অনলাইনে ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করার নিয়ম
অনলাইনে ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করার পূর্বে অবশ্যই আপনাকে একটি নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। তার পরেই আপনি তথ্য সংশোধন সহ অন্যান্য সেবা নিতে পারবেন। সেই পুরো প্রক্রিয়াটিই ধাপে ধাপে চিত্রসহ বর্ণনা করছি।
আপনি জানেন তো আপনার এনআইডি দিয়ে কয়টি সিম রেজিষ্ট্রেশন করা হয়েছে!!
যারা নতুন ভোটার হয়েছে কিন্তু আইডি কার্ড পাইনি! অনলাইন কপি!!
নতুন জাতীয় পরিচয়পত্র কিভাবে করবেন !!
জাতীয় পরিচয়পত্র হারিয়ে গেলে !!!
জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন কত টাকা !!
বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন কি কি সেবা প্রদান করে?
ধাপ ১ঃ ওয়েবসাইটে প্রবেশ করুন
জাতীয় পরিচয়পত্র সংক্রান্ত সকল কাজ পরিচালিত হয়ে থাকে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন এর মাধ্যমে। নির্বাচন কমিশন একটি স্বতন্ত্র্য প্রতিষ্ঠান। এদেশের নাগরিকদের জাতীয় পরিচয়পত্র সংক্রান্ত সেবা দিতে তাদের নির্ধারিত সাইটটি হল nidw.gov.bd। লিংকটিতে ক্লিক করলেই আপনি সাইটটির হোম পেজে পৌছে যাবেন।
ধাপ ২ঃ রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া চালু করুন
রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া চালু করতে এই ওয়েবসাইটের রেজিস্টার বাটনে ক্লিক করুন। মনে রাখবেন রেজিস্টার এবং নতুন নিবন্ধন এক নয়। ‘নতুন নিবন্ধন’ শুধু মাত্র তাদের জন্য যারা ভোটার আইডি কার্ডের জন্য আবেদনই করেনি। ভোটার আইডি কার্ড রয়েছে এমন কেউ নতুন নিবন্ধন করার চেষ্টা করলে তা আইনত দন্ডনীয় অপরাধ। তাই সাবধানতার সহিত রেজিস্টার বাটনে ক্লিক করুন।রেজিস্টার বাটনে ক্লিক করার পর উপরের ছবির মতো একটি পেজ দেখতে পাবেন। পেইজটির ‘রেজিস্ট্রেশন ফরম পূরণ করতে চাই’ বাটনে ক্লিক করুন।
ধাপ ৩ঃ জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর প্রদান করুন
রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়ার শুরুতেই আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ও জন্মতারিখ প্রদান করতে হবে। যদি জাতীয় পরিচয়পত্রের হার্ড কপি হাতে পেয়ে না থাকেন তবে ফর্ম নম্বরের সাহায্যেও রেজিস্টার করতে পারবেন। অতঃপর ওয়েবপেজে উল্লেখিত ক্যাপচা / সিকিউরিটি কোডটি প্রবেশ করিয়ে ‘সাবমিট’ বাটনে ক্লিক করুন।
ধাপ ৪ঃ ঠিকানা যাচাই করুন
এই ধাপে আপনার বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা দুটিই প্রদান করতে হবে। তবে এক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ঠিকানার প্রয়োজন নেই। শুধু বিভাগ, জেলা ও উপজেলা নির্ধারন করলেই চলবে। তবে মনে রাখবেন, দুটি ঠিকানাই আপনি জাতীয় পরিচয়পত্রের ফর্মে যা দিয়েছেন তাই দিতে হবে। ভুল করে অন্য ঠিকানা দিয়ে ফেললে তা যাচাই এ ধরা পড়বে ও রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া বাতিল করা হবে। সকল ঠিকানা সঠিকভাবে নির্ধারন করে ‘পরবর্তী’ বাটনে ক্লিক করুন।
ধাপ ৫ঃ মোবাইল নম্বর প্রদান করুন
রেজিস্ট্রেশনের সময় মোবাইল নম্বর খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কোন কারণে একাউন্ট পুনরুদ্ধারের প্রয়োজন পড়লে আপনার মোবাইল নম্বরই আপনার একমাত্র সম্বল। তাই অবশ্যই এখানে সঠিক মোবাইল নম্বরটি দিন। নিজের নম্বর হলে সবচেয়ে ভাল হয়। না থাকলে নিজের আত্নীয় বা বিশ্বস্ত কারো নম্বর প্রবেশ করান। অতঃপর ‘বার্তা পাঠান’ বাটনে ক্লিক করুন।
ধাপ ৬ঃ যাচাইকরণ কোড প্রদান করুন
আপনি যেই নম্বরটি দিয়েছেন তা আপনারই নম্বর কিনা তা যাচাই করতে সেই নম্বরে একটি যাচাইকরণ কোড পাঠানো হয়। কোডটি ম্যাসেজের মাধ্যমে পাওয়ার পর তা সাইটে সঠিক ভাবে প্রবেশ করান। অতঃপর ‘বহাল’ বাটনে ক্লিক করুন।
ধাপ ৭ঃ পাসওয়ার্ড সেট করুন
নির্বাচন কমিশনের সাইটে লগইন করার জন্য আপনার অবশ্যই একটি পাসওয়ার্ড প্রয়োজন। যদি পাসওয়ার্ড সেট না করেন তাহলে একাউন্টে ঢুকতে আবারো প্রথম থেকে পুরো রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ঢুকতে হবে। তাই পাসওয়ার্ড সেট করাটাই শ্রেয়। যাচাইকরণ কোড প্রবেশ করানোর পর আপনাকে স্বাগতম জানানো হবে। এই পেজের ‘সেট পাসওয়ার্ড’ বাটনে ক্লিক করুন।সেট পাসওয়ার্ড বাটনে ক্লিক করার পরে পরবর্তী পেজে আপনার ইউজারনেম ও পাসওয়ার্ড সেট করতে হবে। একাউন্ট লগইনের সময় চাইলে জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বরের বদলে ইউজারনেমের সাহায্যে লগইন করতে পারবেন। পাসওয়ার্ডটি দুইবার লিখে নিশ্চিত হয়ে ‘আপডেট’ বাটনে ক্লিক করুন। তাহলেই আপনার রেজিস্ট্রেশনটি সফল ভাবে শেষ হবে।
ধাপ ৮ঃ লগইন করুন
এই ধাপটি সরাসরি রেজিস্ট্রেশনের অংশ নয়। তবে রেজিস্ট্রেশন হয়েছে কি না তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য ধাপটি অত্যন্ত জরুরী। রেজিস্ট্রেশন করার পর প্রত্যেকেরই উচিত অন্তত একবার হলেও নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে লগ ইন করা। লগ ইন করতে চলে যান সাইটের লগইন ট্যাবে।‘লগইন করুন’ বাটনে ক্লিক করলেই লগইন পেজ দেখতে পাবেন। লগইন পেজের বাম দিকে রেজিস্টার ও আবেদনের জন্য আলাদা আলাদা বাটন রয়েছে। ডান দিকে রয়েছে লগইন করার অপশন। আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর অথবা ইউজারনেম এবং পাসওয়ার্ডটি প্রবেশ করান। অতঃপর কোডটি প্রবেশ করিয়ে লগইন বাটনে ক্লিক করুন।
যদি ওয়েবসাইটের ইন্টারফেস ইংরেজিতে চান তাহলে পেজের নিচের অংশে বাম কোণে ‘ইংরেজি’ অপশনটি নির্ধারণ করে দিন। পাসওয়ার্ড মনে না থাকলে ‘পাসওয়ার্ড ভুলে গেলে’ অপশনে ক্লিক করুন। সেখানে এনআইডি / ইউজারনেম এবং ক্যাপচা কোড প্রবেশ করালে আপনার একাউন্টের সাথে নিবন্ধিত নম্বরে একটি কোড যাবে। এর সাহায্যে আপনি একাউন্ট পুনরুদ্ধার করতে পারবেন।
ধাপ ৯ঃ প্রোফাইলে প্রবেশ করুন
রেজিস্ট্রেশনের পরে এবার ভোটার আইডি কার্ড সংশোধনের মূল প্রক্রিয়া। ওয়েবসাইটে একাউন্ট খুলে লগইন করার পরেই আপনি নিচের চিত্রের মতো একটি ইন্টারফেস দেখতে পাবেন।
ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে সবার উপরের ‘প্রোফাইল’ অপশনে ক্লিক করুন। প্রোফাইল অপশনে ক্লিক করার পর নিচের চিত্রের মতো আপনার কার্ডের তথ্যগুলো দেখাবে।
ধাপ ১০ঃ এডিট মোডে প্রবেশ করুন
ভোটার আইডি কার্ডের তথ্যগুলো মোট ৩ ভাগে বিভক্ত। সেগুলো হলঃ ব্যাক্তিগত তথ্য, অন্যান্য তথ্য ও ঠিকানা। আপনি যেই ধরনের তথ্য পরিবর্তন করতে চান সেই ধরনের তথ্যের ট্যাবে যান। অতঃপর পেজে উপরের দিকে ডান কোণে ‘এডিট’ বাটনে ক্লিক করুন। এডিট বাটনে ক্লিক করার পর আপনি কোন কোন ব্যাংক ও মোবাইল ব্যাংকিং এর সাহায্যে সংশোধনের ফিস প্রদান করতে পারবেন তা দেখানো হবে। ফিস/চার্জ এর পেজে ‘বহাল’ বাটনে ক্লিক করলে আপনি এডিট মোডে প্রবেশ করতে পারবেন।
ধাপ ১১ঃ যেসব তথ্য সংশোধন করবেন তা নির্ধারণ করুন
এডিট মোডে থাকা অবস্থায় সকল তথ্যের পাশেই একটি বক্স উঠে থাকবে। যেসব তথ্য পরিবর্তন করতে চান সেসব তথ্যের পাশে থাকা বক্সগুলোতে ক্লিক করুন। ক্লিক করার পর সেই বক্স গুলোর ভেতর টিকচিহ্ন উঠে থাকবে। অর্থাৎ সংশোধনের জন্য ওই তথ্য গুলো নির্ধারিত হয়েছে। অতঃপর সেই তথ্য গুলো সংশোধন করুন।
ধাপ ১২ঃ পরিবর্তিত তথ্য যাচাই করুন
এডিট মোডে তথ্য গুলো সংশোধন করার পর ‘পরিবর্তন’ ট্যাবে আপনি যেসকল তথ্য সংশোধন করেছেন তা দেখতে পারবেন। এই ধাপটিতে যেসব তথ্য সংশোধন করেছেন তার পূর্ববর্তী রুপ ও সংশোধিত রুপ আপনার সামনে তুলে ধরা হবে। ভাল ভাবে যাচাই করে নিন। সব ঠিক থাকলে ‘পরবর্তী’ বাটনে ক্লিক করুন।
ধাপ ১৩ঃ ট্রানজেকশনের বিবরণ নির্ধারণ করুন
‘পরিবর্তন’ ট্যাবের পর রয়েছে ‘ট্রানজেকশন’ ট্যাব। এই ট্যাবে আপনার ফি পরিশোধের পালা। ফি পরিশোধ ব্যাতীত পরবর্তী ধাপে কোনভাবেই যেতে পারবেন না।
এই ট্যাবে আবেদনের ধরন ও বিতরনের ধরন নির্ধারণ করতে হবে। আবেদনের ধরন নির্ধারণের সময় অনেকেই অনিশ্চিত হয়ে পড়েন। মূলত জাতীয় পরিচয়পত্র আবেদনের সময় প্রত্যেক নাগরিক ফরম-২ এ যেসব তথ্য পূরণ করেন সেসব তথ্য থেকে বাংলায় ও ইংরেজিতে নিজের নাম, পিতার নাম, মাতার নাম, জন্ম তারিখ, ঠিকানা, রক্তের গ্রুপ ও নিজের স্বাক্ষর ইত্যাদি তথ্য জাতীয় পরিচয়পত্রে লেখা হয়। এই তথ্য গুলোর কোন একটি সংশোধন করতে চাইলে তা সরাসরি “জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন” এর আওতায় পরে।
অপরদিকে জাতীয় পরিচয়পত্রে উল্লিখিত তথ্য সমূহ ছাড়াও ফরম-২ এ অন্যান্য যে তথ্য সমূহ রয়েছে তা পরিবর্তন করাকে “তথ্য উপাত্ত সংশোধন” বা “অন্যান্য তথ্য পরিবর্তন” বলে গণ্য করা হয়। যেমনঃ পেশা। তাই আপনি কোন তথ্য সংশোধন করছেন তার উপর নির্ভর করবে আবেদনের ধরন। এছাড়াও বিতরণের ধরনও দুই প্রকার। একটি হলো ‘Regular’ আরেকটি হল ‘Regular Smart Card’। অপশন দুটির নাম শুনেই বুঝতে পারছেন এদের পার্থক্য। আপনি যেই ধরনের কার্ড চান সেই ধরনটি নির্ধারণ করুন।
ধাপ ১৪ঃ ফি নির্ধারণ করুন
আপনার কত ফি এসেছে তা যদি না দেখায় তবে আপনি নিজেই তা বের করে নিতে পারবেন। নিজে নিজের আবেদনের ফি বের করতে ক্লিক করুন এই লিংকেঃ https://services.nidw.gov.bd/fees/fee_calculate
এই লিংকে প্রবেশ করার পর আপনি নিচের চিত্রের মতো একটি ইন্টারফেস দেখতে পাবেন।এই ইন্টারফেসে আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর প্রবেশ করিয়ে আবেদন এর ধরন ও কার্ড ডেলিভারি টাইপ নির্ধারণ করে সহজেই ফি হিসাব করতে পারবেন। এছাড়াও ম্যানুয়ালি হিসাব করার সুবিধার্থে জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন, নবায়ন সংক্রান্ত সকল ফি এর বিস্তারিত লেখার শেষে যুক্ত করা হয়েছে।
ধাপ ১৫ঃ ফি প্রদান করুন
আপনার ফি কত হয়েছে তা নিশ্চিত হওয়ার পরে এবার ফি পরিশোধের পালা। এই ফি বিভিন্ন মাধ্যমে পরিশোধ করা যায়। মাধ্যম গুলো বিস্তারিত ভাবে লেখার শেষ অংশে যুক্ত করা হয়েছে। আমরা সে সকল মাধ্যম থেকে ডাচ-বাংলা ব্যাংক এর মোবাইল ব্যাংকিং সেবা রকেট এর সাহায্য উদাহরণ দিয়েছি। কেউ চাইলে অন্য মাধ্যম ব্যবহার করতে পারেন।
অ্যাপের সাহায্যে
প্রথমেই আপনার স্মার্ট ফোনের ‘Rocket’ অ্যাপটি চালু করুন। পিন প্রবেশ করানোর পর রকেটের হোম পেজ খুলে গেলে সেখান থেকে ‘Bill Pay’ অপশনটি খুঁজে বের করুন।
‘Bill Pay’ অপশনে ক্লিক করার পর পরবর্তী পেজের সার্চ অপশনে ‘1000’ লিখুন। এটি বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের বিলার আইডি।
নির্বাচন কমিশনের বিলার আইডি পেলে তাতে ট্যাপ করুন। পরবর্তী পেজ দেখতে নিম্নরূপ হবে।
এই পেজে যেই ভোটার আইডি কার্ড এর তথ্য সংশোধন হচ্ছে সেটির ১০ অথবা ১৭ সংখ্যার নম্বর লিখতে হবে। তারপর ‘Application Type’ হিসেবে একটি সংখ্যা লিখতে হবে।
- জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য সংশোধনের জন্য ১ লিখুন।
- অন্যান্য তথ্য সংশোধনের জন্য ২ লিখুন।
- উভয় ধরনের তথ্য সংশোধনের জন্য ৩ লিখুন।
- রেগুলার ডুপ্লিকেট কার্ডের জন্য ৪ লিখুন।
- জরুরী ডুপ্লিকেট কার্ডের জন্য ৫ লিখুন।
যদি রকেট একাউন্টের মোবাইল নম্বর ও নির্বাচন কমিশনের একাউন্টে সংযুক্ত মোবাইল নম্বর এক হয়ে থাকে তবে ‘Pay for’ হতে ‘Self’ বাটনে ট্যাপ করুন। যদি নম্বর ভিন্ন হয়ে থাকে তবে ‘Other’ এ ট্যাপ করুন এবং নিচে আপনার মোবাইল নম্বরটি উল্লেখ করুন। অতঃপর ‘Validate’ বাটনে ক্লিক করুন। তারপর একাউন্টের পিন নম্বরটি আবারো প্রবেশ করিয়ে বিল পেমেন্ট সম্পন্ন করুন। বিলের রশিদ দিলে তা সংরক্ষণ করে রাখুন।
ইউএসএসডির সাহায্যে
১) *৩২২# ডায়াল করুন।
২) ১ নম্বর বিল পে অপশনটি নির্ধারণ করুন।
৩) নির্বাচন কমিশনের একাউন্টের সাথে নিবন্ধিত নম্বরই রকেট একাউন্টের নম্বর হলে ১ চাপুন, অন্যথায় ২ চাপুন।
৪) ক্যারিয়ার ইনফো লিস্ট থেকে ০ চাপুন।
৫) বিলার আইডি 1000 প্রবেশ করান।
৬) ১০ বা ১৭ সংখ্যার জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর দিন।
৭) আবেদনের ধরন নির্ধারণ করুন।
৮) ফি এর পরিমাণ দেখালে ১ চেপে তা গ্রহণ করুন।
৯) অতঃপর পিন নম্বরটি প্রবেশ করিয়ে বিল পরিশোধ সম্পন্ন করুন।
বিল পরিশোধের নূন্যতম ৩০ মিনিট পর নির্বাচন কমিশন সার্ভারের ট্রানজেকশন ট্যাবটি রিলোড করে দেখুন যে টাকা জমা হয়েছে কিনা। তবে অনেক সময়ই টাকা জমা হতে ২ বা ৩ কার্যদিবস লেগে যায়। সেক্ষেত্রে অপেক্ষা করুন।
ধাপ ১৬ঃ কাগজপত্র আপলোড করুন
এই ধাপে মূলত আপনার ভোটার আইডি কার্ড সংশোধনের পক্ষে প্রমাণ জমা দিতে হবে। কি প্রমাণ জমা দেবেন তা নির্ভর করবে কোন তথ্য সংশোধন করেছেন তার ওপর। যেমন ধরা যাক নামের বানান সংশোধন। সেক্ষেত্রে আপনাকে জন্মসনদ, এসএসি, এইচএইচসি এসব পরীক্ষার সার্টিফিকেটের স্ক্যান করা কপি আপলোড করতে হবে। কাগজ আপলোডের ব্যাপারে কোন কার্পণ্য করবেন না। কারণ যত বেশি প্রমাণ পাঠাবেন আপনার আবেদনটি তত দ্রুত গ্রহণ করা হবে। অন্যথায় মাসের পর মাস অপেক্ষা করতে হবে। এমনকি আবেদন বাতিলও হতে পারে।বাম দিকের ড্রপডাউন মেনু থেকে আপনি কোন ধরনের প্রমাণের স্ক্যানড কপি আপলোড করছেন তা নির্ধারণ করে দিন। এরপর ডান পাশে থাকা ‘আপলোড’ বাটনে ক্লিক করে ঐ কাগজটি আপলোড করুন। এভাবে প্রমাণাদি আপলোড করুন।সকল প্রমাণ আপলোডের পরে উপরে ডানদিকের ‘পরবর্তী’ বাটনে ক্লিক করুন।
ধাপ ১৭ঃ নিশ্চিত করুন
এটি আপনার আবেদনের সর্বশেষ ধাপ। এই ধাপে আপনার ভোটার আইডি কার্ডের কি কি তথ্য সংশোধন করেছেন তা দেখানো হবে। একই সাথে কি কি কাগজ / প্রমাণ আপলোড করেছেন তাও দেখানো হবে। সকল কিছু ভাল ভাবে যাচাই করে নিন। কারণ একবার ‘সাবমিট’ বাটনে ক্লিক করে ফেলার পর আর কিছু পরিবর্তন করা যাবে না।সব ঠিক থাকলে ‘সাবমিট’ বাটনে ক্লিক করুন। ব্যাস আপনার আবেদনটি জমা পড়েছে। এবার আপনার প্রোফাইলে গেলেই উপরে একটি লেখা দেখতে পাবেন। সেটি হল, “আপনার একটি অ্যাপ্লিকেশন পেন্ডিং রয়েছে”। সরকারি কিছু কার্যদিবস পরে আপনার আবেদন সম্পর্কে সিধান্ত আপনার প্রোফাইল থেকেই জানতে পারবেন। কতদিন সময় লাগবে এ ব্যাপারে আসলে নির্দিষ্ট কোন তথ্য নেই। তবে সঠিক কাগজপত্র আপলোড করলে দ্রুতই নিষ্পতি হওয়ার কথা।
ধাপ ১৮ঃ আইডি কার্ড সংগ্রহ করুন
নতুন ভোটার আইডি কার্ডটি ব্যবহারের জন্য অবশ্যই আপনার আগে সেটি হাতে পেতে হবে। এটি আপনি দুই মাধ্যমে পেতে পারেন।
- ডাউনলোডেড কপিঃ আপনার আবেদনটি গ্রহণ করা হলে সরাসরি আপনার প্রোফাইলে লগইন করে আপনার সংশোধিত ভোটার আইডি কার্ড অনলাইন থেকে সংগ্রহ করুন। পিডিএফ ফরম্যাটে আইডি কার্ডের দুই পিঠই ডাউনলোড হবে। এরপর সেটি প্রিন্ট ও লেমেনেটিং করে ব্যবহার করতে পারেন।
- অরিজিনাল কপিঃ অরিজিনাল কপি অর্থাৎ ফিজিক্যাল (Physical) আইডি কার্ড পেতে চাইলে আপনাকে নির্বাচন কমিশনের এসএমএস এর জন্য অপেক্ষা করতে হবে। সংশোধিত আইডি কার্ডটি তৈরি হলে একাউন্টের সাথে সংশ্লিষ্ট নম্বরে ম্যাসেজ করে কোথা থেকে আইডি কার্ডটি সংগ্রহ করতে হবে তা জানিয়ে দেওয়া হবে। আপনার প্রোফাইলের নিচের দিকে ‘বিস্তারিত তথ্য’ বাটন দেখতে পাবেন। তাতে ক্লিক করলে যেই পেজটি আসবে সেই পেজটির উপরে ডান কোণে থাকা ‘ডাউনলোড’ বাটনে ক্লিক করুন। যেই পিডিএফ ফাইলটি ডাউনলোড হবে সেটি প্রিন্ট করিয়ে ভোটার আইডি কার্ড সংগ্রহ করার নির্ধারিত স্থানে যান।
অফলাইনে ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করার নিয়ম
অফলাইনে সংশোধন করতে চাইলে আপনাকে একটি নির্দিষ্ট ফরম ডাউনলোড করে আপনার নিকটস্থ এনআইডি উইং অথবা উপজেলা নির্বাচন অফিসে যেতে হবে। ফরমটি দেখতে নিচের চিত্রের মতো হবে।
ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন ফরমটি পিডিএফ ডাউনলোড করতে চাইলে এই লিংক থেকে করতে পারবেনঃ জাতীয় পরিচয়পত্র(NID) বা তথ্য-উপাত্ত সংশোধনের আবেদন( ফরম নং-২)
নিয়মাবলী
পিডিএফ ফর্মটি প্রিন্ট করে সশরীরে সংশোধনের আবেদন করতে গেলে অবশ্যই কিছু নিয়ম মানতে হবে। এ সংক্রান্ত অনেক নিয়ম রয়েছে। তার মধ্যে গুটি কয়েক অতি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম এখানে তুলে ধরা হল। বিস্তারিত নিয়মাবলী ফরমের শেষেই পাওয়া যাবে।
১) আবেদনপত্রে প্রদত্ত আবেদনকারীর স্বাক্ষর কমিশনে সংরক্ষিত তথ্য-উপাত্তে আবেদনকারীর স্বাক্ষরের অনুরুপ হতে হবে। অর্থাৎ দুই ধরনের স্বাক্ষর দেওয়া যাবে না।
২) আবেদনপত্রের সাথে আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয়পত্রের মূল কপি অবশ্যই জমা দিতে হবে।
৩) আবেদন দাখিলের সময় দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবেদনের বিষয়ে আবেদনকারীর ব্যাক্তিগত শুনানি গ্রহন করবেন। শুনানিতে সন্তুষ্ট না হলে আবেদন নামঞ্জুর করতে পারবেন। নামঞ্জুর করার প্রেক্ষিতে নামঞ্জুরের দিন থেকে ৪৫ কার্যদিবসের মধ্যে আবেদনকারী বা তার আইনানুগ অভিভাবক উক্ত আদেশের বিরুদ্ধে কমিশন বরাবর আপিল করতে পারবেন।
৪) অসম্পূর্ণ বা ত্রুটিপূর্ণ আবেদন বাতিল বলে গণ্য হবে।
ভোটার আইডি সংশোধনের ফি প্রদানের মাধ্যম
ব্যাংকসমূহঃ
- ডাচ বাংলা ব্যাংক
- ওয়ান ব্যাংক লিমিটেড
- ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড
- মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড
- বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক
- ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড
মোবাইল ব্যাংকিং সেবাসমূহঃ
- রকেট মোবাইল ব্যাংকিং
- বিকাশ মোবাইল ব্যাংকিং
- ওকে ওয়ালেট মোবাইল ব্যাংকিং
- টি-ক্যাশ মোবাইল ব্যাংকিং
জাতীয় পরিচয়পত্রের জন্য আবেদন করতে বা তা তুলতে কোন খরচের প্রয়োজন নেই। তবে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন, ডুপ্লিকেট ও নবায়ন করতে কিছু ফি দিতে হয়। এ ব্যাপারে বিস্তারিত নিচে দেওয়া হলোঃ
ভোটার আইডি সংশোধনের খরচ
প্রথমবার আবেদনের ক্ষেত্রেঃ ২০০ টাকা
দ্বিতীয়বার আবেদনের ক্ষেত্রেঃ ৩০০ টাকা
পরবর্তী যে কোন বার আবেদনের ক্ষেত্রেঃ ৪০০ টাকা
উল্লেখ্য যে কার্ডের যে কোন তথ্য শুধু একবার সংশোধন করতে পারবেন। তবে যুক্তিযুক্ত না হলে কিংবা প্রয়োজনীয় প্রমাণ না থাকলে কোন সংশোধনই করা যাবে না।
তথ্য উপাত্ত সংশোধন
প্রথমবার আবেদনের ক্ষেত্রেঃ ১০০ টাকা
দ্বিতীয়বার আবেদনের ক্ষেত্রেঃ ২০০ টাকা
পরবর্তী যে কোন বার আবেদনের ক্ষেত্রেঃ ৩০০ টাকা
ডুপ্লিকেট কপি
জাতীয় পরিচয়পত্র হারিয়ে গেছে বা নষ্ট হয়ে গেছে, এমন প্রেক্ষিতে জিডি (GD- General Diary) এর কপি সহ কমিশনের নিকট আবেদন করলে,
সাধারণ চার্জ (৩০ কার্যদিবসের মধ্যে)ঃ
প্রথমবার আবেদনের ক্ষেত্রেঃ ২০০ টাকা
দ্বিতীয়বার আবেদনের ক্ষেত্রেঃ ৩০০ টাকা
পরবর্তী যে কোন বার আবেদনের ক্ষেত্রেঃ ৫০০ টাকা
বিশেষ চার্জ (৭ কার্যদিবসের মধ্যে)ঃ
প্রথমবার আবেদনের ক্ষেত্রেঃ ৩০০ টাকা
দ্বিতীয়বার আবেদনের ক্ষেত্রেঃ ৫০০ টাকা
পরবর্তী যে কোন বার আবেদনের ক্ষেত্রেঃ ১০০০ টাকা
জাতীয় পরিচয়পত্র নবায়ন
জাতীয় পরিচয়পত্রের মেয়াদ তা প্রদানের তারিখ থেকে ১৫ (পনের) বছর। জাতীয় পরিচয়পত্র নবায়ন করে রাখা অত্যন্ত জরুরী। কারণ জাতীয় পরিচয়পত্র আপনার নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসেবে কাজ করে। জাতীয় পরিচয়পত্র নবায়ন করতে তার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে বা পরে কমিশনের নিকট আবেদন করতে হবে। এক্ষেত্রেঃ
সাধারণ চার্জ (৩০ কার্যদিবসের মধ্যে)ঃ ১০০ টাকা।
জরুরী চার্জ (৭ কার্যদিবসের মধ্যে)ঃ ১৫০ টাকা।
শেষকথা
ভোটার আইডি কার্ড তথা জাতীয় পরিচয়পত্র প্রতিটি নাগরিকের জন্যই একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বস্তু। এটি আপনার জাতীয়তা প্রমাণের প্রাথমিক ও সবচেয়ে শক্তিশালী নিয়ামক। তাই কোন ভাবেই জাতীয় পরিচয়পত্রে কোন ভুল রাখা উচিত নয়। কারণ যেহেতু এটি ভোটার আইডি কার্ড হিসেবে ব্যবহৃত হয় তাই ভোট প্রদানেও এটি অপরিহার্য বস্তু। অন্যান্য সকল নাগরিক সেবা ও প্রাতিষ্ঠানিক সুযোগ পেতে চাইলেও আপনার জাতীয় পরিচয়পত্রটি হওয়া চাই নিখুঁত। আশা করি এই লেখাটি পড়ে আপনারা সহজেই নিজের জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করতে পারবেন।
অনবরত জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী
ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে কত দিন লাগে?
উত্তরঃ ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে আনুমানিক ৩-৬ মাস লাগতে পারে।
জাতীয় পরিচয়পত্র হারিয়ে গেলে জিডি করা ছাড়া কি পুনরায় উত্তোলন করা সম্ভব?
উত্তরঃ কোন ভাবেই সম্ভব নয়। জাতীয় পরিচয়পত্র হারিয়ে গেলে প্রথম কাজই হল জিডি করা।
কোন তথ্য সংশোধন করা হলে কি আগের তথ্যও সংরক্ষিত থাকে?
উত্তরঃ সকল তথ্য কেন্দ্রীয় ডাটাবেজে সংরক্ষিত থাকে।
আমার জন্ম তারিখ যথাযথভাবে লেখা হয়নি, আমার কাছে প্রামাণিক কোন দলিল নেই, কিভাবে সংশোধন করা যাবে?
উত্তরঃ সংশ্লিষ্ট উপজেলা / জেলা নির্বাচন অফিসে আবেদন করতে হবে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আমি পাশ না করা সত্ত্বেও ভুল করে আমার শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি বা তদুর্দ্ধ লিখেছি। এক্ষেত্রে কি করণীয়?
উত্তরঃ আপনি ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এসএসসি পাশ করেন নি, ভুল করে লিখেছিলেন মর্মে হলফনামা করুন। এরপর তার কপি সহ সংশোধনের জন্য আবেদন করুন।
একই পরিবারের বিভিন্ন সদস্যের কার্ডে পিতা / মাতার নাম বিভিন্নভাবে লেখা হয়েছে। এক্ষেত্রে কি করণীয়?
উত্তরঃ সকলের কার্ডের কপি ও সম্পর্কের বিবরণ দিয়ে এনআইডি রেজিস্ট্রেশন উইং, উপজেলা অথবা জেলা নির্বাচন অফিস বরাবর আবেদন করুন। এক্ষেত্রে আপনাদের বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে পরীক্ষা করা হবে। তথ্যের মিল পাওয়া গেলে আবেদন মঞ্জুর করা হবে।
তথ্যসূত্রঃ
১) বিবিসি বাংলা
২) যুগান্তর