কখন টিন সার্টিফিকেট বাতিল করার প্রয়োজন হতে পারে?
টিন সার্টিফিকেট বাতিল করতে চাওয়ার অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রধান কারণ সাধারণত হয়ে থাকে কর যোগ্য আয় না থাকা। এদেশে নির্দিষ্ট বাৎসরিক আয় থাকলে অবশ্যই ঐ ব্যক্তির সরকারকে কর দিতে হবে। বাংলাদেশে যাদের উপর আয়কর প্রযোজ্য হবে তার তালিকা হলোঃ
টিন সার্টিফিকেট যাচাই করার পদ্ধতি !!
টিন সার্টিফিকেট বাতিল করার নিয়ম!!!
- যাদের বাৎসরিক আয় ৩,০০,০০০ (তিন লক্ষ) টাকার উর্ধ্বে তাদের আয়কর প্রদান করতে হবে।
- ৬৫ বছর বয়সের উর্ধ্বে কোন মহিলার বাৎসরিক আয় ৩,৫০,০০০ (তিন লক্ষ পঞ্চাশ হাজার) টাকার উর্ধ্বে হলে তাকে আয়কর প্রদান করতে হবে।
তাই এই তালিকার চাইতে কম পরিমাণে কারও বাৎসরিক আয় হয়ে থাকলে তার কর দেওয়ার প্রয়োজন নেই। অনেক সময়ই কারো এই পরিমানের কম বাৎসরিক আয় থাকা সত্ত্বেও অন্য কোন প্রয়োজনে টিন সার্টিফিকেট তৈরী করার প্রয়োজন হতে পারে। সেক্ষেত্রে পরবর্তীতে সার্টিফিকেটটির প্রয়োজন না হলে সেটি বাতিল করে দেওয়াটাই ভালো সিদ্ধান্ত। এছাড়াও কারও পূর্ববর্তী আয় অনুযায়ী কর দেওয়ার প্রয়োজন থাকায় তিনি টিন সার্টিফিকেট তৈরি করতে পারেন। কিন্তু পরবর্তীতে আয় কমে যাওয়ায় কর সীমার বাইরে চলে আসায় আর টিন সার্টিফিকেটের প্রয়োজন নাও হতে পারে। তখনও তিনি তার টিন সার্টিফিকেটটি বাতিল করতে চাইতে পারেন। কোন করদাতা ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করলে তার টিন সার্টিফিকেটটির আর প্রয়োজন থাকে না। তাই মৃত ব্যক্তির টিন সার্টিফিকেটটিও বাতিল করার প্রয়োজন হতে পারে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে অবশ্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা অন্য সম্পত্তি পরিচালনা করার জন্য ঐ ব্যক্তির টিন সার্টিফিকেটটি প্রয়োজন হতে পারে। সেক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তির উত্তরাধিকারীগণ চাইলে নিয়মিত আয়কর রিটার্ন জমা দিয়ে টিন সার্টিফিকেটটি চালু রাখতে পারবেন।
টিন সার্টিফিকেট বাতিল করতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
টিন সার্টিফিকেট বাতিল করার জন্য খুব বেশী কাগজপত্রের প্রয়োজন নেই। টিন সার্টিফিকেট বাতিল করার জন্য আপনার বর্তমান টিন সার্টিফিকেটের একটি প্রিন্ট কপি, ১২ অঙ্কের টিন নাম্বার এবং জাতীয় পরিচয়পত্র ও তার ফটোকপি হাতের কাছে রাখাই যথেষ্ট।
টিন সার্টিফিকেট বাতিল করার নিয়ম
বর্তমানে বাংলাদেশে টিন সার্টিফিকেট অনলানেই ঘরে বসে তৈরি করা যায়। এমনকি টিন সার্টিফিকেট যাচাই, সংশোধন ডাউনলোড সংক্রান্ত অন্যান্য প্রায় সকল কাজ অনলাইনেই করা যায়। কিন্তু টিন সার্টিফিকেট বাতিল করার বিষয়টি এদিক থেকে ব্যতিক্রম। টিন সার্টিফিকেট বাতিল করার কাজটি অনলাইনে করার কোন উপায় নেই। এটি অফলাইনে বা সশরীরে আবেদনকারীকে কর অফিসে উপস্থিত হয়েই করতে হয়। এছাড়াও বাংলাদেশ কর অধিদপ্তর থেকে টিন সার্টিফিকেট বাতিল করার কোন সুষ্ঠ নির্দেশনা বা পদ্ধতিও দেওয়া নেই। তাই কর অধিদপ্তর থেকে কোন সুনির্দিষ্ট টিন সার্টিফিকেট বাতিল করার পদ্ধতি সহজে জানা যায় না। তাই এখানে কিভাবে প্রয়োজনের সময় টিন সার্টিফিকেট বাতিল করা যাবে তার পদ্ধতি দেয়া হলোঃ
ধাপ ১ঃ
টিন সার্টিফিকেট বাতিল করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর অফিসে উপস্থিত হতে হয়। তাই টিন সার্টিফিকেট বাতিল করার জন্য প্রথমে কোন কর অফিসে যেতে হবে তা জেনে নিতে হবে। বাংলাদেশে করদাতাদের ভাগ করার জন্য ও কর গ্রহণের সুবিধার জন্য বাংলাদেশকে মোট ৩১টি কর অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছে। এই ৩১টি অঞ্চল আবার মোট ৬৪৯টি কর সার্কেলে বিভক্ত। প্রতিটি কর সার্কেলেই একটি করে নির্দিষ্ট আয়কর অফিস রয়েছে। টিন সার্টিফিকেটধারী কোন কর অঞ্চলের কোন সার্কেলে অবস্থিত, তা টিন সার্টিফিকেটের উপরেই লেখা থাকে। টিন সার্টিফিকেট বাতিল করতে এই অনুযায়ী কর অঞ্চলের নির্দিষ্ট সার্কেলের অফিসে যেতে হবে।
ধাপ ২ঃ
টিন সার্টিফিকেট বাতিল করার জন্য আবেদনকারীকে কমপক্ষে তিন বছরের শূন্য রিটার্ন দেখাতে হয়। কারো যদি কর দেওয়ার মত আয় না থেকে থাকে তাহলে তাকে প্রথমে টানা তিন বছর শূন্য আয়কর রিটার্ন জমা দিতে হবে। এবং তারপরেই টিন সার্টিফিকেট বাতিল করার প্রকৃয়া শুরু করতে হবে।
ধাপ ৩ঃ
তৃতীয় বছরের শূন্য রিটার্ন জমা দেওয়ার সময় আবেদনকারীকে তার নির্দিষ্ট কর সার্কেলের অফিসে উপস্থিত হয়ে, সেখানকার উপকর কমিশনারের নিকট একটি দরখাস্ত জমা দিতে হবে। দরখাস্তটিতে আয়কর ফাইলটি নথিস্থ করার আবেদন করতে হবে।
ধাপ ৪ঃ
দরখাস্ততে সঠিকভাবে কারণ ব্যাখ্যা করা থাকলে ও অন্য সবকিছু ঠিক থাকলে আবেদনরীর আয়কর ফাইলটি নথিস্থ করা হবে এবং টিন সার্টিফিকেটটি বাতিল হয়ে যাবে।
এখানে একটি বিষয় উল্লেখ্য যে, টিন সার্টিফিকেট বাতিল করার পরে যদি কেউ পুনরায় টিন সার্টিফিকেট তৈরী করতে চান, তাকে পুরাতন সার্টিফিকেটটিকেই সচল করতে হবে। একই ব্যক্তি আলাদা আলাদা ভাবে দুটি টিন সার্টিফিকেট তৈরী করতে পারবেন না; এবং একটি এনআইডি কার্ডের মাধ্যমে শুধুমাত্র একটি টিন সার্টিফিকেটই তৈরী করা যাবে।
শেষকথা
প্রয়োজনের সময় টিন সার্টিফিকেট বাতিল করাটা অনেক ক্ষেত্রেই বেশ জরুরী একটি কাজ হিসেবে দেখা দেয়। টিন সার্টিফিকেট বাতিলের বিষয়ে সরকারীভাবে সরাসরি কোন নির্দেশনা না থাকায় অনেকেই এই কাজে ভোগান্তির শিকার হতে হন। তাই টিন সার্টিফিকেট প্রয়োজনের সময় বাতিল করার জন্য এই লেখাটি আপনাদের সাহায্য করবে বলে আশা করছি।
অনবরত জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী
১) টিন সার্টিফিকেট বাতিল করার জন্য কি টিন সার্টিফিকেটের মালিককেই আয়কর অফিসে যেতে হবে?
উত্তরঃ টিন সার্টিফিকেট বাতিল করার জন্য আয়কর অফিসে টিন সার্টিফিকেটের মালিকের যাওয়া বাধ্যতামূলক না। যে কেউই তার প্রতিনিধি হিসেবে কর সার্কেলের নির্দিষ্ট অফিসে উপস্থিত হয়ে দরখাস্ত জমা দিয়ে আসতে পারবেন।
২) টিন সার্টিফিকেট বাতিল করতে কি কোন ধরনের খরচ হয়?
উত্তরঃ না। টিন সার্টিফিকেট বাতিল করার জন্য সরকার ঘোষিত কোন খরচ নেই। এটি টিন সার্টিফিকেট তৈরী করার মত সম্পূর্ণ বিনামূল্যেই করা যায়।
৩) টিন সার্টিফিকেট বাতিল করার পরে ঐ সার্টিফিকেট ব্যবহার করে কেনা সঞ্চয়পত্র কি বাতিল হয়ে যাবে?
উত্তরঃ টিন সার্টিফিকেট বাতিল করলে ইতোমধ্যেই কেনা সঞ্চয়পত্র বাতিল হবে না। কিন্তু টিন সার্টিফিকেট বাতিল করার পরে ঐ নাম্বারটি আর ব্যবহার করা যাবে না। ফলে নতুন করে কোন ২ লক্ষ বা তার অধিক পরিমানের সঞ্চয়পত্র কেনা যাবে না।
৪) টিন সার্টিফিকেট বাতিল করার পরেও আগে প্রিন্ট করে রাখা সার্টিফিকেটের কপি কি ব্যবহার করা যাবে?
উত্তরঃ টিন সার্টিফিকেট বাতিল করার পরে ঐ টিন নাম্বারটিই বন্ধ হয়ে যাবে। তাই টিন সার্টিফিকেট বাতিল করার পর আগে থেকে প্রিন্ট করে রাখা টিন সার্টিফিকেট ব্যবহার করা উচিত নয়।
৫) টিন সার্টিফিকেট বাতিল করার পরে পুনরায় চালু করলে কি নতুন একটি টিন নাম্বার দেওয়া হবে?
উত্তরঃ টিন সার্টিফিকেট বাতিল করার পর পুনরায় চালু করলে নতুন টিন নাম্বার দেওয়া হবে না। পুরাতন টিন নাম্বারটিই আবার চালু হয়ে ব্যবহার উপযোগী হবে।