ঝিনুক খাওয়ার পদ্ধিতি ! ইসলামে খাওয়া হালাল কিনা এবং মুক্তা চাষ প্রযুক্তি

 


প্রতীক। মুক্তা অলংকারে শোভিত অতি মূল্যবান রতœ। মুক্তার প্রধান ব্যবহার অলংকার হলেও কিছু কিছু জটিল রোগের চিকিৎসায় এবং ঔষধ তৈরিতে মুক্তা ও মুক্তাচূর্ণ ব্যবহার হয়। জ্যোতিষ শাস্ত্র মতে, মুক্তা ধারণে স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়। এছাড়া মুক্তা উৎপাদনকারী ঝিনুকের খোলস নানা ধরণের অলংকার ও সৌখিন দ্রব্যাদি তৈরি এবং ক্যালসিয়ামের একটি প্রধান উৎস-যা হাঁস-মুরগী, মাছ ও চিংড়ির খাদ্যের একটি প্রয়োজনীয় উপাদান। মুক্তা উৎপাদনকারী ঝিনুকের মাংস মাছ ও চিংড়ির উপাদেয় খাদ্য হিসাবেও ব্যবহৃত হয়। অনেক দেশে ঝিনুকের মাংস মানুষের খাদ্য হিসাবে ব্যবহৃত হয়। আমাদের দেশে পূর্বে প্রাকৃতিকভাবে প্রচুর পরিমাণ মুক্তা উৎপাদিত হতো। এসব বিষয় বিবেচনা করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ আগ্রহে ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট স্বাদুপানিতে মুক্তাচাষের পরীক্ষামূলকভাবে গবেষণা পরিচালনা শুরু করে। গবেষণার মাধ্যমে প্রণোদিত উপায়ে সফলভাবে মুক্তা তৈরি করা যায়।

বাংলাদেশে মুক্তা উৎপাদনকারী ঝিনুক:

মুক্তা জীবন্ত ঝিনুকের দেহের ভিতরে জৈবিক প্রক্রিয়ায় তৈরি এক ধরনের রতœ। মুক্তা তৈরি করতে পারে এমন ৪টি প্রজাতির ঝিনুক বাংলাদেশে শনাক্ত করা হয়েছে। এসব ঝিনুক স্বাদু পানিতে যেমন পুকুর-দীঘি, খাল-বিল, নদী-নালা, হাওর-বাওর ইত্যাদিতে পাওয়া যায়।

ল্যামেলিডেনস মারজিনালিস

ল্যামেলিডেনস করিয়ানাস

ল্যামেলিডেনস ফেঞ্চুগ্যানজেনসিস

ল্যামেলিডেনস জেনকিনসিয়ানাস

মুক্তা উৎপাদন পদ্ধতি:

(ক) ম্যান্টল টিস্যু অপারেশন পদ্ধতি:

এই অপারেশন দুটি ধাপে সম্পন্ন করা হয়। প্রথমে ম্যান্টল টিস্যুর টুকরা তৈরি করা হয় তারপর ঝিনুকে প্রতিস্থাপিত করা হয়। এক্ষেত্রে অপারেশনের জন্য ১-২ বৎসর বয়সের ঝিনুক (৬-৮ সে.মি) স্বাস্থ্যবান এবং শক্ত ঝিনুকের ম্যান্টল টিস্যুর কিনারার দিক থেকে টিস্যু সংগ্রহ করতে হবে। টিস্যু সংগ্রহের সময় ঝিনুকটি সম্পূর্ণ খুলে বা ফাঁক করে ম্যান্টল টিস্যুর বহিঃত্বক লম্বা করে কেটে বিচ্ছিন্ন করতে হবে। এভাবে বিচ্ছিন্ন করা টিস্যু একটি গ্লাস বোর্ডে রেখে ছোট ছোট টুকরা করে কাটতে হবে।

প্রতিস্থাপনের জন্য অপর একটি শক্ত স্বাস্থ্যবান ও প্রশস্ত ঝিনুকের দুটি খোলস ৮-১০ মিমি পর্যন্ত ফাঁক করতে হবে। দুই খোলসের মাঝে কাঠের কীলক স্থাপন করতে হবে যাতে খোলসদুটি বন্ধ হয়ে না যায়। ঝিনুকের পেছন দিকের অংশের ম্যান্টলের বহিঃপ্রান্তে টিস্যু প্রতিস্থাপন করা ভাল। প্রতিস্থাপনের জন্য প্রথমেই হুক এবং নিডল এর সাহায্যে এক টুকরা ম্যান্টল টিস্যু নিতে হবে। উলম্বভাবে ঝিনুকের ম্যান্টলে একটি গর্ত করে তাতে টুকরাটি স্থাপন করতে হবে। এভাবে পেছন থেকে সামনের দিকে একের পর এক টুকরা ম্যান্টল টিস্যু স্থাপন করতে হবে। ঝিনুকের আয়তন অনুযায়ী যে কয়টি টুকরা প্রতিস্থাপন করা যায় ততটি মুক্তা সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

(খ) নিউক্লিয়াস অপারেশন পদ্ধতি:

এই প্রক্রিয়ায় একটি নিউক্লিয়াস হিসেবে বহিঃস্থ টিস্যু যেমন ছোট পুতি, ছোট মুক্তা, মাছের চোখের বল, পাথর কণা ইত্যাদি ব্যবহার করা যায়। এক্ষেত্রে ঝিনুকের তিনটি স্থান যেমন পিছনের দিকে যেখানে ম্যান্টল বেশ পুরু, পরিপাকতন্ত্রের উপরিভাগে এবং পায়ের মাংসে নিউক্লিয়াস প্রতিস্থাপন করতে হবে। প্রতিস্থাপনের জন্য একটি ধারালো সূচের সাহায্যে ঝিনুকের দেহে একটি ছোট গর্ত তৈরি করে তাতে নিউক্লিয়াসটি স্থাপন করতে হবে। নিউক্লিয়াসের গায়ে একটি ম্যান্টলের টুকরা স্থাপন করার পর গর্তের মুখ বন্ধ করে দিতে হবে।

(গ) ইমেজ মুক্তা অপারেশন পদ্ধতি:

ঝিনুকের ম্যান্টলের নিচে একটি ইমেজ প্রবেশ করিয়ে দিলে সেই ইমেজের উপর মুক্তার একটি প্রলেপ পড়ে যা দেখতে খুবই সুন্দর এবং আকর্ষণীয়। মুক্তার প্রলেপযুক্ত এই ইমেজকে ইমেজ মুক্তা বলা হয়। মোম, খোলস, প্লাস্টিক, স্টিল ইত্যাদি পছন্দমাফিক ইমেজ তৈরি করে তা প্রথমে পানিতে ভিজিয়ে নিতে হবে। তারপর একটি পাতলা পাত দিয়ে খোলসের কিছু অংশ থেকে ম্যান্টল আলাদা করে সেখানে ইমেজটি সাবধানে ঢুকিয়ে দিতে হবে। সাবধানে ম্যান্টলের গর্ত থেকে বাতাস ও পানি বের করে দিতে হবে।

অপারেশনকৃত ঝিনুকের চাষ:

অপারেশনকৃত ঝিনুক ২-৩ বছর পানিতে চাষ করার পর তাতে মুক্তা তৈরি হয়। পুকুর, নদী, হৃদে যাতে পরিবেশ ভাল থাকে, দূষণ বা রোগের প্রাদুর্ভাব নেই এমন জলাশয় মুক্তা চাষের উপযোগী। পুকুরের আয়তন ৫০ শতকের বেশী হতে হবে। পানির গভীরতা ৫-৭ ফুট হতে হবে। মুক্তা চাষের পুকুরে রুই কাতলা, মৃগেল গ্রার্সকার্প চাষ করা যাবে তবে সিলভার কার্প বা কোন রাক্ষুসে মাছ চাষ করা যাবে না। এছাড়া নদীর কুলবর্তী এলাকা যেখানে পানির প্রবাহ থাকে সেখানে মুক্তা চাষ করা যায়। পুকুরে সামান্য পানি প্রবাহ সৃষ্টি করা গেলে ভাল। মুক্তা চাষের জলাশয়ে প্রতি মাসে প্রতি শতাংশে ১ কেজি হারে পাথুরে চুন প্রয়োগ করতে হবে।

ঝিনুকের বৃদ্ধির জন্য পর্যাপ্ত খাবার সরবরাহ করা প্রয়োজন। জলাশয়ের পানির রং হলুদাভ সবুজ এবং স্বচ্ছতা ৩০ সেমি ঝিনুক চাষের জন্য উপযোগী। এরূপ রং না থাকলে সেখানে দৈনিক ২০০-৩০০ গ্রাম গোবর, ৪-৫ গ্রাম ইক্লরিয়া এবং ৩ গ্রাম টিএসপি প্রয়োগ করতে হবে।

জলাশয়ে ঝিনুক স্থাপন:

উপরোল্লিখিত পরিবেশে পুকুরে বা নদীতে অপারেশনকৃত ঝিনুক স্থাপন করার জন্য আড়াআড়িভাবে পুকুরে নাইলনের মোটা রশি টানাতে হবে। রশির দুই প্রান্তে বাঁশের খুটির সাথে বেঁধে রশিটিকে ভাসমান রাখতে হবে। এরপর প্রতিটি নেট ব্যাগে ২-৩ টি করে ঝিনুক রেখে ২৫-৩০ সেমি দুরুত্বে ব্যাগটি ঝুলাতে হবে। দুটি রশির মধ্যে দুরত্ব হবে ৪-৫ ফুট।

মুক্তা সংগ্রহ:

ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মুক্তা সংগ্রহের উপযুক্ত সময়। সাধারণত দুইটি পদ্ধতিতে ঝিনুক থেকে মুক্তা সংগ্রহ করা হয়।

জীবিত ঝিনুক থেকে মুক্তা সংগ্রহ:

ঝিনুকের খোলস খুব সাবধানে ফাঁক করে মুক্তার থলি থেকে পাতলা পাতের সাহায্যে সামান্য চাপ দিয়ে মুক্তা বের করে আনতে হবে। সংগ্রহের পর ঝিনুকটি আবার মুক্তা চাষের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।

ঝিনুক কেটে মুক্তা সংগ্রহ:

ঝিনুকের দেহ থেকে ম্যান্টল আলাদা করে নিতে হবে। ম্যান্টলগুলো তোয়ালের সাথে ঘষলে ম্যান্টল থেকে মুক্তা পৃথক হয়ে যাবে এবং পাত্রের তলায় জমা পড়বে। সংগৃহীত মুক্তা থেকে আঠা জাতীয় পদার্থ দুর করার জন্য লবন পানিতে ৫-১০ মিনিট ডুবিয়ে রাখতে হবে এবং সর্বশেষ পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে।

সংরক্ষণ:

মুক্তা শুকাতে হবে এবং নরম সুতি বা সিল্কের কাপড় দিয়ে ঘষতে হবে। এতে মুক্তা চকচকে হয়ে উঠবে। শুকানোর পর মুক্তা সুতি কাপড়ের ব্যাগে বায়ুযুক্ত স্থানে সংরক্ষণ করতে হবে।

আয়:

গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে, একটি ঝিনুকে ১০ থেকে ১২টি মুক্তা জন্মে। প্রতিটি মুক্তার খুচরামূল্য ৫০ টাকা। প্রতি শতাংশে ৬০ থেকে ১০০টি ঝিনুক চাষ করা যায়। এক হিসাবে দেখা যায়, প্রতি শতাংশে ৮০টি ঝিনুকে গড়ে ১০টি করে ৮০০ মুক্তা পাওয়া যায়, যার বাজারমূল্য ৪০ হাজার টাকা। সেই হিসাবে প্রতি একরে ৪০ লাখ টাকার মুক্তা উৎপাদন করা সম্ভব।

উপসংহার:

আন্তর্জাতিক বাজারে মুক্তার চাহিদা যেমন দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে, তেমনিভাবে অভ্যন্তরীণ বাজারেও মুক্তার চাহিদা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাছাড়া বাংলাদেশে প্রচুর পুকুর -দীঘি, খাল-বিল, হাওড়-বাওড় নদী-নালা আছে যা মুক্তাচাষ উপযোগী। মুক্তা উৎপাদনের জন্য চাষকৃত ঝিনুক ছাঁকন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জলাশয়ের পরিবেশ উন্নত করে। উপযুক্ত পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়া গেলে দেশে মুক্তাচাষে বিরাট সফলতা অর্জন করা সম্ভব-যা দেশের ব্যাপক জনগোষ্ঠির কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে।

তথ্যসূত্র: বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট


অক্টোপাস শামুক ঝিনুক খাওয়া জায়েজ?

প্রশ্ন: খাবারসামগ্রী হিসেবে বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে অক্টোপাস, শামুক, ঝিনুক, স্কুইড ইত্যাদি এখন সহজলভ্য। এসব খাওয়া জায়েজ আছে? এগুলো সম্পর্কে ইসলামের নির্দেশনা কী?

উত্তর: মাছ ছাড়া অন্য কোনো জলজ প্রাণী খাওয়া জায়েয নেই। আর যেহেতু অক্টোপাস, স্কুইড (সামুদ্রিক বিশেষ প্রাণী), শামুক, ঝিনুক ইত্যাদি মাছ নয়, তাই এগুলো খাওয়াও নাজায়েজ।

ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৩/১১৪; আল-বাহরুর রায়েক: ৮/৪৮৫; হাশিয়ায়ে তাহতাবি: ৪/৩৬০ ইমদাদুল ফাতাওয়া: ৪/১১৮)

প্রথমত এগুলো কোরআনে বর্ণিত ‘খাবায়েস’ (নোংরাবস্তু) এর অন্তর্ভুক্ত। সুরা আলআরাফ আল্লাহ তাআলা এগুলোকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন। ‘খাবায়েস’ বলা হয়, যা মানুষ স্বভাবগত ঘৃণা করে। (দ্রঃ তাফসিরে কাবির, আদওয়াউল বায়ান, আল-লুবাব, আলহাবি সংশ্লিষ্ট আয়াত)।  

আর মাছ ছাড়া অন্যান্য জলজ প্রাণী রুচিশীল মানুষ স্বভাবতই ঘৃণা করে। সুতরাং সেগুলোও কোরআনের হুকুম অনুযায়ী নিষিদ্ধ।

দ্বিতীয়ত রাসুল (সা.) ও সাহাবায়ে কেরাম এ ধরনের জলজ প্রাণী খেয়েছেন বলেও কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না। উপরন্তু আব্দুর রহমান বিন উসমান (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, ‘রসুল (সা.) জনৈক চিকিৎসককে ব্যাঙ মেরে ওষুধ বানাতে নিষেধ করেছিলেন। ’ (আবু দাউদ, হাদিস নং: ৩৮৭১)

তৃতীয়ত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমাদের জন্য দুই প্রকারের মৃত জীব ও দুই ধরনের রক্ত হালাল করা হয়েছে। মৃত জীব দুইটি হলো মাছ ও ফড়িং এবং দুই ধরনের রক্ত হলো কলিজা ও প্লীহা। (ইবনে মাজাহ, হাদিস নং : ৩৩১৫; মুসনাদ আহমাদ, হাদিস নং: ৫৬৯০, দারাকুতনি, হাদিস নং : ৪৬৮৭, শারহুস সুন্নাহ, হাদিস নং : ২৮০৩)


মানবদেহের জন্য ঝিনুকের উপকারিতা এবং ক্ষতি


ঝিনুকের ক্যালোরির হিসাব 

পণ্যের 100 গ্রাম রয়েছে:

  • প্রোটিন - 11,9 গ্রাম;
  • চর্বি - 2,2 গ্রাম;
  • কার্বোহাইড্রেট - 3,7 গ্রাম।

শক্তি মান 86 কিলোক্যালরি।

ঝিনুকের মাংশের উপকারিতা 

নিসন্দেহে, আমরা আত্মবিশ্বাসের সাথে বলতে পারি যে ঝিনুকের উপকারিতা হল এগুলি একটি প্রকৃত উপাদেয় উপাদান। তাদের একটি সূক্ষ্ম এবং বিশেষ স্বাদ আছে। ঝিনুকের মধ্যে অবিশ্বাস্যভাবে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকে, এবং যেকোন মাছ বা মাংসের চেয়ে অনেক বেশি, এবং ঝিনুকের একটি বিশেষ সুবিধা, একই সময়ে, যেগুলি উচ্চ ক্যালোরি নয়।

ঝিনুকের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের খনিজ লবণ, ভিটামিন, ট্রেস উপাদান যেমন ফসফরাস এবং আয়রন, পাশাপাশি কোবাল্ট। ঝিনুকের ব্যবহার, অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, এটি আসলে একটি প্রাকৃতিক পণ্য যা কর্মে ভায়াগ্রার অনুরূপ। তাদের সমস্ত সেরা সামগ্রী একত্রিত করার জন্য, ঝিনুকগুলি শাকসবজি বা সিরিয়ালের সাথে খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।

ঝিনুক কেনার সময়, আপনাকে জানতে হবে ঝিনুকের উপকারিতা এবং ক্ষতি কী, সেগুলি খাওয়া যাবে কিনা এবং কখন সেগুলি বিপজ্জনক।

কোন অবস্থাতেই তাজা ঝিনুক খাওয়া যাবে না !!!

ঝিনুকের উপকারিতা ও ক্ষতি কর দিক গুলো 

ঝিনুকের মধ্যে রয়েছে ওমেগা-3 এবং ওমেগা-6 অসম্পৃক্ত ফ্যাটি অ্যাসিড, যা মানব দেহের স্বাভাবিক কাজকর্মের জন্য প্রয়োজনীয়। এই অ্যাসিডগুলি শরীরে সংশ্লেষিত হয় না এবং কেবল খাবারের সাথে আসে। তারা বিপাককে স্বাভাবিক করে এবং কোলেস্টেরল প্লেকের গঠন হ্রাস করে।

ঝিনুক কার্বোহাইড্রেট বিপাকযুক্ত মানুষের জন্য উপকারী। তারা ভিটামিন এবং খনিজ সমৃদ্ধ। তাদের মধ্যে রয়েছে রেটিনল, টোকোফেরল, বি ভিটামিন। শেলফিশের মাংসে রয়েছে পটাশিয়াম, সোডিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম - এগুলো হার্টের জন্য প্রয়োজনীয় ম্যাক্রোনিউট্রিয়েন্টস। এবং এছাড়াও, তারা দস্তা, আয়োডিন, লোহা, সেলেনিয়াম, কোবাল্ট এবং অন্যান্য ট্রেস উপাদান সমৃদ্ধ। এগুলি এন্ডোক্রাইন, হেমাটোপয়েটিক, প্রজনন এবং শরীরের অন্যান্য সিস্টেমের বিপাকীয় ক্রিয়ায় জড়িত। অপারেশন এবং রোগ, সেইসাথে অ্যানোরেক্সিয়া পরে শরীরের পুনরুদ্ধারের সময় ঝিনুক দরকারী। ঝিনুক সুস্থ মানুষের জন্য বিশেষ করে ক্রীড়াবিদ, কঠিন শারীরিক এবং বুদ্ধিবৃত্তিক কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিদের জন্য বেশি উপকারী।

সামুদ্রিক খাবারের অতিরিক্ত প্রোটিনের কারণে কিডনির কার্যকারিতাকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করতে পারে।

কিন্তু সবকিছুই আমরা যতটা চাই তত সহজ নয়। ঝিনুকের বাসস্থানের কাজ হল জলকে ফিল্টার করা এবং বিভিন্ন দূষক থেকে বিশুদ্ধ করা। ঝিনুকগুলি পরিবেশগতভাবে নোংরা জলাশয়ে ধরা পড়লে ক্ষতিকারক পদার্থ ধারণ করতে পারে। এই কারণেই, ঝিনুকের ক্ষতি এমন পদার্থ এবং অণুজীবের উপস্থিতিতে রয়েছে যা তাদের দ্বারা জমে থাকা ব্যক্তির জন্য অপ্রয়োজনীয়। ঝিনুক প্রোটোজোয়া, বিশেষ করে স্যাক্সিটক্সিন দ্বারা নিtedসৃত বিষ জমা করতে পারে, যা আসলে একটি মারাত্মক বিপদ। এর ক্রিয়া স্নায়ু-পক্ষাঘাতগ্রস্ত এবং ঝিনুক সমুদ্রে থাকাকালীন তারা এর অনেকটা কুড়াতে পারে।এই ধরনের ক্ষতি দূর করার জন্য, বিশেষ খামারে ঝিনুক বিশেষ অবস্থার অধীনে রাখা হয়। শুধুমাত্র এই কারণে যে তারা এক মাসেরও বেশি সময় ধরে পরিষ্কার পানিতে চলে যায়, ঝিনুকগুলি বিষাক্ত উপাদানগুলি থেকে পুরোপুরি মুক্তি পায়।

পুরুষের জন্য ঝিনুক 

পুরুষদের জন্য উপকারিতা পুরুষ দেহে প্রদাহ বিরোধী প্রভাবের মধ্যে রয়েছে। বয়স্ক পুরুষদের একটি সাধারণ অবস্থা হল বাত। আর ঝিনুক তার প্রতিরোধ। ঝিনুকগুলিতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন শক্তি এবং মস্তিষ্কের কোষগুলিকে আরও ভালভাবে কাজ করে এবং মানসিক-মানসিক অবস্থার উন্নতি করে। এছাড়াও, প্রোটিন দ্রুত পেশী তৈরি করতে সাহায্য করে এবং টেস্টোস্টেরনের সংশ্লেষণে জড়িত। পুরুষদের জন্য, শেলফিশ একটি শক্তিশালী এফ্রোডিসিয়াক। সেক্সে শক্তিশালী লিঙ্গ আরো উদ্যমী এবং কঠোর হয়। এই সব দস্তা ধন্যবাদ।

মহিলাদের জন্য ঝিনুকের মাংশ উপকারিতা ও ক্ষতি 

মহিলাদের খাদ্যে ঝিনুকের নিয়মিত ব্যবহার শরীরে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। তারা বিপাক প্রক্রিয়ায় অংশ নেয় এবং আপনাকে ওজন কমাতে সাহায্য করে। গর্ভাবস্থায়, তারা যৌথ রোগ প্রতিরোধ। রক্ত প্রবাহকে ত্বরান্বিত করে এবং এইভাবে শরীরের সমস্ত কোষকে পুষ্ট করে। একটি শিশুকে বহন এবং খাওয়ানোর সময় এবং মেনোপজের সময় এটি গুরুত্বপূর্ণ। রঙ এবং ত্বকের স্বর এবং চুলের অবস্থা উন্নত হয়। তারা হরমোনের মাত্রা স্বাভাবিক করে। থাইরয়েড গ্রন্থির কাজ করার জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ। মাসিকের সময় শরীরে আয়রনের মাত্রা ঠিক রাখতে শেলফিশ খাওয়া উপকারী।

ওজন কমাতে ঝিনুকের মাংশ 

পুষ্টিবিদরা বলছেন যে ঝিনুকের মাংস প্রোটিন উপাদান যেমন লাল মাংসের মতো স্বাস্থ্যকর। সেদ্ধ গরুর মাংসের বিপরীতে, এই শেলফিশগুলিতে কম স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে, যা কোলেস্টেরলকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করতে পারে। এই সামুদ্রিক খাবারের প্রোটিন হার্ট এবং আকৃতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

গর্ভাবস্থায় ও গর্ভাবস্থার পর ঝিনুকের মাংশ !!!

গর্ভাবস্থায় ঝিনুকের ব্যবহার প্রাথমিক পর্যায়ে এবং পরবর্তী পর্যায়ে উভয় ক্ষেত্রেই contraindicated নয়। এগুলি সপ্তাহে 2-3 বার খাওয়া যেতে পারে। আপনার কাঁচা ঝিনুক খাওয়া উচিত নয়, কারণ এগুলি দরিদ্র মায়েদের সংক্রমণের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। গর্ভবতী মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত রক্ষণাবেক্ষণের কারণে ক্যানড শেলফিশও সুপারিশ করা হয় না সবজির সাথে স্টুয়েড এবং সেদ্ধ ঝিনুকের সংমিশ্রণ গর্ভবতী মহিলাদের জন্য আদর্শ। আপনাকে কমপক্ষে 15 মিনিটের জন্য ঝিনুক রান্না করতে হবে।

তেলে রান্না করা ঝিনুক 

তেলে রান্না করা ঝিনুকের ক্যালোরি খুব বেশি, তাই তাদের সাথে নিয়ে যাবেন না। অথবা, আপনি তাদের কম পুষ্টিকর করতে তেল নিষ্কাশন করতে পারেন। তেলে আচারযুক্ত ঝিনুক চর্বি এবং কার্বোহাইড্রেট বেশি থাকে যা গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ট্র্যাক্টকে ব্যাহত করতে পারে। তেলের মধ্যে ঝিনুকগুলি একটি টিনজাত পণ্য, যার অর্থ এতে প্রিজারভেটিভ এবং অন্যান্য ক্ষতিকারক পদার্থ রয়েছে। 

ব্রাইন উপকারী এবং ক্ষতি মধ্যে ঝিনুক

ব্রাইন এ, ঝিনুকগুলি দোকানে যতবার তেলের মধ্যে পাওয়া যায়, এবং সেগুলি তাদের উপযোগিতার কারণে তেমন জনপ্রিয়। ব্রাইনে ক্যালরির পরিমাণ 80 কিলোক্যালরি। পণ্যের প্রতি 100 গ্রাম। অতএব, এগুলি যে কোনও ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। এগুলি পুরোপুরি ক্ষুধা জাগায় এবং হজমে উন্নতি করে।

ডাবের ঝিনুক স্বাস্থ্যের উপকার এবং ক্ষতি করে

টিনজাত ঝিনুকগুলিকে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়:

  • তাদের নিজস্ব রসে ঝিনুক;
  • টমেটো;
  • উদ্ভিজ্জ তেল।

টিনজাত ঝিনুক, অন্য যেকোনো পণ্যের মতই, শরীরের জন্য উপকারী এবং ক্ষতিকর উভয়ই হতে পারে। যদি পণ্যটি অপব্যবহার করা না হয় তবে এটি ক্ষতি করবে না। আপনার যদি পণ্য বা রক্ত ​​জমাট বাঁধার ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত অসহিষ্ণুতা থাকে তবে সেগুলি ক্ষতিকারক হতে পারে।

ঝিনুক ব্যবহারে বৈপরীত্য

এই শেলফিশগুলিতে একটি প্রোটিন থাকে, যার একটি বড় পরিমাণ কিডনির কার্যকারিতার উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। অতএব, শেলফিশ দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা উচিত নয়। প্রতি সপ্তাহে 500 গ্রামের বেশি ঝিনুক ব্যবহার করা যথেষ্ট নয়। অথবা আপনি দৈনিক 70 গ্রাম এর বেশি খেতে পারবেন না। ঝিনুকের মাংস।

ঝিনুকের মাংস অ্যালার্জেনিক হতে পারে এবং যত্ন সহকারে খাওয়া উচিত।

আচারযুক্ত ঝিনুক শরীরের উপকার ও ক্ষতি করে

বাড়িতে রান্নার রেসিপি।

আপনার প্রয়োজন হবে:

  • হিমায়িত ঝিনুক 300 গ্রাম ।;
  • জলপাই তেল 20 গ্রাম। অথবা ১ ম। মিথ্যা।
  • জল - 100 মিলি;
  • সেন আমি আছি আমি উইলো - 1 টেবিল চামচ;
  • রসুন - 1 দাঁত;
  • লাল মরিচ, স্থল কালো মরিচ - স্বাদে;
  • ওয়াইন ভিনেগার - 1 টেবিল চামচ

মেরিনেড প্রস্তুত করতে, সয়া সস, জলপাই তেল এবং ভিনেগার একত্রিত করুন। গুঁড়ো রসুন যোগ করুন। তারপর জল যোগ করুন এবং একটি ফোঁড়া আনা। একটি ফুটন্ত লবণে গলানো ঝিনুক রাখুন এবং 15 মিনিটের জন্য রান্না করুন। সমুদ্রের সমাপ্ত ঝিনুকগুলি একটি containerাকনা এবং শীতল দিয়ে প্রস্তুত পাত্রে স্থানান্তর করুন। ঝিনুকগুলো ঠান্ডা হয়ে গেলে পরিবেশন করা যায়।

ঝিনুক - ক্রীড়াবিদদের জন্য প্রোটিনের উৎস

তাদের উচ্চ প্রোটিন সামগ্রী এবং কম ক্যালোরি সামগ্রীর কারণে, ঝিনুক ক্রীড়াবিদদের দ্রুত পেশী গঠনে অবদান রাখে। এটি বিশেষভাবে লক্ষণীয় যদি আপনি শারীরিক ক্রিয়াকলাপের সাথে প্রোটিন একত্রিত করেন। সিদ্ধ সামুদ্রিক খাবার ব্যবহার করা ভাল। তাই এটি আরো দরকারী।

ঝিনুক কেন তেতো

ঝিনুক সিদ্ধ করার পরে, আপনি তিক্ত স্বাদের মতো সমস্যার মুখোমুখি হতে পারেন। তিক্ত স্বাদ এর কারণে হতে পারে:

  • পণ্যের অস্থিরতা। এমনকি নষ্ট ঝিনুকের একটি ছোট অংশ পুরো থালা নষ্ট করতে পারে।
  • ঝিনুকের আবাসস্থল। তারা তাদের মধ্যে দিয়ে যে পানিতে বাস করে তা ছেড়ে দেয়। সমস্ত ক্ষতিকারক পদার্থ তাদের মধ্যে থাকে।
  • পুরনো ঝিনুক তেতো।
  • রান্নার পর ঝিনুক বেশি মশলা হলে তেতো স্বাদ নিতে পারে।
  • তাদের কালো দাগ আছে যা তেতো স্বাদের জন্য দায়ী হতে পারে। অতএব, সেগুলি রান্নার আগে সরিয়ে ফেলতে হবে।

ঝিনুক সুস্বাদু তা নিশ্চিত করতে, সেগুলি নিম্নরূপ প্রস্তুত করা যেতে পারে:

একটি preheated প্যান মধ্যে জলপাই তেল crালা এবং গুঁড়ো রসুন যোগ করুন। তারপর সেখানে ঝিনুক রাখুন এবং 5 মিনিট ভাজুন। শেষে ডিল বা পার্সলে দিয়ে ছিটিয়ে দিন।

কীভাবে ঝিনুক নির্বাচন করবেন এবং সংরক্ষণ করবেন

আপনি ঝিনুক রান্না শুরু করার আগে, আপনি তাদের বাছাই এবং সন্দেহজনক শাঁস বাছাই করা প্রয়োজন। সিঙ্কের উপস্থিতির দিকে মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন। যদি এটি সামান্য খোলা থাকে, তাহলে আপনাকে এটিকে একটু নক করতে হবে। টোকা দিলে ভালো খোলস বন্ধ হয়ে যাবে। যদি সিঙ্ক বন্ধ না হয়, তাহলে এটি অবশ্যই ফেলে দিতে হবে। খুব ভারী, খুব হালকা বা ভাঙা শেলগুলিও অনুপযুক্ত। যদি খোলটি ভারী হয়, তবে এর অর্থ হল এটি পলি দিয়ে ভরা; যদি এটি হালকা হয়, তার মানে এটি খালি। রান্নার পরে, ঝিনুকগুলি খোলা উচিত, যদি এটি না ঘটে তবে নির্দ্বিধায় এটি ফেলে দিন।

ঝিনুক রান্না করার আগে, আপনাকে প্রথমে সেগুলি প্রক্রিয়া করতে হবে। একটি ছুরি দিয়ে পৃষ্ঠ থেকে পশম কেটে ফেলুন, তারপরে এটি একটি পাত্রে ঠান্ডা জলের স্রোতের নীচে রাখুন। তারপর আপনি রান্না করতে পারেন।

শেলফিশ তৈরির প্রধান নিয়ম:

  • যে গোলাগুলি টোকাতে সাড়া দেয় না তা ইতিমধ্যেই মারা গেছে, সেগুলি খাওয়া যাবে না;
  • রান্নার পর কোন না খোলা খোসা ফেলে দিন
  • শেল খোলার চেষ্টা করার সময়, একটি জীবন্ত মোলাস্ক প্রতিরোধ করবে;
  • লাইভ শেলফিশ বরফে রাখা উচিত এবং কেনার পর 2-3 দিনের মধ্যে খাওয়া উচিত
  • সংরক্ষণের জন্য নিয়মিত পানিতে ঝিনুক ডুবাবেন না। তারা মরবে.


Previous Post Next Post