হযরত মুহাম্মদ (স) এর জীবনী রচনা !!!

 


মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর জীবনী রচনা আকারে ।

সুচনা : পৃথিবী যখন পাপপঙ্কে নিমজ্জিত, মানুষ পথভ্রষ্ট, তখন আল্লাহ একজন মহাপুরুষকে পাঠিয়ে বিপথগামী মানুষকে সত্যের পথে, ন্যায়ের পথে চলার নির্দেশ দেন। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (স) এমনই একজন মহাপুরুষ যিনি পথভ্রষ্ট আরব জাতি তথা বিশ্ববাসীকে সত্যের পথে, ঈমানের পথে, আল্লাহর পথে চলার নির্দেশ দেওয়ার জন্যে মরুভূমি আরবের বুকে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। সাম্য, মৈত্রী, একতা, শৃঙ্খলা ও স্বাধীনতার বাণী বিশ্বের দ্বারে দ্বারে বহন করে তিনি (মানব জাতির প্রভূত কল্যাণ সাধন করেছিলেন। তবে কর্ম ও সততার দ্বারাই তিনি আদর্শ স্থানীয় হতে পেরেছিলেন। তাঁর অমর জীবন গাঁথা বিশ্বের ইতিহাসে চির ভাস্বর হয়ে থাকবে।

হযরত মুহাম্মদ (স)-এর জন্মঃ ৫৭০ খ্রিস্টাব্দের ২১ আগস্ট (১২ই রবিউল আউয়াল) সােমবার ভােরে মক্কার বিখ্যাত কুরাইশ বংশে মুহাম্মদ মুস্তফা (স) জন্মগ্রহণ করেন। হযরতের পিতার নাম আব্দুল্লাহ, মাতার নাম আমিনা। তার জন্মের পূর্বেই পিতা মারা যান, মাত্র ছয় বছর বয়সের সময় মাতাও মারা যান। তাঁর বৃদ্ধ পিতামহ আব্দুল মােতালিব তাকে লালন- পালন করেন। তার পিতামহের মৃত্যুর পর হযরত মুহাম্মদ (স) তার চাচা আবু তালিবের কাছে লালিত-পালিত হতে থাকেন।

শৈশব কালঃ হযরত মুহাম্মদ (স)-এর শৈশবকাল অতি দুঃখ-কষ্টের মধ্যে দিয়ে অতিবাহিত হয়। তিনি বাল্যকাল হতেই মাতা-পিতার স্নেহ লাভে বঞ্চিত হয়েছিলেন। তার চাচা আবু তালিবের আর্থিক অবস্থা তেমন স্বচ্ছল ছিল না। তাই হযরত | মুহাম্মদ (স)-কে বাল্যকাল হতেই কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছিল। হযরত মুহাম্মদ (স) তাঁর চাচাকে ব্যবসা-বাণিজ্যে সাহায্য করতেন। বাল্যকাল হতেই তার মন অপরের দুঃখ-কষ্টে কাতর হতাে। তিনি সীমাহীন দুঃখ সহ্য করেছিলেন বলেই অপরের দুঃখ-কষ্ট উপলদ্ধি করতে পারতেন। তিনি সৎ-স্বভাবের অধিকারী, চিন্তাশীল, পরােপকারী ও সত্যবাদী ছিলেন। তার এই সত্যবাদিতার জন্যে আরবের লােকেরা তাকে ‘আল-আমিন’ বা বিশ্বাসী উপাধি প্রদান করেছিলেন।

বিবাহঃ আমাদের প্রাণাধিক প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (স) খাদিজা (রা) নাম্নী এক ধনাঢ্য মহিলার প্রতিনিধি হিসেবে ব্যবসায় করার জন্যে একবার সিরিয়ায় যান। ব্যবসায়ে প্রচুর লাভ হলাে। তিনি এই লাভের অর্থ এনে এই মহিলাকে কড়ায়-গণ্ডায় বুঝিয়ে দিলেন। তাঁর সততায় সন্তুষ্ট হয়ে খাদিজা (রা) তাঁকে বিবাহের প্রস্তাব দিলে হযরত মুহাম্মদ (স) উক্ত ধনবতী মহিলাকে বিবাহ করেন। তখন তার বয়স ছিল মাত্র পঁচিশ বছর এবং খাদিজা (রা)-এর বয়স ছিল ৪০ বছর।

নবুওয়াত প্রাপ্তিঃ হযরত মুহাম্মদ (স) আরববাসীর পাপাচার ও নাস্তিকতা দূর করার জন্যে সদা সর্বদা চিন্তা করতেন। হেরা নামক পর্বতের গুহায় তিনি দীর্ঘ পনের বছর কাল প্রায়শ আল্লাহর ধ্যানে মগ্ন থাকতেন। অবশেষে ৬১১ খ্রিস্টাব্দে চল্লিশ বছর বয়সে তিনি ঐ হেরা পর্বতের গুহায় ধ্যানমগ্ন অবস্থায় বেহেস্তের দূত জীব্রাইল (আ)-এর মারফত আল্লাহর ঐশী বাণী লাভ করেন। ঐ সময় হতেই আল্লাহর বাণী পবিত্র কোরআন পৃথিবীতে নাজিল হতে থাকে।

ধর্ম প্রচার : আরববাসীদেরকে সত্যের পথে আনার জন্যে অতঃপর হযরত মুহাম্মদ (স) আল্লাহর বাণী প্রচার করতে আরম্ভ করলেন। তিনি আরববাসীদের বললেন, “তােমরা মূর্তি পূজা ত্যাগ কর। এক আল্লাহর ইবাদত কর। আল্লাহ ছাড়া আর কোনাে উপাস্য নেই। মুহাম্মদ তার পেরিত রাসূল।” এ সত্য প্রচারের সময় তাকে সহ্য করতে হয়েছিল সীমাহীন লাঞ্ছনা, অত্যাচার ও নির্যাতন। কিন্তু একমাত্র আল্লাহর ওপর নির্ভর করেই তিনি এই সত্য পথে যাত্রা করেছিলেন। তিনি দুঃখ-কষ্ট- বাধা-বিপত্তির কাছে মাথা নত করেননি।

হযরত মুহাম্মদ (স)-এর মদিনায় গমনঃ হযরত মুহাম্মদ (স) যে সত্য প্রচার করেছিলেন তাতে পথভ্রষ্ট কুরাইশগণ তা= ওপর পাশবিক নির্যাতন চালাতে লাগল। এমন কি হযরত মুহাম্মদ (স)-কে সমূলে ধ্বংস করার জন্যে সুযােগের অপেক্ষা    রইল। তখন তিনি চিন্তা করলেন যে, মক্কায় থাকা নিরাপদ নয়। তাই তিনি আল্লাহর ইঙ্গিতে হযরত আবুবকর (রা)-কে সাথে নিয়ে এক রাতের অন্ধকারে মক্কা ছেড়ে মদিনার পথে যাত্রা করলেন। হযরত মুহাম্মদ (স)-এর এই মক্কা হতে মদিনা। গমনকে হিজরত বলা হয়। সেই যাত্রা ৬২২ খ্রিস্টাব্দে সংঘটিত হয়েছিল। তিনি মদিনায় পৌঁছলে মদিনাবাসী তাকে সাদরে গ্রহণ করলেন এবং তারা সকলে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হলেন। নব দীক্ষিত মুসলমানদের কাছে বসে তিনি ধর্ম প্রচার করতেন। তিনি ইসলামের বাণী চারদিকে ছড়িয়ে দিতে লাগলেন।

মৃত্যুঃ ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক এ মহাপুরুষ হযরত মুহাম্মদ (স) ৬৩২ খ্রিস্টাব্দে ইন্তেকাল করেন। ইসলাম’ শব্দের অর্থ শান্তি। হযরত আজীবন এ শান্তির বাণী প্রচার করে পৃথিবীতে মহান আদর্শ ও শিক্ষার দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন। যারা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে তাদেরকেই মুসলমান বলা হয়।

উপসংহারঃ হযরত মুহাম্মদ (স)-এর চরিত্রের প্রধান প্রধান গুণাবলির মধ্যে দানশীলতা, ধৈর্যশীলতা, উদারতা, ন্যায়পরায়ণতা, বিশ্বস্ততা, সত্যপ্রিয়তা ইত্যাদি উল্লেখযােগ্য। তিনি ছিলেন সত্যের সাধক। যা তিনি সত্য বলে জানতেন তা পালনের জন্যে কখনই পিছপা হননি। তিনি সকলকেই সমান চোখে দেখতেন। দাস-দাসীদের প্রতিও সদয় ব্যবহার করতেন। তিনি দাস-দাসীদের মুক্ত করে দিয়েছিলেন। তিনি অকাতরে দরিদ্রদের সেবা করতেন। তার মহত্ত্ব, উদারতা ও চরিত্র বলের জন্যেই তিনি সহজে সকলের মন জয় করতে পারতেন। তিনি ছিলেন একজন আদর্শ পুরুষ। তার জীবনাদর্শে নিজেকে গড়ে তোেলাই হােক আমাদের জীবনের একান্ত ব্রত।

Previous Post Next Post