কৃষকের ১২ মাস কখন কি করবে !!

 

জানুয়ারি –ফেব্রুয়ারি (মাঘ মাস)



বোরো ধান

পরিচর্যা

মাঠে বোরো ধানের বাড়ন্ত পর্যায় এখন। এ সময় বোরো ধানে প্রয়োজন সারের উপরি প্রয়োগ, নিয়মিত সেচ প্রদান, আগাছা দমন, বালাই ব্যবস্থাপনাসহ অন্যান্য পরিচর্যা করতে হবে। ইউরিয়া সারের উপরি প্রয়োগের উপযুক্ত সময় এখন। ধানের চারা রোপণের ১৫-২০ দিন পর প্রথম কিস্তি, ৩০-৪০ দিন পর দ্বিতীয় কিস্তি এবং ৫০-৫৫ দিন পর শেষ কিস্তি হিসেবে ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগ করতে হবে। এছাড়া চারা রোপণের ৭-১০ দিনের মধ্যে গুটি ইউরিয়া প্রয়োগ করতে পারেন। এতে একরে ৬৫ কেজি গুটি ইউরিয়ার প্রয়োজন হয়।

বালাই ব্যবস্থাপনা

এ সময় ধান ক্ষেতে রোগ ও পোকার আক্রমণ দেখা দিতে পারে। রোগ ও পোকা থেকে ধান গাছকে বাঁচাতে সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি প্রয়োগ করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে পরিচ্ছন্ন চাষাবাদ, আন্তঃপরিচর্যা, যান্ত্রিক দমন, উপকারী পোকা সংরক্ষণ, ক্ষেতে ডালপালা পুঁতে পাখি বসার ব্যবস্থা করার মাধ্যমে ধানক্ষেত বালাই মুক্ত করতে পারেন। এসব পন্থায় রোগ ও পোকার আক্রমণ প্রতিহত করা না গেলে শেষ উপায় হিসেবে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে সঠিক বালাইনাশক, সঠিক সময়ে, সঠিক মাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে। 

গমের আন্তঃপরিচর্যা ও সেচ

গমের জমিতে যেখানে ঘন চারা রয়েছে তা পাতলা করে দিতে হবে। এ সময় গমের শিষ বেড় হয়।  যদি শিষ বেড় হয় বা গম গাছের বয়স ৫৫-৬০ দিন হয় তবে জরুরিভাবে গম ক্ষেতে একটি সেচ দিতে হবে। এতে গমের ফলন বৃদ্ধি পাবে। মনে রাখতে হবে ভালো ফলনের জন্য দানা গঠনের সময় আরেকবার সেচ দেয়া বেশি জরুরি। এ সময় গম ক্ষেতে ইঁদুরের উপদ্রব হয়ে থাকে তাই ইঁদুর দমন জরুরি। তবে ইঁদুর দমনের কাজটি করতে হবে সম্মিলিতভাবে। 

ভুট্টার আন্তঃপরিচর্যা ও সেচ প্রদান

ভুট্টা ক্ষেতের গাছের গোড়ার মাটি তুলে দিতে হবে এবং গোড়ার মাটির সাথে ইউরিয়া সার ভালো করে মিশিয়ে দিতে হবে। এরপর সেচ প্রদান করতে হবে এবং গাছের নিচের দিকের মরা পাতা ভেঙে দিতে হবে। ভুট্টার সাথে সাথী বা মিশ্র ফসলের চাষ করে থাকলে সেগুলোর প্রয়োজনীয় পরিচর্যা করতে হবে। 

আলুর বালাই ব্যবস্থাপনা ও পরিচর্যা

আলু ফসলে নাবি ধসা রোগ দেখা দিতে পারে। সে কারণে স্প্রেয়িং শিডিউল মেনে চলতে হবে। তবে বালাইনাশক প্রয়োগের ক্ষেত্রে যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করা দরকার। এছাড়া বালাইনাশক কেনার আগে  তা ভালোমানের কিনা তা যাচাই করে নিতে হবে। মড়ক রোগ দমনে দেরি না করে ২ গ্রাম ডায়থেন এম ৪৫ অথবা সিকিউর অথবা ইন্ডোফিল প্রতি লিটার পানির সাথে মিশিয়ে ৭ দিন পর পর স্প্রে করতে হবে। মড়ক লাগা জমিতে সেচ দেয়া বন্ধ করতে হবে। তাছাড়া আলু ফসলে মালচিং, সেচ প্রয়োগ, আগাছা দমনের কাজগুলোও করতে হবে।  আলু  গাছের বয়স ৯০ দিন হলে মাটির  সমান করে গাছ কেটে দিতে হবে এবং ১০ দিন পর আলু তুলে ফেলতে হবে। আলু তোলার পর  ভালো করে শুকিয়ে বাছাই করতে হবে এবং সংরক্ষণের ব্যবস্থা নিতে হবে।

তুলা সংগ্রহ

এ সময় তুলা সংগ্রহের কাজ শুরু করতে হবে। তুলা সাধারণত ৩ পর্যায়ে সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। শুরুতে ৫০% বোল ফাটলে প্রথম বার, বাকি ফলের ৩০% পরিপক্ব হলে দ্বিতীয় বার এবং অবশিষ্ট ফসল পরিপক্ব হলে শেষ অংশের তুলা সংগ্রহ করতে হবে। রৌদ্রময় শুকনা দিনে বীজ তুলা উঠাতে হয়। ভালো তুলা আলাদাভাবে তুলে ৩-৪ বার রোদে শুকিয়ে সংরক্ষণ করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে, ভালো তুলার সাথে যেন খারাপ তুলা (পোকায় খাওয়া, রোগাক্রান্ত) কখনও না মেশে। 

ডাল ও তেল ফসল সংগ্রহ

মসুর, ছোলা, মটর, মাসকালাই, মুগ, তিসি পাকার সময় এখন। সরিষা, তিসি বেশি পাকলে রোদের তাপে ফেটে গিয়ে বীজ পড়ে যেতে পারে, তাই এগুলো ৮০ ভাগ পাকলেই সংগ্রহের ব্যবস্থা নিতে হবে। আর ডাল ফসলের ক্ষেত্রে গাছ গোড়াসহ না উঠিয়ে মাটি থেকে কয়েক ইঞ্চি রেখে ফসল সংগ্রহ করতে হবে। এত জমিতে উর্বরতা এবং নাইট্রোজেন সরবরাহ বাড়বে। 

শাকসবজির পরিচর্যা    

শীতকাল শাকসবজির মৌসুম। নিয়মিত পরিচর্যা করলে শাকসবজির ফলন অনেক বেশি পাওয়া যায়। এছাড়া ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, বেগুন, ওলকপি, শালগম, গাজর, শিম, লাউ, কুমড়া , মটরশুঁটি এসবের নিয়মিত যত্ন নিতে হবে। টমেটো ফসলের মারাত্মক পোকা হলো ফলছিদ্রকারী পোকা। ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করে পুরুষ মথকে ধরে সহজে এ পোকা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। প্রতি বিঘা জমির জন্য ১৫টি ফাঁদ স্থাপন করতে হবে। তাছাড়া ক্ষেতে পতঙ্গভুক পাখি বসার  ব্যবস্থা করতে হবে। আধাভাঙ্গা নিম বীজের নির্যাস (৫০ গ্রাম এক লিটার পানির সাথে মিশিয়ে ১২ ঘণ্টা ভেজাতে হবে এবং পরবর্তীতে মিশ্রনটি ভালো করে ছাকতে হবে) ১০ দিন পর পর ২/৩ বার স্প্রে করে এই পোকা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। আক্রমণ তীব্র হলে কুইনালফস গ্রুপের কীটনাশক (দেবীকইন ২৫ ইসি/কিনালাক্স ২৫ ইসি/করোলাক্স ২৫ ইসি) প্রতি লিটার পানিতে ১ মিলিলিটার পরিমাণ মিশিয়ে স্প্রে করে এ পোকা দমন করা যায়। এ সময় চাষিভাইরা টমেটো সংগ্রহ করে সংরক্ষণ করতে পারেন। আধা পাকা টমেটোসহ টমেটো গাছ তুলে ঘরের ঠাণ্ডা জায়গায় উপুড় করে ঝুলিয়ে টমেটোগুলোকে পাতলা কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। পরবর্তীতে ৪-৫ মাস পর্যন্ত অনায়াসে টমেটো খেতে পারবেন। আর শীতকালে মাটিতে রস কমে যায় বলে সবজি ক্ষেতে চাহিদামাফিক সেচ দিতে হবে। তাছাড়া আগাছা পরিষ্কার, গোড়ায় মাটি তুলে দেয়া, সারের উপরিপ্রয়োগ ও রোগবালাই প্রতিরোধ করা জরুরি। 

গাছপালার পরিচর্যা

শীতে গাছের গোড়ায় নিয়মিত সেচ দিতে হবে, গোড়ার মাটি আলগা করে দিতে হবে এবং আগাছামুক্ত রাখতে হবে। সাধারণত এ সময় আম গাছে মুকুল আসে। গাছে মুকুল আসার পরপরই এ মুকুল বিভিন্ন প্রকার রোগ এবং পোকামাকড় দ্বারা আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো আমের অ্যানথ্রাকনোজ রোগ।  এ রোগ দমনে গাছে মুকুল আসার পর কিন্তু ফুল ফোটার পূর্ব পর্যন্ত আক্রান্ত গাছে টিল্ট-২৫০ইসি প্রতি লিটার পানিতে ০.৫ মিলি অথবা ২ গ্রাম ডাইথেন এম-৪৫ প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। এছাড়া আমের আকার মটর দানার মতো হলে গাছে ২য় বার স্প্রে করতে হবে। এ সময় প্রতিটি মুকুলে অসংখ্য হপার নিম্ফ দেখা যায়। আম গাছে মুকুল আসার ১০ দিনের মধ্যে কিন্তু ফুল ফোটার পূর্বেই একবার এবং এর একমাস পর আর একবার প্রতি লিটার পানির সাথে ১.০ মিলি সিমবুস/ফেনম/ডেসিস ২.৫ ইসি মিশিয়ে গাছের পাতা, মুকুল ও ডালপাল ভালোভাবে ভিজিয়ে স্প্রে করতে হবে। 

প্রাণিসম্পদ    

হাঁস-মুরগির যত্ন  

শীতকালে পোলট্রি তে যেসব সমস্যা দেখা যায় তা হলো-অপুষ্টি, রানীক্ষেত, মাইকোপাজমোসিস, ফাউল টাইফয়েড, পেটে পানি জমা। মোরগ-মুরগির অপুষ্টিজনিত সমস্যা সমাধানে ভিটামিন এ, সি, ডি, ই, কে ও ফলিক এসিড সরবরাহ করতে হবে। তবে সেটি অবশ্যই প্রাণিচিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী করতে হবে।   

শীতের তীব্রতা বেশি হলে পোলট্রি শেডে অবশ্যই মোটা চটের পর্দা লাগাতে হবে এবং বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা রাখতে হবে। পোলট্রি লিটারে অ্যামোনিয়া গ্যাস রোধে ১ বর্গফুট জায়গায় ১ কেজি হারে অ্যামোনিল পাউডার মিশাতে হবে। শীতকালে মোরগ-মুরগির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সপ্তাহে দুই দিন খাবারের সাথে ভিটামিন ই এবং ভিটামিন সি মিশিয়ে দিতে হবে। উপকূলীয় অঞ্চলে অনেকেই হাঁস পালন করে থাকেন। এ সময় হাঁসের নানা রোগও হয়ে থাকে।  হাঁসের যেসব রোগ হয় সেগুলো হলো- হাঁসের প্লেগ রোগ, কলেরা রোগ এবং বটুলিজম। প্লেগ রোগ প্রতিরোধে ১৮-২১ দিন বয়সে প্রথম মাত্রা এবং প্রথম টিকা দেয়ার পর ৩৬-৪৩ দিন বয়সে দ্বিতীয় মাত্রা পরবর্তী ৪-৫ মাস পরপর একবার ডাক প্লেগ টিকা দিতে হবে।  হাঁসের কলেরা রোগের জন্য ডাক কলেরা টিকা ৪৫-৬০ দিন বয়সে ১ বার, ৬০-৭৫ দিন পর দ্বিতীয় বার এবং পরবর্তী ৪-৫ মাস পর পর টিকা দিতে হবে। 

গরু-বাছুরের যত্ন

গোখামারে শীতকালে মোটা চটের ব্যবস্থা করা খুব জরুরি।  নাহলে গাভীগুলো তাড়াতাড়ি অসুস্থ হয়ে যাবে। এ সময় গাভীর খাবার প্রদানে যেসব বিষয়ে নজর দিতে হবে তাহলো- সঠিক সময়ে খাদ্য প্রদান, গোসল করানো, থাকার স্থান পরিষ্কার করা, খাদ্য সরবরাহের আগে খাদ্য পাত্র পরিষ্কার করা এবং নিয়মিত প্রাণিচিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া। তবে গাভীর খাবারের খরচ কমাতে সবচে ভালো হয় নিজেদের জমিতে তা চাষাবাদ করা। আর একটি কাজ করলে ভালো হয় সেটি হলো-সমবায় সমিতি করে ওষুধ ও চিকিৎসা করানো। এতে লাভ হয় বেশি। খরচ যায় কমে।   

মাছের যত্ন  

শীতকালে মাছের বিশেষ যত্ন নেয়া দরকার। কারণ এ সময়ে পুকুরে পানি কমে যায়। পানি দূষিত হয়। মাছের রোগবালাইও বেড়ে যায়। সে কারণে কার্প ও শিং জাতীয় মাছে ড্রপসি বা উদর ফোলা রোগ বেশি হয়। এ রোগ প্রতিরোধে মাছের ক্ষত রোগ যাতে না হয় সে ব্যবস্থা করতে হবে। আর এ রোগের প্রতিকারে প্রতি কেজি খাদ্যের সাথে ১০০ মিলিগ্রাম টেরামাইসিন বা স্ট্রেপটোমাইসিন পর পর ৭ দিন খাওয়াতে হবে। 

ফেব্রুয়ারি- মার্চ (ফাল্গুন মাস)



বোরো ধান

ধানের চারার বয়স ৫০-৫৫ দিন হলে ইউরিয়া সারের শেষ কিস্তি উপরিপ্রয়োগ করতে হবে। সার দেয়ার আগে জমির আগাছা পরিষ্কার করতে হবে এবং জমি থেকে পানি সরিয়ে দিতে হবে। ধানের কাইচ থোড় আসা থেকে শুরু করে ধানের দুধ আসা পর্যন্ত ক্ষেতে ৩/৪ ইঞ্চি পানি ধরে রাখতে হবে। পোকা দমনের জন্য নিয়মিত ক্ষেত পরিদর্শন করতে হবে এবং সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে (আলোর ফাঁদ পেতে, পোকা ধরার জাল ব্যবহার করে, ক্ষতিকর পোকার ডিমের গাদা নষ্ট করে, উপকারী পোকা সংরক্ষণ করে, ক্ষেতে ডালপালা পুঁতে পাখি বসার ব্যবস্থা করে) ধানক্ষেত বালাইমুক্ত রাখতে হবে। এ সময় ধান ক্ষেতে উফরা, ব্লাস্ট, পাতাপোড়া ও টুংরো রোগ দেখা দেয়। জমিতে উফরা রোগ দেখা দিলে যেকোন কৃমিনাশক যেমন- ফুরাডান ৫ জি বা কিউরেটার ৫ জি প্রয়োগ করতে হবে। ব্লাস্ট রোগ দেখা দিলে ইউরিয়া সারের উপরি প্রয়োগ সাময়িকভাবে বন্ধ রাখতে হবে এবং একরপ্রতি ১৬০ গ্রাম ট্রুপার বা জিল বা ন্যাটিভ বা ব্লাসটিন ১০-১৫ দিনের ব্যবধানে দু’বার প্রয়োগ করতে হবে। জমিতে পাতাপোড়া রোগ হলে অতিরিক্ত ৫ কেজি/বিঘা হারে পটাশ সার উপরি প্রয়োগ করতে হবে এবং জমির পানি শুকিয়ে ৭-১০ দিন পর আবার সেচ দিতে হবে। টুংরো রোগ দমনের জন্য এর বাহক পোকা সবুজ পাতাফড়িং দমন করতে হবে।

গম

এ মাসের দ্বিতীয় পক্ষ থেকে গম পাকা শুরু হয়। গম শীষের শক্ত দানা দাঁত দিয়ে কাটলে যদি কট কট শব্দ হয় তবে বুঝতে হবে গম কাটার সময় হয়েছে। সকালে অথবা পড়ন্ত বিকেলে ফসল কাটা উচিত। বীজ ফসল কাটার পর রোদে শুকিয়ে খুবই তাড়াতাড়ি মাড়াইঝাড়াই করে ফেলতে হবে। সংগ্রহ করা বীজ ভালো করে শুকানোর পর ঠাণ্ডা করে সংরক্ষণ করতে হবে।

ভুট্টা (রবি)

জমিতে শতকরা ৭০-৮০ ভাগ গাছের মোচা খড়ের রঙ ধারণ করলে এবং পাতার রঙ কিছুটা হলদে হলে মোচা সংগ্রহ করতে হবে। বৃষ্টি শুরু হওয়ার আগে শুকনো আবহাওয়ায় মোচা সংগ্রহ করে ফেলতে হবে। সংগ্রহ করা মোচা ভালোভাবে শুকিয়ে সংরক্ষণ করতে হবে। মোচা সংগ্রহের পর উঠানে পাট বিছিয়ে তার উপর শুকানো যায় অথবা জোড়া জোড়া বেঁধে দড়ি বা বাঁশের সাথে অথবা টিনের চাল বা ঘরের বারান্দায় ঝুলিয়ে শুকানোর কাজটি করা যায়।

ভুট্টা (খরিপ)

খরিপ মৌসুমে ভুট্টা চাষ করতে চাইলে এখনই বীজ বপন করতে হবে এবং প্রয়োজনীয় যত্ন নিতে হবে। বারি হাইব্রিড ভুট্টা-১৪, বারি হাইব্রিড ভুট্টা-১৫ এসব হলো ভুট্টার উন্নত জাত।

পাট

ফাল্গুনের মাঝামাঝি থেকে চৈত্রের শেষ পর্যন্ত পাটের বীজ বপনের উপযুক্ত সময়। ফাল্গুন মাসে বপন উপযোগী পাটের ভালো জাতগুলো হলো সিসি-৪৫, বিজেআরআই দেশী পাট শাক-১ (বিজেসি-৩৯০), ফাল্গুনী তোষা (ও-৯৮৯৭), বিজেআরআই তোষা পাট-৪ (ও-৭২)। পাট চাষের জন্য উঁচু ও মাঝারি উঁচু জমি নির্বাচন করে আড়াআড়িভাবে ৫-৬টি চাষ ও মই দিয়ে জমি তৈরি করতে হবে। সারিতে বুনলে প্রতি শতাংশে ২৫ গ্রাম বীজ প্রয়োজন হয়। তবে ছিটিয়ে বুনলে আরেকটু বেশি অর্থাৎ ৩০ গ্রাম বীজ প্রয়োজন হয়। পাটের জমিতে সারি থেকে সারির দূরত্ব ৩০ সেন্টিমিটার (প্রায় ১ ফুট) এবং চারা থেকে চারার দূরত্ব ৭ সেন্টিমিটার (প্রায় ৩ ইঞ্চি) রাখা ভালো। ভালো ফলনের জন্য প্রতি একরে ৭০ কেজি   ইউরিয়া, ১০ কেজি টিএসপি, ১২ কেজি এমওপি, ১৮ কেজি জিপসাম এবং প্রায় ৪.৫ কেজি জিংকসালফেট সার প্রয়োগ করতে হবে।

শাকসবজি

এ মাসে বসতবাড়ির বাগানে জমি তৈরি করে ডাঁটা, কমলিশাক, পুঁইশাক, করলা, ঢেঁড়স, বেগুন, পটোল চাষের উদ্যোগ নিতে হবে। মাদা তৈরি করে চিচিঙ্গা, ঝিঙা, ধুন্দুল, শসা, মিষ্টি কুমড়া, চালকুমড়ার বীজ বুনে দিতে পারেন। সবজি চাষে পর্যাপ্ত জৈবসার ব্যবহার করতে হবে। পরিকল্পিতভাবে জৈব সার ব্যবহার করলে সবজি ক্ষেতে রাসায়নিক সারের প্রয়োজন হয় না।

গাছপালা

আমের মুকুলে অ্যানথ্রাকনোজ রোগ এ সময় দেখা দেয়। এ রোগ দমনে গাছে মুকুল আসার পর কিন্তু ফুল ফোটার পূর্ব পর্যন্ত আক্রান্ত গাছে  প্রোপিকোনাজল আথবা মেনকোজেব গ্রুপের ছত্রাকনাশক পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। এছাড়া আমের আকার মটর দানার মতো হলে গাছে ২য় বার স্প্রে করতে হবে। এ সময় প্রতিটি মুকুলে অসংখ্য হপার নিম্ফ দেখা যায়। আম গাছে মুকুল আসার ১০ দিনের মধ্যে কিন্তু ফুল ফোটার আগেই একবার এবং এর এক মাস পর আর একবার সাইপারমেথ্রিন গ্রুপের কীটনাশক পানির সাথে মিশিয়ে গাছের পাতা, মুকুল ও ডালপালা ভালোভাবে ভিজিয়ে স্প্রে করতে হবে। কাঁঠালের ফল পঁচা বা মুচি ঝরা সমস্যা এখন দেখা দিতে পারে। কাঁঠাল গাছ এবং নিচের জমি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। আক্রান্ত ফল ভেজা বস্তা জড়িয়ে তুলে মাটিতে পুঁতে ধ্বংস করতে হবে। মুচি ধরার আগে ও পরে ১০ দিন পর পর ২/৩ বার বোর্দো মিশ্রণ বা মেনকোজেব গ্রুপের ছত্রাকনাশক পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। বাডিং পদ্ধতিতে বরই গাছের কলম করতে পারেন। এজন্য প্রথমে বরই গাছ ছাঁটাই করতে হবে এবং পরে উন্নত বরই গাছের মুকুল ছাঁটাই করে দেশী জাতের গাছে সংযোজন করতে হবে।

প্রাণিসম্পদ

এ সময় মুরগির রাণীক্ষেত, মাইকোপ্লাজমোসিস, ফাউল টাইফয়েড, পেটে পানি জমা এসব রোগ দেখা দিতে পারে। সে কারণে প্রয়োজনীয় টিকা প্রদান করতে হবে। খাবারের সাথে  ভিটামিন সি ও ভিটামিন ই সরবরাহ করতে হবে। এসময় গরুর লাম্পি স্কিন ডিজিজ (এলএসডি) পক্স ভাইরাস সংক্রমণে এক গরু হতে আরেক গরুতে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এ রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেলে দ্রুত প্রাণি সম্পদ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। গবাদিপশুকে প্রয়োজনীয় ভ্যাক্সিন দিতে হবে এবং কৃমিনাশক খাওয়াতে হবে। গবাদিপশুকে উন্নত খাবার যেমন-সবুজ ঘাস, ইউরিয় মোলাসেম স্ট্র, ইউরিয়া মোলাসেম ব্লক এসব খাওয়াতে হবে।

মৎস্যসম্পদ

মাছ চাষের জন্য পুকুর তৈরি ও সংস্কার করার উপযুক্ত সময় এখন। পুকুরের পানি শুকিয়ে গেলে নিচ থেকে পচা কাদা তুলে ফেলতে হবে এবং শতাংশপ্রতি ১ কেজি চুন ও ১০ কেজি গোবর বা কম্পোস্ট সার প্রয়োগ করতে হবে। পানি ভর্তি পুকুরে প্রতি শতাংশে ৬ ফুট পানির জন্য ১ কেজি চুন গুলে ঠাণ্ডা করে দিতে হবে। এছাড়া শতাংশপ্রতি ১০ কেজি গোবর, ২০০ গ্রাম ইউরিয়া ও ১০০ গ্রাম টিএসপি একসাথে মিশিয়ে পানি ভর্তি পুকুরে দিতে হবে। শীতের পর এ সময় মাছের বাড়বাড়তি দ্রুত হয়। তাই পুকুরে প্রয়োজনীয় খাবার দিতে হবে এবং জাল টেনে মাছের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে।

মার্চ-এপ্রিল (চৈত্র মাস)



বোরো ধান

সময়মতো বোরো ধান চাষ করে থাকলে এরই মধ্যে ইউরিয়া সারের উপরিপ্রয়োগ সম্পূর্ণ হয়ে যাওয়ার কথা। আর যারা শীতের কারণে দেরিতে চারা রোপণ করেছেন তাদের ধানের চারার বয়স ৫০ থেকে ৫৫ দিন হলে ইউরিয়া সারের শেষ কিস্তি উপরিপ্রয়োগ করতে হবে। তবে সার দেয়ার আগে জমির আগাছা পরিষ্কার করতে হবে এবং জমি থেকে পানি সরিয়ে দিতে হবে। ক্ষেতে গুটি ইউরিয়া দিয়ে থাকলে ইউরিয়া সারের উপরিপ্রয়োগ করতে হবে না। এলাকার জমিতে যদি সালফার ও দস্তা সারের অভাব থাকে এবং জমি তৈরির সময় এ সারগুলো না দেয়া হয়ে থাকে তবে ফসলে পুষ্টির অভাবজনিত লক্ষণ পরীক্ষা করে শতাংশপ্রতি ২৫০ গ্রাম সালফার ও ৪০ গ্রাম দস্তা সার উপরিপ্রয়োগ করতে হবে। মনে রাখতে হবে ধানের কাইচ থোড় আসা থেকে শুরু করে ধানের দুধ আসা পর্যন্ত ক্ষেতে ৩/৪ ইঞ্চি পানি ধরে রাখতে হবে। 

পোকা দমনের জন্য নিয়মিত ক্ষেত পরিদর্শন করতে হবে এবং সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে আলোর ফাঁদ পেতে, পোকা ধরার জাল ব্যবহার করে, ক্ষতিকর পোকার ডিমের গাদা নষ্ট করে, উপকারী পোকা সংরক্ষণ করে, ক্ষেতে ডাল-পালা পুঁতে পাখি বসার ব্যবস্থা করার মাধ্যমে ধানক্ষেত বালাইমুক্ত করতে পারেন। এতে বালাইনাশক লাগবে কম, লাভ হবে বেশি এবং পরিবেশ থাকবে স্বাস্থ্যসম্মত। এসব পন্থায় রোগ ও পোকার আক্রমণ প্রতিহত করা না গেলে শেষ উপায় হিসেবে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে সঠিক বালাইনাশক, সঠিক সময়ে, সঠিক মাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে। 

এ সময় ধান ক্ষেতে উফরা, ব্লাস্ট, পাতাপোড়া ও টুংরো রোগ দেখা দেয়। জমিতে উফরা রোগ দেখা দিলে যে কোনো কৃমিনাশক যেমন ফুরাডান ৫ জি বা কিউরেটার ৫ জি প্রয়োগ করতে হবে। ব্লাস্ট রোগ দেখা দিলে ইউরিয়া সারের উপরিপ্রয়োগ সাময়িকভাবে বন্ধ রাখতে হবে এবং শতাংশ প্রতি ১.৬ গ্রাম ট্রুপার বা জিল বা নেটিভ ১০ থেকে ১৫ দিনের ব্যবধানে দুইবার প্রয়োগ করতে হবে। জমিতে পাতাপোড়া রোগ হলে অতিরিক্ত ১.৫ কেজি/শতাংশ হারে পটাশ সার উপরিপ্রয়োগ করতে হবে এবং জমির পানি শুকিয়ে ৭ থেকে ১০ দিন পর আবার সেচ দিতে হবে। আর টুংরো রোগ দমনের জন্য এর বাহক পোকা সবুজ পাতা ফড়িং দমন করতে হবে। 

গম

চৈত্র মাসের প্রথম থেকে মধ্য চৈত্র পর্যন্ত গম সংগ্রহ করতে হয়। গম সংগ্রহের কাজটি করতে হবে সকাল বেলা রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে। গম কাটার পর ভালোভাবে রোদে শুকিয়ে মাড়াই যন্ত্রের সাহায্যে গম মাড়াই করা উত্তম। শুকনো বীজ ছায়ায় ঠা-া করে প্লাস্টিকের ড্রাম, বিস্কুটের টিন, মাটির কলসি ইত্যাদিতে সঠিকভাবে সংরক্ষণ করতে হবে। তবে যারা দেরিতে গম বপন করেছেন তাদের বপন করা গম সঠিকভাবে পেকে যাওয়ার পর কেটে মাড়াই, ঝাড়াই করে ভালোভাবে শুকিয়ে নিতে হবে এবং সংরক্ষণ করতে হবে। 

ভুট্টা (রবি)

জমিতে শতকরা ৭০ থেকে ৮০ ভাগ গাছের মোচা খড়ের রঙ ধারণ করলে এবং পাতার রঙ কিছুটা হলদে হলে মোচা সংগ্রহ করতে হবে। বৃষ্টি শুরু হওয়ার আগে শুকনো আবহাওয়ায় মোচা সংগ্রহ করতে হবে। সংগ্রহ করা মোচা ভালোভাবে শুকিয়ে সংরক্ষণ করতে হবে। মোচা সংগ্রহের পর উঠানে পাট বিছিয়ে তার ওপর শুকানো যায় অথবা জোড়া জোড়া বেঁধে দড়ি বা বাঁশের সঙ্গে ঝুলিয়ে আবার অনেকে টিনের চালে বা ঘরের বারান্দায় ঝুলিয়ে শুকানোর কাজটি করে থাকেন। তবে যেভাবেই শুকানো হোক না কেন বীজ ভালোভাবে শুকিয়ে নিতে হবে। ভুট্টার দানা মোচা থেকে ছাড়ানো অনেক কষ্টের কাজ। অনেকে এ কাজটি হাত দিয়ে করে থাকেন। খুব অল্প খরচে ভুট্টা মাড়াই যন্ত্র কিনে অনায়াসে মোচা থেকে ভুট্টা ছাড়াতে পারেন। 

ভুট্টা (খরিফ)

গ্রীষ্মকালীন ভুট্টা চাষ করতে চাইলে এখনই বীজ বপন করতে হবে। এজন্য শতাংশপ্রতি ১০০ থেকে ১২০ গ্রাম বীজ লাগবে। আর প্রতি শতাংশ জমিতে সার লাগবে ইউরিয়া ৩৬৫ গ্রাম, টিএসপি ২২২ গ্রাম, এমওপি ১২০ গ্রাম, জিপসাম ১৬০ গ্রাম এবং দস্তা সার ১৬ গ্রাম। 

পাট

এ মাসের শেষ পর্যন্ত পাটের বীজ বপন করা যায়। পাটের ভালো জাতগুলো হলো ও-৯৮৯৭, ওএম-১, সিসি-৪৫, বিজেসি-৭৩৭০, সিভিএল-১, এইচসি-৯৫, এইচ এস-২৪। স্থানীয় বীজ ডিলারদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জাতগুলো সংগ্রহ করতে পারেন। পাট চাষের জন্য উঁচু ও মাঝারি উঁচু জমি নির্বাচন করে আড়াআড়িভাবে ৫/৬টি চাষ ও মই দিয়ে জমি তৈরি করতে হবে। সারিতে বুনলে প্রতি শতাংশে ১৭ থেকে ২০ গ্রাম বীজ প্রয়োজন হয়। তবে ছিটিয়ে বুনলে আরেকটু বেশি অর্থাৎ ২৫-৩০ গ্রাম বীজ প্রয়োজন হয়। পাটের জমিতে সারি থেকে সারির দূরত্ব ৩০ সেন্টিমিটার এবং চারা থেকে চারার দূরত্ব ৭-১০ সেন্টিমিটার রাখা ভালো। ভালো ফলনের জন্য শতাংশপ্রতি ৩০০ গ্রাম ইউরিয়া, ৬০০ গ্রাম টিএসপি, ১০০ গ্রাম এমওপি সার শেষ চাষের সময় মাটিতে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। জমিতে সালফার ও জিংকের অভাব থাকলে জমিতে সার দেয়ার সময় ৪০০ গ্রাম জিপসার ও ২০ গ্রাম দস্তা সার দিতে হবে। চারা গজানোর ১৫ থেকে ২০ দিন পর শতাংশপ্রতি ৩০০ গ্রাম ইউরিয়া সার উপরিপ্রয়োগ করতে হবে। এর ৩০ থেকে ৪০ দিন পর দ্বিতীয়বারের মতো শতাংশপ্রতি ৩০০ গ্রাম ইউরিয়া সার উপরিপ্রয়োগ করতে হবে। 

অন্যান্য মাঠ ফসল

রবি ফসলের মধ্যে চিনা, কাউন, আলু, মিষ্টি আলু, চিনাবাদাম, পেঁয়াজ, রসুন যদি এখনও মাঠে থাকে তবে দেরি না করে সাবধানে তুলে ফেলতে হবে। কাটা/তোলা, বাছাই, মাড়াই, পরিষ্কার, শুকানো এবং সংরক্ষণসহ প্রতিটি ধাপে লাগসই পদ্ধতি বাস্তবায়ন করলে খরচ কমে যাবে, লাভ বেশি হবে। খেয়াল রাখতে হবে এ সময়ে বা সামান্য পরে বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। পচনশীল ফসল সেজন্য তাড়াতাড়ি কেটে ফেলার ব্যবস্থা করতে হবে। 

শাকসবজি

গ্রীষ্মকালীন শাকসবজি চাষ করতে চাইলে এখনই বীজ বপন বা চারা রোপণ শুরু করতে হবে। সবজি চাষে পর্যাপ্ত জৈবসার ব্যবহার করতে হবে। পরিকল্পিতভাবে জৈবসার ব্যবহার করলে সবজি ক্ষেতে রাসায়নিক সারের প্রয়োজন হয় না। গ্রীষ্মকালীন শাকসবজির জন্য জমি তৈরি, মাদা তৈরি, সার প্রয়োগের কাজ করতে হবে এখনই। এ সময় গ্রীষ্মকালীন টমেটো, ঢেঁড়স, বেগুন, করলা, ঝিঙ্গা, ধুন্দুল, চিচিঙ্গা, শসা, ওলকচু, পটোল, কাঁকরোল, মিষ্টিকুমড়া, চালকুমড়া, লালশাক, পুঁইশাক এসব সবজি চাষ করতে পারেন। 

গাছপালা

এ সময় বৃষ্টির অভাবে মাটিতে রসের পরিমাণ কমে আসে। এ অবস্থায় আপনার গাছের গোড়ায় পানি দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। আম গাছে হপার পোকার আক্রমণ হলে অনুমোদিত কীটনাশক যেমন- সিমবুস/ফেনম/ডেসিস ২.৫ ইসি প্রভৃতি প্রয়োগ করে নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নিতে হবে। এ সময় প্রতিটি মুকুলে অসংখ্য হপার নিম্ফ দেখা যায়। আম গাছে মুকুল আসার ১০ দিনের মধ্যে কিন্তু ফুল ফোটার আগেই একবার এবং এর একমাস পর আর একবার প্রতি লিটার পানির সঙ্গে ১.০ মিলি সিমবুস/ফেনম/ডেসিস ২.৫ ইসি মিশিয়ে গাছের পাতা, মুকুল ও ডালপাল ভালোভাবে ভিজিয়ে স্প্রে করতে হবে। তাছাড়া এ সময় আমে পাউডারি মিলডিউ ও অ্যান্থাকনোজ রোগ দেখা দিতে পারে। টিল্ট, রিডোমিল গোল্ড বা ডায়থেন এম ৪৫ অনুমোদিত মাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে। কলা বাগানের পার্শ্ব চারা, মরা পাতা কেটে দিন। এখন পেঁপের চারা রোপণ করতে পারেন। তাছাড়া নার্সারিতে চারা উৎপাদনের জন্য বনজ গাছের বীজ বপন করতে পারেন। যাদের বাঁশ ঝাড় আছে তারা বাঁশ ঝাড়ের গোড়ায় মাটি ও জৈব সার প্রয়োগ করতে পারেন। 

প্রাণিসম্পদ

শীতকাল শেষ হয়ে এখন গরম পড়ছে। এ সময়টা পোলট্রি খামারি ভাইদের বেশ সতর্ক থাকতে হবে। কারণ শীতকালে মোরগ-মুরগির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক কমে যায়। সে কারণে রানীক্ষেত, মাইকোপ্লাজমোসিস, ফাউল টাইফয়েড, পেটে পানি জমা এসব রোগ দেখা দিতে পারে। তাছাড়া ভিটামিন সি ও ভিটামিন ই এর অভাব ও দেখা দিতে পারে। তাপমাত্রার বৃদ্ধি ও কমে যাওয়ার কারণে বিরূপ আবহাওয়ায় মোরগ- মুরগির খাবার গ্রহণেও অনীহা দেখা দেয়। এসব সমস্যা সমাধানে টিকা প্রদান, ভিটামিন সরবরাহ করতে হবে। খোলা শেডে বায়ু চলাচলের মাত্রা বাড়ানোর ব্যবস্থা নিতে হবে। আর লেয়ার হাউস ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে শেডের চাল বা ছাদে তাপ বিকিরণ করতে পারে এমন সাদা, অ্যালুমিনিয়াম রঙ দেয়া প্রয়োজন। অতিরিক্ত গরমে পাইপ বা ঝর্ণার মাধ্যমে পানি ছিটানোর ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। ক্ষুদ্র খামারের ক্ষেত্রে চালের উপরে পাটের চট দিয়ে পানি ছিটাতে হবে। প্রচণ্ড গরমে খাবারের পানির সঙ্গে বরফ মেশানো দরকার। সঙ্গে ইলেকট্রোলাইট ও ভিটামিন সি দিলে ভালো হয়। 

চৈত্র মাসে বেশ গরম পড়ে, তাই গবাদিপশুর এ সময় বিশ্রামের প্রয়োজন। আপনার গবাদিপশুকে ছায়ায় রাখতে হবে এবং বেশি বেশি পানি খাওয়াতে হবে, সেই সঙ্গে নিয়মিত গোসল করাতে হবে। আর গবাদিপশুর গলাফুলা, তড়কা, বাদলা রোগ প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। 

মৎস্য সম্পদ

এ সময় রুই জাতীয় মাছের পোনা আঁতুড় পুকুরে ছাড়ার উপযুক্ত সময়। আর তাই এখনও আঁতুড় পুকুর তৈরি না হয়ে থাকলে তা করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এজন্য পুকুরের পানি শুকিয়ে গেলে নিচ থেকে পচা কাদা তুলে ফেলতে হবে শতাংশপ্রতি এবং শতাংশপ্রতি ১ কেজি চুন প্রয়োগ করতে হবে। চুন দেয়ার ১০ থেকে ১৫ দিন পর পুকুরে শতাংশ প্রতি ১০ কেজি গোবর বা কম্পোস্ট সার সার দিতে হবে। রেণু পোনা ছাড়ার অন্তত ১৫ দিন আগে আঁতুড় পুকুরে ১ থেকে ১.৫ মিটার পানি জমিয়ে রাখতে হবে। আঁতুড় পুকুর তৈরি হলে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার সঙ্গে পরামর্শ করে আঁতুড় পুকুরে ঘন মশারির জাল টেনে কেরোসিন ও ডিজেল পরিমাণ মতো ব্যবহার করে ব্যাঙাচি ও অন্যান্য জলজ পোকা মেরে ফেলতে হবে। পানি ভর্তি পুকুরে প্রতি শতাংশে ৬ ফুট পানির জন্য ১ কেজি চুন গুলে ঠাণ্ডা করে দিতে হবে। রেণু পোনা মাটির পাত্রে বহন না করে পলিথিন ব্যাগে অক্সিজেন গ্যাস দিয়ে বহন করতে হবে। রেণু পানা আঁতুড় পুকুরে সরাসরি না ছেড়ে সংগৃহীত রেণু পোনাগুলোকে পুকুরের পানির নতুন পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর ব্যবস্থা করা দরকার। রেণু ছাড়ার তৃতীয় দিন থেকে আঁতুড় পুকুরে পরিপূরক খাবার সরবরাহ করা প্রয়োজন।

এপ্রিল- মে (বৈশাখ মাস)



বোরো ধান

যারা এবার দেরিতে বোরো ধানের চারা রোপণ করেছেন তাদের জমিতে চারার বয়স ৫০ থেকে ৫৫ দিন হলে ইউরিয়া সারের শেষ কিস্তি উপরিপ্রয়োগ করতে হবে। তবে কেউ যদি দানাদার ইউরিয়ার পরিবর্তে গুটি ইউরিয়া ব্যবহার করে থাকেন তবে ইউরিয়ার উপরিপ্রয়োগের প্রয়োজন নেই।  জমিতে আগাছা পরিষ্কার করা, সেচ দেয়া, বালাই দমন এসব কাজ সঠিকভাবে করতে হবে। থোড় আসা শুরু হলে জমিতে পানির পরিমাণ দ্বিগুণ বাড়াতে হবে। ধানের দানা শক্ত হলে জমি থেকে পানি বের করে দিতে হবে। এ মাসে বোরো ধানে মাজরা পোকা, বাদামি গাছ ফড়িং, সবুজ পাতা ফড়িং, গান্ধি পোকা, লেদা পোকা, ছাতরা পোকা, শীষকাটা লেদা পোকা, ছাতরা পোকা, পাতা মোড়ানো পোকার আক্রমণ হতে পারে। পোকা দমনের জন্য নিয়মিত ক্ষেত পরিদর্শন করতে হবে এবং সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পোকার আক্রমণ রোধ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে আলোর ফাঁদ পেতে, পোকা ধরার জাল ব্যবহার করে, ক্ষতিকর পোকার ডিমের গাদা নষ্ট করে, উপকারী পোকা সংরক্ষণ করে, ক্ষেতে ডাল-পালা পুঁতে পাখি বসার ব্যবস্থা করার মাধ্যমে ধানক্ষেত বালাই মুক্ত করা দরকার। এসব উপায়ে পোকার আক্রমণ প্রতিহত করা না গেলে শেষ উপায় হিসেবে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে সঠিক বালাইনাশক, সঠিক সময়ে, সঠিক মাত্রায়, সঠিক নিয়মে প্রয়োগ করতে হবে। এ সময় ধান ক্ষেতে উফরা, বাদামি দাগ রোগ, ব্লাস্ট, পাতাপোড়া ও টুংরো রোগসহ অন্যান্য রোগ হতে পারে। জমিতে উফরা রোগ দেখা দিলে যে কোনো কৃমিনাশক যেমন ফুরাডান ৫জি বা কিউরেটার ৫জি প্রয়োগ করতে হবে। ব্লাস্ট রোগ দেখা দিলে ইউরিয়া সারের উপরিপ্রয়োগ সাময়িকভাবে বন্ধ রেখে হেক্টরপ্রতি ৪০০ গ্রাম ট্রুপার বা জিল বা নেটিভ ১০ থেকে ১৫ দিনের ব্যবধানে দুইবার প্রয়োগ করতে হবে। জমিতে পাতাপোড়া রোগ হলে অতিরিক্ত ৫ কেজি-বিঘা হারে পটাশ সার উপরিপ্রয়োগ করতে হবে এবং জমির পানি শুকিয়ে ৭ থেকে ১০ দিন পর আবার সেচ দিতে হবে। আর টুংরো রোগ দমনের জন্য এর বাহক পোকা সবুজ পাতা ফড়িং দমন করতে হবে।

গম ও ভুট্টা (রবি)

মাঠ থেকে কাটার পর এ দুটি দানাদার ফসল এরই মধ্যে বাড়ির আঙিনায় চলে আসার কথা। ভালোভাবে সংরক্ষণ করা না হলে ক্ষতি হয়ে যাবে অনেক। সংরক্ষণ কৌশলে ভালোভাবে বীজ শুকানো, উপযুক্ত পাত্র নির্বাচন, বায়ুরোধী করে সংরক্ষণ, বীজ পাত্রকে মাটি বা মেঝ থেকে আলাদাভাবে রেখে সংরক্ষণ করতে হবে। সংরক্ষণ পাত্রে শুকনো নিমপাতা, বিষকাটালি পাতা রেখে দিলে সহজেই পোকার আক্রমণ রোধ করা যাবে।

ভুট্টা (খরিফ)

খরিফ ভুট্টার বয়স ২০ থেকে ২৫ দিন হলে ইউরিয়া সারের উপরিপ্রয়োগ করতে হবে। মাটিতে রসের ঘাটতি থাকলে হালকা সেচ দিতে হবে, জমিতে আগাছা পরিস্কার করতে হবে এবং একই সঙ্গে গাছের গোড়ায় মাটি তুলে দিতে হবে।

পাট

বৈশাখ মাস তোষা পাটের বীজ বোনার উপযুক্ত সময়। ও-৪ বা ফাল্গুনী তোষা ভালো জাত। স্থানীয় বীজ ডিলারদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জাতগুলো সংগ্রহ করতে পারেন। দো-আঁশ বা বেলে দো-আঁশ মাটিতে তোষা পাট ভালো হয়। বীজ বপনের আগে প্রতি কেজি বীজ ৪ গ্রাম ভিটাভেক্স বা ১৫০ গ্রাম রসুন পিষে বীজের সঙ্গে মিশিয়ে শুকিয়ে নিয়ে জমিতে সারিতে বা ছিটিয়ে বুনতে হবে। সারিতে বুনলে প্রতি শতাংশে ২৫ থেকে ৩০ গ্রাম বীজ প্রয়োজন হয়। তবে ছিটিয়ে বুনলে আরেকটু বেশি অর্থাৎ ৩৫ থেকে ৪০ গ্রাম বীজ প্রয়োজন হয়। ভালো ফলনের জন্য  শতাংশপ্রতি ৮০০ গ্রাম ইউরিয়া, ২০০ গ্রাম টিএসপি, ২৫০ গ্রাম এমওপি সার শেষ চাষের সময় মাটিতে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। জমিতে সালফার ও জিংকের অভাব থাকলে জমিতে সার দেয়ার সময়  শতাংশপ্রতি ৪০০ গ্রাম জিপসাম ও ৫০  কেজি দস্তা সার দিতে হবে। শতাংশপ্রতি ২০ কেজি গোবর সার ব্যবহার করলে রাসায়নিক সারের পরিমাণ অনেক কম লাগে।

আগে বোনা পাটের জমিতে আগাছা পরিষ্কার, ঘন চারা তুলে পাতলা করা, সেচ এসব কাজগুলো যথাযথভাবে করতে হবে। এ সময় পাটের জমিতে উড়চুঙ্গা ও চেলা পোকার আক্রমণ হতে পারে। সেচ দিয়ে মাটির উপযোগী কীটনাশক দিয়ে উড়চুঙ্গা দমন করতে হবে। চেলা পোকা আক্রান্ত গাছগুলো তুলে ফেলে দিতে হবে এবং জমি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। পোকা ছাড়াও পাটের জমিতে কা- পচা, কালপট্টি, নরম পচা, শিকড় গিট, হলদে সবুজ পাতা এসব রোগ দেখা দিতে পারে। নিড়ানি, আক্রান্ত গাছ বাছাই, বালাইনাশকের যৌক্তিক ব্যবহার করলে এসব রোগ থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া যায়।

শাকসবজি

এ মাসে বসতবাড়ির বাগানে জমি তৈরি করে ডাঁটা, কমলিশাক, পুঁইশাক, করলা, ঢেঁড়স, বেগুন, পটোল চাষের উদ্যোগ নিতে হবে। তাছাড়া মাদা তৈরি করে চিচিঙা, ঝিঙা, ধুন্দুল, শসা, মিষ্টি কুমড়া, চাল কুমড়ার বীজ বুনে দিতে পারেন। আগের তৈরি করা চারা থাকলে ৩০ থেকে ৩৫ দিনের সুস্থ সবল চারাও রোপণ করতে পারেন। এ সময়ের অধিকাংশ সবজিই লতানো, তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মাচা তৈরি করে নিতে হবে। লতানো সবজির দৈহিক বৃদ্ধি যত বেশি হবে তার ফুল ফল ধারণ ক্ষমতা তত কমে যায়। সেজন্য গাছের বাড়বাড়তি বেশি হলে লতার-গাছের ১৫ থেকে ২০ শতাংশের পাতা লতা কেটে দিতে হবে। এতে গাছে তাড়াতাড়ি ফুল ও ফল ধরবে। কুমড়া জাতীয় সব সবজিতে হাত পরাগায়ন বা কৃত্রিম পরাগায়ন অধিক ফলনে দারুণভাবে সহায়তা করবে। গাছে ফুল ধরা শুরু হলে প্রতিদিন ভোর বেলা সদ্য ফোটা পুরুষ ফুল সংগ্রহ করে পাপড়িগুলো ফেলে দিয়ে পরাগমু-টি স্ত্রী ফুলের গর্ভমু-ে ঘষে হাতপরাগায়ন নিশ্চিত করলে ফলন অনেক বেড়ে যাবে। এ মাসে কুমড়া জাতীয় ফসলে মাছি পোকা দারুণভাবে ক্ষতি করে থাকে। এক্ষেত্রে জমিতে খুঁটি বসিয়ে খুঁটির মাথায় বিষটোপ ফাঁদ দিলে বেশ উপকার হয়। এছাড়া সেক্স ফেরোমন ব্যবহার করেও এ পোকার আক্রমণ রোধ করা যায়। গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ করতে চাইলে বারি টমেটো ৪, বারি টমেটো ৫, বারি টমেটো ৬, বারি টমেটো ১০, বারি টমেটো ১১, বারি হাইব্রিড টমেটো ৪, বারি হাইব্রিড টমেটো ৫, বা বিনা টমেটো ১, বিনা টমেটো ২-এর চাষ করতে পারেন। গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ করতে হলে পলিথিনের ছাউনির ব্যবস্থা করতে হবে সে সঙ্গে এ ফসলটি সফলভাবে চাষের জন্য টমেটোটোন নামক হরমোন প্রয়োগ করতে হবে। স্প্রেয়ারের সাহায্যে প্রতি লিটার পানিতে ২০ মিলি টমেটোটোন মিশিয়ে ফুল আসার পর ফুলের গায়ে ৫ থেকে ৭ দিন পরপর ২ থেকে ৩ বার স্প্রে করতে হবে। একটু বেশি যত্ন এবং পরিচর্যা করলে অভাবনীয় ফলাফল পাওয়া যায়।

গাছপালা

এ মাসে আমের মাছি পোকাসহ অন্যান্য পোকার জন্য সতর্ক থাকতে হবে। মাছি পোকা দমনের জন্য সবজি খেতে যে রকম বিষটোপ ব্যবহার করা হয় সে ধরনের বিষটোপ বেশ কার্যকর। ডিপটরেক্স, ডারসবান, ডেনকাভেপন সামান্য পরিমাণ দিলে উপকার পাওয়া যায়। এ সময় কাঁঠালের  নরম পঁচা রোগ দেখা দেয়। এলাকায় এ রোগের প্রাদুর্ভাব থাকলে ফলে রোগ দেখা দেয়ার আগেই ফলিকুল ০.০৫% হারে বা ইন্ডোফিল এম-৪৫ বা রিডোমিল এম জেড-৭৫ প্রতি লিটার পানিতে ২.৫ গ্রাম হারে মিশিয়ে ৩ বার স্প্রে করতে হবে। নারিকেলের চারা এখন লাগাতে পারেন। ভালো জাতের সুস্থ সবল চারা ৬ থেকে ৮ মিটার দূরে লাগানো যায়। গর্ত হতে হবে দৈর্ঘে ১ ফুট, প্রস্থে ১ ফুট এবং গভীরতায় ১ ফুট। নারিকেলের চারা রোপণের ৫ থেকে ৭ দিন আগে প্রতি গর্তে জৈবসার ১০ কেজি, টিএসপি ৭৫০ গ্রাম, এমওপি ৫৫০ গ্রাম এবং জিপসাম ৫০০ গ্রাম ভালোভাবে গর্তের মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে হবে। বীজতলা থেকে যেদিন চারা উঠানো হবে সেদিনই জমিতে চারা রোপণ করা সবচেয়ে ভালো। অন্যথায় যতদ্রুত সম্ভব চারা রোপন করতে হবে। চারা রোপণের সময় চারাটিকে এমনভাবে গর্তে বসিয়ে মাটি চাপা দিতে হবে যাতে নারিকেলের পিঠের কেবল ইঞ্চিখানেক মাটির উপরে ভেসে থাকে এবং বাকিটা মাটির নিচে থাকে। গ্রামের রাস্তার পাশে পরিকল্পিতভাবে খেজুর ও তালের চারা এখন লাগাতে পারেন। যত্ন, পরিচর্যা নিশ্চিত করতে পারলে ২ থেকে ৩ বছরেই গাছগুলো অনেক বড় হয়ে যাবে। ভালো ফলনের জন্য এ সময় বৃক্ষ জাতীয় গাছের বিশেষ করে ফল গাছের প্রয়োজনীয় যত্ন নিতে হবে। মাতৃগাছের পরিচর্যা, আগাছা দমন, প্রয়োজনীয় সেচ দিলে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে। বৃষ্টি হয়ে গেলে পুরাতন বাঁশ ঝাড় পরিষ্কার করে কম্পোস্ট সার দিতে হবে এবং এখনই নতুন বাঁশ ঝাড় তৈরি করার কাজ হাতে নিতে হবে। যারা সামনের মৌসুমে গাছ লাগাতে চান তাদের এখনই জমি নির্বাচন, বাগানের নকশা প্রস্তুত এবং অন্যান্য প্রাথমিক কাজগুলো সেরে রাখতে হবে। 

প্রাণিসম্পদ

গরমকালে মুরগি পালনে যেসব সমস্যা দেখা দেয় তাহলো খাদ্য গ্রহণ, ব্রয়লারের দৈহিক ওজন বৃদ্ধির হার, লেয়ার ও ব্রিডারের ডিম উৎপাদনসহ ডিমের খোসার গুণগতমান কমে যায় এবং খামারে মুরগি মারা যাওয়ার হার বেড়ে যায়। সে কারণে ব্রুডার হাউসের শেডে বাচ্চা তোলার সঙ্গে সঙ্গে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি ও গ্লুকোজ খাওয়াতে হবে। আর লেয়ার হাউস ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে শেডের চাল বা ছাদে তাপ বিকিরণ করতে পারে এমন সাদা, অ্যালুমিনিয়িাম রঙ দেয়া প্রয়োজন। অতিরিক্ত গরমে পাইপ বা ঝরনার মাধ্যমে পানি ছিটানোর ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। ক্ষুদ্র খামারের ক্ষেত্রে চালের ওপরে পাটের চট দিয়ে পানি ছিটাতে হবে। প্রচ- গরমে খাবারের পানির সঙ্গে বরফ মেশানো দরকার। 

হাঁস মুরগির রোগ প্রতিরোধে নিয়মিত ভ্যাকসিন বা টিকা দেয়া জরুরি। সেজন্য মুরগির রানীক্ষেত, ব্রংকাইটিস, ফাউলপক্ষ, ফাউল কলেরা, ম্যারেক্স এবং হাঁসের প্লেগ ও কলেরা রোগের টিকা দেয়ার জন্য উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। 

গোখাদ্যের জন্য নেপিয়ার, বাজরা, প্যারা, ভুট্টা, ইপিল ইপিল এর চাষ করার ভালো সময় এখন। বাড়ির আশপাশে, পুকুর পাড়ে, রাস্তার ধারে, পতিত জায়গায় গোখাদ্যের চাষ করে লাভবান হওয়া যায়। গ্রীষ্মের দাবদাহে গবাদি পশুর জন্য অতিরিক্ত খাবার, বিশ্রাম, ঘরে আলো বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা, বেশি পানি খাওয়ানোসহ অন্যান্য কার্যক্রম সঠিকভাবে করতে হবে। এ সময় গবাদি পশুর তড়কা ও গলাফুলা রোগ প্রতিরোধ ও প্রতিকারের জন্য টিকা প্রদানসহ পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করতে হবে। 

মৎস্যসম্পদ

বৈশাখ মাস পুকুরে মাছ ছাড়ার উপযুক্ত সময়। ভালোভাবে পুকুর তৈরি করে অর্থাৎ সেচ, কাদা সরিয়ে, চুন প্রয়োগ করে, আগাছা পরিষ্কার, পানি দেয়া, পানি পরীক্ষা, পুকুর পাড়ে নিত্য পাতা ঝরা গাছ ছাঁটাই বা কেটে ফেলাসহ অন্যান্য কাজগুলো করতে হবে। এরপর প্রতি শতকে মিশ্রচাষের জন্য ৩০ থেকে ৪০টি ৪ থেকে ৫ ইঞ্চি বড় সুস্থ সবল পোনা ছাড়তে হবে। পানির ৩ স্তরের কথা বিবেচনা করে তেলাপিয়া, সরপুটি, নাইলোটিকা, কার্পজাতীয় মাছ, রুই, কাতল, মৃগেল কালো বাউস এবং সম্ভব হলে চিংড়ি পোনাও ছাড়া যাবে। পোনা সংগ্রহের সময় বিশ্বস্ত উৎস থেকে পোনা সংগ্রহ করতে হবে।

মে–জুন (জ্যৈষ্ঠ মাস)



বোরো ধান

জমির ধান শতকরা ৮০ ভাগ পেকে গেলে ধান সংগ্রহ করে কেটে মাড়াই, ঝাড়াই করে ভালোভাবে শুকিয়ে নিতে হবে। শুকনো বীজ ছায়ায় ঠাণ্ডা করে প্লাস্টিকের ড্রাম, বিস্কুটের টিন, মাটির কলসি এসবে সঠিকভাবে সংরক্ষণ করতে হবে।

আউশ ধান

এখনও আউশের বীজ বোনা না হয়ে থাকলে অতি দ্রুত বীজ বপন করতে হবে। চারার বয়স ১২ থেকে ১৫ দিন হলে ইউরিয়া সারের প্রথম কিস্তি হিসেবে একরপ্রতি ১৮ কেজি ইউরিয়া সার উপরিপ্রয়োগ করতে হবে। এর ১৫ দিন পর একই মাত্রায় দ্বিতীয় কিস্তি উপরিপ্রয়োগ করতে হবে। ইউরিয়া সারের কার্যকারিতা বাড়াতে জমিতে সার প্রয়োগের সময় ছিপছিপে পানি রাখাসহ জমি আগাছা মুক্ত রাখতে হবে।

আমন ধান

নিচু এলাকায় বোরো ধান কাটার ৭-১০ দিন আগে বোনা আমনের বীজ ছিটিয়ে দিলে বা বোরো ধান কাটার সাথে সাথে আমন ধানের চারা রোপণ করলে বন্যা বা বর্ষার পানি আসার আগেই চারা সতেজ হয়ে ওঠে এবং পানি বাড়ার সাথে সাথে সমান তালে বাড়ে। চারা রোপণের ১০-১৫ দিন পর সামান্য পরিমাণ ইউরিয়া ছিটিয়ে দিলে চারা তাড়াতাড়ি বাড়ে, ফলন ভালো হয়। এ মাসের মধ্যেই রোপা আমনের জন্য বীজতলা তৈরি করতে হবে। জমি উর্বর হলে সাধারণত কোনো রাসায়নিক সারের প্রয়োজন হয় না, তবে অনুর্বর হলে প্রতি বর্গমিটার বীজতলার জন্য ২ কেজি জৈবসার মাটির সাথে মিশিয়ে দিলে ভালো ফল পাওয়া যায়। প্রতি বর্গমিটার জমির জন্য ৮০ গ্রাম বীজের প্রয়োজন হয়। বীজ বোনার আগে অংকুরিত করে নিলে তাড়াতাড়ি চারা গজায়, এতে পাখি বা অন্য কারণে ক্ষতি কম হয়। ভালো চারা পাওয়ার জন্য বীজতলায় নিয়মিত সেচ দেয়া, অতিরিক্ত পানি নিকাশের ব্যবস্থা করা, আগাছা দমন, সবুজ পাতা ফড়িং ও থ্রিপসের আক্রমণ প্রতিহত করাসহ অন্য কাজগুলো সতর্কতার সাথে করতে হবে।

জ্যৈষ্ঠ মাসে আউস ও বোনা আমনের জমিতে পামরি পোকার আক্রমণ দেখা দেয়। পামরি পোকা ও এর কীড়া পাতার সবুজ অংশ খেয়ে গাছের অনেক ক্ষতি করে। আক্রমণের প্রাথমিক পর্যায়ে হাতজাল, গামছা, লুঙ্গি, মশারি দিয়ে পামরি পোকা ধরে মেরে ফেলে আক্রমণ কমানো যায়। তাছাড়া আক্রান্ত গাছের গোড়া থেকে ৫ সেন্টিমিটার (২ ইঞ্চি) রেখে বাকি অংশ কেটে কীড়া ও পোকা ধ্বংস করা যায়। আক্রমণ যদি বেশি হলে অনুমোদিত কীটনাশক সঠিক মাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে।

পাট

পাটের জমিতে আগাছা পরিষ্কার, ঘন ও দুর্বল চারা তুলে পাতলা করা, সেচ এসব কাজগুলো যথাযথভাবে করতে হবে। ফাল্গুনী তোষা জাতের জন্য একরপ্রতি ৪০ কেজি ইউরিয়া সার উপরিপ্রয়োগ করতে হবে। মাটিতে রস না থাকলে বা দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হলে হালকা সেচ দিতে হবে এবং বৃষ্টির করণে পানি জমে থাকলে তা নিকাশের ব্যবস্থা করতে হবে। পাটশাক যেমন সুস্বাদু তেমনি পুষ্টিকর। তাই নিড়ানির সময় তোলা অতিরিক্ত পাটের চারা ফেলে না দিয়ে শাক হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এ মাসে পাটের বিছা পোকা এবং ঘোড়া পোকা জমিতে আক্রমণ করে থাকে। বিছা পোকা দলবদ্ধভাবে পাতা ও ডগা খায়, ঘোড়া পোকা গাছের কচি পাতা ও ডগা খেয়ে পাটের অনেক ক্ষতি করে থাকে। বিছা পোকা ও ঘোড়া পোকার আক্রমণ রোধ করতে পোকার ডিমের গাদা, পাতার নিচ থেকে পোকা সংগ্রহ করে মেরে বা পুড়িয়ে ফেলতে হবে। জমিতে ডালপালা পুঁতে দিলে পোকা খাদক পাখি যেমন শালিক, ফিঙ্গে এসব পোকা খেয়ে আমাদের দারুণ উপকার করে। আক্রমণ বেশি হলে অনুমোদিত কীটনাশক সঠিকভাবে, সঠিক সময়ে, সঠিক মাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে।

শাকসবজি

মাঠে বা বসতবাড়ির আঙিনায় গ্রীষ্মকালীন শাকসবজির পরিচর্যা সতর্কতার সাথে করতে হবে। এ সময় সারের উপরিপ্রয়োগ, আগাছা পরিষ্কার, গোড়ায় বা কেলিতে মাটি তুলে দেয়া, লতা জাতীয় সবজির জন্য বাউনি বা মাচার ব্যবস্থা করা খুব জরুরি। লতানো সবজির দৈহিক বৃদ্ধি যত বেশি হবে তার ফুল ফল ধারণ ক্ষমতা তত কমে যায়। সেজন্য বেশি বৃদ্ধি সমৃদ্ধ লতার ১৫-২০ শতাংশের কেটে দিলে তাড়াতাড়ি ফুল ও ফল ধরবে।

কুমড়া জাতীয় সব সবজিতে হাত পরাগায়ন বা কৃত্রিম পরাগায়ন অধিক ফলনে দারুণভাবে সহায়তা করবে। গাছে ফুল ধরা শুরু হলে প্রতিদিন হাতপরাগায়ন নিশ্চিত করলে ফলন অনেক বেড়ে যাবে। এ মাসে কুমড়া জাতীয় ফসলে মাছি পোকা দারুণভাবে ক্ষতি করে থাকে। এক্ষেত্রে জমিতে খুঁটি বসিয়ে খুঁটির মাথায় বিষটোপ ফাঁদ দিলে বেশ উপকার হয়। এছাড়া সেক্স ফেরোমন ব্যবহার করেও এ পোকার আক্রমণ রোধ করা যায়।

সবজিতে ফল ছিদ্রকারী পোকা, জাব পোকা, বিভিন্ন বিটল পোকা সবুজ পাতা খেয়ে ফেলতে পারে। হাত বাছাই, পোকা ধরার ফাঁদ, ছাই ব্যবহার করে এসব পোকা দমন করা যায়। তাছাড়া আক্রান্ত অংশ কেটে ফেলে এবং সর্বশেষ ব্যবস্থা হিসেবে বালাইনাশক ব্যবহার করতে হবে। মাটির জো অবস্থা বুঝে প্রয়োজনে হালকা সেচ দিতে হবে। সে সাথে পানি নিকাশের ব্যবস্থা সতর্কতার সাথে অনুসরণ করতে হবে।

বিবিধ

বাড়ির কাছাকাছি উঁচু এমনকি আধা ছায়াযুক্ত জায়গায় আদা হলুদের চাষ করতে পারেন। মাঠের মিষ্টি আলু, চীনাবাদাম বৃষ্টি শুরু হওয়ার আগেই তুলে ফেলতে হবে। গ্রীষ্মকালীন মুগডালের চাষও এ মাসে করতে পারেন। পতিত বা আধা ছায়াযুক্ত স্থানে অনায়াসে লতিরাজ বা পানি কচু বা অন্যান্য উপযোগী কচুর চাষ করতে পারেন। যারা সবুজ সার করার জন্য ধইঞ্চা বা অন্য গাছ লাগিয়ে ছিলেন, তাদের চারার বয়স ৩৫-৪৫ দিন হলে চাষ ও মই দিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। সবুজ সার মাটিতে মেশানোর ৭/১০ দিন পরই ধান বা অন্যান্য চারা রোপণ করতে পারবেন।

গাছপালা

আগামী মাসে চারা লাগানোর জন্য জায়গা নির্বাচন, গর্ত তৈরি ও গর্ত প্রস্তুতি, সারের প্রাথমিক প্রয়োগ, চারা নির্বাচন এ কাজগুলো এ মাসেই শেষ করে ফেলতে হবে। উপযুক্ত মাতৃগাছ থেকে ভালোবীজ সংগ্রহ করে নারিকেল, সুপারির বীজ বীজতলায় এখন লাগাতে পারেন।

প্রাণিসম্পদ

এ সময়ে প্রাণিচিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে হাঁস মুরগির ভ্যাকসিন দিতে হবে।

এছাড়া হাঁস মুরগির কৃমির জন্য ওষুধ খাওয়ানো, ককসিডিয়া রোগ হলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহাণ এবং জরুরিভাবে অন্যান্য প্রতিষেধক টিকা দিয়ে দিতে হবে। মুরগি ও হাঁসের বাচ্চা ফোটানোর কাজটি ভরা বর্ষার আগেই সেরে ফেলতে হবে। বর্ষার নিয়মিত এবং পরিমিত গো-খাদ্যের জোগান নিশ্চিত করাসহ অন্যান্য কাজগুলো সঠিকভাবে করতে হবে। গবাদি পশুর গলাফোলা, ডায়রিয়া, ক্ষুরারোগ, নিউমোনিয়াসহ অন্যান্য রোগের ব্যাপারে টিকা দেয়াসহ প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিতে হবে।

মৎস্যসম্পদ

মাছ প্রজননে আগ্রহী চাষিভাইদের স্ত্রী-পুরুষ মাছ (ব্রুড ফিশ), পিটুইটারি গ্রন্থি, হাপা এবং ইনজেকশনের সরঞ্জামাদি প্রস্তুত রাখতে হবে। আঁতুড় পুকুর বন্যায় ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা থাকলে পাড় উঁচু করে বেঁধে দিতে হবে। আঁতুড় পুকুরে পোনার আকার ১ ইঞ্চি হলে সাবধানে ধরে চারা পুকুরে ছাড়ার ব্যবস্থা করতে হবে। নিয়মিত তদারকি, রাক্ষুসে মাছ তোলা, আগাছা বা জংলা পরিষ্কার, খাবার দেয়া, সার দেয়া, সম্পূরক খাবার দেয়া, জাল টেনে মাছের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা এসব প্রাসঙ্গিক কাজগুলো নিয়মিত করতে হবে। 

জুন-জুলাই (আষাঢ় মাস)



গ্রীষ্মের দাবদাহের পর প্রশান্তির বৃষ্টি নেমে আসে ধরণীকে শীতল করে বর্ষাকাল। এই ঋতুর প্রথম মাস আষাঢ়। খাল-বিল, নদী-নালা, পুকুর, ডোবা ভরে ওঠে নতুন পানির জোয়ারে। গাছপালা ধুয়ে মুছে চকচকে সবুজ হয়, কদমফুলের ঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। প্রাচীন কৃষি শুরু হতোই মূলত এই মাসে। কারণ তখন মানুষ কৃষিতে পুরোপুরি প্রকৃতি নির্ভর ছিল। চেয়ে থাকতে হতো বৃষ্টির দিকে। আষাঢ়ের বৃষ্টি নামলেই শুরু হয় কৃষকের ব্যস্ততা। তবে এখন কৃষিতে অনেক বৈচিত্র্য এসেছে। ফলে বছরের প্রথম বৃষ্টির পর বেড়েছে কৃষকের কাজও। জেনে নেওয়া যাক এই মাসে কৃষকের অবশ্যকরণীয় কাজগুলো:

আউশ ধান

আউশ ধানের ক্ষেতের আগাছা পরিষ্কার করতে হবে এবং প্রয়োজনীয় অন্যান্য যত্ন নিতে হবে; আইপিএমের  মাধ্যমে রোগ ও পোকামাকড় দমন করতে হবে; বন্যার আশঙ্কা হলে আগাম রোপণ করা আউশ ধান শতকরা ৮০ ভাগ পাকলেই কেটে মাড়াই-ঝাড়াই করে শুকিয়ে যথাযথভাবে সংরক্ষণ করতে হবে।

আমন ধান

পানিতে ডুবে না এমন উঁচু খোলা জমিতে বীজতলা তৈরি করতে হবে। বন্যার কারণে রোপা আমনের বীজতলা করার মতো জায়গা না থাকলে ভাসমান বীজতলা বা দাপগ পদ্ধতিতে বীজতলা করে চারা উৎপাদন করতে হবে;

বীজতলায় বীজ বপন করার আগে ভালো জাতের সুস্থ সবল বীজ নির্বাচন করতে হবে। রোপা আমনের উন্নত জাত যেমন বিআর১০, বিআর২৫, ব্রি ধান৩০, ব্রি ধান৩১, ব্রি ধান৩২, ব্রি ধান৩৩, ব্রি ধান৩৪, ব্রি ধান৩৭, ব্রি ধান৩৮, ব্রি ধান৩৯, ব্রি ধান৪০, ব্রি ধান৪১। এছাড়া লবণাক্ত জমিতে ব্রি ধান৪৪ চাষ করতে পারেন;

খরাপ্রবণ এলাকাতে নাবি রোপার পরিবর্তে যথাসম্ভব আগাম রোপা আমনের (ব্রি ধান৩৩, ব্রি ধান ৩৯ এসব) চাষ করতে হবে;

ভালো চারা পেতে প্রতি বর্গমিটার বীজতলার জন্য ২ কেজি গোবর, ১০ গ্রাম ইউরিয়া এবং ১০ গ্রাম জিপসাম প্রয়োগ করতে হবে; আষাঢ় মাসে রোপা আমন ধানের চারা রোপণ শুরু করা যায়;

মূল জমিতে শেষ চাষের সময় হেক্টরপ্রতি ৯০ কেজি টিএসপি, ৭০ কেজি এমওপি, ১১ কেজি দস্তা এবং ৬০ কেজি জিপসাম দিতে হবে; জমিতে চারা সারি করে রোপণ করতে হবে। এতে পরবর্তী পরিচর্যা বিশেষ করে আগাছা দমন সহজ হবে;

জমির এক কোণে মিনি পুকুর খনন করে বৃষ্টির পানি ধরে রাখার ব্যবস্থা করতে পারেন, যেন পরবর্তীতে সম্পূরক সেচ নিশ্চিত করা যায়।

পাট

পাট গাছের বয়স চার মাস হলে ক্ষেতের পাট গাছ কেটে নিতে হবে; পাট কাটার পর চিকন ও মোটা পাট গাছ আলাদা করে আঁটি বেঁধে দুই-তিন দিন দাঁড় করিয়ে রাখতে হবে; পাতা ঝরে গেলে ৩-৪ দিন পাট গাছগুলোর গোড়া একফুট পানিতে ডুবিয়ে রাখার পর পরিষ্কার পানিতে জাগ দেিত হবে।

পাট পচে গেলে পানিতে আঁটি ভাসিয়ে আঁশ ছাড়ানোর ব্যবস্থা নিতে হবে। এতে পাটের আঁশের গুণাগুণ ভালো থাকবে। ছাড়ানো আঁশ পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে বাঁশের আড়ে শুকাতে হবে।

যেসব জায়গায় জাগ দেয়ার পানির অভাব সেখানে রিবন রেটিং পদ্ধতিতে পাট পচাতে পারেন। এতে আঁশের মান ভালো হয় এবং পচন সময় কমে যায়।    

পাটের বীজ উৎপাদনের জন্য ১০০ দিন বয়সের পাট গাছের এক থেকে দেড় ফুট ডগা কেটে নিয়ে দুটি গিটসহ ৩-৪ টুকরা করে ভেজা জমিতে দক্ষিণমুখী কাত করে রোপণ করতে হবে। রোপণ করা টুকরোগুলো থেকে ডালপালা বের হয়ে নতুন চারা হবে। পরবর্তীতে এসব চারায় প্রচুর ফল ধরবে এবং তা থেকে বীজ পাওয়া যাবে।

ভুট্টা

পরিপক্ব হওয়ার পর বৃষ্টিতে নষ্ট হবার আগে মোচা সংগ্রহ করে ঘরের বারান্দায় সংগ্রহ করতে পারেন। রোদ হলে শুকিয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে; মোচা পাকতে দেরি হলে মোচার আগা চাপ দিয়ে নি¤œমুখী করে দিতে হবে, এতে বৃষ্টিতে মোচা নষ্ট হবে না।

শাকসবজি

ডাঁটা, গিমাকলমি, পুঁইশাক, চিচিঙ্গা, ধুন্দুল, ঝিঙা, শসা, ঢেঁড়স, বেগুনের গোড়ার আগাছা পরিষ্কার করতে হবে এবং প্রয়োজনে মাটি তুলে দিতে হবে। এছাড়া বন্যার পানি সহনশীল লতিরাজ কচুর আবাদ করতে পারেন;

উপকূলীয় অঞ্চলে ঘেরের পাড়ে গিমাকলমি ও অন্যান্য ফসল আবাদ করতে পারেন;

সবজি ক্ষেতে পানি জমতে দেয়া যাবে না। পানি জমে গেলে সরানোর ব্যবস্থা নিতে হবে;

তাড়াতাড়ি ফুল ও ফল ধরার জন্য বেশি বৃদ্ধি সমৃদ্ধ লতা জাতীয় গাছের ১৫-২০ শতাংশের লতা পাতা কেটে দিতে হবে;

কুমড়া জাতীয় সব সবজিতে হাত পরাগায়ন বা কৃত্রিম পরাগায়ন করতে হবে। গাছে ফুল ধরা শুরু হলে প্রতিদিন ভোরবেলা হাতপরাগায়ন নিশ্চিত করলে ফলন অনেক বেড়ে যাবে;

আগাম জাতের শিম এবং লাউয়ের জন্য প্রায় ৩ ফুট দূরে দূরে ৩০.৪৮ সে.মি. (১ ফুট) চওড়া ও ৩০.৪৮ সে.মি. (১ ফুট) গভীর করে মাদা তৈরি করতে হবে। মাদা তৈরির সময় গর্তপ্রতি ১০ কেজি গোবর, ২০০ গ্রাম সরিষার খৈল, ২ কেজি ছাই, ১০০ গ্রাম টিএসপি ভালভাবে মাদার মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। এরপর প্রতি গাদায় ৩-৪টি ভালো সবল বীজ রোপণ করতে হবে।

গাছপালা

এ সময়টা গাছের চারা রোপণের জন্য খুবই উপযুক্ত। বসতবাড়ির আশপাশে, খোলা জায়গায়, চাষাবাদের অনুপযোগী পতিত জমিতে, রাস্তাঘাটের পাশে, পুকুর পাড়ে, নদীর তীরে গাছের চারা বা কলম রোপণের উদ্যোগ নিতে হবে; চারা রোপণের আগে গর্ত তৈরি করতে হবে;

সাধারণ হিসাব অনুযায়ী এক ফুট চওড়া ও এক ফুট গভীর গর্ত করে গর্তের মাটির সাথে ১০০ গ্রাম করে টিএসপি ও এমওপি সার মিশিয়ে, দিন দশের পরে চারা বা কলম লাগাতে হবে;

বৃক্ষ রোপণের ক্ষেত্রে উন্নত জাতের রোগমুক্ত সুস্থ সবল চারা বা কলম রোপন করতে হবে;  

চারা রোপণের পর শক্ত খুঁটির দিয়ে চারা বেঁধে দিতে হবে। এরপর বেড়া বা খাঁচা দিয়ে চারা রক্ষা করা, গোড়ায় মাটি দেয়া, আগাছা পরিষ্কার, সেচনিকাশ নিশ্চিত করতে হবে; মাতৃগাছ ব্যবস্থাপনার বিষয়টি খুব জরুরি। সার প্রয়োগ, আগাছা পরিষ্কার, দুর্বল রোগাক্রান্ত ডালপালা কাটা বা ছেটে দেয়ার কাজ সুষ্ঠুভাবে করতে হবে।

প্রাণিসম্পদ

বর্ষাকালে হাঁসমুরগির ঘর যাতে জীবাণুমুক্ত ও আলো-বাতাসপূর্ণ থাকে সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে;

হাঁস-মুরগির কৃমি, কলেরা, রক্ত আমাশা, পুলরাম রোগ, সংক্রমণ সর্দি দেখা দিতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে; হাঁস-মুরগিকে ভেজা স্যাঁতসেঁতে জয়গায় না রেখে শুকনো ঘরে রাখতে হবে এবং মাঝে মধ্যে জীবাণুনাশক স্প্রে করতে হবে;

বর্ষাকালে গবাদিপশুকে সংরক্ষণ করা খড়, শুকনো ঘাস, ভুসি, কুঁড়া খেতে দিতে হবে। সে সাথে কাঁচা ঘাস খাওয়াতে হবে; মাঠ থেকে সংগৃহীত সবুজ ঘাস ভালোভাবে পরিষ্কার না করে খাওয়ানো যাবে না;

বর্ষাকালে গবাদিপশুর গলাফোল, তড়কা, বাদলা, ক্ষুরা রোগ মহামারি আকারে দেখা দিতে পারে। এ জন্য প্রতিষেধক টিকা দিতে হবে; কৃমির আক্রমণ রোধ করার জন্য কৃমিনাশক ওষুধ খাওয়াতে হবে;

হাল চাষের পর গরুকে ভালো করে ধুয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে; এছাড়া যে কোনো পরামর্শের জন্য উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসে যোগাযোগ করতে পারেন।

মৎস্য সম্পদ

বর্ষা মৌসুমে পুকুরের পাড় উঁচু করে দিতে হবে; বন্যার সময় পুকুরে মাছ আটকানোর জন্য জাল, বাঁশের চাটাই দিয়ে ঘেরা দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে; আষাঢ় মাস মাছের পোনা ছাড়ার উপযুক্ত সময়। মাছ চাষের জন্য মিশ্র পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারেন; পুকুরে নিয়মিত খাবার দিতে হবে এবং জাল টেনে মাছের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে; বড় পুকুরে, হাওরে, বিলে, নদীতে খাঁচায় মাছ চাষ করতে পারেন।

জুলাই- আগস্ট (শ্রাবণ মাস)



আউশ

এ সময় আউশ ধান পাকে। রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে পাকা আউশ ধান কেটে মাড়াইঝাড়াই করে শুকিয়ে নিতে হবে।

বায়ুরোধী পাত্রে সংরক্ষণ করতে হবে।

বীজ ধান হিসেবে সংরক্ষণ করতে হলে লাগসই প্রযুক্তিগুলো ব্যবহার করলে ভবিষ্যৎ ভালো বীজ পাওয়া যাবে।

আমন ধান

শ্রাবণ মাস আমন ধানের চারা রোপণের ভরা মৌসুম। চারার বয়স ৩০ থেকে ৪০ দিন হলে জমিতে রোপণ করতে হবে।

রোপা আমনের আধুনিক এবং উন্নত জাতগুলো হলো বিআর৩, বিআর৮, বিআর৫, বিআর১০, বিআর২২, বিআর২৩, বিআর২৫, ব্রি ধান৩০, ব্রি ধান৩১, ব্রি ধান৩২, ব্রি ধান৩৩, ব্রি ধান৩৪, ব্রি ধান৩৭, ব্রি ধান৩৮, ব্রি ধান৩৯, বিনাশাইল, নাইজারশাইল, বিনাধান৪ এসব।

উপকূলীয় অঞ্চলে সম্ভাব্য ক্ষেত্রে উপযোগী উফশী জাতের (ব্রি ধান৪০, ব্রি ধান৪১, ব্রি ধান৪৪, ব্রি ধান৫৩, ব্রি ধান৫৪, ব্রি ধান৫৬, ব্রি ধান৫৭, ব্রি ধান৬২ এসব) চাষ করতে পারেন।

খরা প্রকোপ এলাকায় নাবি রোপা আমনের পরিবর্তে যথাসম্ভব আগাম রোপা আমন (ব্রি ধান৫৩, ব্রি ধান৫৪) চাষ করতে পারেন। সে সঙ্গে জমির এক কোণে গর্ত করে পানি ধরে রাখার ব্যবস্থা করতে পারেন। আমন ধানের ক্ষেতে সুষম সার প্রয়োগ করতে হবে। এজন্য জমির উর্বরতা অনুসারে রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হবে।

ইউরিয়া ছাড়া অন্যান্য সার শেষ চাষের সময় জমিতে প্রয়োগ করতে হবে।

চারা রোপণের ১২ থেকে ১৫ দিন পর প্রথমবার ইউরিয়া সার ক্ষেতে উপরিপ্রয়োগ করতে হবে। প্রথম উপরিপ্রয়োগের ১৫ থেকে ২০ দিন পর দ্বিতীয়বার এবং তার ১৫ থেকে ২০ দিন পর তৃতীয়বার ইউরিয়া সার উপরিপ্রয়োগ করতে হবে।

গুটি ইউরিয়া ব্যবহার করলে চারা লাগানোর ১০ দিনের মধ্যে প্রতি চার গুছির জন্য ১৮ গ্রামের ১টি গুটি ব্যবহার করতে হবে। এজন্য চারা লাইনে রোপণ করতে হবে।

পোকা নিয়ন্ত্রণের জন্য ধানের ক্ষেতে বাঁশের কঞ্চি বা ডাল পুঁতে দিতে পারেন যাতে পাখি বসতে পারে এবং এসব পাখি পোকা ধরে খেতে পারে।

পাট

ক্ষেতের অর্ধেকের বেশি পাট গাছে ফুল আসলে পাট কাটতে হবে। এতে আঁশের মান ভালো হয় এবং ফলনও ভালো পাওয়া যায়।

পাট পচানোর জন্য আঁটি বেঁধে পাতা ঝড়ানোর ব্যবস্থা নিতে হবে তারপর জাগ দিতে হবে।

ইতোমধ্যে পাট পচে গেলে তা আঁশ ছাড়ানোর ব্যবস্থা নিতে হবে। পাটের আঁশ ছাড়িয়ে ভালো করে ধোয়ার পর ৪০ লিটার পানিতে এককেজি তেঁতুল গুলে তাতে আঁশ ৫-১০ মিনিট ডুবিয়ে রাখতে হবে, এতে উজ্জ্বল বর্ণের পাট পাওয়া যায়।

যেসব জায়গায় জাগ দেয়ার পানির অভাব সেখানে রিবন রেটিং পদ্ধতিতে পাট পচাতে পারেন। এতে আঁশের মান ভালো হয় এবং পচন সময় কমে যায়। তবে মনে রাখতে হবে পাট কাটার সঙ্গে সঙ্গে ছালকরণ করতে হবে, তা না হলে পরবর্তীতে রৌদ্রে পাটগাছ শুকিয়ে গেলে ছালকরণে সমস্যা হবে।

বন্যার কারণে অনেক সময় সরাসরি পাটগাছ থেকে বীজ উৎপাদন সম্ভব হয় না। তাই পাটের ডগা বা কা- কেটে উঁচু জায়গায় লাগিয়ে তা থেকে খুব সহজেই বীজ উৎপাদন করার ব্যবস্থা নিতে হবে।

তুলা

রংপুর, দিনাজপুর অঞ্চলে আগাম শীত আসে, সে জন্য এসব অঞ্চলে এ মাসের মধ্যে তুলার বীজ বপন করতে হবে।

শাকসবজি

বর্ষাকালে শুকনো জায়গার অভাব হলে টব, মাটির চাড়ি, কাঠের বাক্স এমনকি পলিথিন ব্যাগে সবজির চারা উৎপাদনের ব্যবস্থা নিতে হবে।

এ মাসে সবজি বাগানে করণীয় কাজগুলোর মধ্যে রয়েছে মাদায় মাটি দেয়া, আগাছা পরিষ্কার, গাছের গোড়ায় পানি জমতে না দেয়া, মরা বা হলুদ পাতা কেটে ফেলা, প্রয়োজনে সারের উপরিপ্রয়োগ করা।

লতানো সবজির দৈহিক বৃদ্ধি যত বেশি হবে তার ফুল ফল ধারণক্ষমতা তত কমে যায়। সেজন্য বেশি বৃদ্ধি সমৃদ্ধ লতা গাছের ১৫ থেকে ২০ শতাংশের পাতা লতা কেটে দিলে তাড়াতাড়ি ফুল ও ফল ধরবে।

কুমড়া জাতীয় সব সবজিতে হাত পরাগায়ন বা কৃত্রিম পরাগায়ন অধিক ফলনে দারুণভাবে সহায়তা করবে। গাছে ফুল ধরা শুরু হলে প্রতিদিন ভোরবেলা হাতপরাগায়ন নিশ্চিত করলে ফলন অনেক বেড়ে যাবে। গত মাসে শিম ও লাউয়ের চারা রোপণের ব্যবস্থা না নিয়ে থাকলে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। আগাম জাতের শিম এবং লাউয়ের জন্য প্রায় ৩ ফুট দূরে দূরে ১ ফুট চওড়া ও ১ ফুট গভীর করে মাদা তৈরি করতে হবে। বর্ষায় পানি যেন মাদার কোনো ক্ষতি করতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। সম্ভব হলে মাঁচার ব্যবস্থা করতে হবে।

গাছপালা

এখন সারা দেশে গাছ রোপণের কাজ চলছে। ফলদ, বনজ এবং ঔষধি বৃক্ষজাতীয় গাছের চারা বা কলম রোপণের ব্যবস্থা নিতে হবে।

উপযুক্ত স্থান নির্বাচন করে একহাত চওড়া এবং একহাত গভীর গর্ত করে অর্ধেক মাটি এবং অর্ধেক জৈবসারের সঙ্গে ১০০ গ্রাম টিএসপি এবং ১০০ গ্রাম এমওপি ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে। সার ও মাটির এ মিশ্রণ গর্ত ভরাট করে রেখে দিতে হবে। দিন দশেক পরে গর্তে চারা বা কলম রোপণ করতে হবে।

ভালো জাতের সুস্থ্য স্বাস্থ্যবান চারা রোপণ করতে হবে। চারা রোপণের পর গোড়ার মাটি তুলে দিতে হবে এবং খুঁটির সাথে সোজা করে বেঁধে দিতে হবে।

গরু ছাগলের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য রোপণ করা চারার চারপাশে বেড়া দিতে হবে।

প্রাণিসম্পদ

আর্দ্র আবহাওয়ায় পোলট্রির রোগবালাই বেড়ে যায়। তাই সতর্ক থাকতে হবে এবং প্রতিরোধ ব্যবস্থা হিসেবে খামার জীবাণুমুক্তকরণ, ভ্যাকসিন প্রয়োগ, বায়োসিকিউরিটি এসব কাজগুলো সঠিকভাবে করতে হবে। বায়োসিকিউরিটির জন্য খামারকর্মীদের জীবাণুমুক্ত জুতা ও এপ্রোন পরে খামারে ঢোকা, কমবয়সী বাচ্চার বেশি যতœ নেয়া, শেডে জীবাণুনাশক পানি স্প্রে করা, মুরগির বিষ্ঠা ও মৃত মুরগি খামার থেকে দূরে মাটিতে পুঁতে ফেলা, পোলট্রি শেডের ঘরের মেঝে কস্টিক সোডার পানির দ্রবণ দিয়ে ভিজিয়ে পরিষ্কার করা। আর্দ্র আবহাওয়ায় পোলট্রি ফিডগুলো অনেক সময়ই জমাট বেঁধে যায়। সেজন্য পোলট্রি ফিডগুলো মাঝে মাঝে রোদ দিতে হবে।

বর্ষাকালে হাঁস মুরগিতে আফলাটক্সিন এর প্রকোপ বাড়ে। এতে হাঁস মুরগির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। এজন্য সূর্যমুখীর খৈল, সয়াবিন মিল, মেইজ গ্লুটেন মিল, সরিষার খৈল, চালের কুঁড়া এসব ব্যবহার করা ভালো। গবাদিপশুকে পানি খাওয়ানোর ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। কারণ দূষিত পানি খাওয়ালে নানা রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।

ক্ষুরা, বাদলা, তড়কা, গলাফুলা রোগের প্রতিষেধক দিতে হবে। গোখাদ্যের জন্য রাস্তার পাশে, পুকুর পাড়ে বা পতিত জায়গায় ডালজাতীয় শস্যের আবাদ করতে হবে। গরু, মহিষ ও ছাগল ভেড়াকে যতটা সম্ভব উঁচু জায়গায় রাখতে হবে।

গর্ভবর্তী গাভী ও বাছুরের বিশেষ যতœ নিতে হবে। বাছুরের পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে। এজন্য নিয়মিত দুধ ও মিল্ক রিপ্লেসার খাওয়ানোর পাশাপাশি পর্যাপ্ত পানি খাওয়াতে হবে।

মৎস্যসম্পদ

চারা পুকুরের মাছ ৫ থেকে ৭ সেন্টিমিটার পরিমাণ বড় হলে মজুদ পুকুরে ছাড়ার ব্যবস্থা নিতে হবে।

সঙ্গে সঙ্গে গত বছর মজুদ পুকুরে ছাড়া মাছ বিক্রি করে দিতে হবে।

পানি বৃদ্ধির কারণে পুকুর থেকে মাছ যাতে বেরিয়ে না যেতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এজন্য পুকুরের পাড় বেঁধে উঁচু করে দিতে হবে অথবা জাল দিয়ে মাছ আটকিয়ে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।

পানি বেড়ে গেলে মাছের খাদ্যের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এ সময় পুকুরে প্রয়োজনীয় খাদ্য সরবরাহ করতে হবে।

জাল টেনে মাছের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে।

আগস্ট-সেপ্টেম্বর (ভাদ্র মাস)



আমন ধান

আমন ধান ক্ষেতের অন্তর্বর্তীকালীন যত্ন নিতে হবে। ক্ষেতে আগাছা জন্মালে তা পরিষ্কার করে ইউরিয়া সার উপরিপ্রয়োগ করতে হবে। আমন ধানের জন্য প্রতি একর জমিতে ৮০ কেজি ইউরিয়া সার প্রয়োজন হয়। এ সার তিনভাগ করে প্রথম ভাগ চারা লাগানোর ১৫-২০ দিন পর, দ্বিতীয় ভাগ ৩০-৪০ দিন পর এবং তৃতীয় ভাগ ৫০-৬০ দিন পর প্রয়োগ করতে হবে। নিচু জমি থেকে পানি নেমে গেলে এসব জমিতে এখনো আমন ধান রোপণ করা যাবে। দেরিতে রোপণের জন্য বিআর ২২, বিআর ২৩, ব্রি ধান৪৬, বিনাশাইল, নাইজারশাইল বা স্থানীয় উন্নত ধান বেশ উপযোগী। দেরিতে চারা রোপণের ক্ষেত্রে প্রতি গুছিতে ৫-৭টি চারা দিয়ে ঘন করে রোপণ করতে হবে। আমন মৌসুমে মাজরা, পামরি, চুঙ্গী, গলমাছি পোকার আক্রমণ হতে পারে। এছাড়া খোলপড়া, পাতায় দাগ পরা রোগ দেখা দিতে পারে। এক্ষেত্রে নিয়মিত জমি পরিদর্শন করে, জমিতে খুঁটি দিয়ে, আলোর ফাঁদ পেতে, হাতজাল দিয়ে পোকা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তাছাড়া সঠিক বালাইনাশক সঠিক মাত্রায়, সঠিক নিয়মে, সঠিক সময় শেষ কৌশল হিসাবে ব্যবহার করতে হবে।

পাট

বন্যায় তোষা পাটের বেশ ক্ষতি হয়। এতে ফলনের সাথে সাথে বীজ উৎপাদনেও সমস্যা সৃষ্টি হয়। বীজ উৎপাদনের জন্য ভাদ্রের শেষ পর্যন্ত দেশি পাট এবং আশ্বিনের মাঝামাঝি পর্যন্ত তোষা পাটের বীজ বোনা যায়। বন্যার পানি উঠে না এমন সুনিষ্কাশিত উঁচু জমিতে জো বুঝে  লাইনে বুনলে প্রতি শতাংশে ১০ গ্রাম আর ছিটিয়ে বুনলে ১৬ গ্রাম বীজের প্রয়োজন হয়। জমি তৈরির সময় শেষ চাষে শতকপ্রতি ২৭০ গ্রাম ইউরিয়া, ৪০০ গ্রাম টিএসপি, ১৬০ গ্রাম এমওপি সার দিতে হবে। পরবর্তীতে শতাংশপ্রতি ইউরিয়া ২৭০ গ্রাম করে দুই কিস্তিতে বীজ বপনের ২০-২৫ দিন এবং ৪০-৪৫ দিন পর জমিতে দিতে হবে।

আখ

এসময় আখ ফসলে লালপচা রোগ দেখা দিতে পারে। লালপচা রোগের আক্রমণ হলে আখের কাণ্ড পচে যায় এবং হলদে হয়ে শুকিয়ে যেতে থাকে। এজন্য আক্রান্ত আখ তুলে পুড়িয়ে ফেলতে হবে এবং জমিতে যাতে পানি না জমে সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। এছাড়া রোগমুক্ত বীজ বা শোধন করা বীজ ব্যবহার করলে অথবা রোগ প্রতিরোধী জাত চাষ করলে লালপচা রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। লালপচা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন কয়েকটি আখের জাত হচ্ছে ঈশ্বরদী ১৬, ঈশ্বরদী ২০, ঈশ্বরদী ৩০।

তুলা

ভাদ্র মাসের প্রথম দিকেই তুলার বীজ বপন কাজ শেষ করতে হবে। বৃষ্টির ফাঁকে জমির জো অবস্থা বুঝে ৩-৪টি চাষ ও মই দিয়ে জমি তৈরি করে বিঘা প্রতি প্রায় ২ কেজি তুলা বীজ বপন করতে হয়। লাইন থেকে লাইনের দূরত্ব ৬০ থেকে ৯০   সেন্টিমিটার এবং বীজ থেকে বীজের দূরত্ব ৩০ থেকে ৪৫ সেন্টিমিটার বজায় রাখতে হয়। তুলার বীজ বপনের সময় খুব সীমিত। হাতে সময় না থাকলে জমি চাষ না দিয়ে নিড়ানি বা আগাছা নাশক প্রয়োগ করে ডিবলিং পদ্ধতিতে বীজ বপন করা যায়। বীজ গজানোর পর কোদাল দিয়ে সারির মাঝখানের মাটি আলগা করে দিতে হবে। সমতল এলাকার জন্য সিবি-৯, সিবি-১২, হীরা হাইব্রিড রূপালী-১, ডিএম-২, ডিএম-৩ অথবা শুভ্র জাতের চাষ করতে পারেন। এছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে পাহাড়ি তুলা-১ এবং পাহাড়ি তুলা-২ নামে উচ্চফলনশীল জাতের তুলা চাষ করতে পারেন।

শাকসবজি

ভাদ্র মাসে লাউ ও শিমের বীজ বপন করা যায়। এজন্য ৪-৫ মিটার দূরে দূরে ৭৫ সেমি. চওড়া এবং ৬০ সে.মি গভীর করে মাদা বা গর্ত তৈরি করতে হবে। এরপর প্রতি মাদায় ২০ কেজি গোবর, ২০০ গ্রাম টিএসপি এবং ৭৫ গ্রাম এমওপি সার প্রয়োগ করতে হবে। মাদা তৈরি হলে প্রতি মাদায় ৪-৫টি বীজ বুনে দিতে হবে এবং চারা গজানোর ২-৩ সপ্তাহ পর দুই-তিন কিস্তিতে ২৫০ গ্রাম ইউরিয়া ও ৭৫ গ্রাম এমওপি সার উপরিপ্রয়োগ করতে হবে। এ সময় আগাম শীতকালীন সবজি চারা উৎপাদনের কাজ শুরু করা যেতে পারে। সবজি চারা উৎপাদনের জন্য উঁচু এবং আলো বাতাস লাগে এমন জায়গা নির্বাচন করতে হবে। এক মিটার চওড়া এবং জমির দৈর্ঘ্য অনুসারে লম্বাকরে বীজতলা করে সেখানে উন্নতমানের ও উন্নতজাতের উচ্চফলনশীল ফুলকপি, বাঁধাকপি, বেগুন, টমেটো এসবের বীজ বুনতে পারেন। বীজতলার মাটি অবশ্যই শুকনো হতে হবে। অন্যথায় গোড়া ও মূল পচা রোগে সব চারা পচে যেতে পারে।

গাছপালা

ভাদ্র মাসেও ফলদবৃক্ষ এবং ঔষধি গাছের চারা রোপণ করা যায়। বন্যায় বা বৃষ্টিতে মৌসুমের রোপিত চারা নষ্ট হয়ে থাকলে সেখানে নতুন চারা লাগিয়ে শূন্যস্থানগুলো পূরণ করতে হবে। এছাড়া এবছর রোপণ করা চারার গোড়ায় মাটি দেয়া, চারার অতিরিক্ত এবং রোগাক্রান্ত ডাল ছেঁটে দেয়া, বেড়া ও খুঁটি দেয়া, মরা চারা তুলে নতুন চারা রোপণসহ অন্যান্য পরিচর্যা করতে হবে। ভাদ্র মাসে আম, কাঠাল, লিচু গাছ ছেঁটে দিতে হয়। ফলের বোঁটা, গাছের ছোট ডালপালা, রোগাক্রান্ত অংশ ছেঁটে দিলে পরের বছর বেশি করে ফল ধরে এবং ফলগাছে রোগও কম হয়।

প্রাণিসম্পদ

ভাদ্র মাসের গরমে পোলট্রি শেডে পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা করতে হবে। টিনশেডে চটের ছালা রেখে মাঝে মাঝে পানি দ্বারা ভিজিয়ে দিতে হবে। যাতে করে অধিক গরমে মুরগিগুলো মারা না যায় এবং নানা রোগের বিস্তার না ঘটে। ভেজা আবহাওয়া ও মাঝে মাঝে গরম পোলট্রির ক্ষেত্রে গামবোরো রোগের সংক্রমণ বৃদ্ধি করে। এ রোগে  মুরগির পালক নিচের দিকে ঝুলে পড়ে। গা গরম ও কাঁপুনি দেখা দেয়। সাদা পানির মতো পাতলা পায়খানা দেখা যায়। মুরগি সহজে নড়ে না। এমনিতে ভাইরাসজনিত এ রোগের কোন চিকিৎসা নেই। এজন্য আগে থেকেই সতর্ক থাকতে হবে ও রোগ প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিতে হবে।

এ মাসে হাঁস-মুরগির বাচ্চা ফুটানো যেতে পারে। এ মাসে ফুটানো মোরগ-মুরগির বাচ্চার ককসিডিয়া রোগ হতে পারে এদের চিকিৎসা করাতে হবে।

বাংলাদেশে গোখাদ্যের সমস্যা এখনও বিরাজমান। সে কারণে পতিত জমিতে নেপিয়ার, বাজরা, খেসারি, মটর, ইপিল ইপিল, গিনি ঘাস লাগানোর ব্যবস্থা নিতে হবে। যারা দুধবতী গাভী পালন এবং যারা গরু মোটাতাজাকরণ করবেন, তাদের অবশ্যই গবাদিপশুকে সুষম খাবার সরবরাহ করতে হবে। কোন জায়গায় যদি পানি জমে থাকে সে এলাকায় জন্মানো ঘাস গবাদিপশুকে খাওয়ানো যাবে না। কারণ এতে গাভী বা গরুর রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে বেশি। গরু ও ছাগলকে নিয়মিত গোসল করার ব্যবস্থা করতে হবে। গোয়াল ঘরের গোবর নিয়মিত পরিষ্কার করা দরকার। আর গরুর গায়ের আঠালি, মাছি, জোঁক পোকামাকড় বেছে দিতে হবে। তড়কা, বাদলা, গলাফুলা রোগ যাতে না হয় সেজন্য উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা বা ভেটেরিনারি সার্জনের সাথে যোগাযোগ রাখতে হবে।

মৎস্যসম্পদ

পুকুরে সার ব্যবহারের মাত্রা আস্তে আস্তে কমিয়ে ফেলতে হবে। জৈবসার ব্যবহার না করাই ভালো। খাদ্য ঘাটতির জন্য পরিমাণ মতো অজৈব সার ব্যবহার করা দরকার। পুকুরে পর্যাপ্ত আলো বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা করে দিতে হবে।

পুকুরে নতুন মাছ ছাড়ার সময় এখন। মাছ ছাড়ার আগে পুকুরের জলজ আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। পুকুর জীবাণুমুক্ত করে সঠিক সংখ্যক সুস্থ সবল পোনা মজুদ করতে হবে। যেসব পুকুরে মাছ আছে সেসব পুকুরে জাল টেনে মাছের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা দরকার। মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্ভাবিত প্রযুক্তি-পুকুরে পাঙ্গাশ মাছের চাষ, ধান ক্ষেতে মাছ চাষ, প্লাবিত এলাকায় ঘেরের মাধ্যমে রাজপুঁটি ও চিংড়ির চাষ, পুকুরে রুই জাতীয় ও চিংড়ির মিশ্র চাষ এবং প্লাবিত এলাকায় খাঁচায় মাছ চাষ করা যেতে পারে। বন্যার কারণে ভেসে যাওয়া পুকুরের মাছ পুকুরে রাখতে ভেসে যাওয়া পুকুরগুলোর ১৫ থেকে ২০ মিটার দূরত্বে একটি চটের ব্যাগে ৫ থেকে ৭ কেজি ধানের কুড়া বা গমের ভুসি ৫০ থেকে ৬০ সেন্টিমিটার পানির নিচে একটি খুঁটির সাথে বেঁধে দিতে হবে। তবে ব্যাগটিতে অবশ্যই ছোট ছোট ছিদ্র করে দিতে হবে। খাবার পেয়ে মাছ পুকুরেই অবস্থান করবে। কোন কারণে পুকুরের পানি যদি দূষিত হয় তবে ভাইরাস, ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়ার প্রভাবে মাছের ক্ষত রোগ দেখা দিতে পারে। প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে দেহের ভারসাম্যহীনতা, শরীরে লাল দাগ দেখা যায়। পরে মাছ ক্ষতরোগে মারা যায়। এ রোগ প্রতিকারে অধিক আক্রান্ত মাছ উঠিয়ে মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে। প্রতি শতক পুকরে ১ কেজি চুন ও ১ কেজি লবণ প্রয়োগ করতে হবে। ছোট ও ব্রুড মাছের জন্য প্রতি কেজি খাদ্যের সাথে ৬০ থেকে ১০০ মিলি গ্রাম টেরামাইসিন মিশিয়ে মাছকে খাওয়ানো যেতে পারে।

সেপ্টেম্বর-অক্টোবর (আশ্বিন মাস



আমন ধান

আমন ধানের বাড়ন্ত পর্যায় এখন। ধান গাছের বয়স ৪০-৫০ দিন হলে ইউরিয়ার শেষ কিস্তি প্রয়োগ করতে হবে। সার প্রয়োগের আগে জমির আগাছা পরিষ্কার করে নিতে হবে এবং জমিতে ছিপছিপে পানি রাখতে হবে। এ সময় বৃষ্টির অভাবে খরা দেখা দিতে পারে। সেজন্য সম্পূরক সেচের ব্যবস্থা করতে হবে।

সম্পূরক সেচ

এ সময় বৃষ্টির অভাবে খরা দেখা দিতে পারে। খরায় ফলন অনেক কমে যায়। সুতরাং খরা দেখা দিলে সম্পূরক সেচ দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। নদী, পুকুর, খাল-বিল, ডোবা যেখানেই পানি পাওয়া যাবে সেখান থেকে পাম্প, নলকূপ, দোন, সেওতি দিয়ে সেচ দেয়া নিশ্চিত করতে হবে। মনে রাখতে হবে সম্পূরক সেচ আমনের ফলন বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়।    

রোগ ও পোকামাকড়

শিষ কাটা লেদা পোকা ধানের জমি আক্রমণ করতে পারে। প্রতি বর্গমিটার আমন জমিতে ২-৫টি লেদা পোকার উপস্থিতি মারাত্মক ক্ষতির পূর্বাভাস। তাই সতর্ক থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। এ সময় মাজরা, পামরি, চুঙ্গি, গলমাছি পোকার আক্রমণ হতে পারে। এছাড়া খোলপড়া, পাতায় দাগ পড়া রোগ দেখা দিতে পারে। এক্ষেত্রে নিয়মিত জমি পরিদর্শন করে, জমিতে খুঁটি দিয়ে, আলোর ফাঁদ পেতে, হাতজাল দিয়ে পোকা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তাছাড়া সঠিক বালাইনাশক সঠিক মাত্রায়, সঠিক নিয়মে, সঠিক সময় শেষ কৌশল হিসেবে ব্যবহার করতে হবে।

নাবি/নমলা আমন

রোপণ নিচু এলাকায় অথবা কোনো কারণে আমন সময় মতো চাষ করতে না পারলে আশ্বিনের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত বিআর ২২, বিআর ২৩, বিনাশাইল বা স্থানীয় জাতের চারা রোপণ করা যায়। এক্ষেত্রে গুছিতে ৫-৭টি চারা রোপণ করতে হবে। সেসঙ্গে অনুমোদিত মাত্রার চেয়ে বেশি ইউরিয়া প্রয়োগ ও অতিরিক্ত পরিচর্যা নিশ্চিত করতে পারলে কাক্সিক্ষত ফলন পাওয়া যায় এবং দেরির ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া যায়।

আখ / চারা উৎপাদন

আখের চারা উৎপাদন করার উপযুক্ত সময় এখন। সাধারণত বীজতলা পদ্ধতি এবং পলিব্যাগ পদ্ধতিতে চারা উৎপাদন করা যায়। তবে পলিব্যাগে চারা উৎপাদন করা হলে বীজ আখ কম লাগে এবং চারার মৃত্যুহার কম হয়।  চারা তৈরি করে বাড়ির আঙিনায় সুবিধাজনক স্থানে সারি করে রেখে খড় বা শুকনো আখের পাতা দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। চারার বয়স ১-২ মাস হলে মূল জমিতে রোপণ করতে হবে। কাটুই বা অন্য পোকা যেন চারার ক্ষতি করতে না পারে সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে।  

বিনা চাষে ফসল / আবাদ  জমি তৈরি ও বীজ বপন

মাঠ থেকে বন্যার পানি নেমে গেলে উপযুক্ত ব্যবস্থাপনায় বিনা চাষে অনেক ফসল আবাদ করা যায়। এ সময় ভুট্টা, গম, আলু, সরিষা, মাসকালাই বা অন্যান্য ডাল ফসল বিনা চাষে লাভজনকভাবে অনায়াসে আবাদ করা যায়। সঠিক পরিমাণ বীজ, সামান্য পরিমাণ সার এবং প্রয়োজনীয় পরিচর্যা নিশ্চিত করতে পারলে লাভ হবে অনেক। জমির জো বুঝে এবং আবহাওয়ার কথা খেয়াল রেখে বিনা চাষে ফসল করলে খরচ খুব কম হয় এবং দ্রুত একটি ফসল পাওয়া যায়।

শাকসবজি/ আগাম জাতের শীতকালীন সবজি চাষ

জমির মাটি এখনও ভেজা এবং স্যাঁতসেঁতে। আগাম শীতের সবজি উৎপাদনের জন্য উঁচু জয়গা কুপিয়ে পরিমাণ মতো জৈব ও রাসায়নিক সার বিশেষ করে ইউরিয়া দিয়ে শাক উৎপাদন করা যায়। শাকের মধ্যে মুলা, লালশাক, পালংশাক, চিনাশাক, সরিষাশাক অনায়াসে করা যায়। তাছাড়া সবজির মধ্যে ফুলকপি, বাঁধাকপি, ওলকপি, শালগম, টমেটো, বেগুন, ব্রোকলি বা সবুজ ফুলকপিসহ অন্যান্য শীতকালীন সবজির চারা তৈরি করে মূল জমিতে বিশেষ যতেœ আবাদ করা যায়।

কলা/ চারা রোপণ

অন্যান্য সময়ের থেকে আশ্বিন মাসে কলার চারা রোপণ করা সবচেয়ে বেশি লাভজনক। এতে ১০-১১ মাসে কলার ছড়া কাটা যায়। ভালো উৎস বা বিশ্বস্ত চাষি ভাইয়ের কাছ থেকে কলার অসি চারা সংগ্রহ করে রোপণ করতে হবে। কলার চারা রোপণের জন্য ২-২.৫ মিটার দূরত্বে ৬০ সেমি. চওড়া এবং ৬০ সেমি. গভীর গর্ত করে রোপণ করতে হবে। গর্তপ্রতি ৫-৭ কেজি গোবর, ১২৫ গ্রাম করে ইউরিয়, টিএসপি ও এওপি সার এবং ৫ গ্রাম বরিক এসিড ভালোভাবে মিশিয়ে ৫-৭ দিন পর অসি চারা রোপণ করতে হবে। কলা বাগানে সাথি ফসল হিসেবে ধান, গম, ভুট্টা ছাড়া যে কোনো রবি ফসল চাষ করা যায়। এতে একটি অতিরিক্ত ফসলের এবং সে সঙ্গে অর্থও পাওয়া যায়।

গাছপালা/নতুন চারার যত্ন ও সার প্রয়োগ

গাছের চারা রোপণের কাজ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। তবে রোপণ করা চারা কোনো কারণে মরে গেলে সেখানে নতুন চারা রোপণের উদ্যোগ নিতে হবে। রোপণ করা চারার যত্ন নিতে হবে এখন। যেমন- বড় হয়ে যাওয়া চারার সঙ্গে বাঁধা খুঁটি সরিয়ে দিতে হবে এবং চারার চারদিকের বেড়া প্রয়োজনে সরিয়ে বড় করে দিতে হবে। মরা বা রোগাক্রান্ত ডালপালা ছেঁটে দিতে হবে। চারা গাছসহ অন্যান্য গাছে সার প্রয়োগের উপযুক্ত সময় এখন। গাছের গোড়ার মাটি ভালো করে কুপিয়ে সার প্রয়োগ করতে হবে। দুপুর বেলা গাছের ছায়া যতটুকু স্থানে পড়ে ঠিক ততটুকু স্থান কোপাতে হবে। পরে কোপানো স্থানে জৈব ও রাসায়নিক সার ভালো করে মিশিয়ে দিতে হবে । গাছের জাত ও বয়সের কারণে সারের মাত্রাও বিভিন্ন হয়।

প্রাণিসম্পদ/হাঁস-মুরগির যত্ন

হাঁস-মুরগির কলেরা, ককসিডিয়া, রানীক্ষেত রোগের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। প্রাথমিকভাবে টিকা প্রদান, প্রয়োজনীয় ওষুধ খাওয়ানোসহ প্রাসঙ্গিক বিষয়ে প্রাণী চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া আবশ্যক। এ মাসে হাঁস-মুরগির বাচ্চা ফুটানোর ব্যবস্থা নিতে পারেন। বাচ্চা ফুটানোর জন্য অতিরিক্ত ডিম দেবেন না। তাছাড়া ডিম ফুটানো মুরগির জন্য অতিরিক্ত বিশেষ খাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

গরু-বাছুরের যত্ন

আশ্বিন মাসে গবাদিপশুকে কৃমির ওষুধ খাওয়ানো দরকার। গবাদিপশুকে খোলা জায়গায় না রেখে রাতে ঘরের ভেতরে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। পানিতে জন্মানো পশু খাদ্য এককভাবে না খাইয়ে শুকিয়ে খড়ের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়াতে হবে। এ সময় ভুট্টা, মাসকলাই, খেসারি বুনো ঘাস উৎপাদন করে গবাদিপশুকে খাওয়াতে পারেন। গর্ভবতী গাভীকে, সদ্য ভূূমিষ্ঠ বাছুর ও দুধালো গাভীর বিশেষ যত্ন নিতে হবে। এ সময় গবাদি প্রাণীর মড়ক দেখা দিতে পারে। তাই গবাদিপশুকে তড়কা, গলাফুলা, ওলান ফুলা রোগের জন্য প্রতিষেধক, প্রতিরোধক ব্যবস্থা গ্রহণ নিশ্চত করতে হবে।

মৎস্যসম্পদ / মাছের যত্ন

বর্ষায় পুকুরে জন্মানো আগাছা পরিষ্কার করতে হবে এবং পুকুরের পাড় ভালো করে বেঁধে দিতে হবে। পুকুরের মাছকে নিয়মিত পুষ্টিকর সম্পূরক খাবার সরবরাহ করতে হবে। এ সময় পুকুরের প্রাকৃতিক খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হবে। তাছাড়া পুকুরে জাল টেনে মাছের স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং রোগ সারাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে । এ সময় সরকারি ও বেসরকারি মাছের খামার থেকে জিওল মাছের পোনা সংগ্রহ করে পুকুরে ছাড়ার ব্যবস্থা নিতে পারেন। 

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়: আশ্বিন মাসে দেশজুড়ে সরকারিভাবে ইঁদুর নিধন অভিযান শুরু হয়। আমন ধান রক্ষাসহ অন্যান্য ফসলের ক্ষতির মাত্রা কমানোর জন্য এ অভিযান চলে। ইঁদুর নিধনের ক্ষেত্রে যেসব পদ্ধতি প্রয়োগ করা যায় সেগুলো হলো- পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও আধুনিক চাষাবাদ, গর্তে ধোঁয়া দেয়া, ফাঁদ পাতা, উপকারী প্রাণী যেমন- পেঁচা, গুইসাপ, বিড়াল দিয়ে ইঁদুর দমন, বিষটোপ এবং গ্যাস বড়ি ব্যবহার করা।

অক্টোবর-নভেম্বর (কার্তিক মাস



আমন ধান

এ মাসে অনেকের আমন ধান পেকে যাবে তাই রোদেলা দিন দেখে ধান কাটতে হবে। আগামী মৌসুমের জন্য বীজ রাখতে চাইলে প্রথমেই সুস্থ সবল ভালো ফলন দেখে ফসল নির্বাচন করতে হবে। এরপর কেটে, মাড়াই-ঝাড়াই করার পর রোদে ভালোমতো শুকাতে হবে। শুকানো গরম ধান ঝেড়ে পরিষ্কার করে ছায়ায় রেখে ঠাণ্ডা করে বায়ুরোধী পাত্রে সংরক্ষণ করতে হবে। বীজ রাখার পাত্রটিকে মাটি বা মেঝের উপর না রেখে পাটাতনের উপর রাখতে হবে। পোকার উপদ্রব থেকে রেহাই পেতে ধানের সাথে নিম, নিসিন্দা, ল্যান্টানার পাতা শুকিয়ে গুঁড়া করে মিশিয়ে দিতে হবে।

গম

কার্তিক মাসের দ্বিতীয় পক্ষ থেকে গম বীজ বপনের প্রস্তুতি নিতে হয়।  দো-আঁশ মাটিতে গম ভাল হয়। অধিক ফলনের জন্য গমের আধুনিক জাত যেমন- বারি গম-২৫, বারি গম-২৮, বারি গম-২৯, বারি গম-৩০, বারি গম-৩১, বারি গম-৩২, বারি গম-৩৩ এবং লবণাক্ততাসহিষ্ণু বিনা গম-১ রোপণ করতে পারেন। বীজ বপনের আগে অনুমোদিত   ছত্রাকনাশক দিয়ে বীজ শোধন করে নিতে হবে। সেচযুক্ত চাষের জন্য বিঘাপ্রতি ১৬ কেজি এবং সেচবিহীন চাষের জন্য বিঘা প্রতি ১৩ কেজি বীজ বপন করতে হবে। ইউরিয়া ছাড়া অন্যান্য সার জমি তৈরির শেষ চাষের সময় এবং ইউরিয়া তিন কিস্তিতে উপরি প্রয়োগ করতে হবে। বীজ বপনের ১৩-২১ দিনের মধ্যে প্রথম সেচ প্রয়োজন এবং এরপর প্রতি ৩০-৩৫ দিন পর ২ বার সেচ দিলে খুব ভালো ফলন পাওয়া যায়।

আখ

এখন আখের চারা রোপণের উপযুক্ত সময়। ভালোভাবে জমি তৈরি করে আখের চারা রোপণ করা উচিত। আখ রোপণের জন্য সারি থেকে সারির দূরত্ব ৯০ সেমি. থেকে ১২০ সেমি. এবং চারা থেকে চারার দূরত্ব ৬০ সেমি. রাখতে হয়। এভাবে চারা রোপণ করলে বিঘাপ্রতি ২২০০-২৫০০টি চারার প্রয়োজন হয়।

ভুট্টা

ভুট্টা চাষ করতে চাইলে এ সময় যথাযথ প্রস্তুতি নিতে হবে এবং জমি তৈরি করে বীজ বপন করতে হবে। ভুট্টার উন্নত জাতগুলো হলো খই ভুট্টা, বারি হাইব্রিড ভুট্টা-৯, বারি হাইব্রিড ভুট্টা-১৪, বারি হাইব্রিড ভুট্টা-১৫, বারি হাইব্রিড ভুট্টা-১৬, বারি মিষ্টি ভুট্টা-১, বারি বেবি কর্ন-১ এসব। খরা প্রধান এলকা ও সাদা দানার ক্ষেত্রে বারি হাইব্রিড ভুট্টা-১২ ও বারি হাইব্রিড ভুট্টা-১৩ আবাদ করতে পারেন।

সরিষা ও অন্যান্য তেল ফসল

কার্তিক মাস সরিষা চাষেরও উপযুক্ত সময়। সরিষার প্রচলিত স্বল্পমেয়াদি জাতগুলোর মধ্যে বারি সরিষা-১৪, বারি  সরিষা-১৫, বারি সরিষা-১৭, বিনাসরিষা-৪. বিনাসরিষা-৯ ইত্যাদি এবং দীর্ঘমেয়াদি জাতগুলোর মধ্যে বারি সরিষা-১১, বারি সরিষা-১৬ উল্লেখযোগ্য। জাতভেদে সামান্য তারতম্য হলেও বিঘাপ্রতি গড়ে ১ থেকে ১.৫ কেজি সরিষার বীজ প্রয়োজন হয়। বিঘাপ্রতি ৩৩-৩৭ কেজি ইউরিয়া, ২২-২৪ কেজি টিএসপি, ১১-১৩ কেজি এমওপি, ২০-২৪ কেজি   জিপসার ও ১ কেজি দস্তা সারের প্রয়োজন হয়। সরিষা ছাড়াও অন্যান্য তেল ফসল যেমন- তিল, তিসি, চিনাবাদাম, সূর্যমুখী এ সময় চাষ করা যায়।

আলু

আলুর জন্য জমি তৈরি ও বীজ বপনের উপযুক্ত সময় এ মাসেই। হালকা প্রকৃতির মাটি অর্থাৎ বেলে দো-আঁশ মাটি আলু চাষের জন্য বেশ উপযোগী। আগামজাত ও ভালো ফলনের জন্য যে জাতগুলো উপযুক্ত তাহলো বারি আলু-১৩ (গ্রানোলা), বারি আলু-২৯ (কারেজ), বারি আলু-৪১, বারি আলু-৭৪ (বারসেলোনা) এবং প্রক্রিয়াজাতকরণ ও খাবার উপযোগী হিসেবে বারি আলু-২৫, বারি আলু-২৮, বারি আলু-৩৫, বারি আলু-৩৬, বারি আলু-৪৬, বারি আলু-৭৬, বারি আলু-৭৭, বারি আলু-৭৮, বারি আলু-৭৯ ইত্যাদি এসব। প্রতি একর জমি আবাদ করতে ৬০০ কেজি বীজ আলুর দরকার হয়। এক একর জমিতে আলু আবাদ করতে ১৩০ কেজি ইউরিয়া, ৯০ কেজি টিএসপি, ১০০ কেজি এমওপি, ৬০ কেজি জিপসাম এবং ৬ কেজি দস্তা সার প্রয়োজন হয়। তবে এ সারের পরিমাণ জমির অবস্থাভেদে কম-বেশি হতে পারে। তাছাড়া একরপ্রতি ৪-৫ টন জৈবসার ব্যবহার করলে ফলন অনেক বেশি পাওয়া যায়। আলু উৎপাদনে আগাছা পরিষ্কার, সেচ, সারের উপরিপ্রয়োগ, মাটি আলগাকরণ বা কেলিতে মাটি তুলে দেয়া, বালাই দমন, মালচিং করা আবশ্যকীয় কাজ। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সাথে সাথে বিনা চাষে মালচিং দিয়ে আলু আবাদ করা যায়।

মিষ্টি আলু

নদীর ধারে পলি মাটিযুক্ত জমি এবং বেলে দো-আঁশ প্রকৃতির মাটিতে মিষ্টি আলু ভালো ফলন দেয়। কমলা সুন্দরী, বারি মিষ্টি আলু-৪, বারি মিষ্টি   আলু-৫, বারি মিষ্টি আলু-৮, বারি মিষ্টি আলু-১১, বারি মিষ্টি আলু-১২, বারি মিষ্টি আলু-১৪   বারি মিষ্টি আলু-১৫ ও বারি মিষ্টি আলু-১৬ আধুনিক মিষ্টি আলুর জাত। প্রতি বিঘা জমির জন্য তিন গিঁটযুক্ত ২২৫০-২৫০০ খণ্ড লতা পর্যাপ্ত। বিঘাপ্রতি ৪-৫টন গোবর/জৈবসার, ১৬ কেজি ইউরিয়া, ৪০ কেজি টিএসপি, ৬০ কেজি এমওপি সার দিতে হবে।

ডাল ফসল

মুসুর, মুগ, মাসকলাই, খেসারি, ফেলন, অড়হর, সয়াবিন, ছোলাসহ অন্যান্য ডাল এসময় চাষ করতে পারেন। এজন্য উপযুক্ত জাত নির্বাচন, সময় মত বীজ বপন, সুষম মাত্রায় সার প্রয়োগ, পরিচর্যা, সেচ, বালাই ব্যবস্থাপনা সম্পন্ন করতে হবে।

শাকসবজি

শীতকালীন শাকসবজি চাষের উপযুক্ত সময় এখন। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বীজতলায় উন্নতজাতের দেশী-বিদেশী ফুলকপি, বাঁধাকপি, ওলকপি, শালগম, বাটিশাক, টমাটো, বেগুন এসবের চারা উৎপাদনের জন্য বীজতলায় বীজ বপন করতে হবে। আর গত মাসে চারা উৎপাদন করে থাকলে এখন মূল জমিতে চারা রোপণ করতে পারেন। মাটিতে জোঁ আসার সাথে সাথে শীতকালীন শাকসবজি রোপণ করতে হবে। এ মাসে হঠাৎ বৃষ্টিতে রোপণকৃত শাকসবজির চারা নষ্ট হতে পারে। এ জন্য পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে। রোপণের পর আগাছা পরিষ্কার, সার প্রয়োগ, সেচ নিকাশসহ প্রয়োজনীয় পরিচর্যা করতে হবে। তাছাড়া লালশাক, মুলাশাক, গাজর, মটরশুটির বীজ এ সময় বপন করতে পারেন।

অন্যান্য ফসল

অন্যান্য ফসলের মধ্যে এ সময় পেঁয়াজ, রসুন, মরিচ, ধনিয়া, কুসুম, জোয়ার এসবের চাষ করা যায়। সাথী বা মিশ্র ফসল হিসেবেও এসবের চাষ করে অধিক ফলন পাওয়া যায়। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সাথে সাথে জমিতে পানি কচু বপন করতে পারেন। সেচ নালা সংস্কার ও মেরামত করতে হবে।

প্রাণিসম্পদ

সামনে শীতকাল আসছে। শীতকালে পোল্ট্রিতে রোগবালাইয়ের আক্রমণ বেড়ে যায়। রানীক্ষেত, মাইকোপ্লাজমোসিস, ফাউল টাইফয়েড,  বসন্ত রোগ, কলেরা এসব রোগ দেখা দিতে পারে। এসব রোগ থেকে হাঁস-মুরগিকে বাঁচাতে হলে এ মাসেই টিকা দেবার ব্যবস্থা করতে হবে। গত মাসে ফুটানো মুরগির বাচ্চার ককসিডিয়া রোগ হতে পারে। রোগ দেখা দিলে সাথে সাথে চিকিৎসা করাতে হবে।

গবাদিপ্রাণির আবাসস্থল মেরামত করে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। গবাদি প্রাণীকে খরের সাথে তাজা ঘাস খাওয়াতে হবে। ভুট্টা, মাসকালাই, খেসারি রাস্তার ধারে বা পতিত জায়গায় বপন করে গবাদি প্রাণীকে খাওয়ালে স্বাস্থ্য ও দুধ দুটোই বাড়ে। রাতে অবশ্যই গবাদি প্রাণীকে বাইরে না রেখে ঘরের ভিতরে রাখতে হবে। তা না হলে কুয়াশায় ক্ষতি হবে। গবাদি প্রাণীকে এ সময় কৃমির ওষুধ খাওয়াতে হবে। এছাড়া তড়কা, গলাফুলা রোগের বিষয়ে সচেতন থাকলে মারাত্মক সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যাবে।

মৎস্যসম্পদ

এ সময় পুকুরে আগাছা পরিষ্কার, সম্পূরক খাবার ও সার প্রয়োগ করতে হবে। জাল টেনে মাছের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাও জরুরি। রোগ প্রতিরোধের জন্য একরপ্রতি  ৪৫-৬০ কেজি চুন প্রয়োগ করতে পারেন। অংশদারিত্বের জন্য যেখানে যৌথ মাছ চাষ সম্ভব নয় সেখানে খুব সহজে খাঁচায় বা প্যানে মাছ চাষ করতে পারেন। 

নভেম্বর-ডিসেম্বর (অগ্রহায়ণ মাস



আমন ধান

এ মাসে অনেকের আমন ধান পেকে যাবে তাই রোদেলা দিন দেখে ধান কাটতে হবে। আগামী মৌসুমের জন্য বীজ রাখতে চাইলে প্রথমেই সুস্থ সবল ভালো ফলন দেখে ফসল নির্বাচন করতে হবে। এরপর কেটে, মাড়াই-ঝাড়াই করার পর রোদে ভালোমতো শুকাতে হবে। শুকানো গরম ধান আবার ঝেড়ে পরিষ্কার করতে হবে এবং ছায়ায় রেখে ঠাণ্ডা করতে হবে। পরিষ্কার ঠাণ্ডা ধান বায়ুরোধী পাত্রে সংরক্ষণ করতে হবে। বীজ রাখার পাত্রটিকে মাটি বা মেঝের ওপর না রেখে পাটাতনের ওপর রাখতে হবে। পোকার উপদ্রব থেকে রেহাই পেতে হলে ধানের সঙ্গে নিম, নিসিন্দা, ল্যান্টানার পাতা শুকিয়ে গুঁড়ো করে মিশিয়ে দিতে হবে।

বোরো ধান

অগ্রহায়ণ মাস বোরো ধানের বীজতলা তৈরির উপযুক্ত সময়। রোদ পড়ে এমন উর্বর ও সেচ সুবিধাযুক্ত জমি বীজতলার জন্য নির্বাচন করতে হবে। চাষের আগে প্রতি বর্গমিটার জায়গার জন্য ২-৩ কেজি জৈবসার দিয়ে ভালোভাবে জমি তৈরি করতে হবে। পানি দিয়ে জমি থকথকে কাদা করে এক মিটার চওড়া এবং জমির দৈর্ঘ্য অনুসারে লম্বা করে ভেজা বীজতলা তৈরি করতে হবে। যেসব এলাকায় ঠাণ্ডার প্রকোপ বেশি সেখানে শুকনো বীজতলা তৈরি করতে পারেন। প্রতি দুই প্লটের মাঝে ২৫-৩০ সেমি. নালা রাখতে হবে।

যেসব এলাকায় সেচের পানির ঘাটতি থাকে সেখানে আগাম জাত হিসেবে ব্রি ধান২৮, ব্রি ধান৪৫ এবং ব্রি ধান৫৫, উর্বর জমি ও পানি ঘাটতি নাই এমন এলাকায় ব্রি ধান২৯, ব্রি ধান৫০, ব্রি ধান৫৮, ব্রি ধান৫৯, ব্রি ধান৬০, ব্রি হাইব্রিড ধান১, ব্রি হাইব্রিড ধান২ ও ব্রি হাইব্রিড ধান৩, ঠাণ্ডা প্রকোপ এলাকায় ব্রি ধান৩৬, হাওর এলাকায় বিআর১৭, বিআর১৮, বিআর১৯, লবণাক্ত এলাকায় ব্রি ধান৪৭, ব্রি ধান৫৫, ব্রি ধান৬১ চাষ করতে পারেন। বীজ বপন করার আগে ৬০-৭০ ঘণ্টা জাগ দিয়ে রাখতে হবে। এ সময় ধানের অঙ্কুর গজাবে। অঙ্কুরিত বীজ বীজতলায় ছিটিয়ে বপন করতে হবে। প্রতি বর্গমিটার বীজতলার জন্য ৮০-১০০ গ্রাম বীজের প্রয়োজন হয়।

গম

অগ্রহায়ণের শুরু থেকে মধ্য অগ্রহায়ণ পর্যন্ত গম বোনার উপযুক্ত সময়। এরপর গম যত দেরিতে বপন করা হবে ফলনও সে হারে কমে যাবে। দো-আঁশ মাটিতে গম ভালো হয়। অধিক ফলনের জন্য গমের আধুনিক জাত যেমন- শতাব্দী, সুফী, বিজয়, প্রদীপ, আনন্দ, বরকত, কাঞ্চন, সৌরভ, গৌরব, বারি গম-২৫, বারি গম-২৬ এসব বপন করতে হবে। বীজ বপনের আগে অনুমোদিত ছত্রাকনাশক দ্বারা বীজ শোধন করে নিতে হবে। সেচযুক্ত চাষের জন্য বিঘাপ্রতি ১৬ কেজি এবং সেচবিহীন চাষের জন্য বিঘাপ্রতি ১৩ কেজি বীজ বপন করতে হবে।

গমের ভালো ফলন পেতে হলে প্রতি শতক জমিতে ৩০-৪০ কেজি জৈবসার, ৬০০-৭০০ গ্রাম ইউরিয়া, ৬০০-৭০০ গ্রাম টিএসপি, ৩০০-৪০০ গ্রাম এমওপি, ৪০০-৫০০ গ্রাম জিপসাম প্রয়োগ করতে হবে। ইউরিয়া ছাড়া অন্যান্য সার জমি তৈরির শেষ চাষের সময় এবং ইউরিয়া তিন কিস্তিতে উপরিপ্রয়োগ করতে হবে। গমে তিনবার সেচ দিলে ফলন বেশি পাওয়া যায়। বীজ বপনের ১৭-২১ দিনের মধ্যে প্রথম সেচ , ৪৫-৬০ দিনে দ্বিতীয় সেচ এবং ৭৫-৮০ দিনে তৃতীয় সেচ দিতে হবে।

ভুট্টা

ভুট্টা গত মাসে আবাদ না করে থাকলে এ মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে জমি তৈরি করে বীজ বপন করতে হবে। এক হেক্টর জমিতে বীজ বপনের জন্য ২৫-৩০ কেজি ভুট্টা বীজের প্রয়োজন হয়। তবে খই ভুট্টা বা হাইব্রিডের ক্ষেত্রে বীজের মাত্রা এর অর্ধেক হবে। ভালো ফলনের জন্য সারিতে বীজ বপন করতে হবে। এক্ষেত্রে সারি থেকে সারির দূরত্ব ৭৫ সেমি. এবং বীজ থেকে বীজের দূরত্ব ২৫ সেমি. রাখতে হবে।

মাটি পরীক্ষা করে জমিতে সার প্রয়োগ করলে কম খরচে ভালো ফলন পাওয়া যায়। তবে সাধারণভাবে প্রতি শতাংশ জমিতে ইউরিয়া ১-১.৫ কেজি, টিএসপি ৭০০-৯০০ গ্রাম, এমওপি ৪০০-৬০০ গ্রাম, জিপসাম ৬০০-৭০০ গ্রাম, দস্তা ৪০-৬০ গ্রাম, বরিক এসিড ২০-৩০ গ্রাম এবং ১৬-২০ কেজি জৈবসার প্রয়োগ করতে হবে।

সরিষা ও অন্যান্য তেল ফসল

তেল ফসলের মধ্যে সরিষা অন্যতম। তাছাড়া রয়েছে তিল, তিসি সূর্যমুখী। আমাদের দেশে তেল ফসল অনেকটা অবহেলিত। তবে নিয়মিত যত্ন নিলে তেল ফসলের ফলন বাড়ানো সম্ভব। সরিষা গাছের বয়স ২০-২৫ দিন হলে শতাংশপ্রতি ৩০০ গ্রাম ইউরিয়া সার উপরিপ্রয়োগ করতে হবে। উপরি সার প্রয়োগের পর হালকা একটি সেচ দিতে হবে। মাটিতে রস কমে গেলে ২০-২৫ দিন পর আবারো একটি সেচ দিতে হবে।

আলু

রোপণকৃত আলু ফসলের যত্ন নিতে হবে। মাটির কেইল বেঁধে দিতে হবে এবং কেইলে মাটি তুলে দিতে হবে। সারের উপরিপ্রয়োগসহ প্রয়োজনীয় সেচ দিয়ে আগাছা পরিষ্কার করতে হবে।

ডাল ফসল

ডাল আমাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ফসল। মাঠে এখন মসুর, মুগ, মাষ, মটর, খেসারি, ছোলা, ফেলন, সয়াবিন প্রভৃতি ডাল ফসল আছে। সারের উপরিপ্রয়োগ, প্রয়োজনে সেচ, আগাছা পরিষ্কার, বালাই ব্যবস্থাপনাসহ সব ক‘টি পরিচর্যা সময়মতো যথাযথভাবে করতে পারলে কাক্সিক্ষত ফলন পাওয়া যাবে।

শাকসবজি

মাঠে এখন অনেক সবজি বাড়ন্ত পর্যায়ে আছে। ফুলকপি, বাঁধাকপি, ওলকপি, শালগম, মুলা এ সব বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চারার গোড়ায় মাটি তুলে দিতে হবে। চারার বয়স ২-৩ সপ্তাহ হলে সারের উপরিপ্রয়োগ করতে হবে। সবজি ক্ষেতের আগাছা, রোগ ও পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এক্ষেত্রে সেক্স ফেরোমেন ফাঁদ ব্যবহার করতে পারেন। এতে পোকা দমনের সঙ্গে সঙ্গে পরিবেশও ভালো থাকবে। প্রয়োজনে সেচ প্রদান করতে হবে। টমেটো গাছের অতিরিক্ত ডাল ভেঙে দিয়ে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে দিতে হবে।

অন্যান্য রবি ফসল

মাঠে এখন মিষ্টি আলু, চীনা, কাউন, পেঁয়াজ, রসুন, মরিচসহ অনেক অত্যাবশ্যকীয় ফসলের প্রাথমিক বৃদ্ধি পর্যায়। এসময় ভালোভাবে যত্ন পরিচর্যা নিশ্চিত করতে পারলে আশাতীত ফলাফল বয়ে আনবে। এসব ফসলের কোনটি এখনো না লাগিয়ে থাকলে দেরি না করে চারা লাগাতে হবে। তবে এক্ষেত্রে অতিরিক্ত যত্ন নিতে হবে।

গাছপালা

এবারের বর্ষায় রোপণ করা ফল, ওষুধি বা বনজ গাছের যত্ন নিতে হবে। গাছের গোড়ায় মাটি আলগা করে দিতে হবে এবং আগাছা পরিষ্কার করে দিতে হবে। প্রয়োজনে গাছকে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে দিতে হবে। গাছের গোড়ায় জাবরা প্রয়োগ করলে তা পানি ধরে রাখবে। মাটিতে রসের পরিমাণ কমে গেলে গাছের গোড়ায় সেচ প্রদান করতে হবে। এ সময় গাছের বাড়বাড়তি কম হয় তাই পারতপক্ষে এখন গাছের ডালপালা কাটা ঠিক হবে না।

প্রাণিসম্পদ

হাঁস-মুরগির ডিম থেকে বাচ্চা ফুটানোর ভালো সময় এখন। তাছাড়া সামনে শীতকাল আসছে। শীতকালে পোল্ট্রিতে রোগবালাইয়ের আক্রমণ বেড়ে যায় এবং রাণীক্ষেত, মাইকোপ্লাজমোসিস, ফাউল টাইফয়েড, বসন্ত রোগ, কলেরা এসব রোগ মহামারী আকারে দেখা দিতে পারে। এসব রোগ থেকে হাঁস-মুরগিকে বাঁচাতে হলে এ মাসেই টিকা দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

এ মাসে পশুখাদ্যের কোনো অভাব থাকে না। বিশেষ করে কাঁচা ঘাসের। বুদ্ধিমানের কাজ হলো ভবিষ্যতের জন্য পর্যাপ্ত পশুখাদ্য বিশেষ পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করা। আমন ধানের খরসহ অন্যান্য খাদ্য যেমন- ভুট্টা, ডাল, ঘাস দিয়ে সাইলেজ তৈরি করে ভবিষ্যতের জন্য রেখে দিতে পারেন। এ সময় গবাদিপশুর ক্ষুরা রোগ, তড়কা, গলাফুলা দেখা দিতে পারে। গবাদিপ্রাণিতে রোগ দেখা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রাণি চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে ব্যবস্থা নিতে হবে।

মৎস্যসম্পদ

মাছের খাবার হিসেবে উদ্ভিজ খাদ্য এবং প্রাণিজ খাদ্য তৈরিতে গোবর/আবর্জনা পচা সার, রাসায়নিক সার বেশি উপযোগী। এসব পরিমাণমতো প্রয়োগ করতে হবে। জাল টেনে মাছের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে। প্রয়োজনে মৎস্যবিদদের সঙ্গে পরামর্শ করে চুন বা তুঁতে প্রয়োগ করতে পারেন। শীতকাল আসছে। পুকুরে রৌদ পড়া নিশ্চিত করতে পুকুর পাড়ের গাছের ডালপালা কেটে পরিষ্কার করতে হবে।

প্রতি বছরের মতো বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশেও ১৬ অক্টোবর, বিশ্ব খাদ্য দিবস ২০১৫ উদযাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এবারের বিশ্ব খাদ্য দিবসের প্রতিপাদ্য ‘গ্রামীণ দারিদ্র্য বিমোচন ও সামাজিক সুরক্ষায় কৃষি’ সবার মৌলিক চাহিদা পূরণের সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা গেলে কৃষক তার সামাজিক ও পরিবেশের বাধাগুলো আরো দৃঢ়ভাবে মোকাবেলা করতে পারবে, যা আমাদের গ্রামীণ দারিদ্র্য দূরীকরণে বিশেষ অবদান রাখবে।


Previous Post Next Post