সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বেশিরভাগ দেশে এই ফলকে ত্বীন নামে ডাকলেও ভারত, তুরস্ক, মিশর, জর্দান, যুক্তরাষ্ট্র ইত্যাদি দেশে এটি আঞ্জির নামে পরিচিত। ত্বীন মূলত ডুমুর জাতীয় ফল। গাছ ও পাতার আকার আকৃতি এবং ফল আমাদের দেশের ডুমুরের মতোই। তবে ত্বীন ফল পুরোপুরি পাকলে রসে ঠাসা ও সুমিষ্ট হয়।
ত্বীন ফল চরম জলবায়ু অর্থাৎ মরুভূমি, শুষ্ক ও শীত প্রধান দেশে চাষ হয়। তবে বাংলাদেশের মতো নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ুতেও সারা বছর এ ফল উৎপাদন সম্ভব হয়েছে। দেশে এরই মধ্যে বাণিজ্যিকভাবে ত্বীন ফল চাষ শুরু হয়েছে।
ত্বীন ফল বিদেশে রপ্তানির সম্ভাবনাও দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে ভারত ও জাপানে আমাদের কাছে ত্বীন ফলের চাহিদার কথা জানিয়েছে।
দেখতে কেমন এই ত্বীন ফল
যুক্তরাষ্ট্র, মিশর, ভারত, তুরস্ক ও জর্ডানে আঞ্জির হিসেবে পরিচিত এই ফলের গাছটি ৬ থেকে ৩০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। ফল ধরে পাতার গোড়ায় গোড়ায় একটি করে। ফল আসার সময় সবুজ রঙের হয়ে থাকে। বারো মাস ফল ধরে। মাত্র ৬ মাসের ব্যবধানে পরিপক্ক হওয়ার সাথে সাথে জাত ভেদে লালচে, বাদামি, খয়েরি, হলুদ, গোলাপী রং ধারণ করে। আকারে সাধারণত ডুমুরের থেকে কিছুটা বড় হয়। আর পাকলে আকার বেড়ে দ্বিগুণ থেকে তিন গুণ হয়ে যায়। ওজনে সাধারণত ৭০ থেকে ১১০ গ্রাম পর্যন্ত হয়। স্বাদে খুব মিষ্টি ও রসাল। ডুমুরের মতোই ভেতরে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বীজ রয়েছে।
প্রতিটি গাছ থেকে প্রথম বছরে এক কেজি, দ্বিতীয় বছরে ৭ থেকে ১১ কেজি, তৃতীয় বছরে ২৫ কেজি পর্যন্ত ফল ধরে। এভাবে ক্রমবর্ধিত হারে একটানা ৩৪ বছর পর্যন্ত ফল দিয়ে থাকে। ত্বীন গাছের আয়ু প্রায় ১০০ বছর। চারা রোপণের তিন মাসের মধ্যেই শতভাগ ফলন আসা শুরু হয়।
ত্বীন ফল চাষ পদ্ধতি
কোনও রকম রাসায়নিক সার ছাড়াই, মাটিতে জৈব সার ও কম্পোস্ট ব্যবহার করে ত্বীন চাষ করা যায়। অন্যান্য ফলের মতোই গোড়ায় যেন পানি না জমে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আম লিচু বা ড্রাগল ফল যেভাবে চাষ করে ত্বীন ফলও সেভাবেই চাষ করা যায়।
টবে ত্বীন ফল চাষ
দোঁআশ মাটিতে জৈব সার মিশিয়ে ছাদে বা টবে লাগিয়ে এই ফল উৎপাদন করা সম্ভব। কান্ড খুব নরম হওয়ায় কাটিং করে বংশবিস্তার এবং বীজ থেকে চারা উৎপাদন করে, দুই ভাবেই চাষ করা যায়।
একটি ত্বীনের কাটিং বা কলম চারা রোপণের ৪ থেকে ৫ মাস পর থেকেই ফল দিতে শুরু করে। ভালো ফলন পেতে টবে রোপণের ২ থেকে ৩ মাস পর থেকেই গাছের গোড়ায় নিয়মিত অল্প পরিমাণে সরিষার খৈল পচা পানি দিতে হবে। ১২ মাস পর টবের আংশিক মাটি বদলাতে হবে। ২ ইঞ্চি প্রস্থে এবং ৬ ইঞ্চি গভীরে শিকড়সহ মাটি ফেলে নতুন জৈব সার মেশানো মাটি দিয়ে তা ভরে দিতে হবে। শীতের আগে ও বর্ষার শেষে টবের মাটি বদলে দেওয়া ভালো। ১০ থেকে ১৫ দিন অন্তর টব বা ড্রামের মাটি কিছুটা নেড়ে চেড়ে দিতে হবে।
বর্ষা ও শীতকালে গাছে বিশেষ করে ফলবতী গাছে ছত্রাকের আক্রমণ দেখা দিতে পারে। তখন ছত্রাকনাশক ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে তা অবশ্যই অনুমোদিত মাত্রার বেশি নয়। গাছে বেকিং সোডা পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করে দেখা যেতে পারে।
দোআঁশ মাটি এ গাছের জন্য খুব ভালো। এ গাছকে এমন জায়গায় রাখা উচিত যেখানে দিনে ১০ থেকে ১১ ঘণ্টা রোদ পড়ে। ছায়াযুক্ত স্থানে ফল হবে না।
ত্বীন ফলের চারা সংগ্রহ
ত্বীনের চারা সংগ্রহ করতে চাইলে হাতের নাগারে তেমন নির্ভরযোগ্য সোর্স এখনো তৈরি হয়নি। তবে ঢাকার অদূরে গাজীপুরে এ ফলের বাণিজ্যিক চাষ শুরু হয়েছে। শ্রীপুর উপজেলার বারতোপা গ্রামে মডার্ন এগ্রো ফার্ম এ্যান্ড নিউট্রিশন নামে একটি খামারে পেতে পারে। আবার এনপিএন (NPN), ত্বীনফল বিডি (tinfolbd) নামে কিছু অনলাইন প্রতিষ্ঠান আছে যারা ত্বীন ফলের চারা বিক্রি করে। তবে অনলাইনে কেনার আগে অবশ্যই যাচাই করে নেবেন।