিংবা সুর্যাস্তের সময় কৌনিক অবস্থানের কারনে কালার টেম্পারেচার কমে যায়, আমরা পাই লালচে এবং হলদেটে সোনালী আলো।
আমরা চোখে দেখার সময় খুব সহজে চোখ তারসাথে মানিয়ে নিতে পারে। কিন্তু ক্যামেরা নিজে থেকে সেটা করে না। ফল হিসেবে সুর্যাস্তের ছবি উঠানোর সময় যদি দুপুরের কালার টেম্পারেচারের হোয়াইট ব্যালান্স সেটিং ব্যবহার করা হয় সেখানে লালচে-হলুদ রং থাকবে না। আপনিও সঠিক রং পাবেন না। হোয়াই ব্যালান্স সেটিং এর দিকে দৃষ্টি দিয়ে আপনি পেতে পারেন নিখুত রঙের ছবি।

অধিকাংশ ক্যামেরায় হোয়াইট ব্যালান্স সেটিং এর জন্য কয়েকটি অপশন থাকে। এদের একটি অবশ্যই অটো যেখানে ক্যামেরা নিজেই আলো বিশ্লেষন করে ঠিক করে নেয় কোন ধরনের হোয়াইট ব্যালান্স ব্যবহার করবে। পেশাদার ফটোগ্রাফাররা এটা ব্যবহার করেন সবচেয়ে কম।
এছাড়া থাকে সরাসরি সুর্যের আলো, মেঘলা দিন, ছায়া, মোমের আলো, ফ্লুরোসেন্ট টিউবের আলো, সাধারন আলো, ফ্লাশ ইত্যাদি নাম। যখন যে আলোয় ছবি উঠাতে চান তখন সেটা সিলেক্ট করে নিতে পারেন।
অভিজ্ঞ ফটোগ্রাফাররা এতে সন্তুষ্ট নন (সেকারনেই তাদের ছবি ভাল হয়)। তাদের জন্য কিছু ক্যামেরায় রয়েছে ডিগ্রী কেলভিন মান দেখে হোয়াইট ব্যালান্স ঠিক করা। এজন্য আপনাকে জানতে হবে কোন আলোর কালার টেম্পারেচার মান কত। কাজটি কঠিন।
অনেক ক্যামেরায় যেখানে ছবি উঠাচ্ছেন সেখানকার কালার টেম্পারেচার যাচাই করার ব্যবস্থা থাকে। একমাত্র এভাবেই একেবারে সঠিক কালার টেম্পারেচার ব্যবহার করা সম্ভব।
যেমন নাইকন ডি৯০ ক্যামেরাকে উদাহরন হিসেবে দেখুন,
.          মেনু থেকে Preset Manual সিলেক্ট করুন
.          যেখানে ছবি উঠাবেন সেই পরিস্থিতিতে একটি সাদা কাগজ (অথবা একেবারে সাদা অন্যকিছু) রাখুন
.          Aparture Priority মোডে যান
.          হোয়াইট ব্যালান্স বাটন চেপে ধরে কমান্ড ডায়াল ঘুরাতে থাকুন যতক্ষন না প্রিসেট দেখা যায়।
.          হোয়াইট ব্যালান্স বাটন ছেড়ে দিন, এরপর আবারও চেয়ে ২ সেকেন্ড ধরে রাখুন। ডিসপ্লেতে প্রিসেট আইকণ ব্লিংক করতে থাকবে।
.          পুরো স্ক্রিনে সাদা কাগজটি ফোকাস করুন।
.          সাটার রিলিজ বাটন চাপ দিন।

কোন ছবি উঠবে না কিন্তু ক্যামেরা সেই পরিস্থিতির  হোয়াইট ব্যালান্স এর জন্য মান রেকর্ড করবে। সঠিক মান রেকর্ড হলে ডিসপ্লেতে Good লেখা পাবেন।
পরিবেশ কিংবা আলোর পরিবর্তনের সাথেসাথে এই মানও পরিবর্তিত হতে পারে। কাজেই যায়গা বা সময় পরিবর্তনের পর আপনাকে পুনরায় এই সেটিং ঠিক করে নিতে হতে পারে। বড়জোর কয়েক সেকেন্ড সময় লাগবে এটা করতে। আপনার ক্যামেরায় যদি এই ব্যবস্থা থাকে তাহলে সেটা ব্যবহার করুন।

*** অন্য ক্যামেরার জন্য পদ্ধতিতে কিছুটা ভিন্নতা থাকতে পারে। সেটা জানার জন্য আপনার ক্যামেরার ম্যানুয়েল দেখুন।

ফোকাল লেন্থ, এঙ্গেল অব ভিউ এবং নানা ধরনের লেন্স:

ক্যামেরা কিংবা ছবি উঠানোর কথা বললেই কিছু শব্দ শোনা যায়, ওয়াইড এঙ্গেল, টেলিফটো, ফোকাল লেন্থ ইত্যাদি। কিংবা লেন্সের ক্ষেত্রে বলা হয় অত মিলিমিটার। এই বিষয়গুলি ঠিক কি বুঝায়, ছবিতে এর কি প্রভাব পরে নতুন ফটোগ্রাফারদের কাছে অনেকটাই অশ্পষ্ট মনে হতে পারে। বিষয়টি স্পষ্ট করার চেষ্টা করা হচ্ছে।


হয়ত লক্ষ করেছেন ডিজিটাল ক্যামেরার তুলনা করা হয় ৩৫মিলিমিটার ক্যামেরার সাথে। আগেকার দিনের ৩৫ মিলিমিটার ক্যামেরাকেই এখনও ষ্ট্যান্ডার্ড ধরে তারসাথে তুলনা করা হয়। যেমন উল্লেখ করা হল অমুক লেন্স ১৮-৮৫ মিমি, এরপরই উল্লেখ করা হয় ৩৫ মিমি এর তুলনায়।
খালিচোখে আমরা যেমন দেখি ছবিতে যদি ঠিক তেমনটি পেতে চাই তাকে বলতে পারি নরম্যাল লেন্স। হিসেব করে দেখা গেছে ৫০ থেকে ৫৫ মিমি পর্যন্ত লেন্সে এধরনের ছবি পাওয়া যায়। কাজেই লেন্সের হিসেবে এগুলি ষ্ট্যান্ডার্ড লেন্স নামে পরিচিত।
যদি এরথেকে কম ফোকাল লেন্থ হয় তাহলে সামনের দৃশ্য খালিচোখে যতটা দেখা যায় তারথেকে বেশি দেখা যাবে। লেন্স অনেক বেশি কৌনিক দৃশ্য ধারন করে, সেকারনে একে বলা হয় ওয়াইড এঙ্গেল লেন্স। মুলত ৩৫ মিমি এর নিচের ফোকাল লেন্ধের লেন্সগুলি ওয়াইড এঙ্গেল নামে পরিচিত। এঙ্গেলের পরিমান যদি খুব বেশি হয় তাহলে সামনের দৃশ্য গোলাকার ধারন করে। অনেকটা মাছের চোখের মত বলে এর নাম ফিস-আই লেন্স।
আবার বিপরীতভাবে ফোকাল লেন্থ যদি বেশি হয় তাহলে সামনের দৃশ্যের জন্য কোন ছোট হয়ে আসে এবং নির্দিষ্ট অংশ দেখা যায়। একে ন্যারো এঙ্গেল লেন্স বলতে পারেন, তবে বাস্তবে একে বলা হয় লং ফোকাস লেন্স, কিংবা টেলিফটো লেন্স কিংবা জুম লেন্স।
নির্দিস্টভাবে লেন্সের যে ভাগগুলি রয়েছে তা হচ্ছে
ফিসআই লেন্স : ৬ থেকে ৮ মিমি। অন্তত ১৮০ ডিগ্রী পর্যন্ত ধারন করতে পারে। কখনো কখনো ২২০ ডিগ্রী পর্যন্ত (ক্যামেরার পেছন দিকে) ধারন করার মত লেন্সও রয়েছে।
ওয়াইড এঙ্গেল লেন্স : ১৮ থেকে ৩৫ মিমি পর্যন্ত। সাধারন কাজের জন্য এগুলি ব্যবহার করা হয়। এতে ডেপথ অব ফিল্ড বেশি পাওয়া যায়, ফলে ল্যান্ডস্কেপ, ইন্টেরিয়র, আর্কিটেকচার ইত্যাদি কাজের জন্য বেশি উপযোগি।
ষ্ট্যান্ডার্ড লেন্স : ৫০ মিমি। মানুষের চোখে দেখার কাছাকাছি বলে এর ব্যবহার সবচেয়ে বেশি। অনেক বেশি এপারচার ব্যবহার করা যায় বলে কম আলোতে ভাল ছবি পাওয়া যায়।
লং ফোকাস লেন্স : ৮০ থেকে ৪০০ মিমি। বিষয়কে অনেক বড় দেখা যায় বলে দুরের কোনকিছু ছবি উঠানোর জন্য বেশি উপযোগি। স্পষ্টভাবে দুরের কিছুর ছবি উঠানোর জন্য ব্যবহার করা হয়। দুরত্ব বাড়ার সাথেসাথে ডেপথ অব ফিল্ড কমে যায়।
সুপারজুম বা এক্সট্রিম লং ফোকাস লেন্স : ৪০০ মিমি এর ওপর লেন্সকে এই দলে ফেলা হয়। পাখি বা বন্য প্রানী এই ধরনের বিষয়ের জন্য বেশি উপযোগি। অনেকসময় একে টেলিফটো লেন্সও বলা হয়। সাধারনত এগুলি আকারে বড় এবং ওজন বেশি বলে ট্রাইপড ব্যবহার করতে হয়। ষ্টেডিয়ামে খেলার সময় সাংবাদিকরা এগুলি ব্যবহার করে দুর থেকে ছবি উঠান।
এর বাইরে কিছু বিশেষ ধরনের লেন্স রয়েছে। যেমন;
ম্যাক্রো লেন্স : মাছির চোখ কিংবা ঘাসের ছোট একটি ফুল কাছ থেকে উঠানোর জন্য বিশেষ ধরনের এই লেন্স ব্যবহার করা হয়। যদিও এর ফোকাল লেন্স ৫০ থেকে ২০০ মিমি, এতে বিশেষভাবে ফোকাস করার কারনে বিষয়কে অনেক বড় আকারে পাওয়া যায়। এক্সটেনশন টিউব নামে একধরনের এডাপটার ব্যবহার করে সাধারন লেন্সকে ম্যাক্রো লেন্স হিসেবে ব্যবহার করা যায়। অনেকে নিজেই এধরনের টিউব তৈরী করে নেন। মুলত ক্যামেরা থেকে মুল লেন্সকে কিছুটা দুরত্বে রেখে একাজ করা হয়।
জুম এডাপটার : কোন লেন্সের সর্বোচ্চ ফোকাল লেন্থকে আরো বাড়ানোর জন্য একধরনের এডাপটার ব্যবহার করা হয়। ২এক্স এডাপটার ব্যবহারের অর্থ লেন্সের আগের ফোকাল লেন্থকে দ্বিগুন করা। ক্যামেরা এবং লেন্সের মাঝখানে একে লাগানো হয়।

মুভমেন্ট ফটোগ্রাফি:

ছবি উঠানোর সময় হাত এবং ক্যামেরা স্থির রাখবেন, সম্ভব হলে ট্রাইপড ব্যবহার করবেন অথবা কোথাও ঠেস দিয়ে দাড়াবেন, বেশি সাটার স্পিড ব্যবহার করবেন, ইমেজ ষ্ট্যাবিলাইজেশন ব্যবহার করবেন এসব কথা শুনেই আপনি অভ্যস্থ। এর বিপরীত দিক কি কখনো ভেবে দেখেছেন। ছবি উঠানোর সময় ইচ্ছে করে ক্যামেরা নাড়ানো। ফটোগ্রাফিতে এর নাম মুভমেন্ট ফটোগ্রাফি।


মুল বিষয় হচ্ছে সাটার স্পিড কম ব্যবহার করবেন যেন বেশি সময় ধরে এক্সপোজার পাওয়া যায়। যতক্ষন সাটার খোলা থাকবে সেই সময়ে ক্যামেরা নাড়াবেন। আলোর যায়গাগুলি একধরনের গতিশীল আলোকপথ তৈরী করবে।
একেবারে অনিয়ন্ত্রিতভাবে কাজটি না করে একেই নিজের পছন্দমত কাজে ব্যবহার করতে পারেন।

 যেমন জুম ইফেক্ট।
Aperture Priority  মোড সিলেক্ট করুন। এপারচার ২২ সেট করুন। যে বিষয়ের ছবি উঠাবেন সেখানে ফোকাস করুন। সাটার রিলিজ চেপে ছবি উঠানোর সময় দ্রুত জুম কম বা বেশি করুন। আলোকরশ্মির ইফেক্ট পাবেন এরফলে।
অথবা ব্যবহার করতে পারেন রোটেশন ইফেক্ট। ছবি উঠানোর সময় ক্যামেরা বৃত্তকারে ঘুরান, অথবা আপনি নিজেই ক্যামেরা সহ ঘুরুন। হয়ত স্পষ্ট বিষয় পাবেন না কিংন্তু রঙের বৈচিত্র থাকলে মজাদার কিছু পাবেন। উদাহরনের ছবিটি মাথার ওপর বড়বড় গাছের।
অথবা বাগানে ফুলের ছবি উঠানোর সময় সাটার স্পিড একেবারে কমিয়ে ইচ্ছেমত ক্যামেরা ঘুরান। একেবারে ভিন্ন ধরনের ছবি পাবেন। ক্যামেরা ওপরে নিচে করে আরেকধরনের ইফেক্ট পেতে পারেন।
জুম ইফেক্ট এর জন্য এসএলআর অথবা জুম-রিং ব্যবহার করা যায় এমন ক্যামেরা প্রয়োজন হবে। অন্য ইফেক্টগুলি ব্যবহার করা যাবে যে কোন ক্যামেরায়।

দৃষ্টিভঙ্গি প্রয়োজন:

যারা ছবি উঠান তাদের স্বাভাবিক একটি প্রশ্ন, কিসের ছবি উঠাব? অনেকেই ছবি উঠানোর জন্য বনে-পাহাড়ে যান একথা ঠিক। সেখানে তারা যে দৃশ্য উঠানোর সুযোগ পান তা অন্যভাবে পাওয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু আপনার চারিদিকে যাকিছু রয়েছে সেখান থেকেই পেতে পারেন দৃষ্টিনন্দন ছবি।
উদাহরনের এই ছবিটি দেখুন। দুটি পাতার ছবি উঠানোর জন্য নিশ্চয়ই আপনার বনে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। ছবিটি ঢাকা শহরে উঠানো।
কিংবা এই কৃষ্ণচুড়ার ডালটি। যে কোন ফুলগাছেই আপনি পেতে পারেন এমন একটি অংশ।

কিংবা কাছ থেকে ওঠানো এই মাকড়সার দল।
কিংবা ঘরের দেয়ালে সাধারন টিকটিকি।
ভাল ছবির জন্য আপনার দৃষ্টিভঙ্গিই যথেষ্ঠ। ক্যামেরার দৃষ্টিতে দেখা অভ্যেস করুন, সাধারন বিষয়কেও অসাধারনভাবে ছবিতে ধরে রাখা সম্ভব হবে।

HDR Photography:

ডিজিটাল ক্যামেরার অনেক উন্নতি হয়েছে, ক্রমাগত হচ্ছে এবং মানুষ ডিজিটাল ফটোগ্রাফিতে মানুষ সন্তুষ্ট। তারপরও বাস্তব সত্য হচ্ছে মানুষ চোখে যেমন দেখে ঠিক সেটাই ছবিতে পাওয়া যায় না। কারন আলো এবং অন্ধকারের বিভিন্ন পর্যায় ছবিতে রেকর্ড করা যায় না। সেইসাথে দুরত্বে বিষয় আছে। একই সময়ে কাছের এবং দুরের বস্তুকে সঠিকভাবে দেখানোর ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা আছে। একদিকে প্রাধান্য দিলে আরেক দিককে অবহেলা করতে হয়। এক্ষেত্রে সবচেয়ে ভাল যে ব্যবস্থা তা হচ্ছে হাই ডাইনামিক রেঞ্জ (এইচডিআর)।
স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠতে পারে ডাইনামিক রেঞ্জ বিষয়টি আসলে কি ?
এর নির্ভুল উত্তর নেই। ক্যামেরা নির্মাতা কখনো বলে না ক্যামেরার ডায়নামিক রেঞ্জ কত। অন্যভাবে বললে আলোছায়ার মধ্যে কতদুর পর্যন্ত পার্থক্য রেকর্ড হবে সেটা পরিমাপগতভাবে জানানো হয় না। কাজেই বস্তুত এর কোন সংজ্ঞা নেই। সহজভাবে ধারনা হচ্ছে, প্রতিটি ক্যামেরা আলো এবং ছায়ার মধ্যে নির্দিষ্ট পরিমান লেভেল ধারন করতে পারে। এটাই ডাইনামিক রেঞ্জ। কাজেই যখন বলা হয় হাই ডাইনামিক রেঞ্জ তখন এই মানকে আরো বৃদ্ধি করা বুঝায়।
অন্যভাবে বললে, ভাল ছবির জন্য প্রয়োজন সঠিক এক্সপোজার। সাধারনভাবে সঠিক এক্সপোজারে যে তথ্য রেকর্ড হয় এইচডিআর তারথেকে কয়েকগুন বেশি তথ্য রেকর্ড করে। একই সময়ে কাছের এবং দুরের বস্তুর জন্য পৃথক এক্সপোজার ব্যবহার করে। ফলে ছবি পাওয়া যায় স্পষ্ট।
কথা হচ্ছে আপনি এইচডিআর ফটোগ্রাফ পাবেন কিভাবে ?
দুভাবে পেতে পারেন। সবচেয়ে ভাল ফল পাবেন ছবি উঠানোর সময় বিশেষ নিয়মে ছবি উঠিয়ে। ছবি উঠানোর পর ফটোশপ বা লাইটরুম ব্যবহার করে এইচডিআর ব্যবহার করতে পারেন। এই সফটঅয়্যারগুলিতে সাধারনভাবে আলো কমবেশি করা ছাড়াও নির্দিষ্টভাবে আলো বা ছায়ার অংশ পরিবর্তন করা যায়। এজন্য এই সাইটেই ফটোশপ টিউটোরিয়াল দেখুন।
ক্যামেরা ব্যবহার করে এইচডিআর ছবি কিভাবে উঠাবেন জেনে নিন। আগেই বলে নেয়া ভাল এইচডিআর ফটোগ্রাফি ভাল কাজ করে আউটডোরে। প্রাকৃতিক দৃশ্য উঠানোর সময়।
     ক্যামেরাকে ট্রাইপডে রাখুন।
      ম্যানুয়েল মোডে যান। এপারচার নির্দিষ্ট করুন।
         ফোকাস করুন এবং এক্সপোজার কন্ট্রোল পরিবর্তন করে বিভিন্ন সেটিংএ অন্তত ৫টি ছবি তুলুন। ছবিগুলির পার্থক্য শুধুমাত্র এক্সপোজারে, অন্যকিছুতে পরিবর্তন করবেন না।
         ছবিগুলিকে এইচডিআর সফটঅয়্যারে ব্যবহার করে একসাথে করুন। ফটোশপ, লাইটরুম ছাড়াও বহু সফটঅয়্যার আছে যেখানে একাজ করা যায়।
মনে হচ্ছে কাজটি বেশ কঠিন। কিন্তু চোখে পড়ার মত উচুমানের ছবি পেতে হলে অতিরিক্ত কাজ তো করতেই হয়।

Previous Post Next Post