স্পিরুলিনা কিভাবে খাবেন কেন খাবেন বিস্তারিত!!!!

 



স্পিরুলিনার উপকারিতা স্পিরুলিনা এক ধরনের নীলাভ সবুজ শ্যাওলা হলেও এর মধ্যে তীব্র স্বাদযুক্ত গন্ধ রয়েছে। এটি বিভিন্ন উপায়ে স্বাস্থ্যকে ভালো রাখতে সহায়তা করে। স্পিরুলিনার মধ্যে থাকা ম্যাক্রোফেজ গুলি প্রাকৃতিক ঘাতক কোষগুলি এবং অন্যান্য এবং কোষগুলিকে সক্রিয় করতে সহায়তা করে। যার প্রত্যেকটিতেই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য রয়েছে। ১) ক্যান্সার নিরাময়ে স্পিরুলিনার মধ্যে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ উপাদানগুলি শরীরের বিভিন্ন কোষ গুলিতে সক্রিয়ভাবে প্রভাব বিস্তার করে। এছাড়াও শরীরে ক্যান্সারের জীবাণু ধ্বংস করতে সহায়তা করে। মূলত স্তন , কোলন এ ধরনের ক্যান্সার গুলি নিরাময়ের ক্ষেত্রে স্পিরুলিনা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে থাকে। এছাড়াও স্পিরুলিনার ক্যাপসুল বা পাউডার খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করলে শরীরে ক্যান্সারের জীবাণু বাসা বাঁধার সম্ভাবনা কম থাকে। এছাড়াও স্পিরুলিনার মধ্যে থাকা উপাদানগুলি শরীরে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস প্রতিরোধ করে যা হলো ক্যান্সারের অন্যতম কারণ। গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, স্পিরুলিনা ডিএনএ রূপান্তর করার ক্ষমতা রাখে। এছাড়াও এটি শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি করে বিভিন্ন সংক্রমণ থেকে শরীরকে দূরে রাখে এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে উন্নত করে ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে। ২) রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে শরীরে রক্তচাপ কে নিয়ন্ত্রণে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে থাকে স্পিরুলিনা। এটি মূলত শরীরের রক্ত চলাচল কে সক্রিয় করে তোলে। যার ফলে যেকোনো জায়গায় রক্ত চাপ বেঁধে থাকার সম্ভাবনা দূর হয়। এছাড়াও এটি শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা কে সঠিক রাখে যার ফলে শরীরের রক্ত প্রবাহে কোনরকম বাধার সৃষ্টি হয় না। ৩) ডায়াবেটিস নিরাময়ে টাইপ টু ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীদের ওপর কড়া গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, স্পিরুলিনার পরিপূরক যুক্ত ইঞ্জেকশন ডায়াবেটিক রোগীদের রোগের লক্ষণগুলি কে অনেকটা উন্নত করে। স্পিরুলিনা মেটাফরমিক যুক্ত হওয়ায় এটি ডায়াবেটিস রোগীদের ওপর প্রভাব বিস্তার করে। এছাড়া অন্য গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, স্পিরুলিনা এবং অন্যান্য ভেষজ গ্রহণের ফলে রক্তে গ্লুকোজ এবং ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা কম হয়। যে কারণে ডায়াবেটিস রোগীদেরর সমস্যা বৃদ্ধি পায় না। এছাড়াও স্পিরুলিনা টাইপ টু ডায়াবেটিস রোগীদের লিপিড প্রোফাইল গুলো কে উন্নত রাখতে কার্যকরী ভূমিকা গ্রহণ করে। ৪) হৃদযন্ত্র সচল রাখতে শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কম করে ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে হৃদযন্ত্র কে সঠিক ভাবে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে স্পিরুলিনা। এর পাশাপাশি এটি শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে হৃদযন্ত্র স্বাস্থ্যকর রাখতে সহায়তা করে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, দিনে ৪.৪ গ্রাম স্পিরুলিনা গ্রহণের ফলে রক্তচাপের মাত্রা হ্রাস পেতে পারে। যা নাইট্রিক অক্সাইডের বর্ধিত উৎপাদনকে কম করে রক্তনালীকে শিথিল করতে এবং বিচ্ছিন্ন করতে সহায়তা করে। যার ফলে স্ট্রোক কিংবা এথেরোস্ক্লেরেসিসের মতন রোগগুলি নিরাময়ের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে থাকে। এছাড়াও স্পিরুলিনা গ্রহণের ফলে হাইপারকলেস্টেরোলেমিক সমস্যা হ্রাস পেতে পারে, যা কোলেস্টেরল ট্রাইগ্লিসারাইড এবং খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কম করার সাথে জড়িত। ৫) মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য রক্ষায় স্পিরুলিনা মস্তিষ্কের প্রদাহ কে কম করতে পারে। মূলত পারকিনসন রোগের কার্যকর পরিপূরক হিসেবে স্পিরুলিনা ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি মস্তিষ্কে ফোলা ভাব এবং প্রদাহজনিত সমস্যাগুলিকে দূর করতে সহায়তা করে। এছাড়াও স্পিরুলিনা মস্তিষ্কের অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কম করে স্মৃতিশক্তি হ্রাস রোধ করতে পারে। নতুন নিউরন গঠনের মাধ্যমে স্পিরুলিনা নিউরনের ঘনত্বের উন্নতি করতে পারে, এই প্রক্রিয়াটিকে নিউরো জেনেসিস বলা হয়ে থাকে। এছাড়াও আলঝাইমার চিকিৎসার ক্ষেত্রে ও স্পিরুলিনা ব্যবহার করা যেতে পারে। ৬) শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করতে বেশ কয়েকটি প্রাণীর ওপর করা গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, স্পিরুলিনা শরীরের ইমিউনো মডারেটর হিসেবে কাজ করে থাকে। এটি শরীরকে যেকোন সংক্রমনের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য এবং তার কার্যকারিতা বাড়ানোর জন্য অনন্য ক্ষমতা তৈরি করে। তাই দৈনিক নির্দিষ্ট পরিমাণ স্পিরুলিনা খাদ্যতালিকায় রাখলে শরীরকে যেকোনো রোগ-জীবাণুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধে স্বাস্থ্যসম্মত করে তোলা যায়। ৭) রক্তাল্পতা নিরাময়ে ৪০ জন রক্তাল্পতার সমস্যায় ভুগছে এমন বয়স্ক মানুষের উপরে করা সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে, স্পিরুলিনা সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করার ফলে তাদের শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং তাদের রক্তের মধ্যে থাকা কোষগুলি উন্নত হয়েছে। যদিও একটি গবেষণায় এটি প্রকাশ পেয়েছে। তবে এর থেকে আমরা বলতে পারি, স্পিরুলিনা রক্তাল্পতা নিরাময়ে সহায়তা করে থাকে। ৮) হজম স্বাস্থ্যের উন্নতিতে স্পিরুলিনার মধ্যে থাকা প্রোটিন জাতীয় উপাদান গুলি খাবার যথাযথ হজম করতে সহায়তা করে। এছাড়াও শরীরে অ্যামিনো অ্যাসিড গুলিকে পুনরায় সংশ্লেষ করে স্পিরুলিনা হজম এনজাইমগুলো সরবরাহ করে, যা হজমে সহায়তা করে। বদহজমের সমস্যা থাকলে স্পিরুলিনা গ্রহণের ফলে সেই সমস্যা দূর হয়ে যাবে। ৯) প্রদাহ নিরাময়ে স্পিরুলিনার প্রধান সক্রিয় উপাদান হলো ফাইকোকায়ানিন, যা প্রদাহজনক অনুর উৎপাদনকে রোধ করতে সহায়তা করে। যার ফলস্বরূপ স্পিরুলিনা প্রদাহের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করে। স্পিরুলিনা হল জি এল এ বা গামা লিনোলেনিক এসিডের একটি উৎকৃষ্ট উৎস। যা শৈবালের অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি বৈশিষ্ট্যগুলি বহন করে থাকে। আর্থারাইটিসের বিরুদ্ধেও স্পিরুলিনা কার্যকর ভূমিকা গ্রহণ করে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, স্পিরুলিনা আর্থারাইটিস চিকিৎসার ক্ষেত্রে কার্টিলেজ ধ্বংসের বিরুদ্ধে সুরক্ষা প্রদান করে থাকে।
Previous Post Next Post