টিপ ১. সাবজেক্টের চোখে ফোকাস করুন
প্রোট্রেট ছবিতে সাবজেক্টের চোখ শার্প থাকতে হবে। আর এ জন্য চোখে ফোকাস করতে হবে। “চোখ শার্প না থাকলেও চলবে” এ ভাবে কেউ যদি ছবি তুলতে বলে, তবে সেটা ভিন্ন কথা। ক্যামেরার ভাষায় একে স্পট মিটারিং বলে। ক্যামেরার AF point ম্যানুয়ালি সাবজেক্টের ডান বা বাম চোখের উপরে সেট করব, অথবা, সেন্টার ফোকাস পয়েন্ট ব্যবহার করে সাবজেক্টের চোখে ফোকাস লক করতে হবে। তারপর, সাটার রিলিজ বাটন হাফ-প্রেস করে এক্সপোজার লক করব। ক্যামেরা রিকম্পোজ (recompose) করে ফ্রেম ঠিক করব এবং শট নিব।
টিপ ২. স্ট্যান্ডার্ড বা টেলিফটো লেন্স ব্যবহার করুন
এনভার্নমেন্টাল পোট্রেটে (environmental portrait) ব্যবহারের জন্য আদর্শ লেন্স হল ওয়াইড অ্যাঙ্গেল লেন্স; এখানে সাবজেক্টকে পারিপার্শ্বিক পরিবেশের সাথে মিলিয়ে ছবিকে ফ্রেম করা হয়। তবে, ওয়াইড অ্যাঙ্গেল লেন্স ব্যবহারে সাবজেক্টের কাছে থেকে ছবি তুললে ডিসটরশন সৃষ্টি হয়; এতে ছবিতে সাবজেক্টের চেহারার বিকৃতি ঘটে যা দেখে অস্বস্তিকর মনে হতে পারে।
এই কারণে, পোট্রেট শটের জন্য ভাল অপশন হল, স্টান্ডার্ড বা শর্ট টেলিফটো লেন্স ব্যবহার করা।ফুলফ্রেম ক্যামেরার জন্য ক্ল্যাসিক পোট্রেট ফোকাল লেন্থ হল, 50mm ও 85mm লেন্স এবং 70-200mm টেলিফটো জুম লেন্স।
এই লেন্সগুলো সবচেয়ে বেশী ন্যাচারাল ও ডিসটর্শনমুক্ত ছবি প্রদান করে।
টিপ ৩. অ্যাপারচার প্রায়োরিটি মুড ব্যবহার করুন
অ্যাপারচার প্রায়োরিটি মুড ব্যবহার করে খুব সহজেই ক্যামেরার অ্যাপারচার নিয়ন্ত্রন করা যায়। আর, ডেপথ অব ফিল্ড নিয়ন্ত্রন করে এই অ্যাপারচার।
ফাস্ট প্রাইম লেন্স, যেমন 50mm f/1.4 বা 85mm f/1.2 – এগুলোতে থাকা অনেক বড় অ্যাপারচার দিয়ে খুব অগভীর ডেপথ অব ফিল্ড (shallow depth of field) তৈরী করা যায়। এগুলো দিয়ে সাবজেক্টের পিছনে মোলায়েম, মসৃন বোকেহ ব্লার তৈরী করে ছবিকে প্রফেশনাল চেহারা এনে দেয়।
এই রকম পাতলা লাইনের শার্পনেস পেলে কার না ভাল লাগে! কিন্তু, এর জন্য প্রয়োজন হবে, দক্ষ হাতে সাবজেক্টের একেবারে সঠিক অংশে ফোকাস করার সক্ষমতা। সঠিকভাবে সাবজেক্টের চোখে ফোকাস না করতে পারলে পুরো ফ্রেমটাই সফট মনে হবে।
টিপ ৪. জানালার আলোকে (window light) ব্যবহার করা
ছোট করে শুরু করুন। বাসাতেই অ্যামেইজিং পোট্রেট ছবি তুলতে বাসাতে বিপুল ব্যয়ের বিশাল হোম স্টুডিও খুলবার প্রয়োজন নেই। জানালা দিয়ে আসা ন্যাচারাল লাইট আর রিফলেক্টর দিয়েই স্টানিং পোট্রেট ছবি উঠানো যায়। এই সেট-আপের জন্য খুব বেশী খরচ করার প্রয়োজন নাই।
আপনার মডেলকে জানালার ধারে একটা সুবিধাজনক অ্যাঙ্গেলে পোজ নিয়ে দাঁড়াতে বলুন; খেয়াল করুন, সাবজেক্টে এমন কোন শ্যাডো আছে কিনা যার কারণে ঐ অংশে অতিরিক্ত কালো দেখাচ্ছে; এমন থাকলে সাদা বা সিলভার রিফলেক্টর ব্যবহার করে তা দূর করুন। সাদা থেকে সিলভারের প্রতিফলিত আলো সাবজেক্টের মুখে শার্প একটা ভাব নিয়ে আসে; যদিও পার্থক্যটা তেমন বেশী না।
যে স্পটে পোট্রেট শুট করছেন তার পারিপার্শ্বিকে থাকা রঙ আপনার ফ্রেমের থাকা সাবজেক্টের উপরে ছোপ-ছোপ রঙ (color cast) নিয়ে আসতে পারে। শট নেয়ার আগে ভিউফাইন্ডারে ভাল করে দেখে নিবেন। সবুজ লনে শুট করলে ফ্রেমে সবুজ রঙ লেপ্টে দিতে পারে। আবার সন্ধ্যার আগে কার্পেট থেকে ঠিকরে আসা রঙ থেকে ফ্রেমে একটা ওয়ার্ম (warm) ভাব নিয়ে আসে।
টিপ ৫. হাই-কি পোট্রেট (High-key portrait)
ইচ্ছাকৃতভাবে ওভার-এক্সপোজ করে ছবিতে হাই-কি ইফেক্ট দিয়ে শট নিলে ছবিতে বেশ-উজ্জ্বল ও কমনীয় ভাব নিয়ে আসা যায়। এমন শটে শিশু ও তরুণীদের ছবি মোহনীয়ভাবে ফুটে উঠে।
এই শটের ট্রিক হল, শট নেয়ার সময় ক্যামেরাতে হাইলাইট এরিয়ার পিক্সেল নষ্ট করা যাবে না। পরবর্তীতে ছবিকে ইমেজ এডিটিং সফটওয়্যার দিয়ে ব্রাইট করে নেয়া হয়।
“র” (RAW) মুডে ছবি তুললে ছবির প্রতিটা পিক্সেলের পূর্ণ টোনাল রেঞ্জের তথ্য জমা থাকে; যা দিয়ে এডিটিং এর সময় পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ পাওয়া যায়। নি:সন্দেহে “র” মুডের ছবি জেপেগ (jpeg) থেকে সবসময়ই ভাল।
টিপ ৬. বেবি পোট্রেট
বেবিদের পোট্রেট নেয়ার সময় তাদের লাইটিং এর জন্য ন্যাচারাল লাইট সোর্সের ব্যবহার করাটাই বেস্ট অপশন। ফ্ল্যাশ লাইটের জোরালো আলো বরং তাদের ভয় পাইয়ে দিবে।
জানালার আলোতে তাদের বসিয়ে প্রয়োজনীয় অ্যাঙ্গেল থেকে রিফলেক্টর দিয়ে আলো প্রতিফলিত করে শ্যাডো দূর করুন।
যত বেশী আলো দিয়ে সাবজেক্টকে আলোকিত করা যাবে, তত কম ISO দিয়ে ছবির শট নেয়া যাবে। কম ISO এর ব্যবহার ঝকঝকে ছবির নিশ্চয়তা দেয়।
ফটো সেশনের আগে শিশুকে ভালভাবে খাওয়ায়ে নিতে হবে। এতে শিশু শান্তশিষ্ট থাকবে। তখন আপনি তার কাছে থেকে বেস্ট শটটা বের করে নিতে পারবেন। অথবা, বেবি সকালে ঘুম থেকে উঠার পরপরই ফটোসেশনটা সেরে ফেলা।
এই সময় ছাড়া দিনের অন্যান্য সময় শিশুরা অনেক চঞ্চল থাকে; দৌড়াদৌড়ি করে থাকে। “ছবিতে যেমন দেখা যায়, গুটিসুটি মেরে একটা বেবি সেজেগুজে শুয়ে আছে” – যেমন ছবি প্রতিটি বাবা-মা পছন্দ করেন; তেমন ছবি পেতে এই সময়টাই বেস্ট সময়।
টিপ ৭. কিশোরদের ছবি তোলা
সবে কৌশরে থেকে বেড়ে উঠছে, এমন শিশুদের ছবি নেয়া বেশ মজার, কিন্তু, বেশ চ্যালেঞ্জিং কাজ। এদের সাথে ফটোশুটের ছোট ছোট সেশনে শুটিং এর কাজ শেষ করুন। আর, সেশনটাতে খেলা ও মজাদার কিছু রাখতে হবে, যাতে তাদের মনযোগ সেদিকে আটকে রেখে কাজ সেরে ফেলা যায়।
আপনার কাজ হবে, শিশুদেরকে আপনার সাথে এনগেজ করে ফেলা। তাকে বা তাদের জিজ্ঞাসা করতে পারেন, “আচ্ছা, দেখ তো ক্যামেরার লেন্সের মধ্যে তোমার ছবি দেখা যাচ্ছে কি না?” লেন্সে তাকানো অবস্থায় শট নিলে ছবিতে আই-কন্টাক্ট পাবেন।
অন্য টেকনিক নিতে পারেন। শিশুদের দিকে না তাকিয়ে বা তাদের দিকে ক্যামেরা তাদের ফেসের দিকে ও লেভেলে না নিয়ে, অনেক ক্যান্ডিডভাবে, ওয়াড-অ্যাঙ্গেল লেন্স থেকে শট নিতে পারেন।
ক্যামেরার সাটার সাউন্ডের সাথে তারা পরিচিত হয়ে গেলে ফটোশুটে সুবিধা পাবেন। শিশুদেরকে বলুন, ছবি তুলবার সময় তারা যাতে ক্যামেরার দিকে না তাকায়, বা হাসি দেয়। জাস্ট, ফটোশুটে ভ্যারিয়েশন আনা!
শিশুরা যখন খেলনা দিয়ে ব্যস্ত হয়ে পূর্ণ মনযোগ দিয়ে একটু স্থির থাকবে, তখন আপনি হয়ে উঠবেন সেই রকম ব্যস্ত। বার্স্ট মুডে একাধিক শট নিবেন। এ সময় তাদের সাথে ফ্রেন্ডলি আলাপ-চারিতায় মেতে উঠুন; তাদেরকে কিছু শট এলসিডি স্ক্রীনে দেখান, যাতে তারা আপনার সাথে ফটো সেশনে সহযোগী (involved) হয়ে উঠতে পারেন।
টিপ ৮. বার্স্ট (Burst) মুডে শুট করা
বেবিদের পোট্রেট হোক, আর গ্রুপ পোট্রেট হোক, ক্যামেরার বার্স্ট সুটিং এর সর্বোচ্চ ড্রাইভ মুড ব্যবহার করুন। রাইফেলের মত অনবরত ট্রিগার চাপার মত ক্যামেরার সাটার না চেপে, বরং সর্বোচ্চ বার্স্ট মুড ব্যবহারে আপনি সাবজেক্টের বিভিন্ন মোমেন্টের বিভিন্ন এক্সপ্রেশনের একাধিক শট নেওয়া নিশ্চিত করতে পারবেন।
একাধিক শট থেকে আপনি গ্রুপ পোট্রেট এমন একটা ফ্রেম বা ছবি পেয়ে যাবেন, যেখানে সবার চোখ খোলা আছে, হাসি-হাসি চেহারা আছে।
বার্স্ট মুড থেকে আপনি যদি এমন পারফেক্ট ছবি নাও পান, তবে একাধিক শট থেকে পোস্ট প্রসেসিং এ দুই বা ততোধিক শট নিয়ে কাজ করে একটা পারফেক্ট ছবি বের করে আনতে পারবেন।
টিপ ৯. গ্রুপ পোট্রেটের পোজ
গ্রুপ পোট্রেট তুলবার সময় প্রথমেই গ্রুপের লম্বা ব্যক্তিদেরকে পিছনের দিকে নিয়ে গিয়ে অপেক্ষাকৃত কম লম্বা ব্যক্তিদেরকে সামনের সারিতে নিয়ে আসবেন।
এবারের বিশেষ করে সামনের সারিতে যারা আছেন, তাদের সকলের পরিধেয় বস্ত্রের পরিপাটি থাকার বিষয়ে নজর দিন। সাবজেক্টের উচ্চতা অনুযায়ী সাজানোর মত তাদের পোশাকের রঙের ম্যাচিং করারও কম গুরুত্বপূর্ণ হয়; কারণ শট শেষ করার পর ফ্রেমে এই জিনিষটাই বেশী দৃষ্টিকটূ হয়ে দেখা যেতে পারে।
গ্রুপ পোট্রেটে সবার ছবি পরিষ্কার হওয়া চাই। ওয়াইড অ্যাঙ্গেল লেন্স ব্যবহার করলে অ্যাপারচার অন্ততপক্ষে f/8 রাখুন। কিন্তু, ইনডোরে গ্রুপ ছবি তুলতে গেলে f/8 অ্যাপারচার রাখলে স্বাভাবিকভাবেই সাটার স্পীড কমে যাব। এ সময় ISO বাড়িয়ে সাটার স্পীড ন্যূনপক্ষে 1/80sec রাখার চেষ্টা করুন। স্টেডি হ্যান্ড হলে এই সাটার স্পীডেও পিন শার্প ছবি পাওয়া সম্ভব। যদি ট্রাইপডে শট না নিয়ে হ্যান্ডহেল্ড স্ন্যাপ নিয়ে থাকে, তবে সাটার স্পীড এর নিচে নামালে হাতের কম্পন থেকে ছবি ব্লার হয়ে যাবে।
যদি ISO বাড়ালে ছবিতে দেশী নয়েজ চলে আসে, আবার সাটার স্পীডও তেমন বাড়ানো যাচ্ছে না, তবে পিন-শার্প ছবি পেতে একটা ট্রিক করা যেতে। সবাইকে এক লাইনে দাঁড়িয়ে যেতে বলুন। এতে অ্যাপারচার কমালে সাটার স্পীড বা ISO সুবিধামত কম-বেশী করে শট নেয়া শেষ করুন। সাবজেক্ট এক লাইনে দাঁড়ানোর কারণে অ্যাপারচার কম থাকলেও ডেপথ অব ফিল্ড সমস্যা করবে না।
টিপ ১০. ফ্যামিলি ফটো পোজিং আইডিয়া
আপনার এমন একটা গ্রুপ ফ্যামিলি পোট্রেটের কথা চিন্তা করেন, যা দেখে ফ্যামিলির বিভিন্ন সদস্যদের মাঝে পারস্পরিক সম্পর্ক বোঝা যায়।
তাহলে, গ্রুপ ফ্যামিলি ফটোগ্রাফি কিভাবে করব?
এ ক্ষেত্রে সহজ আইডিয়া হল পরিবারের পিতা, বা মাতা, বা ইয়াংস্টারকে মূল সাবজেক্ট হিসাবে ফোকাস করা যেতে পারে। পরিবারের বাকি সদস্যদেরকে তার চতুর্দিকে দাঁড় করিয়ে আপনি একটা গ্রুপ ফ্যামিলি পোট্রেটে মূল ফোকাস পয়েন্ট পেতে পারেন।
আর, বড় আকারের ফ্যামিলি গ্রুপ ফটোর জন্য, আসবাবপত্র ব্যবহার করা যেতে পারে – এটা ঘরের মধ্যে সোফাও হতে পারে, বা আউটডোরে দরজাও হতে পারে। শিশুকে মেঝেতে বা মাটিতে বসিয়ে দেন এবং বড়দেরকে শিশুটির পিছনে দাঁড় করিয়ে দিতে পারেন।
টিপ ১১. মোমবাতির আলোতে পোট্রেট
মোমবাতির আলোতে ছবি তুলবার সময় ISO কে ১৬০০ বা তার চেয়েও বেশী রাখার প্রয়োজন পড়তে পারে; সেই সাথে লাগবে বড় অ্যাপারচার। এমন আলোতে হাতের কম্পন থেকে রক্ষা পেতে, বা মডেল বা ক্যান্ডেলের আলোর শিখাকে ফ্রিজ করতে এমন সেটিং ছাড়া এ ধরনের শট নেয়া সম্ভব হবে না।
ক্যামেরার ফ্ল্যাশ বন্ধ অফ রেখে ম্যানুয়াল এক্সপোজার মুড (M) ব্যবহার করুন। মোম বাতি জ্বালানো অবস্থায় ঘরের সব আলো নিভিয়ে দিন। এবার সাবজেক্টের মুখে ক্যামেরা তাক করে এক্সপোজার রিডিং নিন।
মোমবাতির আলোয় প্রোট্রেট শ্যুট করতে একাধিক মোমবাতি ব্যবহার করুন। এতে আলোর পরিমাব বেশি পাওয়ার পাশাপাশি আলোর ঔজ্জ্বল্য সাবজেক্টের মুখে মোলায়েম শ্যাডো তৈরী করবে।
টিপ ১২. এনডি গ্রেড, শক্তিশালী নিউট্রাল ডেনসিটি ফিল্টারস এবং পোলারাইজার
ল্যান্ডস্কেপ ফটোগ্রাফিতে দক্ষতার সাথে এক্সপোজার নিয়ন্ত্রণ এবং ছবিতে বিশেষ ধরণের ইফেক্ট আনার জন্য ল্যান্ডস্কেপ ফটোগ্রাফারগণ অনেক অনেক ধরণের ফিল্টার ব্যবহার করে থাকেন; এই ধরণের ইফেক্ট পোস্ট প্রসেসিং সফটওয়্যার দিয়ে তৈরী করা সম্ভব নয়।
যদিও HDR ফটোগ্রাফি এবং ফটোশপ সফটওয়্যার দিয়ে এক্সপোজার ব্লেন্ড টেকনিক ব্যবহার করে ND Grads ফিল্টারের কাজ করা যাবে, কিন্তু, প্রোফেশনাল ফটোগ্রাফারদের কাছে Solid ND filter এবং Polarizing filters এর গুরুত্বপূর্ণ এখনও আছে বিধায় তারা ক্যামেরা ব্যাগে এখনও এই ফিল্টারগুলো রাখেন।
সলিড নিউট্রাল ডেনসিটি (এনডি) ফিল্টার লেন্সের ভিতরে একটি নির্দিষ্ট মাত্রার আলো প্রবেশে বাধা প্রদান করে ল্যান্ডস্কেপ ফটোগ্রাফিতে লং এক্সপোজার করার জন্য সাটার স্পীডকে সুবিধাজনকভাবে কমিয়ে দেয়।
পানি থেকে আলোর প্রতিচ্ছবি এবং চকচকে পাতার উজ্জ্বল (shiny gloss) কমিয়ে দিয়ে এবং নীল ও সাদা রঙের আকাশের কন্ট্রাস্ট বাড়িয়ে দেয়।
ফটোশপে এই ধরণের ইফেক্ট পোস্ট প্রসেসিং তুলে আনা কঠিন কাজ। বরঞ্চ ক্যামেরা দিয়ে এই কাজগুলো করাতে সত্যিকারের বোদ্ধা ফটোগ্রাফারের কাজ ও পরিচায়ক।
টিপ ১৩. দিগন্ত রেখা (Horizon) সমান্তরাল রাখুন
ছবিতে দিগন্ত রেখাকে সমান্তরাল রাখতে চেষ্টা করুন। বিশেষ করে যখন সমুদ্রের তীরবর্তী দিগন্ত রেখা, নচেৎ এতে ছবিতে রেশিও নষ্ট হবে।
ডিএসএলআর এর মেনু থেকে গ্রীড অ্যাকটিভ করার সুবিধা আছে যা লাইভ ভিউ তে ওভারলে (overlay) আকারে পুরো স্ক্রীনে দেখা যায়। এই গ্রীড দিয়ে দিগন্ত রেখা ভূমির সমান্তরালে আছে কিনা তা নিশ্চিত করা যায়। আবার অনেক বডিতে লাইভ ভিউতে ইলেকট্রনিক লেভেল মিটার সুপার-ইম্পোজ করে দেখার মাধ্যমে এই সুবিধা নেয়ার ব্যবস্থা আছে।
সম্মানিত পাঠক, আপনার ক্যামেরা বডিতে যদি এই সুবিধা না থাকে, তবে ক্যামেরার অটো ফোকাস পয়েন্ট এর সারিকে ভিউ ফাইন্ডারে দেখে মোটামুটি একটা আইডিয়া করে ল্যান্ডস্কেপের দিগন্ত রেখার সাথে ছবির ফ্রেমকে সমান্তরাল রাখার কাজটা সেরে নিতে পারেন।
টিপ ১৪. হাইপারফোকাস ফোকাসিং টেকনিক
ল্যান্ডস্কেপ ফটোগ্রাফিতে ঝকঝকে ছবি ক্যাপচারের ক্ষেত্রে ডেপথ অব ফিল্ড বিশাল ভূমিকা রাখে। আমি চাই আমার ছবির সামনের অংশ থেকে শুরু করে সূদূর বিস্তীর্ণ দিগন্ত রেখা পর্যন্ত যা কিছু আছে – সবই যেন শার্প ক্যাপচার করতে পারি।
ডেপথ অব ফিল্ড বাড়াতে লেন্সে ছোট অ্যাপারচার নিয়ে ম্যানুয়ালি হাইপারফোকাল দূরত্বে ফোকাস করুন।
এটা হল সে পয়েন্ট, যে পয়েন্টে ফোকাস করলে ফ্রেমের শুরুতে হাইপারফোকাল দূরত্বের অর্ধেক থেকে শুরু করে অসীম দূরত্ব পর্যন্ত ডেপথ অব ফিল্ড পাওয়া যাবে।
টিপ ১৫. টেলি লেন্সে ল্যান্ডস্কেপ ছবি তোলা
ল্যান্ডস্কেপ ছবি তোলার কথা উঠলে অবচেতন ভাবে আমাদের হাতে উঠে আসে হাতে থাকা সবচেয়ে ওয়াইড অ্যাঙ্গেল লেন্সটি। কিন্তু, একটি টেলিফটো লেন্সও ক্রিয়েটিভ ল্যান্ডস্কেপ ফটোগ্রাফারের প্রিয় লেন্স হয়ে উঠে।
টেলিফটো লেন্স ফ্রেমের সব ইলিমেন্টকে কম্প্রেস করে আনে – ফোরগ্রাউন্ড ও ব্যাকগ্রাউন্ডকে খুব কাছাকাছি মনে হয়। সেই একই ফ্রেম ওয়াইড অ্যাঙ্গেল লেন্সে শট নিলে ফোরগ্রাউন্ড ও ব্যাকগ্রাউন্ড পরস্পরকে সুদূরে দেখা যায়।
বনের মধ্যে গাছ-গাছালির মধ্যে টেলিফটো লেন্স দিয়ে ছবি তুললে ফ্রেমকে খুব আটোসাটো মনে হয়; আর বনের গাছগুলোকে খুব ঘন মনে হয়।
ওয়াইড লেন্সের তুলনায় টেলিফটো লেন্সে খুব ছোট ভিউয়িং অ্যাঙ্গেল (angle of view) থাকাতে টেলিফটো লেন্সে ল্যান্ডস্কেপ ছবি তোলা সহজ হয়। এই লেন্সে দৃশ্যকে ফ্রেম করা খুব সহজ হওয়াতে স্টং ছবি পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
টিপ ১৬. HDR ল্যান্ডস্কেপ ফটো
High Dynamic Range (HDR) ফটোগ্রাফির মাধ্যমে ছবির ফ্রেমের প্রতিটি ডিটেইল – শ্যাডো থেকে শুরু করে হাইলাইট পর্যন্ত – ধারন করা যায়। এইচডিআর ছাড়া একটি সিঙ্গেল শটের মাধ্যমে এত্তএত্ত ডিটেইল আনা সম্ভব না।
এইচডিআর ফটোগ্রাফিতে সাধারণতঃ বিভিন্ন এক্সপোজারে একাধিক শট নেয়া হয়। শটগুলো ম্যানুয়ালি বা ডিএসএলআরের অটো এক্সপোজার ব্রাকেটিং ফাংশনের মাধ্যমে নেয়া হয়। পরে কম্পিউটারে ডাউনলোড করে ফটোশপ বা লাইটরুম সফটওয়্যার দিয়ে একাধিজ বেস্ট শট একত্রিত করে সিঙ্গেল ছবিতে রূপান্তরিত করা হয়।
মিড লেভেল ও সেমি-প্রো ডিএসএলআর যেমন Canon 5D Mark III বা Nikon D800 বডিতে HDR ফটোকে ব্লেন্ড করার বিল্ট-ইন সুবিধা রয়েছে। তবে, স্পেশালিস্ট সফটওয়্যার ব্যবহার করলে অনেক বেশি কন্ট্রোল ও ফিচারের সুবিধা পাওয়া যায়।
টিপ ১৭. ল্যান্ডস্কেপ ফটোগ্রাফিতে লং এক্সপোজারের ব্যবহার
ল্যান্ডস্কেপ ফটোগ্রাফিতে লং এক্সপোজার ব্যবহার করলে ফ্রেমের মধ্যে থাকা সব ধরনের চলমান ইলিমেন্ট ব্লার হয়ে যায়।
ল্যান্ডস্কেপ ফটোগ্রাফির সময় কয়েক সেকেন্ডের সাটার স্পীড ব্যবহার করলে – জলপ্রপাত বা নদীর পানির, বা বাতাসে গাছের নড়াচড়া করা পাতা – সবই আপনার ছবিতে ইন্টারেস্টিং ইলিমেন্ট ও ইফেক্ট যোগ করবে।
অনেক স্লো সাটার স্পীড পেতে সাধারণতঃ বেশ ছোট অ্যাপারচার, কম ISO এবং কম আলো প্রয়োজন হয়। অবশ্য আলোকোজ্জ্বল দিনের বেলাতে শুধু এমন সেটিং এ কাজ হবে না, তখন লেন্সের সামনে ND filter যুক্ত করতে হবে।
ND ফিল্টার বিভিন্ন রেঞ্জের শক্তিমাত্রায় পাওয়া যায় এবং লেন্সে লাগানোর পর ভিন্ন ভিন্ন মাত্রার ND ফিল্টার ভিন্ন ভিন্ন মাত্রায় আলো প্রবেশে বাধা প্রদান করে।
“Lee Filters Big Stopper” এর মত স্ট্রং ND ফিল্টার ব্যবহার করে বেশ লম্বা সময় ধরে এক্সপোজার (Long exposure) নেয়া যায়, যেটা দিয়ে দিনের আলোতেও শুধু কয়েক সেকেন্ড নয়, মিনিটের পর মিনিট এক্সপোজার নেয়ার সুবিধা পাওয়া যাবে।
Big Stopper বা B+W ND110 10-stop ND ফিল্টার ব্যবহার করে অশান্ত ঢেউবিশিষ্ট সমুদ্রের পানিকে শান্ত, মোলায়েম ও স্নিগ্ধ ঢেউ বানিয়ে ফেলা যায়।
টিপ ১৮. টিল্ট-শিফট ল্যান্ডস্কেপ
টিল্ট-শিফট ফটোগ্রাফির মাধ্যমে বড় অ্যাপারচারের লেন্সের শার্পনেসের সাথে অনেক বিশাল ডেপথ অব ফিল্ডের সংযোগ ঘটাতে পারবেন; যে ধরণের ডেপথ অব ফিল্ড শুধুমাত্র ছোট অ্যাপারচারের মাধ্যমে পাওয়া যেতে পারে।
এটি টিল্ট-শিফট লেন্স ব্যবহার করে করতে হয়। এই লেন্সে “টিল্ট” এবং “শিফট” – উভয়টি (ফোকাসের তলকে নিয়ন্ত্রণ করতে) এবং (ভার্টিক্যালি উচুনিচুকরে) নিয়ন্ত্রন করতে হয়।
বস্তুত, টিল্ট পদ্ধতিতে ফোকাসের অংশকে খুব-স্বল্প গভীরতা দেয়া হয়; ল্যান্ডস্কেপকে দেখতে একেবারে ক্ষুদ্রাকৃতির মডেলের মত মনে হয়।
টিল্ট-শিফট ফটোগ্রাফির একেবারে বাস্তবধর্মী উদাহরণ হল, গাড়ি, নৌকা, ট্রেনের মত এলিমেন্ট এবং উচু কোন পজিশনকে এমনভাবে দেখান যাতে ঐ গাড়িকে বাচ্চাদের ক্ষুদ্রাকৃতির একটি খেলনার মত মনে হয়।
টিল্ট-শিফট লেন্সগুলো সাধারণতঃ খুব ব্যয়বহুল। তবে, আশার কথা হল, ফটোশপে বসে এর ফিল্টার ব্যবহার করে টিল্ট-শিফট ইফেক্ট বানানো যায়। এই টিল্ট-শিফট বেশ বাস্তবের মতই মনে হয়।
টিপ ১৯. সাদা-কালো ল্যান্ডস্কেপ
আপনি কি সাদা-কালো ল্যান্ডস্কেপ ছবি তুলতে চাচ্ছেন? তাহলে, রঙ্গিন ছবি তুলুন। আর, ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলবার সময় jpeg এর পরিবর্তে RAW মুডে ছবি তুলুন। এই রঙ্গিন ছবিকে পরবর্তীতে লাইটরুম বা ফটোশপ এর মত ফটো এডিটিং সফটওয়্যারে নিয়ে গিয়ে সাদা-কালো ছবিতে কনভার্ট করা যায়।
এই পদ্ধতিতে সাদা-কালো ছবি করলে পুরো প্রক্রিয়ার উপরে আপনার কন্ট্রোল থাকবে। এডিটিং এর মাধ্যমে ছবি কোন কোন অংশে ইচ্ছামত ডজিং বা বার্নিং করে প্রয়োজনমত সাদা বা কালো এর পরিমাণ বাড়ানো, টোনকে স্প্লিট করা, বা পুরো ফ্রেমের কালারকে নিয়ন্ত্রিতভাবে তুলে (pop) আনতে পারবেন।
মনে রাখবেন, যদিও আপনি raw মুডে ছবি তুলছেন, আপনার ডিএসএলআর প্রিভিউ থেকে Monochrome পিকচার মুড সিলেক্ট করুন। এতে যদিও আপনি সাদা-কালো ছবি দেখছেন, তথাপি আপনার মেমোরি কার্ডে রঙ্গিন ছবি জমা হচ্ছে।
টিপ ২০. প্যানোরামা
ল্যান্ডস্কেপ ছবিতে ভিউয়ের বিশাল এলাকা ক্যাপচার করতে আল্ট্রা-ওয়াইড লেন্স ব্যবহার না করে, প্যানোরামা মুডে ছবি তুলার চেষ্টা করছেন কি?
প্যানোরামা মুডে ছবি তুলতে, ডিএসএলআরকে ট্রাইপডের উপরে স্থাপন করে, ওভারল্যাপিংভাবে পাশাপাশি অনেকগুলো শট নিয়ে সিঙ্গেল ফ্রেমের মধ্যে আনতে হয়। চওড়াতে অনেক বড় লম্বা ছবি পেতে হলে তখন আনুভূমিকভাবে শট নিতে হবে।
যদিও প্যানারমিক শট নেওয়ার জন্য স্পেশালিষ্ট ট্রাইপড হেড পাওয়া যায়, কিন্তু, এটা সব সময় প্রয়োজন হয় না, কারণ; আপনি যদি বিশেষ ধরণের সফটওয়্যার ব্যবহার করেন যেখানে ছবি অটোম্যাটিক্যালি স্টিচ করা যায়। সম্প্রতি ফটোশপ এর Photomerge নামে একটি অ্যাপ রয়েছে, যেটি এই কাজের জন্য এক্সপার্ট।
যখন প্যানোরামা বানানোর জন্য অনেকগুলো শট নিবেন, তখন ম্যানুয়াল সেটিং অর্থাৎ এক্সপোজার, ফোকাস এবং হোয়াইট ব্যালান্স – সবই ম্যানুয়াল ব্যবহার করবেন, যাতে সবগুলো সেটিং পুরো ফ্রেম জুড়ে সামঞ্জস্যপূর্ণ অবস্থায় থাকে।
টিপ ২১. ইনফ্রারেড ফটো
ফটেশপ দিয়ে যদিও ইনফ্রারেড ইফেক্ট তৈরী করা যায়, তবে নিজে নিজে ক্যামেরা দিয়ে এই ইফেক্ট তৈরী করার মতো মজা আর নাই! ইনফ্রারেড ল্যান্ডস্কেপ সাদা-কালো বা রঙ্গীন হতে পারে; এতে থাকতে পারে বৈচিত্রপূর্ণ আবহ; থাকতে পারে ইঙ্গিতপূর্ণ অর্থ।
ইনফ্রারেডের বেস্ট শট পেতে পুরাতন ডিএসএলআর থেকে এনফ্রারেড বানিয়ে নেয়া যেতে পারে। স্মরণ রাখতে হবে, একবার ইনফ্রারেড কনভার্সন হয়ে যাওয়ার পর ঐ বডিতে আর রেগুলার ক্যামেরা হিসাবে ব্যবহার করা যাবে না।
বরঞ্চ এটাই ব্যবহারে সুবিধা বেশি। কারণ হল, প্রতিবার ইনফ্রারেড ছবি তুলতে সেটিং নিয়ে আন-কনর্ভারটেড ক্যামেরা বডিতে প্রতিবার সেটিং নিয়ে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়।
টিপ ২২. মিনিমালিস্ট ল্যান্ডস্কেপ
মিনিমালিস্ট ছবিগুলো সাধারণত: সাদা-কালোতে ভালো লাগে। হরাইজন্টাল শট, সাথে Neutral Density (ND) ফিল্টারের লং এক্সপোজার। মজার ব্যাপার হল, এই ধরণের ছবিতে যে অংশ ছবিতে রেখেছেন তার চাইতে যে অংশ ছবিতে রাখেন নাই, তার জন্য দু:খ লাগে বেশি।
টেলিফটো জুম লেন্স দিয়ে মিনিমালিস্ট ল্যান্ডস্কেপ ছবিতে ইন্টারেস্টিং ইলিমেন্ট নিয়ে আসা যায়। একাকি একটা গাছ দাঁড়িয়ে আছে, তা এক পেজা তুলার মত মেঘমালা, বা দূরে একাকি দাঁড়ানো একটি পাহাড় – দেখে দাঁড়িয়ে যান – এখানেই উঠে আসবে আপনার পরবর্তী মিনিমালিস্ট ল্যান্ডস্কেপ ছবিটি। কুয়াশা, তুষার এবং বিশেষত্বহীন আকাশ নিয়ে হয়ে যেতে পারে এমন ধরণের একটি সুন্দর মিনিমালিস্ট ছবি।
টিপ ২৩. ম্যানুয়াল ফোকাস
ম্যাক্রো ফটো তুলবার সময় অটো-ফোকাস বন্ধ রাখুন। ম্যানুয়াল শটে ক্লোজ-আপ ডিটেইলস নেয়ার সময় ডেপথ অব ফিল্ড (depth of field) কয়েক মিলিমিটারের নেমে আসে। এ সময় একেবারে সঠিক স্থানে ফোকাস করাটা খুবই জরুরী।
ম্যানুয়াল ফোকাস সহজতর করতে ক্যামেরার লাইভ ভিউ ব্যবহার করুন। সাবজেক্টের যে অংশকে লাইভ ভিউতে জুম করুন এবং সেই স্পটে ফোকাস রিং দিয়ে ম্যানুয়ালি ফোকাস করুন – প্রয়োজনমত জুম ও ফোকাস করে আপনার পছন্দের অংশটি একেবারে সঠিকভাবে ফোকাস করা সম্পন্ন করুন।
ফোকাস করতে অত্যন্ত সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে, কারণ ফোকাসের রেজর-শার্প ও শুধু-শার্প এর মধ্যে পার্থক্য সামান্যই। এছাড়াও প্রয়োজনে ট্রাইপড ব্যবহার করতে হবে, কারণ ক্যামেরার সামান্য একটু নড়াচড়া করার কারণে “পয়েন্ট অব ফোকাস” সড়ে যেতে পারে।
টিপ ২৪. বেস্ট অ্যাপারচার নির্ধারণ
সাবজেক্টের সামনে ও পিছনের কিছু অংশ যা আপনি শার্প রাখতে চান – এই অংশকে ফটোগ্রাফির ভাষায় ডেপথ অব ফিল্ড বলে। ডেপথ অব ফিল্ড বাড়াতে হলে ছোট অ্যাপারচার বা বড় f নাম্বার রাখতে হয়।
এ জন্য ক্যামেরার বডিতে ডায়াল ঘুরিয়ে Aperture Priority মুড সিলেক্ট করুন, কারণ, এই মুডে আপনি খুব সহজে এ্যাপারচারকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। ছোট এ্যাপারচার সিলেক্ট করার জন্য ডায়াল ঘুরিয়ে f/16 থেকে শুরু করে f/22 এর মিধ্যে যে কোন একটি এ্যাপারচার সিলেক্ট করুন।
লেন্সের একেবারে সর্বোচ্চ এফ/নাম্বার সিলেক্ট না নেয়ায় ভাল; কারণ এতে লেন্সের ডিফ্র্যাকশন (diffraction) এর কারণে ছবি সফট হয়ে যায়। (সর্বোচ্চ এফ/নাম্বারে লেন্সে আলো প্রবেশের পরে এর ব্লেডের কারণ আলো অনিয়ন্ত্রিতভাবে বেঁকে ছড়িয়ে পড়ে। আলোর এই বিশেষ বৈশিষ্ট্যকে ডিফ্র্যাকশন বলে)।
যদি গ্রহনযোগ্য সর্বোচ্চ এ্যাপারচার ব্যবহার করে সিঙ্গেল শটে ছবিতে আশানুরূপ শার্পনেস না আসে, সে ক্ষেত্রে “ফোকাস স্ট্যাকি” ব্যবহার করতে হবে। এই পদ্ধতিতে সাবজেক্টের বিভিন্ন অংশের অনেকগুলো শট নেয়া হয়। ছবিগুলোকে পরে ফটোশপে নিয়ে ব্লেন্ড করে শার্পনেস বাড়ানো হয়।
টিপ ২৫. ডেপথ অব ফিল্ড প্রিভিউ ব্যবহার করা
অপটিক্যাল ভিউ ফাইন্ডার দিয়ে আমরা যে ইমেজ দেখি তা লেন্সের সবচেয়ে বড় অ্যাপারচার দিয়ে দেখলে যেমন দেখায়, তেমনভাবে দেখায়। যদিও এইভাবে সবচেয়ে উজ্জ্বল ছবিটা আমরা দেখে থাকি, কিন্তু ছোট অ্যাপারচার ব্যবহার করে ছবি তুললে ছবির ডেপথ অব ফিল্ড বুঝতে পারা যায় না।
ছবির কোন অংশ শার্প আসছে আর কোন অংশ ব্লার হচ্ছে, তা বুঝবার জন্য ক্যামেরার সাথে একটি “ডেপথ অব ফিল্ড প্রিভিউ” বাটন (depth of field preview button) দেয়া হয়েছে।
এই বাটন প্রেস করলে আপনার লেন্সে যে অ্যাপারচার সেট করেছেন, সেই অ্যাপারচারে ছবি কেমন দেখা যাবে সেটা দেখা যাবে। ইমেজটা দেখতে একটু কালো দেখাবে। আর, এই পরিবর্তনের সাথে নিজেকে অভ্যস্ত করে ফেলতে হবে।
ডেপথ অব ফিল্ড প্রিভিউ বাটন লাইভ ভিউতেও কাজ করে। আর লাইভ ভিউ’তে ম্যাগনিফিকেশন কন্ট্রোল ব্যবহার করে সাবজেক্টের কোন অংশের ফোকাস চেক করা প্রয়োজন হলে, সেখানে জুম করে বড় করে নিয়ে ফোকাস চেক করার পাশাপাশি অপটিক্যাল ভিউ ফাইন্ডার দিয়ে এই ডেপথ অব ফিল্ড বাটনটি ব্যবহার করে ছবির ডেপথ অব ফিল্ড সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়।
টিপ ২৬. প্যারালাল ক্যামেরা ট্রিক
আপনার সাবজেক্টের সাথে ক্যামেরার পজিশন সমান্তরাল হওয়া জরুরী। কারণ, সাবজেক্টের সামনে ও পিছনে ডেপথ অব ফিল্ড খুব স্বল্প এলাকা জুড়ে থাকাতে এই ব্যাপারটি ভালভাবে অনুধাবন করা জরুরী।
গাছের পাতা বা পালকে থাকা জটিল প্যাটার্নযুক্ত ফ্ল্যাট সাবজেক্টের শুটিং এর সময় এই ব্যাপারা আরও বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়ে। সাবজেক্টের যে অংশ শার্প হওয়া প্রয়োজন, সে অংশের সাথে ক্যামেরা প্যারালাল না থাকলে, ফোকাসের ঐ অংশটি ব্লার হয়ে যাবে; তাতে ছবির মূল আবেদনটি আর থাকবে না।
টিপ ২৭. কম্পোজিশনের রুল না মেনে শ্যুট করুন
ম্যাক্রো ফটোগ্রাফিতে সব সময় ছোট অ্যাপারচারে ছবি তুলতেই হবে, এমন না – প্রয়োজনের খাতিরে নিয়মের বাইরে গিয়ে লেন্সের সর্বোচ্চ অ্যাপারচার ব্যবহার করে ছবি শ্যুট করতে হতে পারে।
সাবজেক্টের একটি অংশের উপরে ওয়াইড অ্যাপারচার ব্যবহার করে ফোকাস করা হয় – যাতে ফোকাস করা অংশের সামনে ও পিছনের অংশে ক্রিমের মত মোলায়েম ব্লার তৈরী হয় – সাধারণতঃ এটাই ফুড ফটোগ্রাফির প্রচলিত ও জনপ্রিয় শ্যুটিং স্টাইল।
আবার, ফুলের ফটোগ্রাফিতে অনেক সময় লেন্সকে সম্পূর্ণভাবে ডিফোকাস করে ছবিকে ব্লার করা ও ফ্রেমকে দৃষ্টিনন্দন বোকেহ তৈরী করার ট্রিকও অনেকে প্রয়োগ করে থাকেন।
টিপ ২৮. শার্প ফটো পাওয়ার টিপস
আপনারা জানেন যে, ম্যাক্রো ফটোগ্রাফিতে ছোট অ্যাপারচার (বড় f নাম্বার) ব্যবহার করলে লেন্সের মধ্যে দিয়ে কম আলো প্রবেশ করে। আর এতে সাটার স্পীড কমে যায় এবং বেশী সময় ধরে এক্সপোজার দিতে হয়।
এই রকম পরিস্থিতিতে হালকা ঝাকুনি বা নড়াচড়াতে, এমনকি, ক্যামেরার মধ্যে থাকা মুভিং মিরর (moving mirror) এর কারণে ছবি ব্লার হয়ে যাওয়ার আশংকা বৃদ্ধি পায়।
ছবি ব্লার হওয়ার ঝামেলা থেকে বাঁচতে, ক্যামেরার মিরর লক-আপ (mirror lock-up) ফাংশন ব্যবহার করুন, অথবা, লাইভ ভিউ মুড ব্যবহার করুন – লাইভ ভিউতে মিরর অটোমেটিক্যালি লক-আপ হয়ে থাকে। সাবজেক্টের শট রেডি হয়ে ফিংগার ব্যবহার না করে রিমোট দিয়ে শাটার রিলিজ করুন, অথবা, ক্যামেরার সেলফ-টাইমার (self-timer) ব্যবহার করুন।
প্রয়োজনে ISO বৃদ্ধি করে সাটার স্পীড বাড়ানো যেতে পারে। তবে খেয়াল রাখতে হবে, ক্যামেরার বডি ভেদে ISO ব্যবহারে ছবিতে গ্রেইনের পরিমাণ কেমন আসে, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকা প্রয়োজন। সাধারণতঃ ISO কে ৮০০ এর নিয়ে রাখলে সবচেয়ে পরিষ্কার ছবি পাওয়া যায়।
টিপ ২৯. ঘরে তৈরী রিফ্লেক্টর ব্যবহার করুন
অনেক সময় ক্ষুদ্র সাবজেক্টের উপরে ভালভাবে আলো ফেলানোটা বেশ চ্যালেঞ্জিং হয়ে যায়। বিশেষ করে ছোট ম্যাক্রো লেন্স দিয়ে লাইফ-সাইজ শট নেয়ার সময় – এমন সময় ক্যামেরাকে সাবজেক্টের খুব কাছে নিয়ে যেতে হয় এবং ক্যামেরার অবস্থানের কারণে ন্যাচারাল আলো প্রবেশের পথ বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
এ সময় হাতের কাছে একটি রিফ্লেক্টট থাকলে খুব সহজেই এই সমস্যার সমাধান করে ফেলা যায়। রিফ্লেক্টর কিন্তু নিজে হাতে তৈরী করে নেয়া যায়। এ্যালুমিনিয়াম ফয়েল একটা কার্ডবোর্ডের উপরে সাট করে লাগিয়ে নিলেই হবে। আবার, ফুটবলের উপরে ফয়েল লাগিয়ে আলো রিফ্লেক্ট করলে সাবজেক্টের উপরে সুন্দর ডিফিউজ কোয়ালিটির আলো পড়ে।
এবার, আপনার রিফ্লেক্টরটি সাবজেক্টের শ্যাডো পড়া সাইডে নিয়ে বসিয়ে আলো ফেলুন। দেখবেন, আগে অন্ধকারের কারণে সাবজেক্টের যে ডিটেইলগুলো ধরা পড়ছিল না, এবার তারা সুন্দর করে ক্যামেরায় ধরা পড়ছে।
টিপ ৩০. বড় ম্যাক্রো লেন্সের ব্যবহার
বড় ফোকাল লেন্সযুক্ত ম্যাক্রো লেন্সগুলোতে ছোট ম্যাক্রো লেন্সের মতই ১ঃ১ সাইজের লাইফ-সাইজ ছবি নেয়া যায়, কিন্তু, বড় ম্যাক্রো লেন্সগুলো দিয়ে অনেক দূর হতে সাবজেক্টের ছবি তোলা যায়।
সাবজেক্টের খুব কাছে যেতে হয় না, তাই সাবজেক্টের আশে-পাশে ফাঁকা জায়গাতে ফ্ল্যাশগান বা অন্যান্য লাইট সোর্সগুলোকে স্বাচ্ছন্দ্যে বসানো যায়।
আর এ কারণে বড় ফোকাল লেন্থের ম্যাক্রো লেন্সগুলো ম্যাক্রো ফটোগ্রাফিতে আদর্শ লেন্সে পরিণত হয়েছে; কারণ, এতে পোকা-মাকড় ও কীটপতঙ্গকে বিরক্ত না করে দূর থেকে শট নেয়া যায়।
টিপ ৩১. সকাল-সকাল শ্যুট করুন
আউটডোরে ম্যাক্রো ফটোগ্রাফি করার প্ল্যান থাকলে, ভোরে উঠতে অ্যালার্ম ঘড়ি ব্যবহার করুন। ফটোগ্রাফিতে ভোরে উঠা জরুরী, এই সময় সূর্যের আলোর প্রখরতা কম থাকে, আলো ডিফিউজ অবস্থায় থাকে এবং আলোতে সব রঙের সমাহার (spectrum) থাকে – শুধু এ জন্যই নয় – দিনের এ সময় বাতাসের গতিবেগও সবচেয়ে কম থাকে।
বাগানে ম্যাক্রো ফটোগ্রাফিতে বহমান বাতাস বিশাল ঝামেলা তৈরী করে। ফুল, পাতা, মাকড়শার জাল এবং অন্যান্য মনোহর সাবজেক্টের ক্লোজ-আপ ফটোগ্রাফির সময় স্লো সাটারের স্পীডের সাথে বাতাস থাকার কারণে ছবি ব্লার আসতে পারে।
লম্বা কাণ্ডযুক্ত গাছে ফুলের ম্যাক্রো ছবি তুলবার সময় বিশেষ ধরণের সাপোর্ট সিস্টেম ব্যবহার করতে পারেন। স্ট্যান্ডের সাথে লাগানো এক ধরণের ক্ল্যাম্প বা ক্লিপ দিয়ে ফুলের নীচে কাণ্ডের সাথে ক্ল্যাম্পটা লাগিয়ে দিলে ফুলের নড়াচড়া বন্ধ করা যায়।
শ্যুটের সময় এমন কোন সিস্টেম সাথে না থাকলে, আশে-পাশে থাকা কোন কঞ্চি দিয়ে ফুল গাছের সাথে বেধে দিয়ে ভালভাবেই কাজ চালানো যায়।
টিপ ৩২. নিজের ম্যাক্রো ব্যাকগ্রাউন্ড তৈরী করে রাখুন
আমরা জানি, ব্যাকগ্রাউন্ডের কোয়ালিটির উপরে একটা ভাল ম্যাক্রো ছবি সাফল্য পেতে পারে; আবার ছবিটাকে ব্যর্থ করে দিতে পারে। লম্বা ফোকাস লেন্থের ম্যাক্রো লেন্সের সাহায্যে ফ্রেমের ব্যাকগ্রাউন্ডে কি থাকবে, না থাকবে তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন; কিন্তু, ছবির রঙ নষ্ট হয়ে যাওয়া এবং আউট-ফব-ফোকাস হাইলাইটের মত বিষয় অনেক সময় পরিহার করা যায় না।
এ ধরণের পরিস্থিতি সামলাতে বিকল্প ব্যবস্থা হিসাবে নিজের প্রিন্টেড ব্যাকগ্রাউন্ডের কালেকশন গড়ে তোলাটা খুবই জরুরী।
কালার্ড কার্ডের শিট (colored card sheet), ব্লারড ন্যাচারাল ব্যাকগ্রাউন্ডের প্রিন্টেড ম্যাট শিট (blurred natural background printed matte sheet) – এমনকি সিঙ্গেল কালারের কাপড় ব্যাকগ্রাউন্ডের ব্যবহার করেও সাবজেক্টের শট নিলে বেশ সফট ব্যাকগ্রাউন্ডযুক্ত ছবি পাওয়া যায় যা বেশ ফুটে উঠে ও দর্শকদের চোখে দৃষ্টিনন্দন হিসাবে ধরা দিতে পারে।
টিপ ৩৩. বাসাতে ম্যাক্রো স্টুডিও তৈরী করা
বাসাতে ম্যাক্রো ফটোগ্রাফির একটা বিশেষ সুবিধা হল, এতে খুব বেশী জায়গার প্রয়োজন হয় না। একটা টেবিল, বা বাসার ওয়ার্কশপের এক কর্নারের জায়গা প্রয়োজন হবে। প্রয়োজন হবে একটা ট্রাইপড, যাতে সাবজেক্টের ঝাকুনিমুক্ত শট নিতে পারেন।
আরেকটু উচ্চাভিলাষী হতে চাইলে, কিনে নিতে পারেন একটা রেইল। এর উপরে ক্যামেরা সেট করে নিয়ে রেইলের সাথে থাকা স্ক্রু ঘুরিয়ে অত্যন্ত সুক্ষভাবে ক্যামেরাকে আগে-পিছে করে ফোকাস ঠিক করা যায়।
টিপ ৩৪. টার্গেট প্রাণীর খুব কাছাকাছি পৌঁছানোর টেকনিক
ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফিতে মিনিমাম ৩০০ এমএম ফোকাল লেন্থের একটি টেলিফটো লেন্স ন্যূনপক্ষে থাকা জরুরী; আর এর চেয়ে বেশী জরুরী হল, প্রকৃতির সাথে মিশে গিয়ে অত্যন্ত সন্তর্পনে আপনার টার্গেট করা প্রাণীর একেবারে কাছে পৌঁছে যাওয়ার টেকনিক; কারণ এভাবে সাবজেক্টের ছবি দিয়ে পুরো ফ্রেম ভর্তি করে শট নিতে পারবেন।
পাখি, প্রজাপতি, বাঘ, হরিণ – যে প্রাণীরই ছবি তুলতে যান না কেন, তাদের বিচরণের স্থান ও স্বভাব-চরিত্র সম্পর্কে ভালভাবে জেনে নিয়ে ছবি তুলতে যেতে হবে। ওয়াল্ড-লাইফ ফটোগ্রাফিতে ধৈর্য্যটাই মূলধন। হুট করে ছবি তুলতে গিয়ে দুই-চারটা ক্লিকে ভূবন-বিখ্যাত ছবি পাওয়া যাবে না। এর জন্য ধৈর্য্য ধরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা (এমনকি দিনের পর দিন) বসে থাকা লাগতে পারে।
ওয়াইল্ডলাইফে যে সাবজেক্টের উপরে ছবি তুলতে চাচ্ছেন, সেটার উপরে সার্চ ইঞ্জিন গুগলে কিছু সার্চ দিয়ে পড়াশুনা করে নিন; কোন স্থানে তাদের বেশী দেখতে পাওয়া যায়, বছরের কোন সময়ে (এবং কোন দিনে) গেলে তাদের দেখা পাওয়া যাবে, কাছে গিয়ে ছবি তোলা যাবে – এই ব্যাপারগুলো ভালভাবে জেনে স্পটে গেলে ভাল ছবি পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
ক্যামোফ্লেজ ড্রেস বা পরিবেশের সাথে মিশে যায় এমন ড্রেস (যা চকচকে ও মনোযোগ আকর্ষণ করে, এমন না) পরিধান করা উচিত। সুগন্ধি ডিওডোরেন্ট একদমই বাদ। দিনের বেলা সাধারণত: ভোরে বা সন্ধ্যার কিছু আগে স্পটে থাকতে হবে; কারণ এ সময় সাবজেক্টকে সবচেয়ে অ্যাকটিভ পাবেন।
টিপ ৩৫. নিজের গাড়ি বা সুবিধামত আড়ালে অবস্থান নিন
ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফিতে প্রাণী বা পাখির বেশ কাছে গিয়ে শট নেয়া বেশ কঠিন একটা কাজ। পেশাদার ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফারের প্রয়োজনীয় কিটের মধ্যে একটি হল নিজেকে লুকিয়ে ফেলার জন্য ব্যবহৃত ব্লাইন্ড।
হয়ত আমাদের অনেকেরই স্পটে জায়গামত কোন আড়ালে বসার সেট রেডি নাই, বা আগে থেকে কেউ তৈরী করে রেখে যায় নাই; এ রকম কিছু থাকলেও দিনের পর দিন সেখানে বসে থাকার সময়ও নেই। এ ক্ষেত্রে সাথে গাড়ি থাকলে এর আড়ালকে অস্থায়ী সমাধান হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
পাখিরা কেন জানি গাড়িকে একেবারেই ভয় পায় না। তবে, গাড়ির আড়ালে লুকিয়ে থাকা ফটোগ্রাফারকে সাবধানে থাকতে হবে যেন নড়াচড়া করে পাখিকে ভয় না পাইয়ে দেন।
পাখির শ্যুটিং এর সময় সাথে একটা বিনব্যাগ রাখা উচিত। গাড়ির দরজার ফ্রেমে বিনব্যাগ বিছিয়ে তার উপরে লেন্সকে রেখে নিজে পজিশন নিন, ক্যামেরা বডি বা লেন্সের ইমেজ স্ট্যাবিলাইজার অন করে নেন; গাড়ির ইঞ্জিন বন্ধ থাকবে, বলাই বাহুল্য।
এভাবে পাখির সবচেয়ে শার্প শট নেয়া যায়। রেডিমেড বিনব্যাগ মার্কেট থেকে সংগ্রহ করতে পারেন, কিংবা একটি ব্যাগে গম রেখে নিজেই বিনব্যাগ বানিয়ে নিতে পারেন।
টিপ ৩৬. বাগানের পাখির ছবি তোলা
প্র্যাকটিসের মধ্য দিয়ে কাজের দক্ষতা বৃদ্ধি পায় – পোট্রেট ও ল্যান্ডস্কেপ ছবির ক্ষেত্রে কথাটা খুব বেশী প্রযোজ্য হলেও ওয়াইল্ডলাইফের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা অত সহজ না। এ ক্ষেত্রে বাসার আশেপাশের বাগান বা উদ্যানে দেখতে পাওয়া পাখির ছবি তুলে হাত পাকানো একটি ভাল উপায়।
বাড়ির আশেপাশে একটি ছোটখাট “পাখির স্টুডিও” তৈরী করে নিন। গাছের কোন গুড়ি থাকলে তার সাথে একটি প্লাটিকের পানির ফিডার স্থাপন করে দিন; চাই কি কিছু শষ্য দানা রেখে দিন। অপেক্ষা করুন। দেখা যাবে পাখিরা আপনার এই আপ্যায়নে সাড়া দিবে। খাওয়া-দাওয়া ও পানি পান – দুটোই ব্যবহার করা শুরু করবে।
টিপ ৩৭. স্থানীয় চিড়িয়াখানার প্র্যাকটিস করা
ওয়াইল্ডলাইফে জলজ্যান্ত বাঘ, হরিণ বা কুমিরের ছবি তোলার টেকনিক একটু ভিন্ন। স্থানীয় চিড়িয়াখানা বা ওয়াইল্ডলাইফ পার্কে গিয়ে এই টেকটিক রপ্ত করার একটা ভাল জায়গা। এ জায়গা দুটোতে সাধারণ তারের বেড়া বা কাঁচের ভিতর দিয়ে ছবি তুলতে হয়।
তারের বেড়ার একেবারে সাথে লেন্স লাগিয়ে নিয়ে বেড়া দূরে অবস্থানরত প্রাণীর উপরে ফোকাস করুন; ব্যবহার করুন বড় অ্যাপারচার, এতে ডেপথ অব ফিল্ড কম থাকবে – পিছনে সুন্দর ব্লার পাওয়া যাবে। আর এ ভাবে ছবি তুললে তারের বেড়ার কিছুই ছবিতে আসবে না।
গ্লাসের মধ্যে দিয়ে শ্যুট করতে হলে লেন্সের ফ্রন্ট এলিমেন্টকে সাবধানে গ্লাসের সাথে ঠেকান; যাতে গ্লাসের রিফলেকশন এড়ানো যায়। লেন্সের সাথে হুড লাগানো থাকলে ভাল হয়; নিশ্চিন্তে গ্লাসের সাথে ঠেক দেয়া যায়।
টিপ ৩৮. প্রাণীর ছবিতে চোখের কন্টাক্ট (eye contact) থাকা জরুরী
প্রাণীর ছবি তুলবার সময় ক্যামেরাকে তার চোখের সমান্তরালে নামিয়ে আনুন; এতে ছবিতে বিশ্বাসযোগ্য ন্যাচারাল একটা ভাব চলে আসবে। স্পট মিটারিং মুডে সিঙ্গেল ফোকাস পয়েন্টটা প্রাণীর চোখে ফোকাস করুন। এটা একেবারে আবশ্যক একটা ব্যাপার।
ম্যানুয়ালি সিঙ্গেল ফোকাস পয়েন্ট ব্যবহার করা জরুরী; কেননা ম্যাট্রিক্স মিটারিং মুড ব্যবহার করলে ক্যামেরা তার মর্জি মত ফোকাস পয়েন্ট নির্ধারণ করে। দেখা যায়, প্রাণির যে অংশটি ক্যামেরার কাছে থাকে যেমন: নাক, বা কান, ঠোট বা নখে ফোকাস করার ফলে ঐ অংশটুকু শার্প হবে; যেখানে চোখে ফোকাস না হলে ওয়াইল্ডলাইফ ছবির মুল আবেদনটাই ব্যর্থ হতে পারে।
টিপ ৩৯. স্পটিং স্কোপ (spotting scope) এর ব্যবহার
বড় লেন্সের দাম অনেক। প্রফেশনাল কোয়ালিটির ৬০০ এমএম প্রাইম লেন্সের দাম ফ্যামিলি গাড়ির থেকেও বেশি হয়ে থাকে। কিন্তু, অনেক কম খরচে ডিজিস্কোপিং (digiscoping route) পদ্ধতিতে ম্যাগনিফিকেশন বাড়িয়ে নিতে পারেন।
আপনার ডিএসএলআর ক্যামেরার বডি বা কম্প্যাক্ট ক্যামেরার সাথে একটা এ্যাডাপটার লাগিয়ে এই “স্পটিং স্কোপ” লাগিয়ে নিয়ে ম্যাগনিফিকেশন বাড়িয়ে নিন; আর আরও দূরবর্তী পাখি বা প্রাণীর ফ্রেম-ভর্তি-করা ছবি তুলতে পারেন।
কিন্তু এই পদ্ধতিতে একটা সমস্যা আছে। অ্যাডাপটার লাগালে ক্যামেরা তার অটোফোকাস এর ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে এবং টেলিফটো লেন্সের মত অ্যাপারচার কম-বেশি করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলবেন। সম্পূর্ণ ম্যানুয়ালি অটোফোকাস করতে হয়।
আর, ডিজিস্কোপিং পদ্ধতি কম খরচে দারুণ ম্যাগনিফিকেশন পেলেও ছবির শার্পনেস কিছুটা কমে যায়। এর কারণ হল, অনেক বেশি ম্যাগনিফিকেশনের ফলে ক্যামেরার ইন্টারনাল পার্টসের ঝাঁকুনির ফলে ছবির শার্পনেস কমে যায়।
স্পটিং স্কোপ ব্যবহারে এফেক্টিভ অ্যাপারচার ছোট হয়ে ছবিতে আলো কমে যায় এবং স্বাভাবিকভাবে সাটার স্পীডও সমানুপাতিকভাবে কমে যায়।
টিপ ৪০. প্রাণী বা পাখির প্যানিং শট
প্যানিং এমন এক টেকনিক যাতে চলমান প্রাণীর সাথে সাথে ফটোগ্রাফারকে ক্যামেরা ও লেন্স ভূমির সমান্তরালে একই গতিতে ফলো করে সরিয়ে থাকেন। মোদ্দা কথা হল, এই পদ্ধতিতে সাবজেক্ট ফ্রেমের একটি নির্দিষ্ট জায়গায় স্থির রাখা হয়, যাতে ছবিতে সাবজেক্টের শার্প ছবি পাওয়া যায়, কিন্তু ক্যামেরা সরানোর গতির কারণে (এবং সাটার স্পীড কম থাকায়) ব্যাকগ্রাউন্ড ব্লার আকারে ছবিতে দেখা যায়।
এই টেকনিক দিয়েই উড়ন্ত পাখির ছবি তোলা যায়।
ট্রাইপডের সাথে “বল হেড” লাগিয়ে নিলে সবচেয়ে সুন্দরভাবে ও সাবলীলভাবে শার্প প্যানিং শট নেয়া যায়। কিন্তু, ফ্রি-হ্যান্ড প্যানিং শট নেবার সময় গাইরোস্কোপ-বেসড ইমেজ-স্ট্যাবিলাইজার ব্যবহার করলে শার্প শট পাবেন।
টিপ ৪১. সুন্দর কম্পোজিশন
ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফিতে দীর্ঘ দিন লেগে থাকার পরও ভাল ও মনে-রাখার-মত শট না পেয়ে এই ধরণের ছবি তোলা ছেড়ে দিয়েছেন – এমন ফটোগ্রাফার আশেপাশে খুঁজলেই পাওয়া যাবে। কম্পোজিশন ঠিক রেখে প্রাণীর ছবি তোলা চ্যালেঞ্জিং একটা ব্যাপার। কিন্তু, কিছু ট্রিক ব্যবহার করে কম্পোজিশনকে প্রফেশনাল লেভেলে উঠিয়ে নেয়া যায়।
যে প্রাণীর ছবি তুলবেন সেটি ডানে বা বামে চেয়ে থাকলে, সাবজেক্টকে ফ্রেমের এক-পাশে (off-centre) বা রুল-অব-থার্ড (rule of third) কম্পোজিশন রুল ব্যবহার করার পরামর্শ দেয়া হয়।
এই রুল অনুযায়ী, প্রাণীটি যদি বামে তাকিয়ে থাকে, তবে প্রাণীকে ডানে কর্নারের দিকে রেখে ফ্রেমের বাম দিকে দু-তৃতীয়াংশ ফাঁকা রাখা রাখুন।
আর, যদি ডানের দিকে তাকিয়ে থাকে, তবে প্রাণীটিকে ফ্রেমের বামের দিকে রেখে ডানের দিকে দুই-তৃতীয়াংশ ফাঁকা রাখুন।
আর, রুল অন থার্ড ব্যবহারের সময় ক্যামেরা থেকে সিঙ্গেল AF পয়েন্ট মুড ব্যবহার করে যে কোন ফোকাস পয়েন্টকে প্রাণীর উপরে রেখে সাটার চাপ দিয়ে শিট নিন।
বিকল্প পদ্ধতিতে ক্যামেরা লাইভ ভিউ অন করে 3×3 গ্রীড চালু করুন। এবার গ্রীডের রেখা দুটি যেখানে ক্রস করেছে সেখানে পূর্ণ প্রাণীটি বা প্রাণীর যে কোন উল্লেখযোগ্য অংশকে রেখে শট নেয়া যেতে পারে।
পিসিতে ছবি ডাউনলোড করার পর আপনার ফটো এডিটরে ছবি দেখে প্রয়োজনে ছবি ক্রপ করে কম্পোজিশনের আরও উন্নতি করতে পারবেন। তবে, ক্রপ করার সময় ছবির অরিজিনাল অ্যাসপেক্ট রেশিও ঠিক রাখতে হবে; কারণ অ্যাসপেক্ট রেশিও ঠিক রাখা স্ট্রং কম্পোজিশনের গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর।
টিপ ৪২. সঠিক এক্সপোজারের জন্য ম্যানুয়ালি মিটারিং সেট করা
প্রাণীদের মধ্যে কারও কারও লোপ গাঢ় রঙের, কারও হালকা রঙের। এই কারণে ক্যামেরা মিটারিং মুড সঠিক এক্সপোজার হিসাব করতে ভুল করে। শট নেয়ার পর দেখা গেল, গাঢ় রঙের সাবজেক্টের ছবি হালকা (overexposed) হয়ে গেছে; আর হালকা রঙের সাবজেক্টের ছবি এসেছে বেশ কালো (underexposed)।
সঠিক এক্সপোজার পেতে, ক্যামেরার বডির এক্সপোজার মিটার ঘুরিয়ে ম্যানুয়াল মুডে নিয়ে আনুন – ফ্রেমের মধ্যে যে এরিয়া নিয়েছেন তার মধ্যে একইভাবে আলোজ্জ্বল মিডটোন সাবজেক্টের উপরে ফোকাস করুন – যেমন ঘাস বা পাথর হতে পারে – এবার অ্যাপারচার এবং সাটারস্পীড অ্যাডজাস্ট করুন। এবার এক্সপোজার মিটারে দেখে নিন মিটার “0” এর সাথে এক লাইনে এসেছে কিনা। যদি না আসে তবে অ্যাপারচার ও সাটারস্পীড কমিয়ে-বাড়িয়ে “0” এর বরাবর নিয়ে আনুন।
এভাবে এক্সপোজার রিডিং নেয়া শেষ হলে ফ্রেম রিকম্পোজ করে ফ্রেম ঠিক করে নিয়ে শট নিন। ডিসপ্লেতে দেখে নিন আপনার সাবজেক্টের এক্সপোজার ঠিক এসেছে কিনা। প্রয়োজনে আরও এ্যাডজাস্ট করে নিতে পারবন।
টিপ ৪৩. শার্প ছবির জন্য মনোপড (monopod) এর ব্যবহার
বড়, ভারী ও মূল্যবান টেলিফটো লেন্সের জন্য উপযুক্ত ট্রাইপড দরকার হয়। যে কোন ধরণের সৃষ্ট ঝাকুনি থেকে ছবি ব্লার হওয়ার আশংকামুক্ত হতে ট্রাইপডের সাথে বিশেষ ধরণের বলহেড ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
আবার, এত বড় সেটআপ বহন করে দ্রুত এদিক-ওদিক যাওয়া বেশ কষ্টকর – এক জায়গায় বসে থেকে ছবি তোলার কথা আলাদা; কিন্তু চলমান প্রাণীকে ফলো করে তার পিছে পিছে ঘুরে ছবি তোলার লথা আবার একেবারে ভিন্ন বাস্তবতা। তখন আর এতবড় লেন্সসহ ট্রাইপড টানাটানি করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়।
যদি প্ল্যান করে থাকেন সুন্দরবনে হরিণের পিছে ছুটে তাদের ছবি তুলবেন – এ ক্ষেত্রে স্পোর্টস ফটোগ্রাফারগণ যে কৌশল নেন, সেটি অনুসরণ করতে পারেন। টেলিলেন্সের সাথে মনোপড জুড়ে নেন। মনোপডে ট্রাইপডের মত স্ট্যাবিলিটি পাবেন না, কিন্তু, দ্রুত নড়াচড়া করাতে পাবেন দারুণ স্বাচ্ছন্দ্য।
তাই, ট্রাইপডের বিকল্প হিসাবে চিন্তা না করে ক্ষেত্র বিশেষে মনোপড বেশ কাজের জিনিষ হয়ে উঠে।
আর খুব আটশাট জায়গা (চিড়িয়াখানা), বা কাঁদাময় নরম ভূমিতে (সুন্দরবনের নদী সংলগ্ন ম্যানগ্রোভ এলাকা) যেখানে ট্রাইপড বিছানো অসম্ভব, সেখানে মনোপড একটি পারফেক্ট বিকল্প অ্যাক্সেসরিজ।
টিপ ৪৪. হাতে (handheld) ছবি তুলবার নিরাপদ সাটার স্পীড
হাতে ছবি তুলবার সময় লেন্সের যে ফোকাল লেন্থ থাকবে, কোন অবস্থাতেই, সাটার স্পীড তার থেকে কম হতে পারবে না। যদি করেন, তবে হাতের ও ক্যামেরার কম্পনের কারণে ছবি ব্লার হয়ে যাবে, এমনকি, নষ্টও হয়ে যেতে পারে।
একটি ফুল-ফ্রেম ক্যামেরাতে, লেন্সের যে ফোকাল লেন্থ নিবেন, সেটাই গাইড হিসাবে ব্যবহার করতে পারেন – অর্থাৎ যদি আপনার ৩০০ মিমি লেন্স লাগানো থাকে, তবে ব্লার-মুক্ত ছবির জন্য সর্বনিম্ন প্রস্তাবিত শাটার স্পীড সেট করুন ১/৩০০ সেকেন্ড।
APS-C বডির ক্যামেরার ক্রপ ফ্যাক্টর ১.৫ বা ১.৬ এর মধ্যে থাকে, সুতরাং লেন্সের ফোকাল লেন্থের বিপরীতে “নিরাপদ” হ্যান্ডহেল্ড সাটার স্পীড পরিমাপের জন্য এই ক্রপ ফ্যাক্টর দ্বারা গুণ দিতে হবে।
কিন্তু, মনে রাখা প্রয়োজন যে, এটি কেবল একটি কাগুজে নিয়ম। ক্যামেরাকে শক্ত হাতে ধরে রাখার ফটোগ্রাফারের দক্ষতা, যে প্রাণীকে টার্গেট করেছেন সেটি থেমে আছে নাকি চলমান কিনা, ব্যবহৃত লেন্সে ইমেজ স্ট্যাবিলাইজেশন “অন” আছে কিনা, কিংবা, লেন্সকে কোন বেড়া, গাছ বা রেলিং এর উপরে বসিয়ে নিয়ে শুট করছেন কিনা – এই সব ফ্যাক্টরের উপরে ভিত্তি করে সাটার স্পীড একটু কম-বেশী করার চিন্তা করা যেতে পারে।