চুল পড়ার কারন কী?চুল পড়া আটকাতে কি করবেন?চুল পড়া বন্ধের মহৌষধ!!

 




প্রতিদিন ১০০-১৫০ টা চুল পড়া স্বাভাবিক কিন্তু তার থেকে বেশি হলেই মুস্কিল এবং চিন্তার বিষয়। এবং চুল পড়ছে  এই চিন্তা মাথায় ঢুকলে সমস্যা আরও বেড়ে যায়। আসলে যে কোনও স্ট্রেস বা চিন্তার থেকেই চুল উঠতে পারে। আজকের বর্তমান যুগের লাইফস্টাইল, জাঙ্ক ফুড সবই রয়েছে চুল ওঠার পেছনে এক লম্বা হাত। এই জন্যই ছেলেদের এখন ২০-২৫ বছরেই মাথা ফাঁকা  হতে শুরু করে। আগে যেটা দেখা যেত চল্লিশ বছরেরও পরে! শুধু ছেলেরাই নয় মেয়েদের ক্ষেত্রেও ঠিক একই সমস্যা দেখা যায়। পিরিয়ডের সমস্যা থাকলেও কিন্তু মেয়েদের চুল উঠতে পারে। সে ক্ষেত্রে সবার আগে দরকার পিরিয়ডের সমস্যা মেটানো। মাঝে মাঝে তো ডিপ্রেশন চলে যান অনেকেই আর ভাবেন, কী করবেন? জন্য শুধু ঘরোয়া টোটকা ব্যবহার করলেই চলে না! ঘরোয়া টোটকা  শুধু না সঠিক খাওয়া-দাওয়া এবং এক্সারসাইজ দরকার।

জেনে নেব চুল পড়ার কারন তার প্রতিকার বা ঘরোয়া কিছু টিপস যা টাক পড়ার হাত থেকে রক্ষা করবে। সাথে এই পোস্টেই থাকছে চুল পড়া রোধ করার এক মহৌষধ যা সকলের কাজে লাগবেই ১০০ শতাংশ। তাই পুরো পোস্ট টি পড়ুন ভালো ভাবে।

চুল পড়ার কারন কী 

চুল কিন্তু এমনি এমনি পড়ে যায় না। এর পিছনে অজস্র কারণ এক সাথে কাজ করে। আসুন তাহলে জেনে নিই চুল পড়ার কারন গুলো কি কি-

. বর্তমান যুগের লাইফস্টাইল, সাথে অত্যাধিক জাঙ্ক ফুড খাওয়া।

. শরীরের ভিটামিন প্রোটিনের অভাব 

. চারপাশে অত্যাধিক পরিবেশ জল দূষণ 

. পিরিয়ডের সমস্যা জনিত কারনে।

. বাচ্চা প্রসব করার পর

. অত্যাধিক জ্বরে ভোগার  পর।

. অত্যাধিক খুশকি থেকে চুলের গোড়া নষ্ট হয়ে চুল উঠতে পারে।

. অতিরিক্ত মানসিক চাপ বা স্ট্রেস থেকেও চুল পড়তে পারে।

. অত্যাধিক হস্তমৈথূন (Masturbation) করা 

১০. রক্তে হিমোগ্লোবিন আর ফেরিটিনের মাত্রা কমে গেলেও চুল ঝরে পড়ে। অনেক সময় এলার্জির কারনেও চুল পড়তে থাকে। 

১১. থাইরয়েডের হরমোন সমস্যার থেকেও চুল উঠতে পারে। চুলের বৃদ্ধির হারও হ্রাস পায়।

১২. হজমের সমস্যা থেকেও চুল ঝরে পড়ে হজমের সমস্যার কারনে পাকস্থলীর ক্যান্সারও হতে পারে।

১৩. অতিরিক্ত শ্যাম্পু ব্যাবহারের ফলেও চুল ঝরে পড়ে। তাই ন্যাচারাল কোনও শ্যাম্পু অথবা মৃদু বা বেবি শ্যাম্পু ব্যাবহার করতে পারেন।

১৪. বার্থ কন্ট্রোল পিলস এর ব্যাবহার  আপনি কি বার্থ কন্ট্রোল পিল বা ঔষধ ব্যাবহার করেন। তা হলে কিন্তু সাবধান সতর্ক থাকুন! কারণ এটাও চুল পড়ার জন্য একটা বড় কারণ।

১৫. যে সব মহিলার Polycystic Ovarian Syndrome (পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিন্ড্রোম) রয়েছে, তাঁদের হরমোনাল সমস্যা হয়। যার ফলে মুখে আর শরীরে অত্যাধিক লোম দেখা যায়। তবে মাথার চুল পাতলা হয়ে যেতে থাকে চুল পড়তে থাকে।

১৬. পুষ্টিজনিত কারণ বা পুষ্টির অভাব 

১৭. অত্যাধিক হেয়ার স্টাইলিং জিনিস ব্যাবহার করার কারনে। ইত্যাদি বিভিন্ন কারনেই চুল ঝরে যেতে পারে।

চুল পড়া আটকাতে কিছু জিনিষ অবশ্যই মেনে চলুন 

. ভেজা চুল ভুলেও আঁচড়াবেন না। কারন ভিজে চুলে, চুলের গোড়া নরম দূর্বল থাকে। তাই ভিজে চুল ভালো ভাবে শুকিয়ে নিন নাহলে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

. রেগুলার ট্রিমিং বা চুল কাটুন নিয়মিত ভাবে চুলের যে অংশ সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত থাকে, সেটা হল চুলের ডগার দিকে। তাই কয়েক সপ্তাহ অন্তর নিয়ম করে চুল কাটুন বা ট্রিম করাতে থাকুন। তাতে চুল বাড়বেও আর স্প্লিট এন্ডস এর সমস্যাও থাকবে না।

. বাচ্চা হওয়ার পর বেশির ভাগ মেয়েদের চুল পড়ে এক্ষেত্রে চুল পড়তে থাকলে প্রোটিন ( ডাল, সয়াবিন, ছানা) ফল, শাক-সব্জি, চুনোমাছ বেশি করে খেতে হবে।

. স্ট্রেস বা মানসিক চিন্তা কে কোনও ভাবেই বাড়তে দেওয়া চলবে না। নজর রাখুন অত্যাধিক চিন্তার কবলে যেন না পড়েন এতে শুধু চুল পড়ে যাওয়ায় নয় অনেক মারাত্বক রোগের শিকার হতে পারেন।

. অত্যাধিক ওজন যেন না বাড়ে  নিয়মিত কমবেশি এক্সারসাইজ করবেন, এতে শুধু চুল পড়ে যাওয়ায় রোধ নয় শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও গড়ে তুলে।

. চুলে কি আপনি মাঝে মধ্যেই নানা রকম কেমিক্যাল ট্রিটমেন্ট করান? যেমন স্ট্রেটনিং, পার্মিং, কালারিং? তাহলে কিন্তু খুবই সাবধান। কারণ সবে চুলের মারাত্মক ক্ষতি হয় এবং চুল নষ্ট হওয়ার পিছনে দায়ী।

. পুষ্টি যুক্ত খাবার খান পুষ্টি যুক্ত খাবার শুধু মাত্র আপনার শরীরের জন্যেই নয় বরং চুলের জন্যেও উপকারী।

. গরম জলে স্নান করলে সবারই আরাম হয় ঠিকই কিন্তু গরম জলে স্নান করলে স্কিনের মতো চুলকেও ডিহাইড্রেটেড করে দেয়। ফলে চুলের ন্যাচারাল অয়েলস নষ্ট হয়ে যায় এবং চুল ঝরে পড়ে। তাই গরম জলে স্নান করলেও অবশ্যই ঠান্ডা জলে চুল ধোয়ার চেস্টা করবেন।

. টাইট করে বা শক্তভাবে চুল বাঁধার অভ্যেস থাকলে তা কিন্তু এখনই বন্ধ করুন। কারণ টাইট করে চুল বাঁধলে চুলের গোড়ায় সব থেকে বেশি চাপ পড়ে এবং চুল উঠে যেতে সাহায্য করে।

১০. শ্যাম্পু করা, সবার আগে যেটা খুবই ইম্পর্ট্যান্ট। আপনাকে নিজের স্ক্যাল্পের ধরনটা বুঝতে হবে যে তৈলাক্ত নাকি শুস্ক স্ক্যাল্প। তাই সেটা বুঝে নিয়ে একটা ভাল শ্যাম্পু বেছে নিতে হবে। শ্যাম্পু সবসময় খবু ভালো ভাবে দেখে কিনবেন, যেন তাতে সালফেট, প্যারাবেন সিলিকনের মতো কেমিক্যালস না থাকে। এবং সপ্তাহে বার এর বেশি শ্যাম্পু করা উচিত নয়। আপনি যে শ্যাম্পুটি ব্যাবহার করছেন সেটিই নিয়মিত ব্যাবহার করবেন, বার বার পতিবর্তন করবেন না।

১১. নতুন কোনও ওষুধ খাওয়ার পর খুব বেশি চুল উঠলে সেই ডাক্তারকে সঙ্গে সঙ্গে জানান প্রয়োজনে ওষুধ পরিবর্তন করতে বলুন  খুব বেশি চুল পড়লে ডাক্তারের পরামর্শ মতো ওষুধ লাগাতেও হবে বা খেতেও হতে পারে।

১২. খুস্কি থাকলে মাথায় বা চুলে খুব বেশি তেল ব্যাবহার করবেন না। প্রয়োজনে কন্ডিশনার ব্যবহার করতে পারেন ভালো মানের কন্ডিশনার আপনার চুলের গোড়াকে শক্ত ভাবে ধরে রাখবে। কারণ এর মধ্যে অ্যামাইনো অ্যাসিড থাকে, যা ক্ষতিগ্রস্ত চুলকে ঠিক করে এবং মজবুত করতে সাহায্য করে।

চুলের যত্ন নেওয়ার জন্য কিছু ঘরোয়া টোটকা বা টিপস 

প্রচুর ট্রিটমেন্টস আর পার্লারে গিয়েও লাভ হয় না। বার চুল পড়া কম করার জন্য পার্লারে গিয়ে হাজার হাজার টাকা খরচ না করে বাড়িতে বসেই চুলের যত্ন নেওয়া শুরু করে দিন। নিম্নলিখিত এই টিপস গুলো মেনে চললে অবশ্যই চুল পড়া কম হবেই, তবে আপনার টাক পড়ার পর মেনে চললে হবে না। তাই সময় থাকতেই উপযুক্ত ব্যাবস্থা নিন 

. পিঁয়াজের রস 

কি কি উপাদান প্রয়োজন?

  • পেঁয়াজ – ১ টি
  • শাওয়ার ক্যাপ – ১ টি

কিভাবে ব্যবহার করবেন?

  • একটি বড় মাপের পেঁয়াজ ৪ ভাগ করে কেটে নিন।
  • তারপর মিক্সিতে পেঁয়াজ টি মিশ্রিত করে নিন।
  • এরপর পেঁয়াজের মিশ্রণটি থেকে কোন নরম কাপড়ের সাহায্যে পেঁয়াজের রস আলাদা করে নিন।
  • এরপর পেঁয়াজের রস সরাসরি মাথার ত্বকে এবং চুলের দৈর্ঘ্যে লাগান।
  • মনে রাখবেন পেঁয়াজের রস মাথায় লাগানোর সময় মাথায় আঙ্গুল দিয়ে হালকা মাসাজ করবেন।
  • এরপর এক ঘণ্টা শাওয়ার ক্যাপ লাগিয়ে চুলটা অমনি ভাবেই রেখে দেবেন।
  • কিছুক্ষণ বাদে চুল রসটা টেনে নেবে। তারপর আপনি যে শ্যাম্পু ব্যবহার করেন সেটি দিয়েই শ্যাম্পু করে ফেলবেন।
  • এক মাসের মধ্যেই পার্থক্যটা বুঝতে পারবেন।
  • প্রয়োজনে চুলের বৃদ্ধির জন্য এবং চুলে উজ্জ্বলতা আনার জন্য পেঁয়াজের রস ও মধু কিংবা অলিভ অয়েল কিংবা কারি পাতা ও ব্যবহার করতে পারেন।
  • তবে যদি সরাসরি পেঁয়াজের রসের গন্ধটা নিতে না পারেন সে ক্ষেত্রে এর মধ্যে আপনার পছন্দসই এসেনশিয়াল অয়েল অল্প পরিমাণে যোগ করতে পারেন। এতে গন্ধটা কমে যাবে।
  • সপ্তাহে একদিন করে এই পেঁয়াজের রস ব্যবহার করলেই পার্থক্যটা খুব শীঘ্রই দেখতে পাবেন।

. নারকেল দুধ

কি কি উপাদান প্রয়োজন?

  • নারকেল – ১টি
  • শাওয়ার ক্যাপ – ১ টি

কিভাবে ব্যবহার করবেন ?

নারকেলের দুধ বাজারে যে কোন দোকানেই প্যাকেটে কিংবা গুঁড়ো কিনতে পাওয়া যায়। কিন্তু প্যাকেটজাত নারকেল দুধ ব্যবহার না করে খুব সহজ পদ্ধতিতে ঘরেই বানিয়ে নিন নারকেলের দুধ। ()

  • একটি নারকেল নিন। তারপর নারকেলটি কুড়িয়ে নারকেলের সাদা অংশটি আলাদা করে রাখুন।
  • এরপর একটি পরিষ্কার সাদা কাপড় নিয়ে তার মধ্যে নারকেলের গুঁড়ো গুলি একসাথে রেখে কাপড়টি শক্ত করে বেঁধে চেপে চেপে সেই নারকেল থেকে দুধ বের করে নিন।
  • এরপর একটি কাপের এক চতুর্থাংশ নারকেলের দুধ নিয়ে সেটি উষ্ণ গরম করে নিন।
  • তারপর উষ্ণ গরম হওয়া দুধটি মাথার ত্বকে ১৫ মিনিট ধরে হাতের আঙ্গুল দিয়ে মালিশ করুন।
  • হয়ে গেলে চুলের গোড়া থেকে ডগা পর্যন্ত নারকেলের দুধ লাগিয়ে ৪৫ মিনিটের জন্য তা রেখে দিন এবং মাথায় একটি শাওয়ার ক্যাপ লাগিয়ে রাখুন।
  • এরপর ৪৫ মিনিট পর আপনি যে শ্যাম্পু ব্যবহার করেন তা দিয়ে মাথা ধুয়ে নিন।

  • এর ফলে কি হবে?
    সপ্তাহে একবার এটি করলে কয়েক বার ব্যবহার এর পরেই চুল এর পার্থক্য বুঝতে পারবেন। এটি চুলের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটানোর পাশাপাশি চুলকে আরো নরম এবং মসৃণ করবে।

. অয়েল ম্যাসাজ 

তেল তো চুলের জন্য সবসময় দারুণ কাজ করে। তাই অয়েল মাসাজ চুলকে সতেজ করে চুলের রক্ত সঞ্চালন ঠিকঠাক রাখে। আর চুলের গোড়াও মজবুত করে। তাই আপনার হাতের কাছে নারকেল তেল হালকা গরম করে নিন। এবং ভালভাবে ম্যাসাজ করুন ১০ মিনিট এর

মতো। স্নান করার আগে করতেও পারেন বা ঘুমোতে যাওয়ার আগেও করতে পারেন। সপ্তাহে - দিন করুন ভালো ফল পাবেন।

. বিটরুটের রস 

বিটরুটে রয়েছে ভিটামিন-C, B-6, ফোলেট, ম্যাঙ্গানিজ, পটাশিয়ামের মতো উপাদান। এগুলো প্রতিটাই আপনার চুলের বৃদ্ধি এবং মজবুতির  জন্য দারুণ ভাবে কাজ করে। পাশাপাশি এটা ডিটক্সিফাইং এজেন্ট হিসেবে কাজ করে, যা স্ক্যাল্প পরিষ্কার রাখে।

কি কি উপাদান প্রয়োজন?

  • বিট – ২ টি
  • অলিভ অয়েল – পরিমান মত

কিভাবে ব্যবহার করবেন?

চুলকে শক্তিশালী ও মজবুত করে গড়ে তোলার জন্য বিটের রস ব্যবহার করতে পারেন।

  • দুটি তাজা বিট মিক্সিতে মিশ্রন করে রস বের করে নিতে হবে।
  • তার মধ্যে অলিভ অয়েল যোগ করে মাথায় পনেরো-কুড়ি মিনিটের জন্য লাগিয়ে রাখুন।
  • এরপর কুড়ি মিনিট বাদে হালকা কোন শ্যাম্পু দিয়ে মাথা ধুয়ে ফেলুন।
  • এছাড়াও মাথায় খুশকি নিরাময়ের জন্য বিটকে টুকরো টুকরো করে কেটে সেটি দিয়ে স্ক্যাল্পে ঘষুন।
  • এর মাধ্যমে মাথার স্ক্যাল্পে থাকা মৃত কোষ উঠে যাবে এবং চুল খুশকি মুক্ত হবে।
  • এছাড়াও কেমিকেল সমৃদ্ধ রং ব্যবহার করে চুলের ক্ষতি এড়াতে বিটের রস চুলের রঙ হিসেবে ব্যবহার করুন।
  • একটি বিট কে মিক্সিতে মিশন করে তার মধ্যে থেকে রস বার করে নিন।
  • এরপর সেটি আধ কাপ লিকার চা এবং তার মধ্যে একটু গোলাপ জল দিয়ে মিশিয়ে মাথার চুলে এক ঘন্টার জন্য লাগিয়ে রেখে দিন।
  • এতে আপনি কোন চিন্তা ছাড়াই চুলে হালকা একটি প্রাকৃতিক লাল রং পাবেন।

. অ্যালোভেরা 

চুলের বিভিন্ন সমস্যা এবং চুল পড়ার এক মহৌষধ হলো এই অ্যালোভেরা। খুব ভালো মানের ঘরোয়া ওষুধ হল অ্যালোভেরা এবং যেটি বর্তমানে প্রায় সকল বাড়িতেই দেখা যায়। স্ক্যাল্পের চুলকানি, জ্বালা কমাতেও এর জুড়ি মেলা ভার।

কি কি উপাদান প্রয়োজন?

  • অ্যালোভেরা জেল – ২ চামচ

কিভাবে ব্যবহার করবেন?

  • অ্যালোভেরা গাছের থেকে পাওয়া সাদা রংয়ের অ্যালোভেরা জেল সরাসরি স্ক্যাল্পে এবং চুলে লাগাতে পারেন কিংবা দোকানে পাওয়া প্যাকেটজাত অ্যালোভেরা জেলও সরাসরি চুলে লাগাতে পারেন।
  • কিছু ক্ষেত্রে সরাসরি গাছ থেকে তুলে অ্যালোভেরা জেল লাগালে অ্যালার্জি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সেটি একবার পরখ করে দেখে নেবেন।
  • বাজার চলতি প্যাকেটজাত আলোভেরা জেল ব্যবহার করতে পারেন।
  • এটি মাথার ত্বকে এবং চুলের গোড়া থেকে ডগা অবধি লাগিয়ে ১ ঘন্টা মত রেখে দেবেন।
  • তারপর কুসুম গরম জলে চুলটা ধুয়ে নেবেন।
  • তৎক্ষণাৎ বুঝতে পারবেন চুলের পার্থক্যটা।
  • সপ্তাহে ১ থেকে ২ দিন এটি করতে পারেন।

. গ্রিন টি 

কি কি উপাদান প্রয়োজন?

  • গ্রিন টি ব্যাগ – ১ টি
  • জল – পরিমান মত

কিভাবে ব্যবহার করবেন?

  • একটি ছোট বাটিতে কিছু পরিমাণ জল নিন এবং তাতে এক চামচ গ্রিন টি কিংবা একটি গ্রিন টি ব্যাগ নিন।
  • তারপর ৩০ মিনিট ধরে মাঝারি আঁচে জলে চা টি ফুটিয়ে নিন।
  • এরপর ৩০ মিনিট পর ওভেন বন্ধ করে দিয়ে চায়ের জলটিকে একটু ঠান্ডা করে নিয়ে মাথার স্ক্যাল্পে এবং চুলের মধ্যে দিয়ে মেসেজ করুন।
  • ৫ মিনিট হাতের আঙ্গুল দিয়ে মাথার তালুতে মাসাজ করুন।
  • তারপর পরিষ্কার জল দিয়ে মাথা ধুয়ে নিন।
  • এভাবে সপ্তাহে দুদিন এটি করতে পারেন। এতে চুলের সমস্যার অনেকখানি সমাধান হবে।

. নিম 

কি কি উপাদান প্রয়োজন?

  • নিমপাতা – ১০-১২ টি
  • নারকেল তেল – পরিমানমত

কিভাবে ব্যবহার করবেন ?

  • নিম পাতা বেটে নিয়ে তারপর মিশ্রণটি চেপে চেপে নিম পাতার নির্যাস বের করে নেবেন।
  • তারপর নারকেল তেল এর সঙ্গে মিশিয়ে তা মাথার ত্বকে এবং পুরো চুলে ৩০ মিনিটের জন্য লাগিয়ে রাখবেন।
  • এছাড়াও চুলে অত্যধিক খুশকির সমস্যা থাকলে চুলের পরিমাণ অনুযায়ী নিম পাতা নিয়ে জলে ফুঁটিয়ে তারপর নিমপাতা গুলিকে বেটে মাথার ত্বকে লাগাতে পারেন। এটি অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান হিসেবে মাথার ত্বকে কাজ করবে।
  • এছাড়াও নিমপাতার মিশ্রনের সাথে সমান পরিমাণ অলিভ অয়েল, আমন্ড অয়েল কিংবা নারকেল তেল মিশিয়ে তেল গরম করে মাথায় লাগাতে পারেন।
  • চুল নরম এবং মসৃণ করার জন্য নিম পাতা বেটে তার মধ্যে মধু মিশিয়েও মাথার চুলে লাগাতে পারেন।
  • ১০ মিনিট লাগিয়ে রাখার পর আপনি যে শ্যাম্পু ব্যবহার করেন সেটি দিয়ে চুল ধুয়ে নিতে পারেন।
  • এছাড়াও আমলা, নিম, শিকাকাই এবং রিঠা পাউডার একসাথে মিশিয়ে তার মধ্যে পরিমাণ মতো লেবুর রস এবং মধু মিশিয়ে হেয়ার মাস্ক হিসেবে মাথায় ব্যবহার করতে পারেন যা চুলের বৃদ্ধির জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ।

. ডিম 

কি কি উপাদান প্রয়োজন?

  • ডিম – ১ টি
  • লেবুর রস – কয়েক ফোঁটা

কিভাবে ব্যবহার করবেন?

  •  একটি ডিমের কুসুম নিয়ে তার মধ্যে দু তিন ফোঁটা লেবুর রস দিন।
  • ভালো করে ফেটিয়ে তারপর মিশ্রণটি মাথার স্ক্যাল্পে এবং চুলের ডগা পর্যন্ত ভাল করে লাগিয়ে শাওয়ার ক্যাপ দিয়ে রাখুন।
  • ২০ মিনিট লাগিয়ে রাখার পর হালকা কোন শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।
  • মাসে একবার থেকে দুইবার এই পদ্ধতিটি অবলম্বন করতে পারেন।
  • এছাড়াও ডিমের এই মাস্ক এর মধ্যে প্রয়োজনে কলা, মধু অলিভ অয়েল কিংবা নারকেল তেল যোগ করতে পারেন।

১০. আলুর রস 

আলু ভালো করে বেটে রস বের করে নিন। বার তাতে ডিমের কুসুম, পরিমান মতো মধু পরিমান মতো জল মিশিয়ে নিন। চুলে মেখে ৩০-৪৫ মিনিট অপেক্ষা করুন যেন ভালোভাবে শুকিয়ে যায়। এর পর ভাল করে মাথা ধুয়ে নিন হালকা বা মৃদু শ্যাম্পু দিয়ে। বেশি নয় সপ্তাহে দিন করুন। দেখবেন চুল পড়া একেবারেই কমে গিয়েছে।

এছাড়া প্রচুর পরিমানে জল খান, সঠিক সময়ে ঘুমান, প্রচুর পরিমানে শাক-সব্জি খান, আমলকী, পালংশাক খান, টক দই খান, এবং প্রয়োজনে ভিটামিন-C, D, এবং E খান।

১১.মেথি 

কি কি উপাদান প্রয়োজন?

  • মেথি – ২ চামচ
  • লেবুর রস – ২-৩ ফোটা

কিভাবে ব্যবহার করবেন?

  • মাথার চুলে সরাসরি মেথি ব্যবহার করলে উপকার বেশি পাওয়া যায়।
  • রাতের বেলায় দুই চামচ মেথি এক বাটি জলে ভিজিয়ে রাখুন।
  • প্রয়োজন হলে তার মধ্যে লেবুর রস যোগ করতে পারেন।
  • সারারাত ভিজিয়ে রাখার পর সকালে চুলের মধ্যে মেথি বেটে মিশ্রণটি লাগিয়ে ফেলুন।
  • ৩০ মিনিট রাখার পর যে কোন শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।
  • অন্যদিকে নারকেল তেলের মধ্যে মেথি বীজ ফুটিয়ে উষ্ণ তেল চুলের গোড়ায় লাগাতে পারেন।
  • এটিও চুলের বৃদ্ধি করতে সহায়তা করবে এবং চুলের খুশকির সমস্যা দূর করবে।
  • এছাড়াও অকালপক্কতা দূর করে চুলকে আরো ঘন এবং কালো করে তুলবে।
  • সপ্তাহে একদিন করে এটি করলে এক মাসেই ব্যবধান বুঝতে পারবেন। এটি চুল পড়া রোধ করার অন্যতম একটি উপায়।

১২.যষ্টিমধু

কি কি উপাদান প্রয়োজন?

  • যষ্টিমধু – ১ টুকরো
  • নারকেল তেল – পরিমান মত

কিভাবে ব্যবহার করবেন?

  • একটি পাত্রে এক কাপ জল নিয়ে তার মধ্যে এক টুকরো যষ্টিমধু নিন।
  • তারপর অল্প আঁচে ১৫ মিনিটের জন্য সেটি ফুটিয়ে নিন।
  • এরপর ১৫ মিনিট পর যে জলটি বেরোবে সেটির মধ্যে কয়েক ফোঁটা নারকেল তেল এবং ক্যাস্টর অয়েল মিশিয়ে মাথায় লাগিয়ে রাখুন।
  • এটি সারা রাত লাগিয়ে রাখতে পারেন কিংবা সকালে শ্যাম্পু করার আগে কয়েক ঘণ্টার জন্য মাথায় লাগিয়ে রাখুন।
  • তারপর জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। শ্যাম্পু না করলেও চলবে।
  • সপ্তাহে একদিন করে এটি করতে পারেন। এতে চুলের ফলিকল গুলো পুষ্টি লাভ করবে, শক্তিশালী হবে এবং চুলের দ্রুত বৃদ্ধি ঘটবে।

১৪.জবা ফুল 

কি কি উপাদান প্রয়োজন?

  • জবা ফুল- ৬-৭ টি
  • জবার পাতা – ৬-৭ টি
  • নারকেল তেল – পরিমান মত

কিভাবে ব্যবহার করবেন?

  • ৬-৭ টি জবা ফুল এবং ৬-৭ টি জবা পাতা একটি ছোট পাত্রে হাফ কাপ নারকেল তেলের মধ্যে ফুটিয়ে নিন।
  • এরপর তেল ঠান্ডা হলে সেই তেলটি মাথার ত্বকে এবং পুরো চুলে লাগিয়ে নিন।
  • এরপর মাথায় শাওয়ার ক্যাপ লাগিয়ে নিন যাতে তেল গড়িয়ে যেতে না পারে।
  • এরপর ৩০ মিনিট বাদে যে কোনো মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে নিন।
  • এই তেল ব্যবহারের ফলে মাথায় রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি ঘটবে যা চুলের বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করবে।
  • আপনি চাইলে এই তেলটি তৈরি করে একমাস মতো সংরক্ষণ করতে পারেন।
  • সপ্তাহে ১ থেকে ২ দিন এটি ব্যবহার করুন।
  • এছাড়াও জবা ফুলের পাতা পেস্ট করে তারমধ্যে টক দই মিশিয়ে মাস্ক বানিয়েও মাথায় লাগাতে পারেন।
  • এই মাস্কটি মাথায় এক ঘণ্টা রেখে তারপর উষ্ণ গরম জল দিয়ে কোনো হালকা শ্যাম্পু ব্যবহার করে চুলটা ধুয়ে নিতে হবে।
  • এরপর চুল মসৃণ এবং শক্তিশালী হয়ে উঠবে। এভাবে একমাস করার পরেই চুলের পরিবর্তনটা লক্ষ্য করতে পারবেন।
  • এছাড়া জবা ফুলের রসের সাথে কখনো কখনো কারি পাতা কিংবা আদা কিংবা পেঁয়াজেরর রস মিশিয়ে লাগাতে পারেন। এগুলি ও চুলের দ্রুত বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।
১৫.আমলকি 

কি কি উপাদান প্রয়োজন :

  • কাঁচা আমলকি – ১ টি
  • নারকেল তেল – পরিমান মত

কিভাবে ব্যবহার করবেন?

  • কাঁচা আমলকি থেকে বীজ গুলিকে ফেলে দিয়ে সূর্যের তাপে সেগুলি শুকিয়ে নেবেন।
  • এরপর নারকেল তেলে সেই শুকনো আমলকি টুকরো করে দিয়ে অল্প তাপে ১৫ মিনিট ধরে তেলটা উষ্ণ গরম করে নেবেন।
  • এরপর তেলটি ঠান্ডা করে শ্যাম্পু করার এক ঘন্টা আগে মাথায় লাগাবেন।
  • এছাড়াও কাঁচা আমলকির রস ও নারকেল তেলের সাথে মিশিয়ে মাথায় লাগাতে পারবেন।
  • এরপর যেকোনো হালকা শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে নেবেন।
  • এছাড়াও আমলকির গুঁড়ো পাওয়া যায়। সেটি শিকাকাই পাউডারের সাথে মিশিয়ে টক দই দিয়ে পেস্ট তৈরি করে মাথায় লাগাতে পারেন। সেটিও চুলের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
১৬.পাতিলেবু

কি কি উপাদান প্রয়োজন?

  • পাতিলেবু – হাফ
  • ডিম- ১ টি

কিভাবে ব্যবহার করবেন?

  • একটি অর্ধেক পাতিলেবু নেবেন।
  • সেটির রস সম্পূর্ণ বের করে মাথার ত্বকে ৫ মিনিট ধরে ম্যাসাজ করে, ১০ মিনিটের জন্য রেখে দেবেন।
  • তারপর যেকোন সালফেট মুক্ত শ্যাম্পু দিয়ে মাথার চুলটা ধুয়ে নেবেন।
  • সপ্তাহে একদিন করে এই প্রক্রিয়াটি করবেন। এতে চুলে তৈলাক্ত ত্বকের সমস্যা দূর হবে এবং চুলের বৃদ্ধি ঘটবে।
  • এছাড়াও লেবু, হেনা পাউডার, ডিম এর সাথে উষ্ণ গরম জলে মিশিয়ে মাস্ক হিসেবেও এক ঘন্টার জন্য মাথায় লাগিয়ে রাখতে পারেন। এটি ও চুলের বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করবে।
১৭.টকদই

কি কি উপাদান প্রয়োজন?

  • টকদই – পরিমানমত
  • পাকা কলা – ১ টি
  • অলিভ অয়েল – ২ চামচ
  • মধু – ১ চামচ

কিভাবে ব্যবহার করবেন?

  • টক দই সরাসরি মাথার ত্বকে এবং চুলে লাগাতে পারেন। এছাড়াও প্যাক বানিয়েও লাগাতে পারেন।
  • প্যাক হিসাবে পাকা কলা, অলিভ অয়েল, মধু এবং টক দই মিশিয়ে মিশ্রণটি মাথার ত্বকে এবং সম্পূর্ণ চুলে ৪০ মিনিটের জন্য লাগিয়ে রাখুন।
  • তারপর যেকোন হালকা শ্যাম্পু দিয়ে মাথাটা ধুয়ে নিন।
  • এই প্যাকটি ব্যবহার করার ফলে চুলে আলাদা একটি ঘনত্ব এবং উজ্জ্বলতা আসবে।
  • সপ্তাহে একদিন এই প্যাকটি ব্যবহার করার চেষ্টা করুন। তবে এক মাসের মধ্যেই চুলের মধ্যেকার পার্থক্যটা বুঝতে পারবেন।
১৮.কারিপাতা

কি কি উপাদান প্রয়োজন?

  • কারিপাতা – ১০-১২ টি
  • নারকেল তেল – পরিমানমত

কিভাবে ব্যবহার করবেন?

  • দশ বারোটা কারি পাতা নিয়ে বিশুদ্ধ নারকেল তেলে সেটি ফুঁটিয়ে নেবেন।
  • যতক্ষণ না নারকেল তেলের রং হালকা সবুজ হচ্ছে ততক্ষণ তেলের মধ্যে পাতাগুলি ফুটাবেন।
  • তারপর একটি কাঁচের শিশিতে ভরে সেটি রেখে দেবেন যতক্ষণ না পর্যন্ত ঠান্ডা হবে।
  • এরপর মাথার ত্বকে এবং চুলে লাগিয়ে ১ ঘন্টা রেখে দেবেন।
  • এক ঘন্টা পর যেকোন হালকা শ্যাম্পু দিয়ে মাথা ধুয়ে নেবেন।
  • সপ্তাহে দুই দিন এটি ব্যবহার করলেই ১৫ দিন বাদেই পার্থক্যটা বুঝতে পারবেন।
  • এটি চুলের দ্রুত বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
  • এছাড়াও কারি পাতা বেটে তা টক দইয়ের সাথে মিশিয়ে মাথার স্ক্যাল্পে মেসেজ করে তা কুড়ি পঁচিশ মিনিট এর জন্য রেখে দিন।
  • তারপর হালকা শ্যাম্পু দিয়ে মাথা ধুয়ে নিতে পারেন। এটি চুলকে আরো উজ্জ্বল এবং ঘন করে তুলবে।
১৯.শিকাকাই
শিকাকাই চুলের পতন রোধ করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এটি চুলে শ্যাম্পুর পরিবর্তে ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি চুল থেকে প্রাকৃতিক তেল না সরিয়েই চুলকে পরিষ্কার এবং পরিচ্ছন্ন রাখে। দক্ষিন ভারতের মানুষেরা শিকাকাই প্রচুর ব্যবহার করে থাকেন। শিকাকাই ফলকে ভেঙ্গে গুড়ো করে সেটি চুলে ব্যবহার করা হয়। যদিও বর্তমানে বাজারে শিকাকাই পাউডার এর প্যাকেট পাওয়া যায়। সেগুলি ব্যবহার করে চুলের দ্রুত বৃদ্ধি এবং চুলকে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল রাখা যায়।

কি কি উপাদান প্রয়োজন?

  • আমলা পাউডার – ১ চামচ
  • রিঠা পাউডার – ১ চামচ
  • শিকাকাই পাউডার – ১ চামচ

কিভাবে ব্যবহার করবেন?

  • আমলা, রিঠা, শিকাকাই পাউডার একসাথে মিশিয়ে প্যাক বানিয়ে মাথায় লাগাতে পারেন।
  • ৩০ মিনিট রেখে যেকোনো হালকা শ্যাম্পু দিয়ে মাথা ধুয়ে নেবেন।
  • যদি ঐদিন শ্যাম্পু না করে পরের দিন শ্যাম্পু করেন সেক্ষেত্রে তা আরো বেশি কার্যকর হবে।
  • এছাড়াও তেল দিয়ে শিকাকাই পাউডারের গুঁড়ো মিশিয়ে মাথায় লাগিয়ে রাখতে পারেন। সেটিও চুলের ক্ষেত্রে ভালো হবে।
  • শিকাকাই মূলতঃ শ্যাম্পু হিসেবে ব্যবহার হয়।
  • তাই রাতে কিছু পরিমাণ জলে শিকাকাই ভিজিয়ে পরদিন সকালে তা দিয়ে যদি মাথা ধুয়ে নেন তবে তা চুলের জন্য ভালো হবে।
  • সপ্তাহে দুবার শিকাকাই শ্যাম্পু দিয়ে মাথা ধুয়ে নিতে পারেন।

২০. মধু, অলিভ অয়েল, দারচিনি :

চুলের ভাঙ্গন রোধ করতে মধুর ভূমিকা অপরিহার্য এবং চুলে পুষ্টি জোগাতে তাকে উজ্জ্বল করে তুলতে অলিভ অয়েল এবং দারচিনি ব্যবহার করা হয়। এই উপাদান গুলির মধ্যে থাকা প্রোটিন চুলের বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করে এবং চুলকে আরো মসৃণ করে তোলে।

কি কি উপাদান প্রয়োজন?

  • মধু -১ চামচ
  • অলিভ অয়েল – পরিমানমত
  • দারচিনি গুঁড়ো – হাফ চামচ

কিভাবে ব্যবহার করবেন?

  • অলিভ অয়েলকে হালকা গরম করে নিন।
  • তার মধ্যে পরিমাণমতো মধু এবং দারচিনির গুঁড়ো নিয়ে প্যাক বানিয়ে মাথার ত্বকে এবং চুলে লাগিয়ে রাখুন।
  • কুড়ি মিনিট লাগিয়ে রাখার পর যেকোন হালকা শ্যাম্পু দিয়ে মাথা ধুয়ে নিন।
  • এই প্যাকটি ব্যবহার করার ফলে চুল আরও মসৃণ এবং শক্তিশালী হয়ে উঠবে এবং চুল ভাঙবে কম।
  • চুলের ভাঙ্গন রোধ করা গেলে এর দ্রুত বৃদ্ধি সম্ভব হবে।

২১. চুল পড়া কমাতে আলুর ব্যবহার :

চুলের ভাঙন রোধ করে চুলে দ্রুত বৃদ্ধি ঘটাতে অন্যতম উপাদান আলু। এটি চুলকে মসৃন ও উজ্জ্বল করে তোলে।

কি কি উপাদান প্রয়োজন?

  • আলুর রস -৩ টেবিল চামচ
  • নারকেল তেল – সমপরিমান

কিভাবে ব্যবহার করবেন?

  • আলু মিক্সিতে বেঁটে নিয়ে তার থেকে রস বের করেরে নিন।
  • এবার তা উষ্ণ গরম নারকেল তেলে মিশিয়ে ২০ মিনিট মাথায় লাগিয়ে রাখুন।
  • তারপর হালকা কোনো শ্যাম্পু দিয়ে মাথা ধুয়ে নিন।

চুল পড়া বন্ধ করার অন্যান্য উপায়গুলি হল :

চুল পড়া বন্ধ করার জন্য আমাদের বেশ কিছু উপায় রয়েছে। সেগুলি হল :

১) চুল খুব টাইট করে বাঁধবেন না।

২) চুল মোছার সময় জোরে জোরে ঘষবেন না।

৩) ভেজা চুল আঁচড়াবেন না।

৪) চুলকে আকর্ষনীয় করে তোলার জন্য কার্ল করা কিংবা হিট দেওয়া থেকে বিরত থাকুন।এগুলি চুলের আরো ক্ষতি করে।

৫) সে সমস্ত ওষুধ খাওয়ার ফলে চুল পড়ার সমস্যা দেখা দিচ্ছে প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে তা বন্ধ করুন।

৬) গরমকালে বাইরে বের হলে স্কার্ফ ব্যবহার করুনন, এটি ব্যবহারের ফলে সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগুনী রশ্মির হাত থেকে চুলকে রক্ষা করা যাবে।

৭) ধুমপান বন্ধ করুন।

৮) আপনি যদি কেমোথেরাপির আওতায় থাকেন তবে সেক্ষেত্রে ডাক্তারকে চুল পড়া বন্ধ করার উপায় জিজ্ঞাসা করুন।

চুল পড়া রোধে খাদ্য তালিকায় কি কি রাখবেন

বর্তমানে অন্যান্য অসুস্থতার মধ্যেও চুল পড়া একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে নারী পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই। যে কারণে চুল পড়ার জন্য কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি অবলম্বন করলেও নজর রাখতে হবে খাদ্যতালিকায়। কেননা বেশ কিছু খাদ্য উপাদান আছে যেগুলি আমাদের চুলের বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করে। আবার বেশ কিছু খাদ্য উপাদান আছে যেগুলি চুলের বৃদ্ধিকে রুখে দেয়। এক নজরে দেখে নিন কী খাবেন চুলের দ্রুত বৃদ্ধির জন্য এবং কি খেলে চুল পড়া তাড়াতাড়ি বন্ধ হবে :

১) খাদ্যতালিকায় প্রোটিন সমৃদ্ধ খাদ্য যেমন ডিম মাছ মাংস এগুলি রাখবেন।

২) এছাড়াও আমলকি, স্পিনাচ, মিষ্টি আলু, অ্যাভোকাডো, বাদাম, স্যালমন মাছ, ইত্যাদি চুল পড়া রোধ করে।

৩) মটরশুটি, সোয়াবিন, জাতীয় খাদ্যগুলি খাদ্য তালিকায় রাখবেন। এটি শরীরের ভেতর থেকে মাথার ত্বকে পুষ্টি জোগাবে এবং মাথায় রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।

৪) এছাড়াও অতিরিক্ত ভাজাভুজি, ফাস্ট ফুড, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য এড়িয়ে চলবেন। এটি চুলের বৃদ্ধিতে বাধা দেয়।

৫) সবকিছুর সাথে দিনে ৪ থেকে ৫ লিটার জল খেতে হবে যা শরীরকে ভেতর থেকে সুস্থ রাখবে।


চুল পড়া বন্ধের মহৌষধ

প্রথম পদ্ধতি:-

  • - চামচ বা আপনার পরিমান মতো নারিকেল তেল।
  • ৫টি ভিটামিন E ক্যাপসুল (Evion 400 এছাড়া অন্য কোন নামের ব্যাবহার করতেও পারেন)
  • চামচ Castor Oil
  • / চামচ শুকনো কালো জিরার গুঁড়ো।
  • / চামচ শুকনো মেথি গুঁড়ো।
  • - চামচ অ্যালোভেরা রস বা জেলি

এগুলো সবকিছু ভালভাবে একটা পরিস্কার পাত্রে মিশিয়ে নিন। পাত্রটি অবশ্যই যেন ঢাকনা যুক্ত হয়, এবং মিশ্রন টি দিন রেখে দিন ঢাকা দিয়ে। ২দিন পর মিশ্রন টি ব্যাবহার করতে শুরু করুন।

ব্যাবহার পদ্ধতি:

রাত্রিতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে মিশ্রন টি ভালো করে চুলের গড়ায় লাগিয়ে নিন। এবং -১০ মিনিট ধরে ভালো ভাবে ম্যাসাজ করুন। এবং সকালে উঠে কোনো হালকা শ্যাম্পু দিয়ে ভালো ভাবে ধুয়ে নিন। মিশ্রন টি সপ্তাহে দিন ব্যাবহার করুন অবশ্যই ১০০ শতাংশ ভালো ফল পাবেন।

দ্বিতীয় পদ্ধতি:

  • ৫০০ গ্রাম/ ml নারিকেল তেল।
  • ৫০ টী ভিটামিন E ক্যাপসুল। (Evion -400/600)
  • মেথি গুড়ো ২০০-২৫০ গ্রাম।
  • কারি-পাতা বাটা ২০০-২৫০ গ্রাম।
  • ছোট লাল পেঁয়াজ (ছাঁচি পেঁয়াজ) -. কেজি।

একটি পরিস্কার পাত্রে কম আঁচে পেঁয়াজ গুলো ভালো করে নারকেল তেল সেদ্ধ করে নিন। হাল্কা সেদ্ধ হয়ে যাওয়ার পর মেথি গুড়ো কারি পাতা বাটা যোগ করুন। এরপর ভালো ভাবে সমস্ত মিশ্রন কম আঁচে ৪৫-৫০ মিনিট ফুটিয়ে নিন, মাঝে মাঝে হাতা দিয়ে নাড়তে থাকুন। যখন দেখবেন মিশ্রন টি ভালভাবে মিশে গেছে তখন নামিয়ে নিন, এবং ঠান্ডা হতে দিন। হাল্কা গরম থাকাকালিন ভিটামিন ক্যাপসুল গুলো ফাটিয়ে মিশ্রনের সাথে মিশিয়ে দিন (বেশি গরম যেন না থাকে) -১০ মিনিট হাতা দিয়ে ভালো ভাবে মিশিয়ে দিন। ভালোভাবে ঠান্ডা হওয়ার পর ১২-১৫ ঘন্টা মিশ্রন টি ঢাকা দিয়ে রেখে দিন। এরপর ছাঁকনি বা পরিস্কার কাপড়ের টুকরো দিয়ে, কাঁচের পাত্রে ছেঁকে নিন। ভিটামিন ক্যাপসুল এর ছাল গুলো ভালভাবে না মিশলে সেগুলো আলাদা করে নিন। ব্যাস আপনার তেল রেডি। ক্যাপসুল এর ছাল গুলো তেলে মিশিয়ে - দিন রোদ্রে রেখে দিন। তারপর ব্যাবহার করুন।

ব্যাবহার পদ্ধতি:

রাত্রিতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে মিশ্রন টি ভালো করে চুলের গড়ায় লাগিয়ে নিন। এবং -১০ মিনিট ধরে ভালো ভাবে ম্যাসাজ করুন। এবং সকালে উঠে কোনো হালকা শ্যাম্পু দিয়ে ভালো ভাবে ধুয়ে নিন। মিশ্রন টি সপ্তাহে দিন ব্যাবহার করুন অবশ্যই ১০০ শতাংশ ভালো ফল পাবেন।

বি: দ্র:

যাদের ঠান্ডা লেগে যায় খুব তাড়াতাড়ি তারা এই মিশ্রন টি রাত্রিতে লাগাবেন না। তারা সকালে লাগিয়ে নিন এবং - ঘন্টা পরে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে নিন।

এই মহৌষধ টি সম্পূর্ন নিরাপদ এবং কোন রকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। সকলেই ব্যাবহার করতে পারেন। কোন রকম সন্দেহ থাকলে যেকোনো ডার্মাটলজিস্ট এর কাছে জেনে নিতে পারেন।

 

 

 

 


Previous Post Next Post