কবুতর পালন কিভাবে করবেন !!!!

 

কবুতর পালন 

আমাদের পৃথিবীতে প্রায় ২০০ প্রজাতিরও বেশি কবুতর রয়েছে। আর আমাদের দেশে প্রায় ২০ থেকে ২৫ প্রজাতির বেশি কবুতর রয়েছে। বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি জেলায় বিভিন্ন প্রজাতির কবুতর ছরিয়ে ছিটিয়ে আছে।

এ দেশের জলবায়ু কবুতর পালনে অত্তান্ত উপযোগী। আগের দিনে বার্তা বাহক এবং ঘরের শোভাবর্ধন হিসেবেও অনেকে কবুতর পালন করত।

কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে এটি পরিবারের পুষ্টি চাহিদা ও তরুণ প্রজন্মের কাছে বিকল্প আয়ের উৎস হিসেবে সমাদৃত হয়েছে, অনেক বেকার যুবক এই কবুতর পালন করেই স্বাবলম্বী হয়েছেন। সুষ্ঠ পরিক্পনা ও পরিচর্যার মাধ্যমে সঠিক ভাবে প্রতিপালন করলে সামাজিক উন্নয়নে বিশেষ ভুমিকা রাখা যেতে পারে।



কবুতরের জাত

সারা বিশ্বে প্রায় ২০০ প্রজাতির বেশি কবুতর পাওয়া গেলেও আমাদের দেশে ২০ থেকে ২৫ প্রজাতির কবুতর বেশি পাওয়া যায় এদের মধ্যে উল্লেখ যোগ্য কিছু প্রজাতির নাম দেয়া হলো এক নজরে দেখে নিতে পারেন।

১: সিরাজী কবুতর
২: রেসিং
৩: রেসিং হামার
৪: ফ্লাইং
৫: কিং কবুতর – সাদা, কালো, সিলভার, হলুদ ও নীল
৬:বার্মিংহাম রোলার
৭:মালটেজ
৮: কারনিউ
৯: হর্স ম্যান
১০: স্টেচার

আরো কিছু জাতের নাম দেয়া হলো

১১: লক্ষা কবুতর
১২: জামার্ন সিলড
১৩: লোটন
১৪: গিয়া চুল্লি
১৫: সুয়া চন্দন
১৬: গোল্ডেন সুইফট
১৭:ম্যাকপাই
১৮: মুনডিয়ান
১৯: ফ্লিব্যাক
২০: জালালী

বোনাস হিসেবে আরো কিছু জাতের নাম

২১: গিরিবাজ কবুতর
২২: হর্স ম্যান
২৩: টিম্বালার
২৪: ক্যারিয়ার
২৫: পোটারস্‌
২৬: মুক্ষি

এছারাও অনেক জাতের কবুতর দেশে পাওয়া যায় যা অনেকেই শখের বশে ও বাণিজ্যিক ভাবে পালন করে থাকেন

দেশি কবুতর পালন

আমাদের দেশি কবুতর পালন – kobutor palon হতে পারে একটি লাভ জনক ব্যবস্থা  সঠিক উপায় জেনে বুঝে খামার করতে পারলে লাভের সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। অন্যান্য দেশের বা জাতের কবুতরে জদিও লাভ বেশি হয় তাতে বিনিয়োগ এর হার অনেক বেশি থাকে।

কেন কবুতর পালন লাভজনক

কবুতর পালন লাভ জনক এজন্যই যে এটি পালন করতে অল্প বিনিয়গ আর অল্প জায়গাতেই পালন করা যায়, প্রতি পালন অত্তান্ত সহজ এবং এদের প্রজননকাল সংক্ষিপ্ত হয়ে থাকে। খাদ্য খরচ খুবই কম, এদের মাংস খুবই সুস্বাদু ও পুষ্টিকর এতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে আমিষ, এদের মল জৈব সার হিসেবে ব্যাবহার করা যায়।

দৈহিক গর ওজন
দৈহিক ওজনের দিক দিয়ে একটি প্রাপ্ত বয়স্ক কবুতরের ওজন জাত ভেদে ২৫০-৮০০ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে। প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার সময়কাল ৫-৬ মাস পর্যন্ত। কবুতর প্রতিবারে একজোড়া ডিম দেয়, প্রথম ডিম দেয়ার ৪৮ ঘণ্টা পর আরেকটা ডিম দেয়।

বাজারজাত করণ সময় কাল

কবুতরের বাচ্চা উৎপাদনের বয়সকাল ৫-৬ বসর এর মতো। ডিম থেকে বাচ্চা হতে ১৭-১৯ দিন এর মতো সময় লাগে, এবং বাচ্চার চোখ ফুটতে সময় লাগে ৪-৫ দিন, পালক গজায় ১০-১২ দিনের মধ্যে এবং বাজারজাত করণ করতে হলে ২৮-৩০ দিনের মধ্যেই করা যায়।

কবুতরের জীবন চক্র



এদের জীবনকাল জায়গা ভেদে একেক রকম হয়ে থাকে যেমন বনে জঙ্গলে থাকে তাদের জীবনকাল ৩-৫ বসর এমনকি ১০ বসরও হতে পারে কিন্তু বাড়িতে বা খামারে লালন পালন করলে ঠিক মতো ভেক্সিন বা টিকা দিলে ও যত্ন করলে এদের জীবন কাল ১৫-২০ বসর পর্যন্ত হতে পারে।

কবুতরের ঘর





কবুতরের ঘর তৈরি করা খুবই সহজ তবে এটি তৈরি করতে কিছু দিক অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যেমন কবুতরের ঘর যেনও একটু উঁচু জায়গায় হয়, কুকুর, বিড়াল, ইদুর, বেজি ইত্যাদি যেন কবুতরের ঘর নাগাল না পায়, বাঁশ বা কাঠের খুঁটি অথবা সিমেন্ট এর খুঁটি পুতে তার উপর ঘর নির্মাণ করা যেতে পারে।

পর্যাপ্ত সূর্যলোক, উত্তম নিষ্কাশন ও বায়ু চলাচল করে এমন জায়গা বেছে নিতে হবে এবং ঘরের মুখ দক্ষিণ মুখি হলে ভালো হয়। একটি খামারের জন্য ২৫-৩০ জোরা কবুতর হলে ভালো তবে প্রথমেই বেশি রিস্ক না নিয়ে ৫ জোরা দিয়ে শুরু করা যেতে পারে।

ঘরের মাপ



প্রতি জোরা কবুতরের জন্য দৈর্ঘ্য ৫০সেঃমিঃ x প্রস্থ ৫৫সেঃমিঃx৩০সেঃমিঃ অর্থাৎ ৫০x৫৫x৩০ সেন্টি মিটার করে খোপ তৈরি করতে হবে। স্থানান্তরযোগ্য সল্প খরচে কাঠ, টিন, বাঁশ, খর ইত্যাদি দিয়ে ঘর তৈরি করা যেতে পারে, তবে বাহিরে ছেরে কবুতর পালতে পারলে সব থেকে ভালো হয়।

খোপের ভেতরে নরম ও শুস্ক খড়-কুটা দিলে তারা তাদের ঠোট দিয়ে সহজেই বাসা তৈরি করে নিতে পারে। ডিম পাড়ার জন্য বাসা তৈরিতে শুখনো ঘাস, ধানের খর, কচি ঘাসের ডগা এ জাতীয় জিনিস উত্তম। খোপের ভেতর মাটির সরা বসিয়ে রাখলেও সেখানে ডিম পেরে বাচ্চা ফুটাতে পারে ।

খাঁচায় কবুতর পালন পদ্ধতি



খাঁচায় কবুতর পালন – kobutor palon করতে হলে ওই আগের মাপেই খাঁচা বানাতে হবে অর্থাৎ ৫০x৫৫x৩০ সেন্টি মিটার করে খাঁচার শিক গুলো দের ইঞ্ছি দূরত্বে দিলে ভাল হয়। এতে সব কবুতরই ভালভাবে তাদের মাথা বাহিরে দিতে পারবে। খাবার ও পানির পাত্র খাঁচার বাহিরে রাখতে হবে যাতে কবুতর ওই পাত্রে পা না দিতে পারে, পা দিলে সেখানে জিবানু চলে আসতে পারে।

খাঁচা ঘরে রাখা যায় অথবা বারান্দায়ও রাখা যায় তবে মূল কথা হলো আলো বাতাস যেন ঠিক মতো চলাচল করতে পারে। ঘরে রাখলে বিকল্প ফ্যান এর বেবস্থা রাখা যেতে পারে যাতে ভেতরের গরম খুব সহজেই বাহিরে যেতে পারে।

এবং এক দিকে অন্তত জানালা রাখলে ভালো হয় তবে আরো একটা বিষয় খেয়াল রাখতে হবে তা হলো কোন ভাবেই যেন বৃষ্টির পানি খাঁচার ভেতরে না যেতে পারে। খাঁচার মেঝেতে মোটা কাগজ বা কাঠ দিতে হবে যাতে কবুতর ঠিক মতো দারাতে পারে।

নতুন কবিতর কেনার পর অথবা জায়গা পরিবর্তনের পর 



নতুন কবুতর কিনে বাসায় নিয়ে আসার ৫/ ৭ দিন পরে কবুতর অসুস্থ হয়ে যায়। প্রায় সময়ই এমন কিছু অভিযোগ শেনা য়ায়। এই বিষয়টি নিয়ে প্রায় সময়ই বড় ধরনের তর্ক বিতর্ক অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ শুরু হয়। তাই এই বিষয়টি নিয়ে আমার অভিজ্ঞতা থেকে কিছু তথ্য ও পরামর্শ আপনাদের সামনে উপস্থাপন করলাম। 

কবুতর পালকদের মধ্যে একেক জন একেক রকমের ব্যবস্থাপনায় খামার পরিচালনা করেন। যার জন্য একেক জনের কবুতরের শারীরিক ফিটনেস ও রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার মধ্যে অনেক পার্থক্য থাকে,খাবারের উপাদান ও রুটিন টাইম এর পার্থক্য থাকে। এছাড়াও যে সমস্যা গুলো দেখা দেয় তা হলো খামার পরিবর্তন, পরিবেশগত পরিবর্তন, খাবারের রুটিন টাইম এর পরিবর্তন, বেশী কবুতর থেকে আলাদা হয়ে নির্জন জায়গায় একাকীত্ব অথবা অপরিচিত কবুতরের সংস্পর্শে আসায় মেন্টালি প্রেসার যা কবুতরকে শারীরিক ও মনস্তাত্ত্বিক ভাবে বিপর্যস্ত করে। যার প্রভাবে কবুতর শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় । 


আরও যে সমস্যা গুলো থাকতে পাড়ে। 

১/ শারীরিকভাবে সুস্থ স্বাভাবিক দেখালেও আসলে কবুতর কৃমিতে আক্রান্ত। 

২/  ইকোলাই রোগের ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া বহন করা কবুতর। 

৩/ সঠিক পরিচর্যা অযত্নে অবহেলায় অপুষ্টিতে আক্রান্ত কবুতর। 


ক্রয়কৃত কবুতর বাসায় নিয়ে আসার পরে একটি আলাদা জায়গায় অবজারভেশনে রেখে, ক্রেতার কাছ থেকে কবুতরের অভ্যাস অনুযায়ী খাবারের উপাদান ও রুটিন টাইম জেনে নিন।

প্রথম দিন ছোট দানার খাবার এবং ফুটানো কুসুম গরম পানির সাথে "লাইসোভিট" মিশ্রিত পানি খেতে দিন। বিকেলে "এ্যাপেল সিডার ভিনেগার" মিশ্রিত পানি খেতে দিন। এবং খাবারের থলি চেক করুণ পর্যাপ্ত খাবার না খেলে অল্প  ছোট দানার খাবার খাইয়ে দিন। রাতে ড্রপিং পর্যবেক্ষণ করুন। 


পরের দিন  হতে একটানা ৫ দিন সকালে "টক্সস্লিন" মিশ্রিত পানি খেতে দিন। 

বিকেলে "টক দধির" পানি কিংবা "এ্যাপেল সিডার ভিনেগার" মিশ্রিত পানি কিংবা "পি এস" মিশ্রিত খেতে দিয়ে পর্যবেক্ষণ করুন কবুতরের ড্রপিং স্বাভাবিক কিনা। 

যদি ড্রপিং স্বাভাবিক মনে হয় তাহলে খুবই ভালো। ১৪ /১৫ দিন আলাদা রেখে খামারে সেটাপ দিন। 


আর যদি অস্বাভাবিক মনে হয়। যেমনঃ- চাহিদা অনুযায়ী খাবার খাওয়ার পড়েও ড্রপিং স্বাভাবিক নয়, খুবই ছোট আকারের ড্রপিং যাতে সাদা অংশ আছে। তাহলে ধরে নিবেন কবুতরটি কৃমি কিংবা ক্ষতিকারক "ই-কোলাই" ব্যাকটেরিয়ায় আক্রান্ত।যা বিক্রেতা নিজেও জানেনা,কিংবা বুঝবার মত অভিজ্ঞতাও তার ছিলনা কিংবা নাই। এজন্য তাকে দোষারোপ করা উচিৎ নয়। কারন এটি তার অভিজ্ঞতার ঘাটতি।

এক্ষেত্রে দেরি না করে অভিজ্ঞ কারো পরামর্শ নিয়ে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা প্রদান করুন। 

পাশাপাশি এক লিটারে দুই গ্রাম "প্রজাইম ভেট" এবং এক লিটারে এক গ্রাম"পল্টি স্টার সল্ট" ব্যাবহার করুণ। তবে একসাথ নয় আলাদা আলাদা সময়। কবুতরের শরীর গরম থাকলে রেনেটা কোম্পানির "রেনা স্পিরিন" এক লিটারে এক গ্রাম মিশ্রিত পানি খেতে দিন। এগুলো আলাদা সময় খেতে দিতে হবে। 


কবুতরের খাবার



কবুতরের বাচ্চার চোখ ফোটে বাচ্চা জন্মের ৪-৫ দিন পর, যার ফলে বাচ্চা গুলো কোন শক্ত বা দানাদার খাবার খেতে পারে না। এ সময় স্ত্রী কবুতর ও পুরুষ কবুতর তাদের পাকস্থলি থেকে ঘন এক প্রকার ক্রিম বা দধির মতো বের করে যাকে কবুতরের দুধ বলে। এতে রয়েছে অধিক আমিষ, খনিজ লবন, চর্বি যা এক সপ্তাহ পর্যন্ত বাচ্চা খেতে পারে।

যে পর্যন্ত বাচ্চা নিজে না খেতে পারে ততদিন পর্যন্ত স্ত্রী কবুতর ও পুরুষ কবুতর দুজনেই দানাদার খাদ্যের সাথে ঐ দুধ মিশিয়ে নিজেদের ঠোট দিয়ে খাওয়ায়।কবুতরের খাদ্য তৈরিতে আমিষ, ভিটামিন, চর্বি এবং খনিজ লবন সমৃদ্ধ খাবার হলে কবুতরের জন্য ভালো হয়। কবুতর পাউডার খাবারের চেয়ে দানাদার খাদ্য বেশি পছন্দ করে।

কবুতরের আকার অনুযায়ী তাদের খাদ্যের চাহিদাও ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে যেমন ছোট কবুতরের গরে প্রতিদিন ২০-৩০ গ্রাম, মাঝারি আকারের কবুতর গরে প্রতিদিন ৩৫-৫০ গ্রাম এবং বড় আকারের জন্য প্রতিদিন ৫০-৬০ গ্রাম খাদ্যের জোগান দিতে হবে।

কবুতরের খাদ্যে আমিষ, খনিজ, ভিটামিন এসব থাকা খুবই জরুরি, কবুতর প্রধানত ভুট্টা, সরিষা, গম, খেসারি, যব, চাল, কলাই, ধান ইত্যাদি এসব শস্য দানা খেতে পছন্দ করে। তাই এ সকল দানাদার খাদ্য পরিমান মতো দিতে হবে।
যেমনঃ
মটর ২০%
ভুট্টা ৩৫%
গম ৩০%
চুনা পাথর চূর্ণ/ অস্থি চূর্ণ/ ঝিনুকের গুরা ৭%
এমাইনো প্রিমিক্স/ ভিটামিন ৭%
লবন ১%
—————
মোট ১০০%

উপরের হিসাব অনুযায়ী সকল দানাদার খাদ্য মিক্স করে সকাল বিকাল মাথা পিছু আধা মুঠ শস্যদানা রেখে দিলে তাদের প্রয়োজন মতো যখন খুসি খেতে পারে। এর সাথে অবশ্যই বিশুধ পানির ব্যবস্থা করতে হবে, একটি পাত্রে দানাদার খাবার অন্য পাত্রে বিশুধ ঠাণ্ডা পানি রাখতে হবে।

কবিতরের ভাইরাস 





ভাইরাস মানেই একটি ছোঁয়াচে রোগ, যা শুধু কবুতরের মাধ্যমে কবুতরে ছড়ায় এমনটা নয় । অনেক সময় অন্য খামার থেকে কিংবা হাট-বাজার থেকে ক্রয় কৃত  কবুতর থেকেও  ছড়াতে পারে, কিংবা হাটবাজার থেকে ঘুরে এসে সরাসরি  খামারে প্রবেশ করলে শরীরের পোষাক কিংবা জুতা থেকেও ছড়াতে পারে।

এমনকি  কবুতর ডেলিভারি জার্নি কালীন সময় পথে মধ্যে  বাতাসের মাধ্যমে ছড়াতে পারে। কিংবা খামার পরিদর্শক এর মাধ্যমেও ছড়াতে পারে। খামারে ইঁদুরের তেলাপোকার উপদ্রব বেশি থাকলে  সেখান থেকেও ছড়াতে পারে।আক্রান্ত কবুতরের ব্যবহারিত খাবার কিংবা পানির পাত্র থেকেও ছড়াতে পারে।
এমন কি ইমপোর্টেড কবুতর থেকেও ভয়াবহ ভাইরাস আক্রমণ  ছড়াতে পারে।
এজন্যই নতুন কবুতর খাবারে সংযোজন এর পূর্বে  অন্তত ১৫ থেকে 30 দিন খামার থেকে দূরে কোথাও রেখে পরিচর্যা করা উচিত। এবং কোয়ারেন্টাইন থাকা কবুতরের খাবার পাত্র, পানির পাত্র, কবুতরের খাবার, পরিচর্যার যেকোনো ইন্সট্রুমেন্ট। মূল খামারে প্রবেশ করানো কোনোভাবেই উচিত নয়। এমনকি কোয়ারেন্টাইনে থাকা কবুতরের খাবার ও পরিচর্যার কাজটি করার পরে,  পোশাক ও জুতা পরিবর্তন না করে শরীরে জীবাণুনাশক স্প্রে না করে কিংবা গোসল না করে মুল খামারে প্রবেশ করা উচিত নয়।কারন ভাইরাস একটি ছোঁয়াছে রোগ।

ইমপোর্টেড কবুতর প্রসঙ্গেঃ-
সাধারণত আমাদের দেশের কবুতরের তুলনায় ইমপোর্টেড কবুতরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি। এর অনেকগুলো কারণও আছে, যেমন উন্নত দেশের কবুতরের খামার ব্যবস্থাপনা, খাবারের তালিকা, কবুতর পালনের ধরন।
কবুতরের সিজেনাল বিল্ডিং ব্যবস্থা। সবকিছুই আমাদের থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন।
তাই ইমপোর্টেড কবুতরের শরীরে কোন ধরনের ভাইরাস জীবাণু বহন করলেও। আমাদের দেশের কবুতরের চেয়ে  ইমপোর্টেড কবুতরের শারীরিক ফিটনেস ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বেশি থাকে। তাই ইমপোর্টেড কবুতরের  শরীরে কোন জীবানু বহন করলেও শারীরিক ফিটনেস রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি থাকায় ফিজিক্যালি কোন সিমটম দেখা যায় না।
তবে ওই কবুতর ১৫ থেকে ৩০ দিন কোয়ারান্টিনে না রেখে সরাসরি খামারে প্রবেশ করালে। আমাদের দেশের খামারের কবুতরের শারীরিক ফিটনেস ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকায় দুর্বল কবুতরগুলো আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

এজন্য আমাদের করণীয়ঃ-
অবশ্যই সিজেনাল ব্রীডিং ব্যবস্থা,  ফ্লাইং জোন ব্যবহার করা, সময় মত ভ্যাকসিন করানো, সঠিক সময় কৃমিনাশক ব্যবহার করা।প্রোবায়োটিক এন্ড প্রিবায়োটিক নির্ভর খামার পরিচালনা করা। পরিবেশসম্মত খামার ব্যবস্থাপনা অব্যাহত রাখা।

এরপরেও খামারে ভাইরাস আক্রমণ দেখা দিলে করণীয়ঃ-
খামারে ভাইরাস আক্রমণ দেখা দিলে এমনটা মনে করার কোনো সুযোগ নেই, যে,খামারের  দশটি কবুতর আক্রান্ত হয়েছে, বাদবাকি কবুতর সুস্থ আছে।
আসলে খামারে ভাইরাস আক্রমণ হলে তার জীবাণু পুরো খামারের সব কবুতরের মধ্যে সচল থাকে। এবং যেই কবুতর গুলির শারীরিক ফিটনেস ও  রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে। সেগুলোই পর্যায়ক্রমে আক্রান্ত হয়।


ভাইরাস চলাকালীন খামার ব্যবস্থাপনায় সর্তকতা ও করণীয়ঃ-
প্রতিদিন অসুস্থ কবুতরকে চিকিৎসার পাশাপাশি সুস্থ কবুতরকে prebiotic and  probiotic. জাতীয় মেডিসিন ব্যবহার করা। toxin Binder, nutrilac, polity star  salt,  এগুলো ব্যবহার করা। এবং খামারের মালিকের সরাসরি তত্ত্বাবধানে, কিংবা স্বশরীরে অসুস্থ কবুতরের চিকিৎসার পাশাপাশি ভালো নার্সিং করা। অসুস্থ কবুতরের চিকিৎসায় মেডিসিন এর সাথে অর্গানিক অয়েল ব্যবহার করা, এতে কবুতরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে, মেডিসিনের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পাবে। এবং টাল হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে। অবশ্য টাল নামের কোন রোগ কবুতরের নেই। টাল হবার কারন ভিটামিন B1 B2 B6 B12 কবুতরের শরীরে কম থাকা,  ড্রপিং এর সাথে তেলতেলে যে পদার্থ বের হয়ে যায়,  তার নাম  অর্গানিক অয়েল। যা শরীরে ঘাটতি দেখা দিলে কবুতর টাল বা ঘাড় বাঁকা হয়ে যায়।

👉প্রতিদিন খামারে জীবানুনাশক  স্প্রে করা, ট্রেতে থাকা ড্রপিং গুলো প্রতিদিন  পরিষ্কার করা।
👉পারলে দিনে দুইবার তিনবার পেপারগুলো চেঞ্জ করে নতুন পেপার বিছিয়ে দেওয়া।
👉 এবং নির্দৃষ্ট লোক ছাড়া খামারে কাউকে প্রবেশ করতে না দেয়া ভালো।

বিতর্ক নয় সতর্কতাই উদ্দেশ্য। কারন একটি ভুল একটি খামার শেষ করে দিতে পাড়ে। শুধু কবুতর নয়, মৃত্যু হতে পারে একজন কবুতর পালকের সারাজীবনের লালিত স্বপ্ন।

কবুতরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাপনা

খামার থেকে আর্থিক ভাবে প্রফিট বা লাভবান হতে হলে রোগ বালাইয়ের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য খামারের বায়ো-সিকিউরিটি বা জৈব নিরাপত্তা ও ব্যবস্থাপনার দিকে খেয়াল রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ন। খামারে কবুতর উঠানোর আগে খামার সহ ব্যবহার্য্য সব ধরনের জন্ত্রপাতি সঠিক উপায়ে জীবাণুমুক্ত করন করতে হবে।

প্রথম কাজ হলো পরিস্কার পানি দিয়ে ধুয়ে তারপর পরিস্কার পানির সাথে জীবানুনাশক (০.২-০.৫% সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইড বা আয়োডিন দ্রবণ মিশ্রণ করে ঐ পানি দ্বারা স্প্রে করতে হবে।

কবুতর সংগ্রহের ক্ষেত্রে সুস্থ্য সবল কবুতর সংগ্রহ করতে হবে প্রয়োজনে বাহিরে থাকা জিবানু বা পরজীবি নিধনের জন্য ০.৫% ম্যালাথিয়ন দ্রবণে গোসল করিয়ে খামারে প্রবেস করাতে হবে, এ ক্ষেত্রে কবুতরের মুখ যেন ঐ দ্রবনে না ডুবে যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে, হাত দিয়ে মাথায় লাগিয়ে ধৌত করলেই হবে, তারপর অন্তঃপরজীবি প্রতিরোধের জন্য কৃমিনাশক ঔষধ খাওয়াতে হবে।

খামারে বাহিরের মানুষ এবং বন্য পাখি ও ইদুর জাতীয় প্রানির আসা যাওয়া নিয়ন্ত্রন করতে হবে, প্রতিবার খামারে প্রবেস ও বাহিরের সময় হাত পা জীবাণুমুক্ত করতে হবে। কোন কবুতর অসুস্থ হলে তাকে দ্রুত পৃথকি করন বা কোয়ারেন্টাইন এ রাখতে হবে, ২০২০-২০২১ সালে মানুষ হোম-কোয়ারেন্টাইন সমন্ধে ভালই অবগত হয়েছেন তাই হোম কোয়ারেন্টাইন কি তা আর নতুন করে বলার কিছুই নেই।

কবুতরের রোগ বালাই

কবুতর বিভিন্ন প্রকার অনুজিব দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে, সাধারণত খাদ্য ও পানির মাধ্যমে জীবাণু তার দেহে প্রবেশ করে থাকে। এছাড়াও অতিরিক্ত গরম বা অতিরিক্ত ঠাণ্ডা জনিত কারনেও কবুতর অনেক সময় দুর্বল হয়ে অসুস্থ হয়ে পরে।

কবুতরের ছত্রাকজনিত রোগ ও সংক্রামক রোগ ছারাও ভিটামিন অথবা খনিজ লবনের অভাবে বদহজম, অন্তঃপরজীবি যেমন কৃমি ও পরজীবী যেমন মাছি ইত্যাদি দ্বারাও অসুস্থ হতে পারে।

প্রধান প্রধান কিছু রোগের নাম উল্লেখ করার চেষ্টা করলাম

১- রাণীক্ষেত
২- বসন্ত
৩- রক্ত আমাশয়
৪- সালমোনেলোসিস
৫- এসপারজিলোসিস
৬-ক্যাঙ্কার
৭- ইনক্লুশন বডি হেপাটাইটিস
৮- অন্তঃপরজীবী বা কৃমি
৯- বহিঃপরজীবী
১০- ডায়রিয়া

কবুতরের চিকিৎসা ( প্রাথমিক )

কবুতর প্রেমিদের খারাপ সময় তখনি হয় যখন তার প্রিয় প্রাণীটি অসুস্থ হয়ে পরে, অসুস্থ হওয়ার পর নিজে না পারলে কাউকে জিজ্ঞাস করলেই বলে এন্টিবায়োটিক খাওয়ান। এই ধরনের মুখস্ত ডক্টর অভাব নেই দেশে গলিতে গলিতে এমন ডক্টর পাওয়া যায়, আমার একটা প্রশ্ন, আপনি মাসে কয়বার এন্টিবায়োটিক খান? আমরা যেমন প্রানি কবুতরও তেমনি একটা প্রানি, আমাদের যেমন মাঝে মাঝে ঠান্ডা জ্বর হয় ওদেরও হতে পারে।

তার মানে এই নয় যে কিছু হলেই তাকে জোড় করে ধরে এন্টিবায়োটিক খাইয়ে দিতে হবে আর বলবো যে আজকেই তোমাকে  ভালো হতে হবে, আমি মুখস্ত ডক্টর বাবার কাছ থেকে এন্টিবায়োটিক এনেছি। জাস্ট রিলেক্স———- একটু ভাবুন, একটু পর্যবেক্ষণ করার চেষ্টা করুন, আসল কারণটা খুঁজে বের করুন।

এক্ষেত্রে একটা কথা না বললেই নয় রোগ হবার পর চিকিৎসার জন্য দৌড়া দৌড়ি না করে যাতে রোগ বালাই থেকে আগেই রেহাই পাওয়া যায় সেদিকে বিশেষ ভাবে যত্ন নেয়া দরকার। এই সব থেকে বাচতে যা বেশি জরুরি তা হলো সময় মতো ভেক্সিন বা টিকা প্রদান আর রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাপনা জোরদার করা যার মধ্যে বায়ো-সিকিউরিটি বা জৈব নিরাপত্তা ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন অন্যতম।

এসব কিছু সুন্দর ভাবে করতে পারলেই কবুতর পালন সহজ এবং লাভবান হবে।

কোন কবুতর পালন লাভজনক

মাংস উৎপাদনের জন্য হোয়াইট কিং ,সিলভার কিং, লক্ষা উল্লেখযোগ্য কবুতরের জাত। এবং কবুতর উড়ানোর জন্য গিরিবাজ ও রেসার অন্যতম।

এছাড়া বর্তমানে কিছু বিদেশি কবুতরও দেখা যায়। এদের জাতগুলো হলো- গোলা, গোলি, ময়ূরপঙ্খী, ফ্যানটেল, টাম্বলার, লোটান, লাহরি, কিং, জ্যাকোবিন, মুকি, সিরাজী, গ্রীবাজ, চন্দন ইত্যাদি।

কবুতর পালন খুবই লাভজনক। উন্নতজাতের প্রতি জোড়া কবুতর ২ হাজার থেকে প্রায় ১ লাখ টাকায়ও বিক্রি হতে পারে।

কবুতরের দামের তালিকা

স্থান বা জায়গা ভেদে কবুতরের দামেও কিছুটা কম বেশি হতে পারে, আজ আপনাদের কিছু কবুতরের দাম নিয়ে মোটামুটি একটা ধারনা দেয়ার চেষ্টা করবো।

১- নরমাল সিরাজি – প্রাপ্ত বয়স্ক – জোরা ২২০০-২৮০০ টাকা
২- নরমাল সিরাজি – বাচ্চা – জোরা ১০০০-১৫০০ টাকা

৩- লাহোরি সিরাজি – প্রাপ্ত বয়স্ক – জোরা ৩০০০-৪৫০০ টাকা
৪- লাহোরি সিরাজি – বাচ্চা – জোরা ১৮০০-২৫০০ টাকা

৫- কিং – প্রাপ্ত বয়স্ক – জোরা ৩০০০-৪৫০০ টাকা
৬- কিং – বাচ্চা – জোরা ১২০০-১৮০০ টাকা

৭- লক্ষা – প্রাপ্ত বয়স্ক – জোরা ১৮০০-৩০০০ টাকা
৮- লক্ষা – বাচ্চা – জোরা ১২০০-২০০০ টাকা

৯- গিরিবাজ – প্রাপ্ত বয়স্ক – জোরা ৬০০-৭০০ টাকা
১০- গিরিবাজ – বাচ্চা – জোরা ৩০০-৪০০ টাকা




বাংলাদেশে কিছু  কবিতর খামারীদের নাম ও ঠিকানা !!!!

LILI PIGEON LOFT   

MIRPUR- 60FIT DHAKA,BANGLADESH 
CALL01872446791 , 01639278875


পল্লী ফেন্সি কবুতর খামার  

সিডষ্টোর বাজার,ভালুকা,ময়মনসিংহ 
রানা সরকার
Call: 01716980613

গ্রাম বালিয়াডাঙা ,মাগুরা থানা,মাগুরা জেলা 
ফোন 0191732724901721842317


Jannati Pigeon House

Baliakandi, Rajbari( Faridpur) 

Phone - 01736644803,01822444454


HM Toufik Loft 

 Narayanganj,Dhaka,Bangladesh
  Call :01648191600


মুন এন্ড আরাফাত ফেন্সি কবুতর খামার

মো:-শাহজালাল (মহিন)
সিডস্টোর,ভালুকা,ময়মনসিংহ
Call: 01718010021


ফাহিম পিজিওন লফ্ট

মোঃ রনি আহমেদ
গ্রাম : প্রসাদপুর,পো : সফাপুর,থানা : মহাদেবপুরজেলা : নওগাঁ
Call : 01712842550 , 01910370445 , 01738303590

জোড়া কবুতর মনির

গ্রামঃছাতিহাটি,  জেলাঃটাংগাইল ,থানাঃকালিহাতি
Call : 01733192375/01681633986



Shoukhin loft Rajbari  

Dr.Kausik Mahmud saurave
Sajjankanda,main road, Rajbari
Call- 01795572982



Friends Dream Pigeons Loft
এড্রেস:গোবোরচাকা এক নম্বর ক্রস রোড সোনাডাংগা,খুলনা
মোবাইল :01711-323647(এসকে তাজউদ্দীন)
মোবাইল :01710-616103( মাহাবুব)
মোবাইল :01719-835450(মেহেদী)


Mother's Pigeon Loft Ctg

নাম. মোঃ আকবর হোসেন পিতাঃ মোস্তাক মিয়া
ঠিকানা :চট্টগ্রাম,আনোয়ারা-থানা,গ্রাম- হাইলধরজেলা : নওগাঁ
Call,01854780131-01846030553


 MD Monir Hossen 

Sayedabad Bass-stand,Wari-Dhaka
Call - 01712899349



Rafsun Pigeon Farm 

গাজীপুর চৌরাস্তা, নলজানি,ওয়ালেজগেট,টি,এন,টি রোড,
Call : 01712758828,01677633505.


Mayer Dowa Pigeon Loft
MD Nahid Hossan Robin
Call : 01779683713
মাওনা শ্রীপুর গাজীপুর




Rocky Lahor pigeon loft

Address:- Jhenidah, Dhaka, Bangladesh Phone:- 01985805922

 

R Pigeon Rajshahi 

MD.Raihan kabir Chowdhury 
Niamotpur. Naogaon 
Call01939335658


.জুলহাস কবুতর খামার 
 মোঃ জুলহাস উদ্দিন শেক
সিডষ্টোর বাজার ভালুকা, ময়মনসিংহ
Call- ০১৭১৫৩২৮৮২৩

 
Previous Post Next Post