এই লেখার শুরুতে আমরা অ্যাপারচার (aperture), সাটার স্পীড ও কি ধরণের লেন্স ব্যবহার করতে হবে – সে সম্পর্কে জানব; এরপরে জানব ফোকাসিং ও কম্পোজিশন টেকনিক নিয়ে। নেচারাল আলো ও রিফ্লেকটর ব্যবহার করে কিভাবে পোট্রেটকে ড্রামাটিক্যালি পরিবর্তন করে আপনার তোলা ছবিকে আরও সুন্দর করে তুলব, তার আলোচনা একের পর এক চলে আসবে।
তার পরের প্যারাগুলোতে আমরা পোট্রেট ফটোগ্রাফির অ্যাডভান্সড কিছু টিপস নিয়ে আলোচনা করব। এর মধ্যে রয়েছে, স্পীডগান এবং অন্যান্য এক্সেসরিজের ব্যবহার করে কিভাবে পোট্রেট ফটোগ্রাফিতে সুবিধা আদায় করে নিতে পারি।
আপনি যদি পোট্রেট ছবি তুলতে এখন আপনার বন্ধুর সামনে বসে থাকেন, বা কোন ফ্যামিলি পোট্রেট তুলবার দায়িত্বপ্রাপ্ত হন, বা, কোন পশ ফটোস্টুডিওতে মডেলগ্রাফির জন্য অপেক্ষায় আছেন, বা স্থানীয় পার্কে ফটোশ্যুটে এসে থাকেন – তবে আমি কনফিডেন্ট যে, আপনার এই টিপ্সগুলো ভালই কাজে লাগবে।
১. এক্সপোজার কম্পেনসেশন (Exposure compensation) কখন ব্যবহার করবেন
ক্যামেরায় তোলা প্রতিটি ছবির উপরে ঐ সময় ক্যামেরায় ব্যবহৃত মিটারিং সিস্টেমের বড় একটা ভূমিকা রয়েছে। সঠিক এক্সপোজারে একটা ছবি তুলতে ক্যামেরায় কতটুকু আলো প্রবেশ করা উচিত – তা নির্ধারণ করে এই মিটারিং সিস্টেম। এই সিস্টেমটি বেশ স্মার্ট; তবে, বিশেষ কিছু লাইটিং কন্ডিশনে কতটুকু আলোর প্রয়োজন, তা নির্ধারণে এটা বোকার মত ভুল ডিসিশন নেয়।
মাল্টি-জোন বা ম্যাট্রিক্স মিটারিং এর অসুবিধা হল, এটা পুরো ফ্রেমের এক্সপোজার রিডিং এর এভারেজ ক্যালকুলেশন করে এবং এই ক্যালকুলেশনটি মিডটোনের উপরে ভিত্তি করে হিসাব করে। মিডটোন হল, কালো ও সাদার মধ্যবর্তী একটি মান।
সব সময় এই ক্যালকুলেশন সঠিকভাবে কাজ করে না। দৃশ্যত: যখন কোন ফ্রেমের মধ্যে একটা বড় অংশে উজ্জ্বল আলো বা/এবং গাঢ় অন্ধকার থাকে, তখন মাল্টি-জোন বা ম্যাট্রিক্স মিটারিং সিস্টেম ফ্রেমের এক্সপোজারের সঠিক রিডিং বের করতে পারে না।
পোট্রেট শুট্যিং এর সময়, ফর্সা রঙের স্কিন টোন থেকে এক্সপোজার নিলে ক্যামেরা এক্সপোজারের ভুল রিডিং নেয় এবং ছবিকে আন্ডার-এক্সপোজ করে ফেলে। ফর্সা কোন সাবজেক্টের ফুল-ফেস ছবি নিতে, অথবা ছবির বড় অংশ জুড়ে সাদা রঙ থাকলে; এই পরিস্থিতিতে পরবেন। মেকআপ দেয়া কনের ছবি তোলা এর বড় উদাহরণ হতে পারে।
ক্যামেরার এক্সপোজার কম্পেনসেশন কন্ট্রোল ব্যবহার করে ছবির এই এক্সপোজার বিভ্রাট ঝটপট ঠিক করে নেয়া যায়।
আন্ডার-এক্সপোজ সাবজেক্টের মুখাবয়ব উজ্জ্বল করতে এক্সপোজার কম্পেনসেশন ডায়াল পজিটিভ মানের দিকে ঘুরিয়ে +1 স্টপ এ এনে একটা শট নেন। শটটি দেখে যদি মনে করেন আলো আরও লাগবে, ডায়াল ঘুরিয়ে আলো আরও বাড়িয়ে নিন।
২. অ্যাপারচার নিয়ে দু’টি কথা
পোট্রেট ছবি তুলবার সময় আপনি কোন অ্যাপারচার ব্যবহার করেন?
পোট্রেট ছবির জন্য বেস্ট প্র্যাকটিস হল “শ্যালো ডেপথ অব ফিল্ড” (shallow depth of field) ব্যবহার করা; অর্থাৎ লেন্সের এ্যাপারচারকে যতটা পারা যায় খুলে দেয়া, বা অন্য ভাষায় বললে, বড় অ্যাপারচার ব্যবহার করা। f/2.8 থেকে f/5.6 অ্যাপারচারে ছবি তুললে সাবজেক্টের পিছনে খুব মোলায়েম ব্লার হবে এবং সাবজেক্ট ছবির ফ্রেমে অন্যান্য এলিমেন্ট থেকে সুন্দরভাবে আলাদা (stand out) হয়ে যাবে।
সহজে ডেপথ অব ফিল্ড নিয়ন্ত্রনের জন্য Aperture Priority মুডে ব্যবহার করুন। এই মুডে আপনি শুধু এ্যাপারচার সেট করবেন; আপনার ক্যামেরা আপনার হয়ে নিজে নিজে সাটার স্পীড ও ISO হিসাব করে সঠিক এক্সপোজার দিয়ে ছবি তুলে দিবে। Fire and forget. আপনি খালি ক্লিক করবেন। মজার না!
স্পেশালিস্ট লেন্সগুলোতে সাধারণত: f/1.4, f/1.8, বা f/2.8 এর মত অনেক বড় অ্যাপারচার থাকাতে এগুলো দিয়ে তোলা ছবিতে খুব ভাল ব্লার পাওয়া যায়।
৩. সাটার স্পীড সেটিং
ক্যামেরার সাটার স্পীড সেট করার সময় ক্যামেরার ফোকাল লেন্থ সবসময় মাথায় রাখতে হবে। কারণ, ফোকাল লেন্থের সাথে সঠিক ও সামঞ্জস্যপূর্ণ সাটার স্পীড ব্যবহার না করা হলে হাতের কাঁপুনিতে ছবি ব্লার হয়ে যাবে।
সাটার স্পীড সেট করার নিয়ম হল: ফোকাল লেন্থ যত হবে সাটার স্পীড তার চাইতে বেশী রাখার চেষ্টা করতে হবে। যেমন: 200mm ফোকাল লেন্থের জন্য অন্তত: 1/250sec বা তার চেয়ে বেশী সাটার স্পীড রাখতে হবে।
এই হিসাব অনুযায়ী ওয়াইড অ্যাঙ্গেল লেন্সে আপনি স্লো সাটার স্পীড ব্যবহার করতে পারবেন। যেমন: 18mm ফোকাল লেন্থে 1/20sec সাটার স্পীড ব্যবহার করা যাবে।
কিন্তু, সাবজেক্ট যদি ছোটাছুটি করে, তখন এমন স্লো সাটার স্পীড দিয়ে ছবি তোলা অসম্ভব হয়ে পড়বে। কিছু ক্যামেরার বডিতে বিল্ট-ইন ইমেজ স্ট্যাবিলাইজার রয়েছে; যেগুলোতে নাই সেখানে লেন্সের “ভাইব্রেশন কন্ট্রোল” ব্যবহার করে এমন স্লো সাটার স্পীডে ছবি তোলা যেতে পারে।
লেন্সে ইমেজ স্ট্যাবিলাইজেশন টেকনোলজি (ক্যানন লেন্সে IS বা নিকন লেন্সে VR) আছে, তা অবশ্যই ব্যবহার করা উচিত। ইমেজ স্ট্যাবিলাইজেশন ব্যবহার করে আলো স্বল্পতার জন্য কম সাটার স্পীডেও পিন-শার্প ছবি তোলা সম্ভব।
৪. ISO বাড়ান
পোট্রেট ফটোগ্রাফি করার সাবজেক্ট অনেক নড়াচড়া করেন, বা চোখের পাতা বন্ধ করে আবার খোলেন, বা মুখের এক্সপ্রেশন বা হাসির স্টাইল একেকবার একেক রকম করে ফেলেন। সবচেয়ে খারাপ উদাহরণ হল, ছবি তোলার পরে দেখা গেল, মাথার উপরের অংশ কেটে গেছে বা এমনভাবে ফ্রেম বেঁকে বা কেটে গেছে যে, ফ্রেমটা থেকে মানসম্মত ছবি পাওয়া যাবে না।
এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে ও ছবির মোশন ব্লার এড়াতে ক্যামেরার ISO ডায়াল ঘুরিয়ে ISO বাড়িয়ে দিন।
এতে আপনি ক্যামেরার ঝাঁকুনি এড়িয়ে শার্প ছবি তুলতে পারবেন। সাধারণত পোট্রেট ছবি তুলতে ট্রাইপড ব্যবহার করা হয়। আর, ISO বাড়ানোর ফলে সাটার স্পীড বেশি পাওয়ায় এখন আপনি বেশ কিছুটা সুবিধা পাবেন।
Aperture Priority মুডে লেন্সে ওয়াইড এ্যাপারচার ব্যবহার করার সময় সাটার স্পীড বাড়াতে সিম্পলি ISO রিডিং ১০০ থেকে ৪০০ এর মধ্যে (কথার কথা, প্রয়োজনে আরও) রাখুন।
ঘরে বা বাহিরে, যেখানেই শুট করেন না কেন, আলো কম থাকলে ISO এর ভ্যালু ১৬০০, ৩২০০, বা ৬৪০০ পর্যন্ত বাড়িয়ে নিতে পারেন। ISO বাড়লে ছবিতে নয়েজ সৃষ্টি হয়। তবে, ব্যবহারের উপযোগী নয় এমন ব্লারযুক্ত ছবির চাইতে ছবিতে কিছুটা নয়েজ গ্রহনযোগ্য। গিয়ার অনুযায়ী ISO এর মাত্রা এমনভাবে বাড়াতে হবে, যাতে নয়েজের মাত্রা সহনীয় পর্যায়ে থাকে।
৫. লেন্স চয়েস
পোট্রেট ফটোগ্রাফিতে কি ধরনের লেন্স ব্যবহার করছে, তা আপনার ছবিতে বিশাল একটা ফ্যাক্টর। পোট্রেটের সাথে পারিপার্শ্বিক অবস্থাতে ফ্রেমে আনতে হলে একটা ওয়াইড-এঙ্গেল লেন্স আবশ্যক। ওয়াইড-এঙ্গেল লেন্সে নীচু হয়ে শট নিয়ে সাবজেক্টকে বাস্তবের থেকে বড় দেখায়। এ ধরনের ট্রিক ছবিতে অন্য রকম একটা মাত্রা এনে দেয়; ছবির পারস্পেকটিভ পরিবর্তন করে দেয়।
তবে, ওয়াইড-এঙ্গেল লেন্স দিয়ে ছবি তুলবার সময় সাবজেক্টের খুব কাছে যাবেন না, কারণ, এতে লেন্সের ডিসটরশন (distortion) এর কারণে সাবজেক্টের চেহারায় কিছু বিকৃতি দেখা দিতে পারে, যেটা ফটোগ্রাফার ও ক্লায়েন্ট – কারও জন্যই খুব একটা সুখকর নয়।
ওয়াইড-এ্যাঙ্গেল শট থেকে আরও ক্রিয়েটিভ কিছু বের করতে চান! ছবি তুলবার সময় ক্যামেরাটা একটু অ্যাঙ্গেল করে ছবি তুলুন।