মাংসের শুটকির ধরণ
বিশ্বব্যাপী দুই ধরনের মাংসের শুটকির প্রচলন রয়েছে। বিটলং এবং জার্কি। স্বাদ এবং বানানোর প্রক্রিয়া দুইটার ক্ষেত্রে আলাদা। বিটলং পদ্ধতিতে মাংস অপেক্ষাকৃত পুরু করে কাটা হয় এবং প্রাকৃতিক ভাবে রোদে শুকানো হয়। ডাচরা এই পদ্ধতির উদ্ভাবন করে।
আর অন্যদিকে জার্কি তৈরীতে মাংসগুলো পাতলা করে কেটে ডিহাইড্রেটরে শুকানো হয়। দক্ষিণ আমেরিকায় এই পদ্ধতির উদ্ভাবন হয়। দুই ধরনের পদ্ধতিই সারা বিশ্বব্যাপী অনেক জনপ্রিয় তবে বিশেষজ্ঞদের মতে জার্কির তুলনায় বিটলং খাওয়া স্বাস্থ্যের পক্ষে বেশী ভালো।
আমাদের দেশে শুটকির প্রচলন
আমাদের দেশে প্রচীন কাল থেকেই বিটলং পদ্ধতিতে শুটকির প্রচলন রয়েছে। যদিও চট্টগ্রামসহ কিছু এলাকায় চুলায় ভেজে শুটকি করা হয়ে থাকে। তবে বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই রোদে শুকিয়ে এই শুটকি তৈরী করা হয়।
জার্কি মাংসের শুটকি কিন্তু এমনি এমনিই নাস্তা হিসাবে খাওয়া যায় তবে বিটলং পদ্ধতিতে তৈরী শুটকি আমাদের দেশে নানা ভাবে রান্না করা হয়ে থাকে। আর এর স্বাদ সত্যিই অতুলনীয়।
কি ধরণের মাংস দিয়ে শুটকি হয়
খাবার যোগ্য সব ধরণের মাংস দিয়েই শুটকি তৈরি করা সম্ভব তবে মাংসের প্রকার ভেধে শুটকি তৈরি করার নিয়ম আলাদা ভাবে তৈরি করে থাকেন,
গরুর মাংসের শুটকি
আমাদের দেশে সব এলাকায় যদিও মাংসের শুটকি বা ড্ৰাই মিট পাওয়া যায় না এবং সব এলাকায় এই মাংসের শুটকি তৈরিও করেন না , তবে বিভিন্ন অঞ্চল ভিত্তিক কিছু মানুষ এই শুটকি তৈরি করে থাকেন । জানাগেছে মাংসের শুটকি মধ্যে সব চেয়ে সু-স্বাধু শুটকি হচ্ছে গরুর মাংসের শুটকি
মাংসের শুটকি বানানোর পদ্ধতি
বিশেষ কিছু প্রক্রিয়ায় মাধ্যমে এই শুটকি বানাতে হয়, তা না হলে বেশি দিন রাখা যায় না, নষ্ট হয়ে যায় এবং স্বাদও কমে যায়,
মাংস গুলো হাড় থেকে আলাদা করে মালসা দিয়ে ভালো করে সিদ্ধ করে নিতে হবে, কাচা মাংসের শুটকি হয় না, কাচা মাংসের শুটকি বেশি দিন ঘরে রেখে খাওয়া যায় না দুর্গন্ধ হয়ে নষ্ট হয়ে যায়, তাই ভালো করে মাংস গুলো সেদ্ধ করে পানি ঝড়িয়ে শুকনো খোলামেলা জায়গায় রোদে শুকাতে হবে,
বাংলাদেশর চট্টগ্রামে অনেকেই চুলোয় আচ বা জাল দিয়ে শুকিয়ে শুটকি তৈরি করে থাকেন, সেটা রোদে শুকানো শুটকি তুলনায় অনেক কম সু-স্বাধু, তাই রোধে শুকানো শুটকি সাস্থ্যকর ও মজাদার
মাংসের শুটকির দাম
মাংসের শুটকি অনেকের কাছেই ভালো লাগে বা অনেকেই খেতে চান কিন্তু দাম টা শোনা মাত্রই চোখ কপালে উঠার মতো হাল হয়।
বলেন এত দাম বেশি কেন, এর কারন শুটকি ওজনে খুবই হালকা হয়।
১০০ গ্রাম শুটকির তৈরী করতে ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রাম মাংসের দরকার হয়, সেই ক্ষেত্রে শুটকির দাম টাও তুলনামূলক ভাবে অনেকটাই বেশি হবে,
১০০ গ্রাম শুটকি রান্না করলে চার পাঁচ জন খুব ভালো ভাবে খাওয়া যায়।
খাওয়ার নিয়ম
রান্নার আগে অবশ্যই মাংস গুলোকে গরম পানিতে কয়েক ঘন্টা ভিজিয়ে রেখে পরে পাটায় ছেঁচে নিতে হবে। অথবা ব্লেন্ড করে নিতে হবে। এক্ষেত্রে মাংস ছেঁচে নিলেই খেতে বেশি মজা লাগে। মাংসের শুটকি ভুনা করেও খেতে পারেন। সুস্বাদু বিরিয়ানিও রান্না করে খেতে পারেন যেমন ইচ্ছা তেমন করেই এই শুটকি রান্না করা যায়।
শুটকি সংরক্ষণ
মাংসের শুটকি সংরক্ষণের পদ্দতি অনেকেই অনেক ভাবে করে থাকেন তবে মাংসের শুটকি সংরক্ষণ করার সবচেয়ে সহজ উপায় ডিপ ফ্রিজে রেখে দেওয়া। এক বছরেও বেশি সময় ধরে রাখা যায়। স্বাদ আর গন্ধের কোনো পরিবর্তন হবে না।
ফ্রিজের নর্মাললে রেখেও সংরক্ষণ করা যেতে পারে। নরমাল ফ্রিজে এক বছর ভালো থাকবে না। নরমাল ফ্রিজে সারা বছর যেন ভাল থাকে সেই জন্য দুই তিন মাস পর পর ফ্রিজ থেকে বের করে রোদ দিয়ে আবার নরমাল ফ্রিজে রেখেও সারাবছর খাওয়া যাবে। এতেও স্বাদ আর গন্ধের কোনো পরিবর্তন হবে না।
গ্রাম বাংলার অনেকের ঘরেই এখনো ফ্রিজ নেই। সেই ক্ষেত্রে বাহিরে রেখেও সংরক্ষণ করা যাবে। পরিষ্কার এয়ার ড্রাই বক্সে রেখে রাখতে পারেন। শুটকি শীতকালে দুই তিন সপ্তাহ পর পর বের করে যখন অনেক বেশি রোদ উঠে যেমন দুপুর ১২টার দিকে ঐ রোদে এক থেকে দুই ঘন্টা শুকিয়ে আবার বক্সে রেখে দিলেই হবে।
আর গরমের সিজনে এক সপ্তাহ পর পর যখন অনেক বেশি রোদ উঠে যেমন দুপুর ১২টার দিকে ঐ রোদে এক থেকে দুই ঘন্টা শুকিয়ে আবার বক্সে রেখে দিলেই হবে।
যে সব দেশে ফুড নেয়া এলাউ করে বা নিয়ে যাওয়ার অনুমতি রয়েছে সেই সব দেশে এই মাংসের শুটকি অনায়াসে নিয়ে যাওয়া যাবে।