ছাগল পালন !!!

ছাগল লালনপালন
অনেকেই দুধ, পনির এবং মাংসের জন্য গৃহস্থালী পরিসরে বা ছোট পারিবারিক খামারে নিজ হাতে ছাগল লালনপালন করে থাকেন। এটি অবশ্য অর্থ উপার্জনেরও একটি মোক্ষম উপায়, কারণ দুধ, পনির এবং মাংস বিক্রি করে বেশ মুনাফাও করা যায়। খাদ্যের জন্য পশুপালন করতে চাইলে কীভাবে সেটি শুরু করবেন তা ভেবেচিন্তে ঠিক করাটাই কঠিন, তবে ছাগল পালন শুরু করতে চাইলে আপনার বড় কোনো পশুখামার তৈরীর প্রয়োজন হবে না।

ছাগলের ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতি

আপনাকে প্রথমে আপনার চাহিদা ঠিক করে নিতে হবে। আপনি কি সৌখিন পোষাপ্রাণী হিসেবে ছাগল পুষে দুধ এবং পনিরের ঘরোয়া প্রয়োজন মেটাতে চান, নাকি মাংসের চাহিদা পূরণের জন্য ছাগল পালন করতে চান? এরকম ভিন্ন ভিন্ন প্রয়োজনের জন্য ছাগলের ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতি রয়েছে।

ছাগল ক্রয়

আপনি কোন প্রজাতির ছাগল কিনবেন তা ঠিক করার পর আপনাকে ভাবতে হবে যে, আপনি কী ছাগলছানা বা ছাগলের বাচ্চা কিনবেন নাকি পূর্ণবয়স্ক ছাগল কিনবেন। আপনি যদি প্রজননের মাধ্যমে আপনার ছাগলের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে চান, তবে আপনার প্রয়োজন হবে একটি মাদি ছাগল যাকে বকরী বলা হয়। buck হলো পুরুষ ছাগল। ছাগলছানা আপনি বেশ সস্তায় কিনতে পারবেন, কিন্তু সেগুলোর আবার ঝামেলা আছে। ছাগলছানাগুলো কিছুটা নাজুক ধরনের হয় এবং নতুন পরিবেশে খাপ খাইয়ে নিতে খানিকটা সময় নেয়। একারণে প্রথমদিকে সেগুলোর মেজাজ খিটখিটে থাকে। সেক্ষেত্রে আপনি সময় নিয়ে এদেরকে নিজ হাতে খাইয়ে দিতে পারেন এবং এদেরকে নতুন পরিবেশে মানিয়ে নিতে সাহায্য করতে পারেন।

ছাগল আবাসস্থল

ঠাণ্ডা থেকে এবং রোদের তাপ থেকে বাঁচাতে এগুলোরর জন্য ছাউনি দরকার হবে। এগুলো যখন বাইরে চরে বেড়ানোর মত মোটাতাজা প্রাণীতে পরিণত হবে তখন ক্ষতিকর জিনিস থেকে বাঁচতে এদের ছোটখাট হলেও একটি ছাউনি দরকার হবে। এদের আবাসস্থলের চারপাশে বেড়া দেয়ারও প্রয়োজন হবে। ছাগলকে যদি ঘের দিয়ে পরিবেষ্টিত না রাখা হয় তবে অনেক সময় এরা চরে বেড়াতে গিয়ে পথ ভুলে হারিয়ে যেতে পারে এবং শিকার প্রাণী পালের মধ্যে ঢুকে এদের অনেকগুলোকেই মেরে ফেলতে পারে। যে জায়গায় এদের আবাসস্থল তৈরী করা হবে সে জায়গায় খাদ্য এবং স্বাদু পানির ব্যবস্থা রাখতে হবে।

পরিসর

আপনার নতুন গাবাদিপশুর ছুটাছুটি করে বেড়ানো আর ঘাস খাওয়ার জন্য বিস্তৃত জায়গা থাকতে হবে। এদেরকে ছোট পরিসরের কোনো বদ্ধ জায়গায় রাখা চলবে না। এদের রাতের বেলার ঘুমানোর জায়গা যদি ছোট কোনো আবদ্ধ জায়গায় হয় তাতে অসুবিধা নেই কিন্তু দিনের বেলায় এরা যেন ছুটাছুটি করে বেড়াতে পারে সে ব্যবস্থা অবশ্যই করতে হবে। এরা তিড়িংবিড়িং লাফালাফি আর ছুটাছুটি করতে পছন্দ করে। আনন্দে থাকা ছাগলগুলো স্বাস্থ্যবান হয়ে থাকে এবং বেশি দুধ দেয়।

প্রতিপালন

এদেরকে শুধুই ঘাস খাইয়ে রাখা ঠিক হবে না। শুধু ঘাস দিয়ে এদের পুষ্টির অভাব পূরণ হবে না। সেইসঙ্গে এদেরকে খড় এবং ভূষি খাওয়াতে হবে। কোনো কোনো অঞ্চলে এদের স্বাভাবিক খাবারে নির্দিষ্ট কিছু খনিজ লবণ থাকে না, সে জন্য ভেটেরিনারিয়ান এর পরমর্শে পরিপূরক ঔষধ খাওয়াতে হবে। আপনি এদেরকে ট্যাবলেট গুঁড়া করে খাওয়াতে পারেন, তবে এদেরকে ঘাসপাতা খাওয়ানো বাদ দেবেন না। অর্থাৎ এদেরকে প্রচুর পরিমাণে সবুজ ঘাসপাতা খাওয়াবেন। গর্ভবতী বকরীর পুষ্টিগত চাহিদার দিকে বিশেষ নজর রাখবেন। এদের জন্য অধিক খাদ্য ও ভিটামিন প্রয়োজন হতে পারে।

ছাগল লালন

এরা দলবদ্ধ প্রাণী হওয়ায় আলাদাভাবে প্রতিটির যত্ন নেয়ার দরকার হয় না, তবে এদের যথাযথ দেখাশুনা করতে হয়। টিকাদান এবং কৃমিমুক্তির জন্য এদেরকে নিয়মিতভাবে পশুচিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে। এরা প্রায়ই পরজীবি দ্বারা আক্রান্ত হয় এবং পরজীবি দ্বারা আক্রান্ত হলে আপনাকে এদের যথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। যদি পশুচিকিৎসকের কাছে যেতে না পারেন সেক্ষেত্রে আপনি নিজেই পশুকে টিকা দেয়ার পদ্ধতি শিখে নিতে পারেন। যাহোক, এদের কোনোটি যদি অসুস্থ হয়ে পড়ে তবে সঠিক রোগ নির্ণয়ের জন্য এদেরকে কোনো পশুচিকিৎসকের নিকট নিয়ে যেতেই হবে।

দুধের জন্য ছাগল

দুধের জন্য ছাগল কিনতে চাইলে সেক্ষেত্রে আপনার দুধ দোহনের সরঞ্জাম এবং দুধ দোহনচক্র সম্পর্কে জ্ঞান থাকতে হবে। বাচ্চা প্রসব করার পর থেকে নিয়ে ১০ মাস পর্যন্ত আপনি একটি মাদি ছাগল থেকে দুধ দোহন করতে পারবেন। এরপর তাকে বিশ্রাম দিতে হবে। মাদি ছাগলটির স্বাস্থ্যগত অবস্থার উপর বিশ্রামকালের মেয়াদ নির্ভর করে তবে বিশ্রামকাল কমপক্ষে দুই মাস রাখতেই হবে। নির্দিষ্ট কোনো মাদি ছাগলকে পুনরায় গর্ভবতী করিয়ে নেয়ার পূর্বে আপনাকে এর প্রজননচক্র এবং স্বাস্থ্যগত তথ্য সংরক্ষণ করতে হবে। দুধ দোহনচক্র চলছে এমন কোনো বকরীকে দিনে দুইবার দোহন করা যায়। একটি বকরী থেকে দিনে প্রায় এক গ্যালন দুধ সংগ্রহ করা যায়।

গর্ভকরণ

আপনি যদি আপনার ছাগলপালের বংশবৃদ্ধি করতে চান তবে মাদি ছাগলের বিশ্রামকালীন সময়ে পুরুষ ছাগলকে এর সংস্পর্শ থেকে দূরে রাখতে হবে। দোহনচক্র ও গর্ভচক্রের মাঝামাঝি সময়ে প্রজননক্ষম হওয়ার জন্য মাদি ছাগলের বিশ্রাম দরকার। এটি এদের প্রজননস্বাস্থ্য এবং সার্বিক সুস্থতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি বংশবৃদ্ধির উদ্দেশ্যে ছাগল পালন করতে চান তবে আপনাকে ছাগলপালের আকার সম্পর্কে ভেবে নিতে হবে। কিছু ছাগলছানা আপনি চাইলে বিক্রি করে দিতে পারেন, সেইসঙ্গে মাদিটিকেও বিক্রি করতে পারেন অথবা দুধের জন্য রেখে দিতে পারেন। এদেরকে আপনার উঠানের যত্রতত্র ছুটে বেড়াতে দেবেন না। এদের জন্য নির্দিষ্ট সুপরিসর জায়গা রাখতে হবে, কারণ গাদাগাদি করে রাখলে এরা পরজীবির আক্রমণ ও রোগবালাইয়ের শিকার হবে।

ছাগদুধের উপকারিতা

আজকাল লোকজন গরুর দুধের চাইতে ছাগদুধ বেশি পছন্দ করতে শুরু করেছে কারণ ছাগদুধে কম চর্বি রয়েছে। প্রতি আউন্স ছাগদুধে ক্যালরির পরিমাণও কিছু বেশি রয়েছে। এটি সহজপাচ্যও বটে এবং গরুর দুধে যাদের সমস্যা আছে তাদের জন্য এটি একটি ভাল বিকল্প হতে পারে। দুধ থেকে পনির, ছানা ইত্যাদির মতো অনেক ধরনের সুস্বাদু খাবার তৈরী হয়। অনেক খাবার রান্নায় এটিকে গরুর দুধের উত্তম বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। দুধ বিক্রি করার সময় দেখবেন আপনারই এলাকার অনেক পরিবার তা কিনতে চাইবে। মুনাফার জন্য ছাগদুধ বিক্রির অনেক উপায় রয়েছে।

সরঞ্জাম

প্রতিপালনের জন্য ছাগল কেনার সময় যেমন ভাল দেখে কিনবেন তেমনই দুধ দোহনের যন্ত্রপাতিও আপনাকে দেখেশুনে ভালটা কিনতে হবে। আপনার কোন ধরনের যন্ত্রপাতি দরকার তা নির্ভর করছে আপনার ছাগলপালের আকারের উপর এবং আপনি হাতে দুধ দোহন করবেন কি-না তার উপর। আপনার দরকার হবে সোয়া এক গ্যালন মাপের একটি স্টিলের বালতি । এটিতে করেই আপনাকে দুধ সংগ্রহ করতে হবে। বাঁট মোছার টিস্যু এবং দুধ ছাঁকার জন্য ছাঁকনি ও ফিল্টারও প্রয়োজন হবে। হাতে দোহন করতে হলে এ ক’টি জিনিসেই আপনার কাজ চলে যাবে। কিন্তু আপনি যদি যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে দুধ দোহন করতে চান তবে আপনাকে একটি যন্ত্র কিনতে হবে যেটাতে একটি সংগ্রাহক নল ও দুধ নামানোর একটি চোষক রয়েছে।

ছাগলের প্রজাতি, পালের আকার এবং তা সৌখিন পোষাপ্রাণী হিসেবে পালন করা হবে কি না তা সম্পূর্ণ নির্ভর করে ছাগলের মালিকের উপর। প্রতিটি মানুষই আলাদা। ছাগলপালনকে আপনি শুধুই অতিরিক্ত কিছু অর্থ উপার্জনের একটি আকর্ষণীয় উপায় না ভেবে এটিকে দুধ এবং মাংস যোগান দেয়ার প্রাথমিক পেশা হিসেবেও গ্রহণ করতে পারেন। ছাগল পালনের মাধ্যমে দুধ এবং খাদ্য উৎপাদন করে খামারের মালিক অর্থ উপার্জন করতে পারেন। প্রজননের মাধ্যমে ছাগলছানা উৎপাদন করেও অর্থ উপার্জন করা যায়।

দুধ উৎপাদনে শীর্ষ ছাগলের জাত

১। আলপাইন ছাগল


দুধ উৎপাদনে শীর্ষ ১০ ছাগল জাত, আলপাইন ছাগল


অ্যালপাইন একটি দুর্দান্ত দুগ্ধ ছাগল জাত।  যারা দৈনিক গড়ে প্রায় ৪-৫ লিটার দুধ উৎপাদন করতে পারে। জাতটি আসলে ফরাসী আল্পস থেকে উৎপত্তি হয়েছিল। আলপাইন ছাগলের দুধে বাটারফেটের গড় পরিমাণ প্রায়  3.5 শতাংশ বা তার চেয়েও বেশি হয়।


২। সানেন ছাগল 

  
দুধ উৎপাদনে শীর্ষ ১০ ছাগল জাত, সানেন ছাগল

সানেন সুইজারল্যান্ডের একটি জনপ্রিয় দুগ্ধ ছাগল। যারা দৈনিক প্রায় ৪.৫ লিটার দুধ উৎপাদন করতে পারে। এই প্রজাতির ছাগলের সংখ্যা মোট ছাগলের ২.৫ থেকে ৩ শতাংশের মধ্যে।


সানেন সবচেয়ে বড় দুগ্ধ ছাগলের জাতের মধ্যে রয়েছে যেখানে পুরুষরা ২০০ পাউন্ডেরও বেশি ওজন হতে পারে। স্যানেন ছাগলও খুব ভাল মেজাজের এবং এগুলি পোষা প্রাণী হিসাবে বড় করা খুব সহজ।


৩। লামনছা ছাগল 


দুধ উৎপাদনে শীর্ষ ১০ ছাগল জাত, লামনছা ছাগল


লামনছা ছাগল ছোট প্রকৃতির তবে তাদের কানের জন্য পৃথক চেহারা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এগুলি খুব বন্ধুত্বপূর্ণ এবং মাংস উৎপাদনের জন্যও খুব ভাল। এগুলির উৎস স্পেন থেকে এবং এই প্রজাতির ছাগলের দুধে বাটারফেটের গড় পরিমাণ প্রায় ৪.২ শতাংশ।


৪। যমুনাপারী ছাগল


দুধ উৎপাদনে শীর্ষ ১০ ছাগল জাত, যমুনাপারী ছাগল


যমুনাপারী একটি ভারতীয় দুগ্ধ ছাগল জাত, যা প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৪.৫ লিটার উৎপাদন করে। লম্বা কান বিশিষ্ট খুব সুন্দর চেহারা রয়েছে। এটি ভারতে এবং অন্যান্য দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি দেশে খুব জনপ্রিয় দুগ্ধ ছাগলের জাত হিসেবে সুনাম অর্জন করেছে।


। টোগেনবুর্গ ছাগল 


দুধ উৎপাদনে শীর্ষ ১০ ছাগল জাত, টোগেনবুর্গ ছাগল

টোগেনবুর্গ ছাগলটি প্রাচীন কাল থেকেই দুগ্ধ ছাগলের একটি অন্যতম জাত।  যা ১৬০০ এর দশকে প্রথম দেখা হয়েছিল। এই জাতের ছাগলের সোজা চেহারা এবং পূর্ণ দাড়ি সহ স্বতন্ত্র চেহারা রয়েছে। এই প্রজাতির ছাগলের দুধে বাটারফেটের গড় পরিমাণ প্রায় ৩.৩ শতাংশ।


৬। নুবিয়ান ছাগল 


দুধ উৎপাদনে শীর্ষ ১০ ছাগল জাত, নুবিয়ান ছাগল

নুবিয়ান ছাগলটি একটি দুর্দান্ত দুগ্ধ ছাগল জাত যা সারা বছর দুধ উৎপাদন করতে পারে। দৈনিক গড়ে দৈনিক দুধের উৎপাদন হয় ২ থেকে ৬ লিটারের এর মধ্যে।


নুবিয়ান ছাগলের দুধে বাটারফেটের গড় পরিমাণ প্রায় প্রায় ৫ শতাংশ বা তারও বেশি। দুধ উৎপাদনের পাশাপাশি এই ছাগলগুলি মাংস উৎপাদনের জন্যও খুব ভাল।


৭। ওবেরহসালি ছাগল 


দুধ উৎপাদনে শীর্ষ ১০ ছাগল জাত, ওবেরহসালি ছাগল

ওবেরহসালি ছাগলগুলি সুইজারল্যান্ড থেকে উদ্ভব হয়েছিল এবং দুর্দান্ত সুস্বাদু দুধ উৎপাদন করে (দুধ খুব মিষ্টি হয়)। গড় দৈনিক দুধ উৎপাদন ২ এবং ৬ লিটারের মধ্যে। এই প্রজাতির ছাগলের দুধে বাটারফেটের গড় পরিমাণ প্রায় ৩.৬ শতাংশ। নুবিয়ান ছাগলের মতো ওবেরহসালি ছাগলও সারা বছর দুধ উৎপাদন করে।


৮। গোল্ডেন গার্ন্সি ছাগল


দুধ উৎপাদনে শীর্ষ ১০ ছাগল জাত, গোল্ডেন গার্ন্সি ছাগল


গার্নসি, ওরফে গোল্ডেন গার্ন্সি একটি ছোট থেকে মাঝারি আকারের দুগ্ধ ছাগলের জাত। গড়ে গার্ন্সি ছাগলের দৈনিক দুধের উৎপাদন প্রায় ৪ লিটারের কম বা তার চেয়ে কম।


এই প্রজাতির ছাগলের দুধে বাটারফেটের গড় পরিমাণ প্রায় ৩.৭২ শতাংশ। বাণিজ্যিক জাতের দুধ উৎপাদনের উদ্দেশ্যেও জাতটি ভাল হিসাবে বিবেচিত হয়। 


৯। সাবল ছাগল


দুধ উৎপাদনে শীর্ষ ১০ ছাগল জাত, সাবল ছাগল

সাবল ছাগল স্যানেন ছাগলের চেহারাতে প্রায় একই রকম। এগুলি মাঝারি আকারের ছাগল জাত এবং শরীরের গড় ওজন প্রায় ১৪৫ পাউন্ড পর্যন্ত হতে পারে। তাদের দুধ ৩ থেকে ৪ শতাংশের মধ্যে বাটারফেটের পরিমাণ সহ ভাল মানের হয়।


১০। নাইজেরিয়ান বামন ছাগল


দুধ উৎপাদনে শীর্ষ ১০ ছাগল জাত, নাইজেরিয়ান বামন ছাগল

নাইজেরিয়ান বামন ছাগল দুগ্ধ ছাগলের জাতের মধ্যে সবচেয়ে ছোট এবং এগুলির উৎস আফ্রিকাতে হয়েছিল। এগুলি সাধারণত ২৩ ইঞ্চির বেশি বৃদ্ধি পায় না তবে তাদের দেহের আকারের তুলনায় তাদের দুধের উৎপাদন খুব বেশি।   


পারিবারিক ব্যবহারের জন্য দুগ্ধ উৎপাদনের জন্য নাইজেরিয়ান বামন ছাগল পালন করা যায় এবং জাতটি বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনের জন্য উপযুক্ত। এই প্রজাতির ছাগলের দুধে বাটারফেটের গড় পরিমাণ প্রায় ৬.১ শতাংশ। 



 ক)ছাগল পালনের গুরুত্বঃ

১. দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের ছাগলের গুরুত্ব অপরিসীম।

২. স্বল্প পূঁজি বিনিয়োগ করে স্বাবলম্বী হতে পারে।

৩. ছাগল পালন ভূমিহীন কৃষক, দুস্থ মহিলাদের আত্মকর্মসংস্থানের একটি উল্লেখযোগ্য উপায়।

৪. ছাগলের মাংস উন্নতমানের প্রাণীজ আমিষের উৎস। ছাগলের দুধ সহজে হজম হয়।

৫. গ্রাম বাংলার মহিলারা বাড়তি আয়ের উৎস হিসাবে ছাগল পালন করে আসছে।

খ)ছাগলের খামার ব্যবস্থাপনা ও কার্যক্রম সূচিঃ

দৈনিক কার্যক্রম সূচিঃ

ক) সকাল ৭-৯ টা

• ছাগলের সার্বিক অবস্থা ও আচরণ পরীক্ষা করতে হবে।

• পানির পাত্র/ খাবার পাত্র পরিষ্কার করা এবং পাত্রে খাবার ও পানি সরবরাহ করতে হবে।

• খাবার দেবার পর কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে আচরণ পরীক্ষা করতে হবে।

• ছাগল সকালে বের করার পর ছগলের ঘর নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে।

খ) সকাল ১১-১২ টা

• খাবার ও পানি সরবরাহ করতে হবে।

গ) বিকাল ৪-৫ টা

• খাদ্য ও পানি সরবরাহ করতে হবে।

• দরজা বন্ধ করতে হবে।

• আচরণ পরীক্ষা করতে হবে।

সাপ্তাহিক কাজঃ

• খাদ্য তৈরি করতে হবে।

• ঘর জীবাণুনাশক পানি দ্বারা পরিষ্কার করতে হবে।

• প্রয়োজনে টিকা প্রদান বা কৃমিনাশক ওষুধ খাওয়াতে হবে।

ছাগল ক্রয়ের ক্ষেত্রে বিবেচ্য গুণাবলীঃ

ছাগীর ক্ষেত্রেঃ

• নির্বাচিত ছাগী হবে অধিক উৎপাদনশীল বংশের ও আকারে বড়।

• নয় বা বার মাস বয়সের ছাগী (গর্ভবতী হলেও কোনো সমস্যা নেই) কিনতে হবে।

• ছাগীর পেট তুলনামূলকভাবে বড়, পাজরের হাড়, চওড়া, প্রসারিত ও দুই হাড়ের মাঝখানে কমপক্ষে এক আঙ্গুল ফাঁকা জায়গা থাকতে হবে।

• নির্বাচিত ছাগীর ওলান সুগঠিত ও বাঁট সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে।

পাঠাঁর ক্ষেত্রেঃ

• পাঠাঁর বয়স ১২ মাসের মধ্যে হতে হবে, অন্ডকোষের আকার বড় এবং সুগঠিত হতে হবে।

• পিছনের পা সুঠাম ও শক্তিশালী হতে হবে।

• পাঠাঁর মা, দাদী বা নানীর বিস্তারিত তথ্যাদি (অর্থাৎ তারা বছরে ২ বার বাচ্চা দিত কীনা, প্রতিবারে একটির বেশি বাচ্চা হতো কীনা, দুধ উৎপাদনের পরিমাণ ইত্যাদি গুণাবলী) সন্তোষজনক বিবেচিত হলেই ক্রয়ের ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে।

বয়স নির্ণয়ঃ ছাগলের দাঁত দেখে বয়স নির্ধারণ করতে হয়। বয়স ১২ মাসের নিচে হলে দুধের সবগুলোর দাঁত থাকবে, ১২-১৫ মাসের নিচে বয়স হলে স্থায়ী দাঁত এবং ৩৭ মাসের ঊর্ধ্বে বয়স হলে ৪ জোড়া স্থায়ী দাঁত থাকবে।

খামারের জায়গা নির্বাচন / অবস্থান ও বাসস্থানঃ

• জায়গা উঁচু হতে হবে, যেন বৃষ্টির পানি না জমে।

• প্রধান সড়ক হতে দূরে তবে যোগাযোগ ব্যবসস্থা ভাল হতে হবে।

• খোলামেলা পরিবেশ হতে হবে।

• কাকাড় ও বালি মিশ্রিত স্থান যেখানে পানি সহজে শুকিয়ে যায়।

• পানি নিষ্কাশনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকতে হবে।

• ঘনবসতি এলাকা এবং শহর হতে দূরে হতে হবে।

• পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহও ব্যবস্থা ভাল হতে হবে।

• শ্রমিক মজুরী কম ও জায়গার সহজলভ্য এলাকা নির্বাচন করা উত্তম।

• পর্যাপ্ত ফলের গাছ ও চারণ ভূমি আশেপাশে থাকতে হতে।

ছাগলের বাসস্থানঃ

ছাগলের রাত্রিযাপন, নিরাপত্তা, ঝড়বৃষ্টি, রোদ, বন্যপ্রাণী ইত্যাদির কবল থেকে বাঁচার জন্য বাসস্থান প্রয়োজন রয়েছে। পারিবারিক পর্যায়ে ছাগল পালনের ক্ষেত্রে আলাদা বাসস্থান ব্যবস্থা তেমন দেখা যায় না। তবে এক সঙ্গে অনেক ছাগল পালনের ক্ষেত্রে বিজ্ঞানসন্মত বাসস্থান করা প্রয়োজন হয়।

পূর্ব- পশ্চিম লম্বা-লম্বি করে দক্ষিন দিকে খোলা উন্মুক্ত স্থানে ছাগলের ঘর নির্মাণ করতে হবে। অপেক্ষাকৃত উঁচু স্থানে ঘর নির্মাণ করা উচিৎ, যাতে পানি নিষ্কাশনে কোন জটিলতা দেখা না দেয়। বসবাসের ঘর সংলগ্ন বা অন্য কোন উচুস্থানে ও খড়/ ছন/ চাটাই/ টিন প্রভৃতি দিয়ে প্রতি ছাগলের জন্য ৫-৬ বর্গফুট করে স্থান দিয়ে ছাগলের বাসস্থান তৈরি করা যায়। ছাগল উঁচু জায়গায় থাকতে পছন্দ করে। ঘরের ভিতর মাচা করে দিতে হবে। মাচার উচ্চতা মেঝে থেকে ২.৫-৩ ফুট। মাচা থেকে ছাদের উচ্চতা ৫-৬ ফুট। মাটির মেঝে হতে পর্যাপ্ত বালি দিতে হবে যাতে ঘর শুষ্ক থাকে। মাচা থেকে উপরের অংশ জি.আই/ বাঁশের নেট প্রস্তুত করে আবৃত করতে হবে। বৃষ্টির ছাট যেন ঘরে ঢুকতে না পারে সে জন্য ঘরের চাল ১-২ ফুট বাড়িয়ে ঝুলিয়ে দিতে হবে। শীতকালে মাচার উপর ৪-৫ ইঞ্চি পুরু করে খড় বিছিয়ে দিতে হবে এবং মাচার উপরের খোলা অংশ চট দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।

ঘরের পরিচর্যা ও জীবাণুমুক্ত করণ পদ্ধতিঃ

• ছাগল সকালে বের করার পর ছাগলের ঘর নিয়মিত পরিষ্কার করেত হবে।

• ছাগলের ঘর স্যাঁতস্যাঁতে মুক্ত রাখতে হবে । আলো, বাতাস ও বায়ু চলাচল সুব্যবস্থা রাখতে হবে।

• বৃষ্টির পানি ও ঠাণ্ডা দুটোই ছাগলের জন্য ক্ষতিকর, তাই এ দিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।

• সপ্তাহে একদিন ছাগলের ঘর জীবাণুনাশক মিশ্রিত পানি দিয়ে ভালমতো পরিষ্কার করতে হবে।

ছাগল ঘরের প্রকৃতি এবং লালন পালন পদ্ধতিঃ

ছাগল ঘরের প্রকৃতিঃ ছাগল পালনের জন্য বিভিন্ন ধরণের ঘর রয়েছে। তবে সাধারণত দুই ধরণের ঘর দেখা যায়-

ভূমির উপর স্থাপিত ঘরঃ এ ধরণের ঘরের মেঝে কাঁচা অথবা পাকা হতে পারে। সাধারণত কৃষকেরা এ ধরণের ঘরে ছাগল পালন করে থাকে। এ ধরণের ঘরের মেঝেতে শুকনো খড় বিছিয়ে ঘর সব সময় পরিষ্কার ও শুষ্ক রাখতে হবে।

মাচার উপর স্থাপিত ঘরঃ এ ধরণের ঘর মাটি থেকে ৩-৪ ফুট উচ্চতায় খুঁটির উপর স্থাপিত হয়। ঘরের মেঝে বাঁশ বা কাঠ দিয়ে মাচার মত তৈরি করা হয়। এ ধরণের ঘর স্বাস্থ্যসন্মত এবং পরিষ্কার করা সহজ।

দু’ধরণের ঘরই একচালা, দো- চালা বা চৌচালা হতে পারে এবং ছাগলের সংখ্যার উপর ছোট ও বড় হতে পারে।

লালন-পালন পদ্ধতিঃ

• প্রতিদিন সকালে ঘর থেকে ছাগল বের করে ঘরের আশেপাশে চরতে দিতে হবে।

• এদেরকে ব্যায়াম ও গায়ে সূর্য কিরণ লাগানোর পর্যাপ্ত সুযোগ দিতে হবে।

• ঘর থেকে ছাগল বের করার পর ভাল করে ধুতে হবে।

• ঘর থেকে ছাগল বের করার আগে কোন ছাগল অসুস্থ আছে কিনা লক্ষ্য রাখতে হবে। কোন ছাগলের মধ্যে অসুস্ততার লক্ষন দেখা দিলে তা সাথে সাথে আলাদা করে চিকিৎসার ব্যবস্থা নিতে হবে।

• খামারে বেশি ছাগল হলে তাঁদের চিহ্নিত করার জন্য ট্যাগ নম্বর লাগাতে হবে।

• ছাগলকে নিয়মিত সুষম খাদ্য সরবরাহ করতে হবে।

• ছাগল পানি পছন্দ করে না তাই নিয়মিত গোসলের পরিবর্তে ব্রাশ দিয়ে দেহ পরিষ্কার রাখতে হবে। এতে লোমের ময়লা বের হয়ে আসে, রক্ত সঞ্চলন বৃদ্ধি পায়। নিয়মিত ব্রাশ করালে লোম উজ্জ্বল দেখায় এবং চামড়ার মান বৃদ্ধি পায়।

• সকল বয়সের ছাগলকে নিয়মিত কৃমিনাশক ওষুধ খাওয়াতে হবে এবং নিয়মিত টিকা প্রদান করতে হবে।

ঘরে ছাগলের জায়গার পরিমাণঃ

ছাগলের প্রকৃতি —————– প্রয়োজনীয় জায়গার পরিমাণ

বাচ্চা ছাগল ——————— ০.৩ বর্গমিটার।

পূর্ণ বয়স্ক ছাগল —————– ১.৫ বর্গমিটার।

গর্ভবর্তী ছাগল ——————- ১.৯ বর্গমিটার।

পাঁঠা —————————- ২.৮ বর্গমিটার।

ছাগলের বাচ্চার যত্ন ও বাচ্চা পালন পদ্ধতিঃ

ছাগলের বাচ্চার যত্ন ও পালনঃ নবজাত বাচ্চা ছাগলের সঠিক যত্নর উপরই এদের বেড়ে ওঠা ও ভবিষ্যৎ নির্ভর করে। নবজাতক বাচ্চার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকে না বলে এরা অত্যন্ত রোগ সংবেদনশীল হয় এমতাবস্থায় সমান যত্নের অভাবে বাচ্চার মৃত্যু হয়।

নবজাত বাচ্চা ছাগলের যত্নঃ

• বাচ্চার শ্বাস প্রশ্বাস চালু করা এবং বাচ্চার শরীর পরিষ্কার করা ও শুকানো।

• বাচ্চার নাভি রজ্জু পরিষ্কার জীবাণুমুক্ত কাঁচি দিয়ে কেটে দিতে হবে।

• নাভি কাটার পর উক্ত স্থানে টিংচার আয়োডিন বা টিংচার বেনজীন জীবাণুনাশক ওষুধ লাগাতে হবে।

• বাচ্চাকে শাল দুধ বা কলস্ট্রাম পান করাতে হবে।

বাচ্চা পালন পদ্ধতিঃ

দুটো পদ্ধতিতে ছাগলের বাচ্চা পালন করা হয়। যথা- (১) প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে মায়ের সঙ্গে ও (২) কৃতিম পদ্ধতিতে মা বিহীন অবস্থায় পালন। প্রতিটি পদ্ধতির সুবিধা ও অসুবিধা রয়েছে তবে এদের প্রাকৃতিক পদ্ধতিটি প্রচলিত। সাধারণত দু’ সপ্তাহ বয়স থেকেই বাচ্চারা কাঁচা ঘাস বা লতাপাতা খেতে শুরু করে। তাই এদের নাগালের মধ্যে কচি ঘাস, লতা পাতা এবং দানাদার খাদ্য রাখতে হয়। সময় বাচ্চাদের জন্য প্রচুর উন্মুক্ত আলো বাতাসের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। গ্রীষ্মকালে দিনের বেলা গাছের নিচে বেড়া দিয়ে বাচ্চা পালন করা যায়। এতে এরা একদিকে পর্যাপ্ত ছায়া পেতে পারে। অন্যদিকে দৌড়াদৌড়ি এবং ব্যায়াম করার প্রচুর সুযোগ পায়, যা তাঁদের স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য প্রয়োজন ।

প্রতিটি বাচ্চা ছাগলকে জন্মের প্রথম সপ্তাহে দৈনিক ৩০০-৩২৫ মি. লি. দুধ ৩-৪ বারে পান করাতে হবে ধীরে ধীরে দুধের পরিমাণ বৃদ্ধি করে ৬-৭ সপ্তাহে তা ৭৫০-৮৫০ মি. লি. দুধ কিভাবে পাবে? এ উন্নীত করতে হবে। দুধের বিকল্প খাদ্য ৩ সপ্তাহ বয়সের পর খেতে দেয়া যেতে পারে। ১০-১১ সপ্তাহে দৈনিক দুধ সবরাহের পরিমাণ ২০০-১০০ মি.লি. নামিয়ে আনতে হবে। এ সময় দৈনিক ১০০-১৫০ গ্রাম দানাদার খাদ্য ও প্রচুর কচি ঘাস, লতাপাতা সরবরাহ করতে হবে। ৩-৪ মাস বয়সে দুধ পান করানো পুরোপুরি বন্ধ করে দিতে হবে। কারণ এ সময় শক্ত খাদ্যদ্রব্য খাওয়ার জন্য বাচ্চার পাকস্থলী পুরোপুরিভাবে তৈরি হয়ে যায়।

শরৎ ও হেমন্তকালে ছাগলের মৃত্যুরহার অত্তাধিক বেশি থাকে এ সময় কৃমির আক্রমণ দেখা দিতে পারে। তাছাড়া নিউমোনিয়া এবং এন্টারোটক্সিমিয়া ব্যাপক হারে দেখা দিতে পারে। তাই এ সময় সতর্কতা অবলম্বন করা উচিৎ।

ছাগলের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনাঃ

• খামারের চারিদিকে বেড়া বা বেষ্টনী দিতে হবে।

• খামারের প্রবেশ গেটে জীবাণুমুক্ত হওয়ার ব্যবস্থা বা ফুটবাথ থাকতে হবে।

• বাইরের লোককে যখন তখন খামারে প্রবেশ করতে দেওয়া যাবে না।

• ইঁদুর, বন্যপ্রাণী – পাখি ও পোকা -মাকড় নিয়ন্ত্রন করতে হবে।

• ছাগলকে প্রতিদিন পরিমাণমত সুষম খাবার সরবরাহ করতে হবে। ময়লাযুক্ত পচা বা বাসি খাবার খাওয়ানো ও যাবে না।

• খাদ্য গুদাম আলো বাতাস ও বায়ু চলাচলযুক্ত হতে হবে এবং শুষ্ক ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।

• গরমকালে মিশ্রিত সুষম খাদ্য ৭ দিনের বেশি সংরক্ষণ করা যাবে না।

• খামারে নতুন ছাগল সংগ্রহের সময় অবশ্যই রোগমুক্ত ছাগল ক্রয় করতে হবে।

• খামারে নিয়মিত টিকা প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে।

• ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে কৃমিনাশক ওষুধ খাওয়াতে হবে।

• ছাগলের ঘর নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। প্রতিদিন খাদ্য ও পানির পাত্র পরিষ্কার করতে হবে।

• সপ্তাহে একদিন ছাগলের ঘর, খাবার ও পানির পাত্র জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে।

• সকল ছাগলকে বছরে ৫-৬ বার ০.৫% ম্যালাথিনয়ন দ্রবণে ডুবিয়ে চর্মরোগ মুক্ত রাখতে হবে।

• প্রজননশীল পাঁঠা ও ছাগিকে বছরে দু,বার ১-১.৫ মি. লি. ভিটামিন এ. ডি. ই. ইনজেকশন দিতে হবে।

• ছাগল মারা গেলে খামার থেকে দূরে কোথাও মাটির নিচে পুঁতে ফেলতে হবে অথবা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলতে হবে।

ছাগলের খাদ্য ও পুষ্টি ব্যবস্থাপনাঃ

বাচ্চা ছাগলের খাদ্যঃ ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল সাধারণত একাধিক বাচ্চা প্রসব করে থাকে। তাই সব গুলো বাচ্চা যেন সমানভাবে প্রয়োজন মত দুধ খেতে পায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ঠিকমত খেয়াল না করলে সবল বাচ্চাগুলো দুধ ইচ্ছামত খেয়ে ফেলে এজন্য দেখা যায় দুর্বল বাচ্চাগুলো দুধ খেতে না পেয়ে অপুষ্টিতে ভুগে অকালে মারা যায়। এজন্য বাচ্চাদেরকে মায়ের দুধ খাওয়ানোর ব্যাপারে খুব সজাগ থাকতে হবে।

দুধ ছাড়ানোর আগে ও পরে বাচ্চার খাদ্যঃ

দানাদার খাদ্য মিশ্রণের নমুনাঃ চালভাঙ্গা- ২৫%+ খেসারিভাংগা-২৫%+ গমের ভুষি -২৫%+ সয়াবিন খৈল- ১৬%+ প্রোটিন কনসেন্টেট – ২%+ সয়াবিন তেল-১%+ চিটাগুড়-৪%+ এবং লবন-১%+ ভিটামিন- মিনারেল প্রিমিক্স-০.৫%+ ডি. সি. পি- ০.৫%।

বাড়ন্ত বয়সের ছাগলের খাদ্যঃ মায়ের দুধ ছাড়ার পর বাচ্চার খাদ্যর অবস্থা খুব জটিল পর্যায়ে থাকে। যেহেতু এ সময় মায়ের দুধ পায় না আবার সময়টি ও বাড়ন্ত; তাই খাদ্য ও অন্যান্য ব্যবস্থাপনার দিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হয়। ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের বেলায় ৪-১৪ মাস বয়সকে বাড়ন্ত সময় বলা হয়। যে সব ছাগলকে মাংস বা বাচ্চা উৎপাদনের জন্য ব্যবহার করা হবে তাঁদের পুষ্টি বা খাদ্যর দিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে। জন্মের ২য় সপ্তাহ থেকে ছাগলকে ধীরে ধীরে অল্প অল্প করে দানাদার খাদ্য অভ্যাস করতে হবে।

গর্ভবর্তী ছাগীর পর্যাপ্ত খাদ্য দিতে হয়। তা না দিলে বাচ্চা দুর্বল হয় এমনকি মৃত্যু বাচ্চা প্রসব করার আশংকা থাকে। ছাগলের স্বাস্থ্য খারাপ হয়ে যায়। মায়ের দুধ উৎপাদনের পরিমাণ কমে যায় এবং পূর্ণরায় গর্ভধারণ করতে দেরি হয়। তাই ছাগল গর্ভবর্তী অবস্থায় খাদ্যর দিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে।

দানাদার খাদ্য মিশ্রণের নমুনাঃ
ভুট্টা ভাঙ্গা- ৩৫% + গমের ভুষি- ২৫%+ খেসারীর ভুসি-১৬%+ সয়াবিন খৈল- ২০%+ ফিস মিল- ১.৫%+ ডি.সি.পি-১.৪%+ লবন-১%+ ভিটামিন মিনারেল-০.১%।

দুগ্ধবতী ছাগীর খাদ্য ব্যবস্থাপনাঃ
বাচ্চা মায়ের দুধের উপর নির্ভরশীল থাকে। তাই বাচ্চার দুধের চাহিদার দিকে খেয়াল রেখে দুগ্ধবতী ছাগলের খাদ্য ব্যবস্থার দিকে বিশেষ যত্নবান হতে হয়। আমাদের দেশের অধিকাংশ ছাগলের ছানাই ছোট বেলায় মায়ের দুধের অভাবে মারা যায়। ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের ছাগল দুধ কম দিলেও যদি খাদ্য ব্যবস্থা ঠিক থাকে তবে বাচ্চার দুধের চাহিদা মেটাতে সক্ষম হয়। ভাল ব্যবস্থাপনায় ছাগী ২-৩ টি বাচ্চাকে দুধ খাওয়ানোর পর ০.৫-১.০ লিটার পর্যন্ত দুধ দিয়ে থাকে।

খাদ্য মিশ্রণের নমুনাঃ ভুট্টা ভাঙ্গা- ৩৫% + গমের ভুষি- ২৫%+ খেসারীর ভুসি-১৬%+ সয়াবিন খৈল- ২০%+ ফিস মিল- ১.৫%+ ডি.সি.পি-১.৪%+ লবন-১%+ ভিটামিন মিনারেল-০.১%।

খাসীর খাদ্য ব্যবস্থাঃ ছাগল পালনকারীদের কাছে খাসীর গুরুত্ব অপরিসীম। খাসী প্রথম দিকে থেকেই যদি প্রয়োজনীয় পুষ্টি না পেলে বৃদ্ধি ও শরীর গঠন ব্যাহত হয়। ফলে ক্রেতা সাধারণের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে ও ব্যর্থ হয়। এজন্য ছাগল পালনের মূল উদ্দেশ্যটিই ব্যর্থ হয়ে যায়। দুধ ছাড়ানোর পর খাসী ছাগলকে পরিমাণমত খাদ্য খাওয়ালে গড়ে দৈনিক ৫০-৬০ গ্রাম করে ওজন বাড়ে এবং এক বছরের মধ্যে খাসী ১৮-২০ কেজি ওজনের হতে পারে।

প্রজনন পাঁঠার খাদ্য ব্যাবস্থাঃ পাঁঠাকে প্রজনন কাজে ব্যবহার করা না হলে শুধুমাত্র পর্যাপ্ত ঘাস খাওয়ালেই চলে; কিন্তু যদি পর্যাপ্ত কাঁচা ঘাস না পায় তবে ভাল মানের খড় দিতে হয় এবং ২৫০-৫০০ গ্রাম দানাদার খাদ্য সরবরাহ করতে হয়। এ সময় অতিরিক্ত দানাখাদ্য দেয়ার কোন প্রয়োজনই নাই। প্রজনন কাজে ব্যবহারের সময় অবশ্যই পর্যাপ্ত দানাদার খাদ্য দিতে হয়। পাঁঠাকে প্রজননক্ষম রাখার জন্য প্রতিদিন ১০ গ্রাম পরিমাণ অংকুরিত ছোলা দেয়া উচিৎ। পাঁঠাকে কখনই চর্বিযুক্ত খাবার দেয়া যাবে না।

খাদ্য খাওয়ানোর পদ্ধতিঃ

সকাল ৬-৭ টাঃ

• দৈনিক প্রয়োজনের ১/২ অংশ দানাদার এবং ১/৩ অংশ আঁশ জাতীয় খাদ্য দিতে হবে। প্রথমে দানাদার খাদ্য আলাদা আলাদা পাত্রে এবং পরে আঁশ জাতীয় খাদ্য একত্রে দিতে হবে।

সকাল ৬-৯ টাঃ

• পাতা সমেত গাছের ডাল ঝুলিয়ে দিতে হবে।

দুপুর – ১২ টাঃ

• ভাতের মাড় ১/৩ অংশ আঁশ জাতীয় খাদ্য সরবরাহ করতে হবে।

বিকাল- ৪-৫ টাঃ

• অবশিষ্ট দানাদার খাদ্য পূর্বের ন্যায় সরবরাহ করতে হবে।

সন্ধ্যাঃ

• সন্ধার পূর্বে ছাগল ঘরে তুলে দিনের অবশিষ্ট ১/৩ অংশ আঁশ জাতীয় খাদ্য সরবরাহ করতে হবে।

ছাগলের কয়েকটি রোগ ও প্রতিকার পদ্ধতিঃ

(১) ছাগলের ওলান প্রদাহ বা ম্যাসটাইটিস রোগের লক্ষণ ও প্রতিরোধঃ

ছাগলের ওলান প্রদাহ বা ম্যাসটাইটিস রোগের লক্ষণ সমুহঃ

• গায়ে জ্বর থাকে, ওলান ভীষণ গরম ও শক্ত হয়, বাটসহ ফুলে ওঠে।

• বাট দিয়ে কখনও পাতলা আবার জমাট বাঁধা রক্ত মিশ্রিত দুধ আসে।

• এক পর্যায়ে বাঁটগুলো অত্যন্ত শক্ত হয়ে যায় এবং দুধ বের হয় না।

• অত্যধিক মারাক্তক অবস্থায় আক্রান্ত বাটে পচন ধরে ও এক পর্যায়ে বাট পচে খসে পড়ে।

ছাগলের ওলান প্রদাহ বা ম্যাসটাইটিস রোগের প্রতিরোধঃ পরিষ্কার পরিচ্চন্ন স্থানে রাখতে হবে। বাটে সময় যাতে ক্ষত সৃষ্টি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আক্রান্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক চিকিৎসা ব্যবস্থা নিতে হবে।

(২) ছাগলের ক্ষুরা রোগের লক্ষণ ও প্রতিকারঃ

ছাগলের ক্ষুরা রোগের লক্ষণঃ

• ছাগল আক্রান্ত হলে কাপুনি দিয়ে জ্বর আসে।

• মুখ থেকে লালা পড়তে থাকে।

• মুখ ও পায়ে ফোস্কা দেখা দেয় এবং পরে ফেটে গিয়ে ১৮-২৪ ঘণ্টার মধ্যে ঘায়ে পরিণত হয়।

ছাগলের ক্ষুরা রোগের প্রতিকারঃ সময়মত টিকা দিতে হবে রোগাক্রান্ত ছাগলকে পৃথক করে রাখতে হবে। মৃত্যু ছাগলকে দূরে পুঁতে রাখতে হবে। রোগাক্রান্ত ব্যবহৃত সামগ্রী গর্তে পুঁতে রাখতে হবে বা পুড়িয়ে ফেলতে হবে।

(৩) ছাগলের পি পি আর রোগের লক্ষণ ও প্রতিরোধঃ

বর্তমানে বাংলাদেশে ছাগল পালনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাঁধা হল পি পি আর।

ছাগলের পি পি আর রোগের লক্ষণঃ

• রোগের শুরুতে ১০৫-১০৭ ডিগ্রি ফাঃ জ্বর হয়, এর সাথে পাতলা পায়খানা শুরু হয়।

• ছাগলের নাক দিয়ে স্লেম্মা নির্গত হয় এবং নাকে ও মুখে ঘা হয়।

• নাসারন্ধের চারধারে স্লেম্মা জমে যায়।

• গর্ভবর্তী ছাগলের গর্ভপাত ঘটে।

• ছাগলের দাঁড়ানোর ভঙ্গি অনেকটা কুঁজো হয়ে যায়।

ছাগলের পি পি আর রোগের প্রতিরোধঃ

রোগ হওয়ার পূর্বে সুস্থও ছাগলকে এ রোগের টিকা দিয়ে রোগ প্রতিরোধ করাই সবচেয়ে উত্তম ব্যবস্থা। ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত পদক্ষেপ সমূহ পুরোপুরি মেনে চলতে হবে। বাচ্চার বয়স ৪ মাস হলেই এ রোগের টিকা দিতে হবে (১ সিসি চামড়ার নিচে)।

স্টল ফিডিং পদ্ধতির করণীয়ঃ

ছাগল নির্বাচনঃ
এ পদ্ধতিতে ছাগল খামার করার উদ্দেশ্যে ৬-১৫ মাস বয়সী স্বাভাবিক ও রোগমুক্ত ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের পাঁঠা/ছাগী সংগ্রহ করতে হবে। পাঁঠার বয়স ৫-৭ মাস হতে পারে।

ছাগলের ঘরঃ
স্টল ফিডিং পদ্ধতিতে প্রতিটি বয়স্ক ছাগলের জন্য প্রায় ১০ বর্গফুট ঘরের জায়গা প্রয়োজন। ঘরটি বাঁশ, কাঠ বা ইটের তৈরী হতে পারে। শীতের রাতে ঘরের বেড়া চট দিয়ে ঢেকে দিতে হবে এবং মেঝেতে খড় বিছিয়ে দিতে হবে।

ছাগলকে ঘরে থাকতে অভ্যস্ত করানোঃ ছাগল সংগ্রহের সাথে সাথেই সম্পূর্ণ আবদ্ধ অবস্থায় রাখা উচিত নয়। প্রথমে ছাগলকে দিনে ৬-৮ ঘন্টা চরিয়ে বাকী সময় আবদ্ধ অবস্থায় রেখে পর্যাপ্ত খাদ্য (ঘাস ও দানাদার খাদ্য) সরবরাহ করতে হবে। এভাবে ১-২ সপ্তাহের মধ্যে চরানোর সময় পর্যায়ক্রমে কমিয়ে সম্পূর্ণ আবদ্ধ অবস্থায় রাখতে হবে। তবে বাচ্চা বয়স থেকে আবদ্ধ অবস্থায় রাখলে এ ধরনের অভ্যস্ততার প্রয়োজন নেই।

বাচ্চার পরিচর্যাঃ
জন্মের পরপরই বাচ্চাকে পরিষ্কার করে শাল দুধ খাওয়াতে হবে। এক মাস পর্যন্ত বাচ্চাকে দিনে ১০-১২ বার দুধ খাওয়াতে হবে। বাচ্চার চাহিদার তুলনায় কম দুধ থাকলে প্রয়োজনে অন্য ছাগী থেকে দুধ খাওয়াতে হবে। তাছাড়া দুধ না পাওয়া গেলে বাচ্চাকে মিল্ক রিপেৱসার খাওয়াতে হবে। দুধ খাওয়ানোর আগে ফিডার, নিপলসহ আনুসাংগিক জিনিসপত্র পানিতে ফুটিয়ে জীবাণুমুক্ত করে নিতে হবে।

১-১.৫ কেজি ওজনের একটি ছাগল ছানার দৈনিক ২৫০-৩৫০ গ্রাম দুধ প্রয়োজন। ওজন বৃদ্ধিও সাথে সাথে দুধের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে হবে। বাচ্চার বয়স ৬০-৯০ দিন হলে দুধ ছেড়ে দেবে। সাধারণত ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগীকে প্রয়োজনমত খাওয়ালে বাচ্চার প্রয়োজনীয় দুধ পাওয়া যায়। বাচ্চার ১ মাস বয়স থেকেই ধীরে ধীরে কাঁচা ঘাস এবং দানাদার খাদ্যে অভ্যস্ত করতে হবে।

স্টল ফিডিং পদ্ধতিতে ছাগলকে খাওয়ানোঃ

ছাগল সাধারণতঃ তার ওজনের ৪-৫% হারে খেয়ে থাকে। এর মধ্যে ৬০-৮০% আঁশ জাতীয় খাবার (ঘাস, লতা, পাতা, খড় ইত্যাদি) এবং ২০-৪০% দানাদার খাবার (কুড়া, ভূষি, চাল, ডাল ইত্যাদি) দিতে হবে। একটি বাড়ন্ত- খাসীকে দৈনিক ১-১.৫ কেজি কাঁচা ঘাস এবং ২০০-২৫০ গ্রাম দানাদার খাবার দিতে হবে। দুই থেকে তিন বাচ্চা বিশিষ্ট ২৫ কেজি ওজনের ছাগীর দৈনিক প্রায় ১.৫-২.৫ কেজি কাঁচা ঘাস এবং ৩৫০-৪৫০ গ্রাম দানাদার খাদ্য প্রয়োজন হয়। একটি প্রাপ্ত বয়স্ক পাঁঠার দৈনিক ১.৫-২.৫ কেজি কাঁচা ঘাস এবং ২০০-৩০০ গ্রাম দানাদার খাদ্য প্রয়োজন।

সারণী-১: ছাগলের দানাদার খাদ্যের সাধারণ মিশ্রন (%)

খাদ্য উপাদান শতকরা হার (%)
চাল/গম/ভুট্টা ভাঙ্গা ১২.০০
গমের ভূষি/আটা/কুঁড়া ৪৭.০০
খেসারী/মাসকালাই/অন্য ডালের ভূষি ১৬.০০
সয়াবিন/তিল/নারিকেল/সরিষা/খৈল ২০.০০
শুটকি মাছের গুড়া ১.৫০
ডাই-ক্যালসিয়াম ফসফেট ২.০০
লবণ ১.০০
ভিটামিন মিনারেল প্রিমিক্স ০.৫০
বিপাকীয় শক্তি (মেগাজুল/কেজি) ১০.০০
বিপাকীয় প্রোটিন (গ্রাম/কেজি) ৬২.০০

ছাগলের জন্য ঘাস চাষঃ
ঘাস সরবরাহের জন্য বিভিন্ন জাতের দেশী ঘাস খাওয়ানো যায়। ইপিল ইপিল, কাঁঠাল পাতা, খেসারী, মাসকালাই, দুর্বা, বাকসা ইত্যাদি দেশী ঘাসগুলো বেশ পুষ্টিকর। এছাড়া উচ্চ ফলনশীল নেপিয়ার, স্পেনডিডা, এন্ড্রোপোগন, পিকাটুলুম ইত্যাদি ঘাস আবাদ করা যেতে পারে।

ছাগলকে খড় খাওয়ানোঃ
ঘাস না পাওয়া গেলে খড়কে ১.৫-২.০ ইঞ্চি (আঙুলের দুই কর) পরিমানে কেটে নিন্মে বর্ণিত পদ্ধতিতে পক্রিয়াজাত করে খাওয়ানো যেতে পারে।

এজন্য ১ কেজি খড়ের সাথে ২০০ গ্রাম চিটাগুড়, ৩০ গ্রাম ইউরিয়া ৬০০ গ্রাম পানির সাথে মিশিয়ে ইউএমএস তৈরী করে খাওয়ানো যেতে পারে। এর সাথে এ্যালজি উৎপাদন করে দৈনিক ১-১.৫ লিটার পরিমানে খাওয়াতে হবে। একটি ছাগল দৈনিক ১.০-২.০ লিটার পানি খায়। এজন্য পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করতে হবে।

পাঁঠার ব্যবস্থাপনাঃ
যেসব পাঁঠা বাচ্চা প্রজনন কাজে ব্যবহার করা হবে না তাদেরকে জন্মের ২-৪ সপ্তাহের মধ্যে খাসী করানো উচিত। পাঁঠাকে যখন প্রজনন কাজে ব্যবহার করা হয় না তখন তাকে পর্যাপ্ত পরিমানে শুধু ঘাস খাওয়ালেই চলে। তবে প্রজনন কাজে ব্যবহারের সময় ওজন ভেদে ঘাসের সাথে ২০০-৫০০ গ্রাম পরিমান দানাদার খাবার দিতে হবে। পাঁঠাকে প্রজননক্ষম রাখার জন্য প্রতিদিন পাঁঠাকে ১০ গ্রাম পরিমাণ গাঁজানো ছোলা দেয়া উচিত। পাঁঠাকে কখনই চর্বিযুক্ত হতে দেয়া যাবে না।

ছাগলের স্বাস্থ্য ও অন্যান্য ব্যবস্থাপনাঃ
সব ছাগলকে বছরে দু’বার (বর্ষার শুরু এবং শীতের শুরুতে) কৃমিনাশক খাওয়াতে হবে। ছাগলের মারাত্মক রোগ, যেমনঃ পিপিআর, গোটপক্স হলে অতি দ্রুত নিকটস্থ পশুহাসপাতালে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। এছাড়া ছাগলে তড়কা, হেমোরেজিক সেপ্টিসেমিয়া, এন্টারোটক্সিমিয়া, বিভিন্ন কারণে পাতলা পায়খানা এবং নিউমোনিয়া হতে পারে। সঠিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা এবং চিকিৎসার মাধ্যমে এ সকল রোগ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশে সুস্থ ছাগলের জন্য একথাইমা রোগের ভ্যাকসিন জন্মের ৩য় দিন ১ম ডোজ এবং ২য় ডোজ জন্মের ১৫-২০ দিন পর দিতে হবে, পিপিআর রোগের ভ্যাকসিন ৪ মাস বয়সে এবং গোট পক্সের ভ্যাকসিন ৫ মাস বয়সে দিতে হবে।

জৈব নিরাপত্তাঃ
খামারে কোন নতুন ছাগল আনতে হলে অবশ্যই রোগমুক্ত ছাগল সংগ্রহ করতে হবে এবং ১৫ দিন খামার থেকে দূরে অন্যত্র রেখে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। কোন রোগ দেখা না দিলে ১৫ দিন পর পিপিআর ভ্যাকসিন দিয়ে ছাগল খামারে রাখা যাবে। অসুস্থ ছাগল পালের অন্য ছাগল থেকে দ্রুত অন্যত্র সরিয়ে চিকিৎসা করাতে হবে।

ছাগলের প্রজনন ব্যবস্থাপনাঃ
ছাগলের ঘর নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। সকল ছাগলকে বছরে ৫-৬ বার ০.৫% ম্যালাথায়ন দ্রবণে চুবিয়ে চর্মরোগ মুক্ত রাখতে হবে। পাঁঠী ১২-১৩ কেজি ওজন (৭-৮ মাস বয়স) হলে তাকে পাল দেয়া যেতে পারে।

পাঁঠী বা ছাগী গরম হওয়ার ১২-১৪ ঘন্টা পর পাল দিতে হয়। অর্থাৎ সকালে গরম হলে বিকেলে এবং বিকেলে হলে পরদিন সকালে পাল দিতে হবে। পাল দেয়ার ১৪২-১৫৮ দিনের মধ্যে সাধারণত বাচ্চা দেয়। পাল দেয়ার জন্য নির্বাচিত পাঁঠা সবসময় নিঃরোগ, ভাল বংশের ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের হতে হবে। ‘‘ইনব্রিডিং’’ এড়ানোর জন্য ছাগীর বাবা বা দাদা বা ছেলে বা নাতীকে দিয়ে প্রজনন করানো যাবে না।

ছাগলের বাজারজাতকরণঃ
সুষ্ঠু খাদ্য ও অন্যান্য ব্যবস্থাপনায় ১২-১৫ মাসের মধ্যে খাসি ২০-২২ কেজি ওজনের হয়। এসময় খাসী বিক্রি করা যেতে পারে। অথবা খাসির মাংস প্রক্রিয়াজাত করেও বিক্রি করা যেতে পারে।

ছাগলকে অল্প খরচে ছোলা খাওয়াবেন কিভাবে

ছোলা কিভাবে খাওয়ালে কম খরচে সর্বোচ্চ ফলাফল পাওয়া যাবে সেই বিষয়ে আলোচনা করবো।

ধাপসমূহ নিন্মরুপে আলোচনা করা হইল:

প্রথমত:
আপনার ফার্মের চারপাশে যেসব জায়গা ফেলানো আছে সেসব জায়গায় 1/1.5 ইঞ্চি পুরু করে বালি ছড়িয়ে দিন। ছায়াযুক্ত জায়গা হলেও সমস্যা নেই। বরং ছায়াযুক্ত জায়গা হলে সুবিধা হবে।

দ্বিতীয়ত:
জায়গা হিসেবে পরিমাণমত ছোলা ভিজিয়ে নিন। এমন পরিমাণ ছোলা ভিজাবেন যেন আপনি আপনার পুরো জায়গায় বেশ ঘণ করে ছোলাগুলো ছিটাতে পারেন।

তৃতীয়তঃ
এবার ছোলাগুলো ভিজিয়ে রাখেন 12 ঘণ্টা পর ছোলাগুলো পানি ঝরিয়ে পরিষ্কার শুকনো কাপড়ে পোটলা বেধে ঝুলিয়ে রাখুন। আরো 12/13 ঘণ্টা পর দেখবেন ছোলাগুলো অঙ্কুরিত হয়ে গেছে বা গজিয়ে গেছে।

চতুর্থত:
এবার ছোলাগুলো আপনার আগে থেকে ছড়িয়ে রাখা বালির উপর ছড়িয়ে দিন। নিয়মিত সকাল-বিকাল ঝরণা দিয়ে পানি ছিটিয়ে দিন। পারলে পানিতে মাঝেমাঝে অতি সামান্য ইউরিয়া গুলিয়ে নিতে পারেন। তবে জায়গাটি যেন সর্বদা আদ্রতা থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। 10/14-দিনের মধ্যে আপনি বেশ ভালো সাইজের একটি ছোলাগাছ পাবেন। যেটা অত্যন্ত পুষ্টিকর খাবার হবে।

পঞ্চমত:
এবার প্রতিদিন কিছু জায়গার গাছ তুলে সেগুলো আপনার ছাগলকে খাওয়ান, যেখান থেকে গাছ তুলবেন সেখানে আবার আগের নিয়মে ছোলা ছড়িয়ে দিন। তাহলে চক্রাকারে খাওয়াতে পারবেন। ফুরাবেনা…….!!!

সুবিধা:

✓আগে যেখানে একটি ছোলা খাওয়াতেন সেখানে সামান্য পরিশ্রম করেই আপনি আস্ত একটি গাছ খাওয়াতে পারছেন।
✓বালিতে লাগানোর ফলে আপনি শিকড় সহ সব কিছুই সহজে তুলে আনতে পারবেন।
✓মজার ব্যাপার হলো আপনি যে ছোলাটি ছড়িয়ে দিয়েছিলেন সেটি কিন্তু অক্ষত অবস্থায় আপনার কাছে ফিরে আসছে। সেই ছোলাটি দেখবেন গাছের গোড়ায় অক্ষত অবস্থায় থেকে গেছে। বালিতে লাগানোর ফলে আপনার তুলে আনার সময় ছোলাটি ঝরে যাওয়ারও কোনো ভয় নেই।
✓আপনি আগে যেখানে শুধুমাত্র একটি ছোলা খাওয়াতেন সেখানে এই পদ্ধতিতে শিকড়সহ পুরো একটি গাছ পাচ্ছেন এবং যেটি অতি উচ্চমানের পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ। সাথে আপনার সেই লাগানো ছোলাটিতো ফেরত পাচ্ছেনই ?

মনে করেন 20/25 টি ছোলা খেয়ে আপনার ছাগলের কিছুই হবেনা, কিন্তু যদি 20/25টি ছোলা গাছ, শিকড়সহ এবং সেই ছোলাটি সহ খায় তবে কেমন হবে। ভাবতে থাকুন।

শুধু ভাবলে হবেনা অতি সহজেই এই প্রক্রিয়াটি করে ফেলুন।

ছাগলের খামারিদের জন্য,
ছাগলের দানাদার খাদ্যের মিশ্রন নিন্মে দেওয়া হল:



ছাগলের রোগ দমনঃ 

ছাগল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশে থাকতে পছন্দ করে। তাদের আবাসনগুলিতে হালকা এবং বাতাসের ব্যবস্থা করতে হবে। ছাগল সবসময় শুকনো এবং উঁচু স্থান পছন্দ করে। ছাগল যাতে ঠাণ্ডা না হয় সেদিকে যত্ন নেওয়া উচিত। কারণ ঠাণ্ডায় এরা নিউমোনিয়াসহ অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্ত হয়। তাই শীতের সময় মেঝেতে ধানের খড় অথবা নাড়া বিছিয়ে দিতে হয়। শীতের সময় ছাগলকে ঠাণ্ডা থেকে রক্ষার জন্য এদেও ঘরের দেয়ালে প্রয়োজনে চটের বস্তা টেনে দিতে হবে। নিচে ছাগলের রোগের কারণসমূহ উল্লেখ করা হলো-

১। ভাইরাসজনিত রোগ : পি.পি.আর, নিউমোনিয়া ইত্যাদি

২। ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ : গলাফুলা, ডায়রিয়া ইত্যাদি

৩। পরজীবীজনিত রোগ : ছাগলের দেহের ভিতরে ও বাইরে দুধরনের পরজীবী দেখা যায়। দেহের বাইরে চামড়ার মধ্যে উঁকুন, আটালি ও মাইট হয়ে থাকে। দেহের ভিতরে গোলকৃমি, ফিতাকৃমি ও পাতাকৃমি দ্বারা ছাগল বেশি আক্রান্ত হয়। এরা ছাগল কর্তৃক খাওয়া পুষ্টিকর খাদ্যে ভাগ বসায়। অনেক কৃমি ছাগলের শরীর থেকে রক্ত চুষে নেয়। তাছাড়া ছাগলের প্রায়ই রক্ত আমাশয় হতে দেখা যায়।


Previous Post Next Post