টু-স্টেপ ভেরিফিকেশন কি?
পাসওয়ার্ড যত কঠিন হোক না কেনো, অজ্ঞাত কারণবশত একাউন্টের নিরাপত্তায় ব্যাঘাত ঘটতেই পারে। তাই অনলাইন একাউন্টের নিরাপত্তা নিশ্চিতে পাসওয়ার্ড যথেষ্ট নয়। শক্তিশালী পাসওয়ার্ড এর পাশাপাশি টু-স্টেপ অথেনটিকেশন বা টু-স্টেপ ভেরিফিকেশন অনলাইন একাউন্টসমূহে বাড়তি নিরাপত্তা স্তর যোগ করে।
টু-স্টেপ ভেরিফিকেশন বলতে মূলত লগিন এর জন্য বাড়তি একটি নিরাপত্তা স্তর, যেমনঃ মোবাইলে কলে বা মেসেজে আসা কোড প্রদান করা, অথেনটিকটর অ্যাপ প্রদত্ত কোড ব্যবহার বা ফিজিক্যাল কি, ইত্যাদি যোগ করাকে বুঝায়। অর্থাৎ একাউন্টের পাসওয়ার্ড প্রদানের পর যেকোনো একটি বাড়তি উপায়ে একাউন্টে লগিন এর বিষয়টি নিশ্চিত করাকে বলা হচ্ছে টু-স্টেপ ভেরিফিকেশন।
টু-স্টেপ ভেরিফিকেশন কিভাবে কাজ করে?
বিভিন্ন প্রকার অনলাইন একাউন্টে টু স্টেপ ভেরিফিকেশন চালু করা যায়। এগুলোর কাজও মোটামুটি একই রকম। চলুন ধাপে ধাপে জেনে নেওয়া যাক টু-স্টেপ ভেরিফিকেশন কিভাবে কাজ করেঃ
- আপনার অনলাইন সেবার লগিন পেজে প্রবেশ করুন।
- এরপর একাউন্টের ইউজারনেম/ইমেইল ও পাসওয়ার্ড প্রদান করুন।
- এরপর একাধিক পদ্ধতিতে টু-স্টেপ ভেরিফিকেশন করা যেতে পারে, যেমনঃ ফোনে কল বা মেসেজের মাধ্যমে, অথেনটিকটর অ্যাপের মাধ্যমে, সিকিউরিটি কি ইউএসবি পোর্টে ব্যবহারের মাধ্যমে ইত্যাদি।
গুগল একাউন্টের ক্ষেত্রে এই টু-স্টেপ ভেরিফিকেশন প্রথমবারের মত কোনো ডিভাইসে গুগল একাউন্ট লগিন করার ক্ষেত্রে দরকার হয়। (অন্যান্য সেবার জন্যও এই নিয়ম প্রযোজ্য।) ভেরিফিকেশনের পদ্ধতিসমূহের মাধ্যমে পাওয়া কোড শুধুমাত্র একবার ব্যবহার করা যায়। ভেরিফিকেশন কোড একাউন্টের সুরক্ষা ও নিশ্চিত করে।
আপনি যদি ইতিমধ্যে আপনার গুগল একাউন্টে টু-স্টেপ ভেরিফিকেশন সেটাপ না করে থাকেন, তবে আমাদের “গুগল টু-স্টেপ ভেরিফিকেশন কিভাবে সেটাপ করতে হয়” পোস্ট থেকে জেনে নিতে পারেন
টু স্টেপ ভেরিফিকেশন/ টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন কী?
টু-স্টেপ ভেরিফিকেশন মূলত টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন (2FA) এর সহজ একটি নাম। তবে, বোঝার সুবিধার্থে আমরা এই লেখায় পদ্ধতিটাকে টু-স্টেপ ভেরিফিকেশন নামেই উল্লেখ করবো।
এটি মূলত কী, তা জানার জানার আগে আমাদের জানতে হবে মাল্টি-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন (MFA) বিষয়টি সম্পর্কে। সহজ ভাষায় মাল্টি-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন হচ্ছে, কোন একটি ডিজিটাল একাউন্টে প্রবেশের জন্য ব্যাবহারকারীকে একাধিক উপায়ে যাচাই প্রক্রিয়া।
ধরুণ, আপনি ফেসবুক বা গুগলের কোন অ্যাকাউন্টে লগইন করতে চাচ্ছেন। এক্ষেত্রে শুধুমাত্র ইউজারনেম এবং পাসওয়ার্ড দিয়ে যদি আপনি লগইন করতে পারেন, তাহলে সেটা মাল্টি-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন বলা হবে না। তবে, যদি পাসওয়ার্ড দেওয়ার পর আরও এক বা একাধিকবার একাউন্ট যে আপনি তার কোনো না কোনো প্রমাণ দিতে হয়, তাহলে সেই পদ্ধতিটিকে বলা হবে মাল্টি-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন।
মাল্টি ফ্যাক্টর অথেনটিকেশনের একটি প্রকার বা বিশেষ অবস্থা বলা যায় টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন। কোন একাউন্টে ইউজারনেম এবং পাসওয়ার্ড, এরপর একাধিক ধাপ পার করা আসলে খুব বিরক্তিকর এবং সময় সাপেক্ষ। কিন্তু আবার নিরাপত্তার জন্য পাসওয়ার্ড যথেষ্ট নয়। তবে পাসওয়ার্ড দেওয়ার পর শুধুমাত্র আর একটি স্টেপের মাধ্যমে ব্যাবহারকারীরে শনাক্ত করা অপেক্ষাকৃত কম ঝামেলার। এতে নিরাপত্তাও অনেক জোরদার হয়। আর এই পদ্ধতিকেই বলা হয় টু-স্টেপ ভেরিফিকেশন।
এতে পাসওয়ার্ড দেওয়ার পর আরেকটি কোড চাওয়া হয় ব্যাবহারকারীর কাছ থেকে, যেটি তার ফোনে কল বা মেসেজ কিংবা বা ইমেইলের মাধ্যমে তাৎক্ষনিকভাবে আসে ঐ সিস্টেম থেকে।
কেন টু স্টেপ ভেরিফিকেশন ব্যবহার করবেন?
টু-স্টেপ বা টু-ফ্যাক্টর ভেরিফিকেশন কী তা আশাকরি ইতিমধ্যই আপনি বুঝতে পেরেছেন। এত আলোচনার পর নিশ্চয়ই এটাও বুঝতে পেরেছেন, যে এই ভেরিফিকেশন কেন গুরুত্বপূর্ণ।
আপনি যদি আপনার কোন অনলাইন অ্যাকাউন্টে এই ভেরিফিকেশন চালু করে রাখেন, তাহলে সেটি শুধুমাত্র পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করা যাবে না। পাসওয়ার্ড এর সাথে সাথে প্রয়োজন হবে একটি কোডের। অর্থাৎ, কেউ যদি কোনভাবে আপনার পাসওয়ার্ড জেনেও ফেলে তবুও সে আপনার একাউন্টে লগ ইন করতে পারবে না।
লগইন করার জন্য আপনার ফোনে আসা কোডটিও জানতে হবে তাকে। যেহেতু ফোন বা মেইলটি শুধুমাত্র আপনার কাছে থাকছে, তাই কোড জানার কোন সম্ভাবনাই নেই তার। ফলে আপনার একাউন্টটি থাকবে আরও সুরক্ষিত।
এই ছিলো, টু স্টেপ ভেরিফিকেশন নিয়ে আজকের আলোচনা। লেখা সহজ এবং সংক্ষিপ্ত করতে গিয়ে অনেক কিছু বাদ দিতে হয়েছে। তাই এই ভেরিফিকেশন নিয়ে আপনার মনে যদি কোন প্রকার প্রশ্নের উদয় হয়, তাহলে কমেন্টে লিখে ফেলুন সেটি, যতো দ্রুত সম্ভব আমি তা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা কর।
ফেসবুক টু-স্টেপ ভ্যারিফিকেশন সেট আপ প্রক্রিয়া
মাত্র কয়েকটি ধাপে আমরা শিখে নেবো কিভাবে ফেসবুক আইডিতে টু-স্টেপ ভ্যারিফিকেশন সেট করতে হয়।
প্রথম ধাপ: প্রথম ধাপে আপনার অ্যাকাউন্টে মোবাইল নাম্বার অ্যাড করে নিন। যদি আগেই অ্যাড করা থেকে থাকে, তবে আপনি এই ধাপটি বাদ দিয়ে দ্বিতীয় ধাপে চলে যান। মোবাইল নাম্বার অ্যাড করা না থাকলে, আসুন এখনই অ্যাড করে নেই। এজন্যে, আপনার আইডিতে লগইন করে সেটিংস্ এ যান।
সেটিংস্ এ গিয়ে দেখুন বামপাশে একটি মোবাইলের আইকন এবং তার সামনে Mobile শব্দটি লেখা রয়েছে যা লাল রঙের অ্যারো সাইন দিয়ে নিচের ছবিতে দেখানো হয়েছে।
Mobile শব্দটির উপর ক্লিক করুন এবং দেখুন ডানপাশে নিচের ছবির মতো মোবাইল সেটিংস্ পেজ আসবে।
এ পেজের নিচে দেখুন হাইলাইট করা Add a number লেখা একটি বাটন রয়েছে। এই বাটনে ক্লিক করুন এবং দেখুন নিচের ছবির মতো মোবাইল নাম্বার কনফার্ম করার জন্যে একটি পপ-আপ উইন্ডো ওপেন হবে।
উপরের ঘরে দেখতে পাচ্ছেন যে কান্ট্রি কোড দেয়া আছে। আপনার কাজ নাম্বারের ঘরে নাম্বার দিয়ে দেয়া। যেহেতু, কান্ট্রি কোডের সঙ্গে জিরো দেয়া আছে, আপনি তাই মোবাইল নাম্বার থেকে জিরো বাদ দিয়ে অর্থাৎ ওয়ান থেকে বাকী নাম্বারগুলো দিন। এরপর Continue লেখা নীল বাটনে ক্লিক করুন।
আর সঙ্গে সঙ্গে আপনার দেয়া মোবাইল নাম্বারে একটা কোড আসবে এবং নতুন একটি উইন্ডো ওপেন হবে।
এবার Enter Confirmation Code লেখা ঘরটিতে আপনার মোবাইলে আসা কোড নাম্বারটি দিয়ে Confirm লেখা বাটনটিতে ক্লিক করুন।
নাম্বার কনফার্ম হয়ে যাবে। এবার আপনার কাজ Save Settings লেখা নীল বাটনে ক্লিক করে সেভ করে নেয়া। এখন টু-স্টেপ ভেরিফিকেশন সেট করবেন। এ জন্যে যে পেজে আছেন, সে পেজের বাম পাশে থাকা Security and Login এ ক্লিক করুন।
Security and Login এ ক্লিক করার পর ডান পাশে যে পেজটি ওপেন হবে সেটার নিচের দিকে এসে দেখুন লেখা আছে Use two-factor authentification আর তার বরাবর ডানে লেখা আছে Edit।
এই Edit লেখাটির উপর ক্লিক করুন। যে পেজটি দেখছেন, তার নিচে দেখুন লেখা আছে Get Started।
এই লেখাটির উপর ক্লিক করুন আর দেখুন যে আরেকটি পপআপ উইন্ডো খুলেছে যেখানে আপনার অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড চাইছে।
এটা আপনার সিকিউরিটির জন্যে। কারণ, হতে পারে যে অন্য কেউ আপনার পাসওয়ার্ড চেঞ্জ করে নিচ্ছে। যেহেতু, অন্য কেউ না, এটা আপনি নিজেই, সেহেতু আপনার অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড দিন আর Submit লেখা বাটনটিতে ক্লিক করুন। এরপর আরেকটি উইন্ডো ওপেন অ্যাপ সেখান থেকে Next লেখা বাটনটিতে ক্লিক করুন।
Next বাটনে ক্লিক করার সঙ্গে সঙ্গে আপনার দেয়া মোবাইল নাম্বারে ৬ সংখ্যার একটি কোড চলে যাবে আর আরেকটি পপআপ ওপেন হবে।
এখানকার ৬টি ঘরে ওই ৬ ডিজিটের কোড নাম্বারটি দিয়ে দিন। দেয়ার পর আর কিছু করতে হবে না, অটোমেটিক টু-স্টেপ ভেরিফিকেশন বা টু-ফ্যাক্টর অথেনটিফিকেশন অন হয়ে গেছে দেখতে পাবেন।
এবার Finish লেখা বাটনে ক্লিক করে ফিনিশ করে দিন। আপনার অ্যাকাউন্ট এখন ১০০% নিরাপদ।
গুগল অ্যাকাউন্টে টু-স্টেপ ভেরিফিকেশন :
১. প্রথমেই গুগল অ্যাকাউন্ট ওপেন করুন।
২. ওপরের ডান কোণায় ভেসে থাকা আপনার ছবিতে ক্লিক করুন।
৩. ইমেইল অ্যাড্রেসের নিচে ‘ম্যানেজ ইওর গুগল অ্যাকাউন্ট’ অপশনে ক্লিক করতে হবে।
৪. নেভিগেশন প্যানেলে থাকা ‘সিকিউরিটি’ বাটনে ক্লিক করুন।
৫. ‘সাইনিং ইন টু গুগল’ থেকে টু-স্টেপ ভেরিফিকেশন নির্বাচন করুন।
৬. পরের পেজে ‘গেট স্টারটেড’ অপশনে ক্লিক করতে হবে।
৭. এ পর্যায়ে নিজের অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড দিতে হবে।
৮. সাইন-ইনের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় ধাপ হিসেবে সিকিউরিটি কি, টেক্সট মেসেজ বা ভয়েস কল থেকে যেকোনও একটি বেছে নিতে হবে। এখান থেকে আপনি যে অপশন বেছে নেবেন অ্যাকাউন্টে লগইন করার সময় সেটি অনুযায়ীই আপনার পরিচয় যাচাই করা হবে। অর্থাৎ, যে অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করতে চাচ্ছেন তার মালিক আপনিই কিনা তা এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই যাচাই করবে গুগল কর্তৃপক্ষ।
৯. আপনার দ্বিতীয় ধাপটি বেছে নেওয়ার পর একটি মোবাইল নম্বর বাছাই করতে হবে। আপনার ফোন হারিয়ে গেলে বা দ্বিতীয় ধাপটি অকার্যকর হলে মোবাইল নম্বরটি আপনাকে অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করতে সাহায্য করবে।
১০. এবার আপনার ফোনে একটি কোড আসবে। কোডটি দিয়ে প্রক্রিয়াটি চালু করুন।
১১. আপনি চাইলে পরের পেজে গিয়ে আরও ব্যাকআপ নির্বাচন করতে পারেন।