মানব দেহের পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের মধ্যে চোখ অন্যতম। চোখ ভাল থাকা মানে পুরো জগৎ আপনার সামনে উন্মোচিত। আর কোন
কারনে চোখ হারা হলে দুনিয়া অন্ধকার। নানান কারণে মাঝে মধ্যে দেখাতে হয় চোখের ডাক্তার। বিশেষ করে স্মার্ট ফোনের যুগের স্মার্ট ছেলেদের চোখের সমস্যা তো অহরহ লেগেই থাকে। স্মার্টফোনের স্মার্ট ইফেক্ট বলে যাকে। সমস্যার না হয় সমাধান দেন ডাক্তার। কখনো প্রেসক্রাইব করা হয় চশমার। কিন্তু সেই চশমার সাজেশনওয়ালা প্রেসক্রিপশনের প্রয়োজন হয় আবার তরজমার। বিপত্তিটা বাদে সেখানে। দৌড়াতে হয় চশমা বানানোর দোকানে। দোকানদার যা বলে তাই করতে হয় বিশ্বাস। শিক্ষিত বলুন আর অশিক্ষিত বলুন এখানে সবার অন্ধকারে বাস।যাহোক আজকে করবো ডাক্তাদের প্রেসক্রিপশনে লেখা সেই গোপন মন্ত্র ফাঁস।
চোখের চশমা পরার কমন কারণ সাধারনত ৪ টি।
১.মায়োপিয়া (দূরে দেখতে সমস্যা)
২.হাইপারোপিয়া (বয়স ৪০ এর পূর্বে কাছে দেখতে সমস্যা)
৩.প্রেসবায়োপিয়া (বয়স ৪০ এর পর কাছে দেখতে সমস্যা)
৪.এসটিগমেটিজম (দূরে বা কাছে ঝাপসা দেখা)
মায়োপিয়া: সাধারণত কারো মায়োপিয়া হয় চোখের অক্ষিগোলক বা আইবল বড় হয়ে গেলে। বলে রাখা ভাল, আমরা যখন কোন ছবি দেখি তা কিন্তু প্রথমে কর্ণিয়া হয়ে তারপর পিউপিল থেকে রেটিনায় যায় (সংক্ষেপে)। যেহেতু আইবল বড় হয়ে যায় তাই আইবল আগের জায়গায় থাকবেনা এটাই স্বাভাবিক। আমরা জানি যেকোন ছবি কর্ণিয়া হয়ে পিউপিল থেকে রেটিনায় যায় সুতরাং আইবল বড় হোক আর ছোট হোক সেটি একই প্রসিডিউর ফলো করবে। আর এই একই প্রসিডিউর ফলো করতে গিয়ে বাধে বিপত্তি। ছবিটা গিয়ে আগের জায়গায় গিয়ে তার প্রিয় রেটিনাকে খুজতে থাকে। রেটিনা কিন্তু আইবল বড় হওয়ার সাথে সাথে তার অবস্থান বদলে ফেলে। সে চলে যায় আরো একটু দূরে। ফলে সেই ছবিটা আগের জায়গায় গিয়ে রেটিনাকে আর পায়না। ছবিটার একটু সামনে থাকা রেটিনাকেও কষ্ট করে ছবিটা দেখতে হয়। বিষয়টা অনেকটা দূরের জিনিস দেখতে না পাওয়ার মত। ঠিক ধরেছেন অক্ষিগোলক বড় হয়ে যাওয়ায় দূরের জিনিস দেখতে না পাওয়া বা ঝাপসা দেখার এই রোগটাকে মায়োপিয়া বলে।
হাইপারোপিয়া: হাইপারোপিয়াটা হচ্ছে ঠিক মায়োপিয়ার উল্টো অর্থাৎ আইবল বা অক্ষিগোলক ছোট হয়ে যাওয়া। যেহেতু অক্ষিগোলক ছোট হয়ে গেছে তাই রেটিনাও আগের জায়গা থেকে আরো একটু সামনে চলে আসছে। আমাদের দেখা ছবি এখন রেটিনাকে ক্রস করে তার পেছনে গিয়ে আগের জায়গায় পতিত হয়। ফলে রেটিনা কাছে থাকা ছবিটাকেও (যেহেতু পিছনে) রেটিনা কষ্ট করে পড়তে হয়। কাছের লেখা পড়তে যাদের ঝাপসা লাগে রেটিনা ছোট হয়ে যাওয়ার কারণে তাদের এই রোগকে হাইপারোপিয়া বলে।
প্রেসবায়োপিয়া: হাইপারোপিয়া আর প্রেসবায়োপিয়া জিনিস দুটো এক হলেও কিন্তু এক নয়। বয়স ৪০ হবার পর স্বাভাবিকভাবে মানুষের চোখের অটো ফোকাসিং পাওয়ার কমতে থাকে ফলে মানুষ কাছের জিনিস দেখতে পায়না। এটার সাথে অক্ষিগোলক ছোট বা বড় হবার তেমন কোন সম্পর্ক থাকেনা।
এসটিগমেটিজম: এবার আসি এসটিগমেটিজম এর কথায়। এটি আসলে কোন রোগ নয়। আমাদের চোখের কর্ণিয়া এবং লেন্স একদম গোল। যদি কোন কারণে সেটার গোলাকার আকৃতির একটু পরিবর্তন হয় তবে বাধে বিপত্তি। আলোটা সঠিক ভাবে প্রবেশ করতে পারেনা বলে তখন কাছের কিংবা দূরের লেখা ঝাপসা হয়ে যায়। আর তা ঠিক করতে প্রয়োজন হয় চশমার।
আজ আমরা চিত্রের প্রেসক্রিপশনের তরজমা করবো। বলে রাখা ভাল এটি Standard Grid Format প্রেসক্রিপশন। এই
প্রেসক্রিপশনটি দেওয়া হতে পারে একটি ইউনিফোকাল লেন্সের জন্য।
এখানে O.D= Oculus Dexter মানে হল ডান চোখ O.S= Oculus Sinister মানে হল বাম চোখ। কোন কোন প্রেশক্রিপশনে Left এবং Right উল্লেখ করা থাকে।
এখানে SPH হল Sphere এই SHP এর নিচে যা মান দেওয়া হয় তা হল মায়োপিয়া কিংবা হাইপারোপিয়া রোগের জন্য।
যদি কেউ কাছের জিনিস দেখতে না পায় (হাইপারোপিয়া) তবে SPH এ দেওয়া পাওয়ারের আগে + (প্লাস সাইন) থাকবে।
কেউ যদি দূরের কিছু দেখতে না পায় (মায়োপিয়া) তবে SPH এ দেওয়া পাওয়ারের আগে – (মাইনাস সাইন) থাকবে।
CYL মানে হল Cylinder । সিলিন্ডারে মান থাকার মানে আপনার এসটিগমেটিজম এর সমস্যা। আবারো সেই একই কথা যদি কেউ দূরের জিনিস ঝাপসা দেখেন তবে তার চিকিৎসায় – (মাইনাস সাইন) দিয়ে পাওয়ার লিখা থাকবে। আর কেউ যদি কাছের জিনিস ঝাপসা দেখেন তবে তার চশমায় + (প্লাস সাইন) পাওয়ার লেখা থাকবে। বলে রাখা ভাল CYL এর পাশে যে AXIS নাম ঘরটি দেখতে পাচ্ছেন সেটি কিন্তু এসটিগমেটিজমকে বিশেষভাবে চিহ্নিত করার জন্য অর্থাৎ কত ডিগ্রি এঙ্গেলে আপনার এসটিগমেটজম এর সমস্যা। AXIS এর ভ্যালু 0 থেকে 180 ডিগ্রী পযর্ন্ত থাকে।
PRISM সাধারনত জটিল কেইসে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। যেমন একই জিনিস ডাবল দেখা সমস্যার জন্য চশমায় প্রিজমের ব্যবহার হয়ে থাকে। PRISM পরের ঘরটি হচ্ছে BASE এটি দ্ধারা প্রিজমের অবস্থান নির্ণয় করা হয়। BASE সাধারণত ৪ টি হয়ে থাকে। যথা-
1. BI = BASE IN
2. BO = BASE OUT
3. BU = BASE UP
4. BD = BASE DOWN
PD হল
Pupillary distance অর্থাৎ এক চোখের মনি থেকে আরেক চোখের মনির দূরত্ব। এটার মানকে মিলি মিটার দ্ধারা প্রকাশ করা হয়। সঠিক ভাবে চশমা বানানোর জন্য এই মানটি গুরুত্বপূর্ণ।
ডাক্তাররা সাধারনত ৩ ধরনের লেন্স সম্বলিত চশমা সাজেস্ট করে থাকেন। লেন্স? ওই যে চশমার গ্লাসের কথা বলছি।
১. ইউনিফোকাল
২. বাইফোকাল
৩. প্রোগ্রেসিভ
ইউনিফোকাল: যদি আপনার চোখের সমস্যা একদম কম হয়ে থাকে তবে ডাক্তার ইউনিফোকাল লেন্স প্রেসক্রাইব করতে পারেন। ইউনিফোকাল লেন্স বা চশমা মানে হচ্ছে পুরো চশমা দিয়ে হয় আপনি দূরের জিনিস দেখবেন নতুবা কাছের।
বাইফোকাল: বাইফোকাল মানে একই চশমার গ্লাসে দুই ধরনের লেন্স। বেশির ভাগ মাষ্টার মশাইয়ের চোখে বাই ফোকাল লেন্স থাকে। তারা চশমার উপরের অংশ দিয়ে দূরের ছাত্রকে দেখেন। আর নিচে অংশ দিয়ে গভীর মনযোগ নিয়ে বই পড়েন।
প্রোগ্রেসিভ: প্রোগ্রেসিভে ৩ ধরনের লেন্স থাকতে পারে। উপরেরটা দূরের জিনিস দেখার। মাঝের লেন্স হবে বেশি দূরেও না আবার কাছেও না এমন জিনিস দেখার জন্য। আর একদম নিচের লেন্স থাকবে কাছের জিনিস দেখতে।
যাহোক উপরে আমরা দেখেছিলাম ইউনিফোকাল লেন্সের একটি প্রেসক্রিপশন। এখন আমরা দেখবো বাইফোকাল লেন্সের একটি প্রেসক্রিপশন এবং তার তরজমা।
উপরের চিত্রের প্রেসক্রিপশনে আমরা দেখতে পাচ্ছি নতুন দুটি শব্দ যুক্ত হয়েছে। যথা D.V. ও N.V এখানে D.V=Distance Vision অর্থাৎ দূরের জিনিস দেখার জন্য পাওয়ার এবং N.V=Near Vision কাছের জিনিস দেখার জন্য পাওয়ার। আরেকটা জিনিস বলে রাখা ভাল Near Vision টা কিন্তু ADD এর ঘরের সাথে যুক্ত। আর এই ADD মানে হল Additional অর্থাৎ Additional Power যেটা কিনা প্রেসবায়োপিয়া (বয়স ৪০ এর পর কাছে দেখতে সমস্যা) আক্রান্ত রোগিকে দেওয়া হয়। ভাল থাকবেন সবাই।