জন্ম নিবন্ধন করার নিয়ম!!!

  




জন্ম নিবন্ধন এর প্রয়োজনীয়তা

২০০৬ সাল থেকে বাংলাদেশে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন কার্যকর করা হয়। সে আইন অনুযায়ী বর্তমানে কোন শিশু জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যে জন্ম নিবন্ধন করা বাধ্যতামূলক। এমনকি জন্ম নিবন্ধন করতে ২ বছরের বেশী দেরি হলে শিশুর পিতামাতাকে জরিমানাও গুনতে হবে। জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এটিকেই মূলত পরিচয়পত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তাই অনেক জায়গাতেই জন্ম নিবন্ধন সনদের অনেক প্রয়োজনীয়তা ও ব্যবহার রয়েছে। 

জন্ম নিবন্ধন অনলাইন থেকে বের করবেন কিভাবে!!

জন্ম নিবন্ধন করার নিয়ম!!!

জন্ম নিবন্ধন যাচাই, সংশোধন ও ডাউনলোড!!

জন্ম নিবন্ধন বাতিল করার নিয়ম!!


  • জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়ার আগে অর্থাৎ ১৮ বছর হওয়ার আগে অনেকের পাসপোর্ট তৈরী করার প্রয়োজন পরতে পারে। সেক্ষেত্রে আবেদনকারীকে অবশ্যই জন্ম নিবন্ধন সনদ প্রদর্শন করতে হবে।
  • দেশের প্রায় সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার জন্যই জন্ম নিবন্ধন সনদ ব্যবহার করতে হয়। এছাড়াও পি.ই.সি, জে.এস.সি এর রেজিষ্ট্রেশন করার সময়ও শিক্ষার্থীদের জন্ম নিবন্ধন সনদ ব্যবহার করতে হবে।
  • বিবাহ নিবন্ধন করার সময় জন্ম নিবন্ধন সনদ ব্যবহার করতে হয়। এতে পাত্র/পাত্রীর বয়স প্রমাণ করা যায় বলে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়।
  • অনেকেই ১৮ বছর হওয়ার পরপরই ড্রাইভিং লাইসেন্স তৈরী করে নেন। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই তখনও আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করা হয় না। সেক্ষেত্রে আবেদনকারীকে ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে হলে তার জন্ম নিবন্ধন ব্যবহার করতে হয়।
  • নতুন ভোটার আইডি কার্ড এর জন্য নিবন্ধন করতে হলেও আবেদনকারীকে তার জন্ম নিবন্ধন সনদ ব্যবহার করতে হয়।

জন্ম নিবন্ধন করার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

জন্ম নিবন্ধন সনদ করতে নির্দিষ্ট কিছু কাগজপত্রের প্রয়োজন হয়।

নিবন্ধনকারী শিশুর জন্মের ৫ বছরের মাঝে জন্ম নিবন্ধন করানো হলেঃ

  • শিশু যে ক্লিনিক বা হাসপাতালে জন্ম হয়েছে তার সার্টিফিকেট বা ছাড়পত্র।
  • কোন হাসপাতালে জন্মগ্রহণ না করলে তথ্য সংগ্রহকারী হিসেবে নিবন্ধক কর্তৃক নির্দিষ্ট করা কোন এসজিও প্রত্যায়ন পত্র প্রদান করে 
  • এগুলো সম্ভব না হলে নিবন্ধকের জন্ম সংক্রান্ত কোন দলিলের সত্যায়িত অনুলিপি।
  • পিতামাতার জন্ম নিবন্ধন সনদ অথবা জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি।

নিবন্ধনকারী শিশুর বয়স ৫ বছর বা তার বেশী হলেঃ

  • বয়স প্রমাণের জন্য এমবিবিএস ডাক্তারের প্রত্যয়ন।
  • জন্মস্থান বা স্থায়ীভাবে বসবাসের স্থান প্রমাণের জন্য সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউনসিলের প্রত্যায়ন পত্র
  •  উপরোক্ত কাগজপত্র গুলো পাওয়া না গেলে বয়স ও জন্মস্থান প্রমাণের জন্য তথ্য সংগ্রহকারী হিসাবে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ বা প্রধান শিক্ষক বা তাদের দ্বারা মনোনীত শিক্ষক বা কর্মকর্তার প্রত্যয়ন। অথবা, বয়স ও জন্মস্থান প্রমাণের জন্য ইপিআই কার্ড বা পাসপোর্ট বা মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট বা কোন চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের জন্ম সংক্রান্ত ছাড়পত্র বা উক্ত প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত জন্ম সংক্রান্ত সনদের সত্যায়িত অনুলিপি। অথবা, নিবন্ধকের জন্ম তারিখ বা তার ঠিকানার প্রমাণ হিসেবে জন্ম সংক্রান্ত কোন দলিল। অথবা, তথ্য সংগ্রহকারী হিসাবে নিবন্ধক কর্তৃক নির্দিষ্ট করা কোন এনজিও কর্মীর প্রত্যয়ন।
  • পিতামাতার জন্ম নিবন্ধন সনদ অথবা জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি।

বর্তমানে অনলাইনে অথবা সশরীরে উপস্থিত হয়ে বা অফলাইনে দুইভাবেই জন্ম নিবন্ধন করা যায়। চলুন এবার জেনে নেই অনলাইনে এবং সশরীরে জন্ম নিবন্ধন করার বিস্তারিত নিয়ম।

জন্ম নিবন্ধন করার পদ্ধতি

বাংলাদেশে ২০০৬ সাল থেকে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইনটি বাস্তবায়ন করার পর থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত বিনামূল্যে জন্ম নিবন্ধন সনদ তৈরী করার সুবিধা দেওয়া হয়েছিল। সেসময় দেশের অধিকাংশ নাগরিকই জন্ম নিবন্ধন সনদ তৈরী করে ফেলেন। বর্তমানে জন্ম নিবন্ধন করার সময়ের উপর ভিত্তি করে কিছু খরচ প্রযোজ্য হলেও এখনো জন্ম নিবন্ধন করা অনেকটাই সহজ।

সশরীরে বা অফলাইনে জন্ম নিবন্ধন করার নিয়ম

বাংলাদেশে জন্ম নিবন্ধন সনদ প্রদানের শুরু থেকেই মূলত সশরীরে ফরম পূরণ করে জন্ম নিবন্ধন করতে হত। এই পদ্ধতি এখনো চালু আছে। ফলে এখনো কেউ চাইলে এভাবে আবেদন করতে পারবেন।

অফলাইনে জন্ম নিবন্ধন তৈরী করতে হলে আবেদনকারীকে অবশ্যই নির্দিষ্ট কার্যালয়ে যেতে হবে। জন্ম নিবন্ধনের ফরম তোলা, ফরম জমা দেওয়া, জন্ম নিবন্ধন সনদ গ্রহণ করা সহ সকল কাজই আবেদনকারী ঐ নির্দিষ্ট কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে করতে পারবেন। কার্যালয়টি আবেদনকারীর ঠিকানা অনুযায়ী নির্ধারিত হবে। ঠিকানা অনুযায়ী আবেদনকারীকে নিম্নোক্ত ব্যক্তিদের কার্যালয়ে যেতে হবেঃ

  • ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অথবা সরকার কর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোন কর্মকর্তা।
  • পৌরসভার মেয়র বা তার দ্বারা ক্ষমতাপ্রাপ্ত অন্য কোনো কর্মকর্তা বা কাউন্সিলর।
  • সিটি কর্পোরেশনের মেয়র বা তার থেকে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তা বা ওয়ার্ড কাউন্সিলর।
  • ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের প্রেসিডেন্ট বা তার থেকে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তা।
  • বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত।

চলুন এবার ধাপে ধাপে জেনে নেওয়া যাক কিভাবে সশরীরে জন্ম নিবন্ধন করতে হয়ঃ

ধাপ-১ঃ নির্দিষ্ট ফরম সংগ্রহ করুন

কোন শিশুর জন্ম নিবন্ধন সনদ করার জন্য প্রথমে জন্ম নিবন্ধনের আবেদন ফরম সংগ্রহ করতে হবে। ফরমটি আপনার ঠিকানা অনুযায়ী ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়, পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশন অফিস বা সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন ওয়ার্ড কমিশনারের অফিস থেকে সংগ্রহ করতে হবে। কেউ কার্যালয় থেকে নিতে না চাইলে অনলাইন থেকে ফরমটির পিডিএফ ফাইল ডাউনলোড করে কম্পিউটারে পূরণ করতে পারবেন। এছাড়াও কেউ চাইলে পিডিএফ ফাইলটি প্রিন্ট করে হাতেও পূরণ করতে পারবেন।

ধাপ-২ঃ ফরমটি পূরণ করুন

জন্ম নিবন্ধন ফরম পূরণ করার নিয়ম

ফরমটি সংগ্রহ করার পর ফরমটি পূরণ করতে হবে। এখানে জন্ম নিবন্ধন ফরম পূরণ করার নিয়ম দেওয়া হলোঃ

  • ১ নং ঘরে শিশুর জন্ম তারিখ, জন্মস্থান ও লিঙ্গ উল্লেখ করতে হবে। জন্ম তারিখটি উপরের ঘরে সংখ্যায় এবং নিচের ঘরে কথায় লিখতে হবে। লিঙ্গের স্থানে নারী অথবা পুরুষে টিক চিহ্ন দিতে হবে। এবং নিচে জন্মস্থানের ঠিকানা লিখতে হবে।
  • ২ নং ঘরে শিশুর পিতা ও মাতার নাম এবং জাতীয়তা লিখতে হবে।
  • ৩ ও ৪ নং ঘরে যথাক্রমে স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা লিখতে হবে।
  • শিশুর যদি কোন ধরনের প্রতিবন্ধকতা থাকে অর্থাৎ শিশু যদি প্রতিবন্ধী হয় তবে ৫ নং ঘরে অসামর্থ্যতা অনুযায়ী একটি বা একাধিক ঘরে টিক চিহ্ন দিতে হবে।
  • ৬ নং ঘরে আবেদনকারী অর্থাৎ শিশুর বাবা, মা অথবা অন্য যিনি আবেদনটি করছেন তার নাম, স্বাক্ষর, নিবন্ধনকারীর সাথে তার সম্পর্ক ও আবেদনের তারিখ লিখতে হবে। 
  • ৭ নং ঘরের ক্ষেত্রে শিশুর জন্মের ৫ বছরের মাঝে আবেদন করলে শুধুমাত্র ১ নং ঘরটিতে তথ্য সংগ্রহকারীর স্বাক্ষর নিতে হবে। ৫ বছরের বেশী হলে ২ বা ৩ নং ঘরটি পূরণ করতে হবে।
  • ৮ নং থেকে পরের ঘরগুলো আবেদনকারীকে পূরণ করতে হবে না।

ধাপ-৩ঃ আবেদন ফরম জমা দিন

ফরমটি সঠিকভাবে পূরণ করা হয়ে গেলে এটিকে জমা দিতে হবে। জমা দেওয়ার সময় প্রয়োজনীয় কাগজপত্রগুলো ফরমের সাথে যুক্ত করতে হয়। এরপর ফরমটি ঠিকানা অনুযায়ী ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়, পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশন অফিস বা সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন ওয়ার্ড কমিশনারের অফিসে জমা দিতে হবে। 

ধাপ-৪ঃ কুপন সংগ্রহ করুন

জন্ম নিবন্ধনের আবেদন করার ফরমটি জমা দেওয়ার সময় জন্ম নিবন্ধন সনদ প্রদানের একটি নির্দিষ্ট তারিখ কুপনে লিখে দেয়া হবে। কুপন বলতে মূলত ফরম জমা দেওয়ার পর ফরমের নিচের অংশটি অফিস থেকে পুরন করে কেটে আবেদনকারীকে দেওয়া হবে। ফরমের অংশটি ঐ নির্দিষ্ট তারিখ পর্যন্ত অবশ্যই সংরক্ষণ করতে হবে।

ধাপ-৫ঃ জন্ম নিবন্ধন সংগ্রহ করুন

জন্ম নিবন্ধন সংগ্রহের নির্দিষ্ট তারিখে বা তার পরে ফরমের ঐ অংশটি নিয়ে আবেদন করার ঐ একই কার্যালয়ে যেতে হবে। সেসময় ফরমের ঐ নির্দিষ্ট অংশের পিছনের পৃষ্ঠায় স্বাক্ষর করে জমা দিতে হবে। এরপর আবেদনকারী জন্ম নিবন্ধন সনদটি নিয়ে যেতে পারবেন। সনদটি নেওয়ার পর অবশ্যই সনদের তথ্যগুলো এবং সংশ্লিষ্ট অফিসারদের স্বাক্ষর পরীক্ষা করে নিতে হবে।

অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন করার নিয়ম

বাংলাদেশে অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন করার কার্যক্রম শুরু হয় ২০১০ সাল থেকে। যদিও এখনো সশরীরে কার্যালয়ে গিয়ে জন্ম নিবন্ধন তৈরীর কার্যক্রম চালু আছে। কিন্তু কাজের সুবিধা, দ্রুততা ও তথ্যের নির্ভুলতার জন্য বর্তমানে মানুষের জন্ম নিবন্ধন অনলাইন করার প্রতি আগ্রহ বাড়ছে। অনলাইনে জন্ম নিবন্ধনের আবেদন করা বা জন্ম নিবন্ধন অনলাইন করার নিয়ম খুবই সহজ। নিচের ধাপ গুলোর মাধ্যমে তা উল্লেখ করা হলো:

ধাপ-১: অনলাইনে নতুন জন্ম নিবন্ধন তৈরীর আবেদন করতে বা জন্ম নিবন্ধন অনলাইন করতে https://bdris.gov.bd/ এই ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে করুন।

ধাপ-২: ওয়েবসাইটিতে প্রবেশ করার পর আবেদনকারী কোন এলাকার কার্যালয় থেকে জন্ম নিবন্ধন সনদ গ্রহণ করতে চান সেটি নির্বাচন করতে হবে। এখানে চাইলে নিবন্ধনকারী শিশুর জন্মস্থান অথবা তার বর্তমান ঠিকানা অথবা তার স্থায়ী ঠিকানা নির্বাচন করা যাবে। শিশুর জন্ম দেশের বাইরে হলে বাংলাদেশের দূতাবাস নির্বাচন করতে হবে। এই পৃষ্ঠায় নির্বাচিত এলাকার কার্যালয় থেকেই পরবর্তীতে জন্ম নিবন্ধন সনদ সংগ্রহ করতে হয়।

ধাপ-৩: এরপর আবেদনকারীকে নিবন্ধনাধীন ব্যক্তির জন্য একটি ফরম পূরণ করতে হবে। 

  • ফরমের প্রথমে আবেদনকারীর নামের দুটি অংশ ইংরেজিতে ও বাংলায় দুইভাবেই লিখতে হবে। ইংরেজিতে লেখার সময় অবশ্যই ইংরেজি বড় হাতের অক্ষর ব্যবহার করতে হবে।
  • তারপর নিবন্ধনকারীর জন্ম তারিখ উল্লেখ করতে হবে।
  • জন্ম তারিখের পরের ঘর দুটোতে যথাক্রমে নিবন্ধনকারী পিতামাতার কত তম সন্তান সেটি ও নিবন্ধনকারীর লিঙ্গ উল্লেখ করতে হবে।
  • তারপর নিবন্ধনকারী শিশুর জন্মস্থানের ঠিকানা লিখতে হবে।

এই ঘর গুলো পূরণ করা শেষ হলে নিচের ডানদিকে থাকা ‘পরবর্তী’ বাটনটিতে ক্লিক করতে হবে।

ধাপ-৪: এরপর আরেকটি ফরম দেখা যাবে। এটি নিন্মে উল্লেখিত উপায়ে পূরণ করতে পারবেন।

  • ফরমের প্রথম ঘরে নিবন্ধনকারীর পিতার জন্ম নিবন্ধন সনদের নম্বর লিখতে হবে। এর পরের ঘর দুটিতে নিবন্ধনকারীর পিতার নাম বাংলাতে ও ইংরেজি বড় অক্ষরে লিখতে হবে।
  • এর পরের দুটি ঘরে যথাক্রমে নিবন্ধনকারীর পিতার জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর এবং জাতীয়তা উল্লেখ করতে হবে।
  • এর পর একইভাবে নিবন্ধনকারীর মাতার তথ্যও পূরণ করতে হবে।

এই ঘর গুলো পূরণ করার পর আবারও পরবর্তী বাটনে ক্লিক করতে হবে।

ধাপ-৫: তারপর আপনাকে আপনার ঠিকানা দিতে হবে। প্রথমেই “আপনি কি নিম্নলিখিত কোন ঠিকানা স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে ব্যবহার করতে চান?” অপশন থেকে কোনটিই নয় বাছাই করলে ঠিকানা দেওয়ার জন্য একটি পৃষ্ঠা চলে আসবে আপনার সামনে। আপনার জন্ম স্থানের ঠিকানা ও স্থায়ী ঠিকানা একই হলে প্রথমে থাকা “জন্মস্থানের ঠিকানা ও স্থায়ী ঠিকানা একই” অপশনটিতে ক্লিক করুন। সেক্ষেত্রে স্বয়ংক্রিয় ভাবে ঠিকানার তথ্যগুলো চলে আসবে। অন্যথায় ঠিকানা আলাদা করে লিখুন। একই ভাবে বর্তমান ঠিকানার ঘরগুলোও পূরণ করতে হবে। ঠিকানা লেখার পর পরবর্তী বাটনে ক্লিক করতে হবে।

ধাপ-৬: তারপরের পৃষ্ঠায় আবেদনকারীর তথ্য দিতে হবে। এখানে আবেদনকারীর সাথে নিবন্ধনকারীর সম্পর্ক, আবেদনকারীর মোবাইল নাম্বার, ইমেইল জমা দিতে হবে। নিবন্ধনকারী যদি ১৮ বছরের বেশী বয়সের হয়ে থাকেন তাহলে তিনি নিজেই আবেদন করতে পারবেন।

ধাপ-৭: সকল তথ্য সঠিক ভাবে দেওয়া হলে এ পর্যন্ত কোথাও কোন সমস্যা হবে না। তথ্য গুলো জমা দেওয়ার পর এখন আপনাকে তথ্যগুলো দেখানো হবে। এখান থেকে জন্ম নিবন্ধনের জন্য দেওয়া সকল তথ্য আরেকবার ভালভাবে যাচাই করে নিন এবং কোন কিছু ভুল থাকলে সংশোধন করে নিন। তারপর সাবমিট বাটনটিতে ক্লিক করুন। 

ধাপ-৮: জন্ম নিবন্ধনের আবেদন ঠিক ভাবে সাবমিট করা হয়ে গেলে আপনাকে একটি আবেদন নম্বর দেওয়া হবে। এই নম্বরটি দিয়ে সহজেই জন্ম নিবন্ধনের অবস্থা জানতে পারা যায়। এই পৃষ্ঠার “আবেদনপত্র প্রিন্ট করুন” বাটনটিতে ক্লিক করে আবেদনপত্রটি প্রিন্ট করে নিন।

ধাপ-৯: আবেদন করার ১৫ দিন পর প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র এবং আবেদনপত্রটির প্রিন্ট কপি নিয়ে স্থানীয় নির্দিষ্ট কার্যালয়ে উপস্থিত হতে হবে। আবেদনপত্র ও অন্যান্য কাগজপত্র জমা দেওয়ার পর জন্ম নিবন্ধন সনদটি আবেদনকারী পেয়ে যাবেন।

জন্ম নিবন্ধন তৈরীর খরচ

বাংলাদেশে জন্ম নিবন্ধনের আবেদন শুরু হওয়ার পর ২০১০ সালের জুন মাস পর্যন্ত বিনামূল্যে জন্ম নিবন্ধন সনদ তৈরী করার সুবিধা দেওয়া হয়েছিল। তার পর থেকে নির্দিষ্ট বয়সের পর নির্দিষ্ট ফি আদায় করা হয়। এখানে জন্ম নিবন্ধন তৈরীর ফি বা খরচের তালিকা দেওয়া হলো

দেশে আবেদনের ক্ষেত্রেঃ

শিশু জন্মের ৪৫ দিন পর্যন্ত- বিনা মূল্যে

শিশু জন্মের ৪৫ দিন পর থেকে ৫ বছর পর্যন্ত- ২৫ টাকা

শিশু জন্মের ৫ বছর পর- ৫০ টাকা

বিদেশে আবেদনের ক্ষেত্রেঃ

শিশু জন্মের ৪৫ দিন পর্যন্ত- বিনা মূল্যে

শিশু জন্মের ৪৫ দিন পর থেকে ৫ বছর পর্যন্ত- ১ মার্কিন ডলার

শিশু জন্মের ৫ বছর পর- ১ মার্কিন ডলার

শেষকথা

জন্ম নিবন্ধন সনদ দেশের সকল নাগরিকদের জন্যই প্রয়োজনীয়। এটি সঠিক ও নির্ভুলভাবে তৈরী করা সবারই উচিত। তাই সঠিকভাবে জন্ম নিবন্ধন সনদ তৈরী করার জন্য এই লেখাটি আপনাদের অনেকখানি সাহায্য করবে।

অনবরত জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী

১) একজন ব্যক্তি কি একাধিকবার জন্ম নিবন্ধন করতে পারবে?

উত্তরঃ একই ব্যক্তি একাধিকবার জন্ম নিবন্ধন করতে পারবে না। এমনকি একই ব্যক্তির একাধিকবার জন্ম নিবন্ধন করা  অনুযায়ী দন্ডনীয় অপরাধ। অনলাইনে চেক করার পরে যদি একের অধিক জন্ম নিবন্ধন পাওয়া যায় তাহলে অবশ্যই জন্ম নিবন্ধন বাতিল করার সঠিক নিয়ম কানুন মেনে ডুপ্লিকেট কপি বাতিল করা উচিৎ। না হলে ভবিষ্যতে বিভিন্ন ধরনের ঝামেলায় পরতে হতে পারে।

২) অনলাইনে আবেদন করার সময় আমার বাংলায় লেখা যাচ্ছে না, আমি কি করতে পারি?

উত্তরঃ অনলাইন আবেদনের ক্ষেত্রে বাংলা লেখার সময় বাংলা ইউনিকোড সফটওয়্যার ব্যবহার করতে হবে। তাই বাংলায় লেখা না গেলে অভ্র, বা অন্য কোন ইউনিকোড সম্বলিত সফটওয়্যার ব্যবহার করে এই সমস্যাটি সমাধান করা যায়।

৩) বিবাহিত নারীর জন্ম নিবন্ধনে কি স্বামীর নাম লেখা যাবে?

উত্তরঃ জন্ম নিবন্ধনে কোন ভাবেই স্বামীর নাম লেখার সুযোগ নেই। তাই বিবাহিত নারীদেরকেও তাদের স্বামীর নাম না দিয়ে পিতামাতার নামই দিতে হবে।

৪) বিবাহিত নারীদের স্থায়ী ঠিকানা কি বিবাহের পরের ঠিকানা দিতে হবে?

উত্তরঃ না, বিবাহিত হলেও স্থায়ী ঠিকানা বিবাহের পূর্বের ঠিকানাই দিতে হবে। 

৫) কোন শিশু বিদেশে জন্মগ্রহণ করলে দেশে তার জন্ম নিবন্ধন করা যাবে কি?

উত্তরঃ বিদেশে জন্ম গ্রহণকারী কোন শিশুর জন্ম নিবন্ধন করার সময় তাকে বাংলাদেশের স্থায়ী নাগরিক হিসেবে যথাযথ প্রমাণ দেখিয়ে দেশের স্থায়ী ঠিকানায় জন্ম নিবন্ধন তৈরী করতে পারবেন।

৬) জন্ম নিবন্ধন করার সময় শিশুর পিতামাতার জন্ম নিবন্ধন না থাকলে কি আবেদন করা যাবে?

উত্তরঃ ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি থেকে চালু হওয়া আইন অনুযায়ী ২০০১ সালের পর জন্মগ্রহণকারী সবার জন্ম নিবন্ধন করতে হলে তার পিতা মাতার জন্ম নিবন্ধন অবশ্যই প্রয়োজন হবে। তাই পিতামাতার জন্ম নিবন্ধন না থাকলে ২০০১ সালের পর জন্ম নেওয়া সন্তানের জন্ম নিবন্ধন করানো যাবে না।

৭) কারো জন্ম ২০০১ সালের পূর্বে হলে কি সে পিতামাতার জন্ম নিবন্ধন ছাড়াই জন্ম নিবন্ধনের আবেদন করতে পারবে?

উত্তরঃ হ্যাঁ, পারবে। ২০০১ সালের পূর্বে জন্ম নেওয়া ব্যক্তিরা তাদের পিতামাতার জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর ব্যবহার করেও জন্ম নিবন্ধন করতে পারবে।

Previous Post Next Post