স্পিরুলিনা চাষ পদ্ধতি বিস্তারিত !!




    স্পিরুলিনা কী? WHAT IS SPIRULINA?

    স্পিরুলিনা spirulina হলো একধরনের নিলাভ-সবুজ সামুদ্রিক শৈবাল যা সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় সূর্যালোক থেকে খাদ্য সংগ্রহ করে। সামুদ্রিক শৈবাল হলেও বর্তমানে তা কৃত্রিম জলাশয়ে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করা হচ্ছে। স্পিরুলিনা শব্দটি এসেছে ল্যাটিন শব্দ “Spira” থেকে।

    অন্যান্য দেশে এটি বাণিজ্যিকভাবে ব্যাপক পরিমাণে চাষ হলেও বাংলাদেশে সেভাবে এর চাষের দেখা যায় না। স্পিরুলিনাকে নানা পুষ্টিগুণের জন্য খাবার ও বিভিন্ন রোগের ঔষুধ হিসেবেও সেবন করা হয়ে থাকে। নানাবিধ পুষ্টি গুণাগুণ ও প্রায় সকল খাদ্য উপাদানের উপস্থিতির কারণে একে “সুপার ফুড” বলা হয়। নিচের অনুচ্ছেদে আমরা জানবো, স্পিরুলিনা কীভাবে খেতে হয় অর্থাৎ খাওয়ার নিয়ম।


    স্পিরুলিনার পুষ্টি গুণাগুণ

    প্রতি ১০০ গ্রাম শুষ্ক স্পিরুলিনার পুষ্টি গুণাগুণ হলো নিম্নরূপঃ
    ১. ২৯০ কিলোক্যালরি শক্তি
    ২. প্রায় ২৪ গ্রাম শর্করা
    ৩. ৪.৫ গ্রাম স্নেহজাতীয় পদার্থ
    ৪. ৪৪ গ্রাম বিভিন্ন রকম প্রোটিন জাতীয় উপাদান
    ৫. এছাড়াও নানা ধরনের ভিটামিন

    তাহলে এবার চলুন জেনে নেই কিছু ঔষুধি গুণাগুণ সম্পর্কে

    ১. আদর্শ খাদ্যঃ এতে প্রায় সবধরনের খাদ্য উপাদান থাকায় এটাকে “সুপার ফুড” বলা হয়। যারা সাধারনত বেশি পরিমাণে নিরামিশ খান তাদের খাদ্য তালিকায় প্রোটিন ও ভিটামিন বি-১২ এর ঘাটতি থাকে। আর স্পিরুলিনায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন জাতীয় খাদ্য উপাদান ও ভিটামিন বি-১২। এছাড়াও এটি দেহের শক্তি উৎপাদনে বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। তাই একে একটি আদর্শ খাদ্য বলা যায়।

    ২. মেধা বিকাশেঃ এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি-১২০ পাওয়া যায়, যা মানুষের মেধা বিকাশে সহায়ক। তাই স্কুল পড়ুয়া ছেলে-মেয়েদেরকে এটি খাওয়ানোর অভ্যাস করা উচিত।

    এই ছিলো ঔষুধি গুণাগুণ সমন্ধে আলোচনা। উপরে কয়েকটি মাত্র গুণাগুণ আলোচনা করতে সক্ষম হয়েছি। এর বাইরেও এর অনেক ঔষুধি গুণাগুণ রয়েছে।

    স্পিরুলিনা পাউডার খাওয়ার নিয়মঃ

    # এই পাউডার সাধারনত পানিতে মিশিয়ে খেতে হয়। অথবা অন্যকোনো শরবতের সাথে মিশিয়েও খেতে পারেন যদি আপনি তা খেতে প্রস্তুত থাকেন।

    # এর শরবত প্রতিদিন একবার খাওয়া ভালো। তবে এক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়াই উত্তম। প্রতি এক কাপ পানিতে এক চা-চামচ থেকে আধা চা-চামচ পাউডার মিশিয়ে খেতে পারেন। পানি অবশ্যই স্বাভাবিক তাপমাত্রায় হওয়া ভালো।

    # ট্যাবলেটের মতো প্রথমে অল্প অল্প করে পাউডার শরবত বানিয়ে খেতে শুরু করেন। এরপর ধীরে ধীরে পরিমাণ বাড়াতে পারেন।

    স্পিরুলিনা চাষের পূর্বশর্ত

    # গ্রীষ্মমন্ডলীয় ও উপ-গ্রীষ্মমন্ডলীয় এলাকা চাষের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত স্থান। চাষের জন্য ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্র আদর্শ।

    # প্রোটিন উৎপাদন, বৃদ্ধির হার ও এর রঙ্গক সংশ্লেষনের ওপর আলোর তীব্রতার সরাসরি প্রভাব রয়েছে। তাই এগুলো চাষ করতে গেলে সঠিক আলোর ব্যবস্থা থাকতে হবে। ২০ হাজার থেকে ৩০ হাজার লাক্সের মধ্যে আলোর তীব্রতা থাকলে সেটিকে আদর্শ অবস্থা বলে ধরে নেওয়া হয়। সাধারনত নীল আকাশের নীচে চাষ করতে এর বৃদ্ধি সর্বাধিক হয়।

    # স্পিরুলিনা বৃদ্ধির মূল উৎস হলো পানি। একটা সঠিক মিডিয়াম বা মাধ্যম তৈরি করতে উপযুক্ত পানির সাথে সঠিক উপাদান মেশাতে হবে। জলজ উদ্ভীদের জন্য সালোক সংশ্লেষণ প্রক্রিয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পানির ঘভীরতা যত বৃদ্ধি পাবে পানির নিচে আলো তত কম পৌছাবে এবং সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটবে।

    তাই বাকেট বা ট্যাঙ্কে এটি চাষ করতে গেলে পানির স্তর সঠিক রাখতে হবে যেন সব জায়গায় পর্যাপ্ত পরিমাণে আলো পৌছায়। আর চাষের জন্য পানির আদর্শ পিএইচ মান হলো ৮ থেকে ১১।

    # স্পিরুলিনা চাষের জন্য পানিতে দূষণ প্রতিরোধ করতে হবে। পোকামাকড়ের প্রজনন, বিদেশী শৈবাল বা রাসায়নিক দূষণের মাধ্যমে দূষণ হতে পারে। পানিতে যে পরিমাণ ক্লোরিন থাকে তা শৈবাল বৃদ্ধিকে হত্যা করে। এর ফলে উৎপাদনে সম্পূর্ণ ক্ষতি হবে। মশা এবং অন্যান্য পোকামাকড়ের লার্ভা শেত্তলা গুলি খাবে যার ফলে উৎপাদন প্রায় 10% হ্রাস পাবে।

    ফসল তোলার সময়, লার্ভা বা পিউপের অস্তিত্ব স্পিরুলিনার গুণ এবং ফলনকে দূষিত করবে। সূক্ষ্ম তারের জাল ফ্রেম ব্যবহার করে সংস্কৃতির মাধ্যম থেকে সমস্ত বহিরাগত উপকরণ অপসারণ করা যেতে পারে।

    স্পিরুলিনা চাষ পদ্ধতি

    পৃথিবীর অনেক দেশে প্রতি বছর বিশাল পরিমাণে এগুলো উৎপাদিত হয়। কিন্তু আশার বিষয় হচ্ছে বর্তমানে আমাদের দেশেও এর বাণিজ্যিক চাষ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বাড়ির আঙ্গিনা, ছাদ, খোলা স্থানে এটি চাষ করা যায়। আজকের আর্টিকেলে উপরের অংশে আমরা স্পিরুলিনার পুষ্টি গুণাগুণ সহ অনেক বিষয় সম্পর্কে জেনেছি। আর এই অংশে আমরা জানবো কীভাবে চাষ করতে হয় অর্থাৎ এটি চাষ করার পদ্ধতি। তাহলে চলুন মূল আলোচনায় যাওয়া যাক।

    কোথায় স্পিরুলিনা চাষ করা যায়?

    স্পিরুলিনা হলো একধরনের সামুদ্রিক শৈবাল। এগুলোর উৎপত্তি হয়েছে সমুদ্রের পানি থেকে। কিন্তু যেহেতু সমুদের পানি নিয়ন্ত্রনে মানুষের হাত থাকে না, এবং সমুদ্রের পানি সরাসরি পানের অযোগ্য সেহেতু এটি কৃত্রিম জলাধারে নিয়ন্ত্রিত পদ্ধতিতে চাষ করা হয়।

    কৃত্রিম জলাধার বলতে এমন কোনো স্থান যেটি কৃত্রিম উপায়ে মানুষের দ্বারা তৈরি। আলো পরিবাহী বড় কনটেইনার বা বাকেট, ট্যাঙ্ক, ড্রাম ইত্যাদিতে চাষ করা যায়। যে জায়গা বা পাত্রেই এটি চাষ করেন না কেন এখানে যেন অবশ্যই আলো পৌছাতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। কারণ সূর্যালোক ছাড়া কোনো সৈবালই জন্মাতে ও বেড়ে উঠতে পারে না।

    নিচে আমরা এটি চাষের পদ্ধতিগুলো ধাপে ধাপে জানবো


    ধাপ-১: প্রথমেই আপনাকে একটা নির্দিষ্ট স্থান বা পাত্র নির্বাচন করতে হবে সেখানে আপনি স্পিরুলিনা চাষ করতে চান। এরপর যেই জায়গাটাকে ব্লিচিং পাউডার দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে জীবানুমুক্ত করে নিতে হবে। বাজারে যে আরএফএল ও অন্যান্য ব্রান্ডের সচ্ছ প্লাস্টিকের বড় কনটেইনারগুলো পাওয়া যায় সেগুলো অথবা মোটা পলিথিন ও চিকন লোহার রড দিয়ে ট্যাঙ্ক বানিয়ে নিতে পারেন।


    ধাপ-২: এপর্যায়ে চাষের জন্য মিডিয়াম বা মাধ্যম তৈরি করতে নিতে হবে। যেহেতু এগুলো পানিতে চাষ করা হয় এবং তা আমরা সরাসরি খাবার হিসেবে গ্রহণ করি সেজন্য মিডিয়াম বানানোর জন্য অবশ্যই বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার করতে হবে।

    বিশুদ্ধ পানি বলতে এমন পানি সেটা হতে পারে নলকূপের পানি, ওয়াসার পানি অথবা যেকোনো উপায়ে প্রাপ্ত পানি যেটা আপনি কোনোরকম প্রক্রিয়া না করে পান করতে পারেন।

    মিডিয়াম তৈরির জন্য পানিতে কিছু রাসায়নিক পদার্থ মেশাতে হয়। সেগুলো পরিমান সহ নিচে দেখানো হলো (গ্রাম প্রতি লিটার) –
    ১. সোডিয়াম হাইড্রোজেন কার্বোনেট (NaHCO3) – ৮ গ্রাম
    ২. সোডিয়াম ক্লোরাইড (NaCl) – ১ গ্রাম

    ৩. পটাসিয়াম নাইট্রেট (KNO3) – ২ গ্রাম
    ৪. হাইড্রাস ম্যাগনেসিয়াম সালফেট (MgSO4.6H2O) – ০.১৬ গ্রাম

    ৫. অ্যামোনিয়াম ফসফেট ((NH4) 3PO4) – ০.২ গ্রাম
    ৬. ইউরিয়া (CO (NH2) 2) – ০.০১৫ গ্রাম

    ৭. সালফেট হেপ্টা হাইড্রেট (FeSO4.6H2O) – ০.০৫ গ্রাম
    ৮. আয়রন পটাসিয়াম সালফেট (K2SO4) – ১ গ্রাম

    ৯. ক্যালসিয়াম ক্লোরাইড ডাইহাইড্রেট (CaCl2.2H2O) -০.১ গ্রাম
    ১০. অ্যামোনিয়াম সায়ানেট (CH4N2O) – ০.০১ গ্রাম

    উপরের এই উপাদানগুলো বিভিন্ন কীটনাশকের দোকানে, ল্যাবে পাওয়া যায়, আপনারা সেখান্ত থেকে এগুলো সংগ্রহ করতে পারেন। আর যদি খুঁজে পেতে কষ্টসাধ্য মনে হয় তাহলে অনলাইনে অনেক শপেও এই ধরনের পদার্থ বিক্রি করে থাকে, সেখান থেকে কিনতে পারেন।

    ধাপ-৩: উপরোক্ত পদার্থগুলো মেশানো হয়ে গেলে এবার পানিতে মাদার কালচার বা মাতৃ স্পিরুলিনা মেশাতে হবে। আগে বাংলাদেশে মাদার কালচার তৈরি করা হতো না তবে বর্তমানে আমাদের দেশেও মাদার কালচার তৈরি করা হচ্ছে। ভালো মাদার কালচার পাওয়া যায় থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ভারত ইত্যাদি দেশে। সম্ভব হলে এসব দেশে থেকে মাদার কালচার আমদানী করে চাষ করুন।

    বিভিন্ন পরিমাণের প্যাকেটে মাদার কালচার কিনতে পাওয়া যায়। দেশীয় প্যাকেটগুলো ১০০ গ্রাম থেকে শুরু হয়ে থাকে এবং বাইরের দেশ থেকে যেগুলো আসে সেগুলো সাধারনত বড় প্যাকেটের। প্রতি কেজি মাদার কালচারের দাম আট হাজার টাকা থেকে দশ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। কিন্তু বিশাল জায়গায় বাণিজ্যিক ভাবে চাষ করতে গেলেই কেবল এত পরিমাণে মাদার কালচারের দরকার হয়।

    এক লিটার পানিতে ১ গ্রাম মাদার কালচার দিলেই যথেষ্ট। আপনি যদি ১০০ গ্রাম ওজনের একটি প্যাকেট কিনেন তাহলে সেটা দিয়ে ১০০ লিটার পানিতে চাষ করতে পারবেন।

    ধাপ-৪: পানিতে রাসায়নিক পদার্থগুলো ও মাদার কালচার মেশানো হয়ে গেলে এবার তা জলাধারে ঢালতে হবে। আর জলাধারে মিশ্রণ ঢালার পূর্বে ট্যাঙ্ক বা বাকেট সম্পূর্ণ সেটাপ করতে হবে। বাকেটে যেহেতু প্রাকৃতিকভাবে অক্সিজেন পরিবাহিত হতে পারবে না সেহেতু এখানে আমাদেরকে কৃত্রিম উপায়ে অক্সিজেন পরিবহনের ব্যবস্থা করতে হবে।

    যারা কোনো সময় অ্যাকুরিয়াম তৈরি করেছেন বা তৈরি করার উদ্যোগ নিয়েছেন তারা নিশ্চয় একধরনের এয়ার পাম্পের সাথে পরিচিত। ট্যাঙ্ক বা বাকেটের পানিতে অক্সিজেন সরবরাহ করার জন্য আমাদের এয়ার পাম্পের প্রয়োজন হবে। কত বড় এয়ার পাম্প প্রয়োজন সেটা সাধারনত পানির পরিমানের ওপর নির্ভর করে।

    পানি পরিমাণ যদি ১৫০-২০০ লিটার হয় তবে অ্যাকুরিয়ামের ব্যবহৃত ছোট এয়ার পাম্পগুলো ব্যবহার করা যেতে পারে। আর এগুলোর প্রতিটির দাম ১৫০ টাকা থেকে ২০০ টাকার মধ্যে হয়ে থাকে। কিন্তু আপনি যদি বড় পরিসরে চাষ শুরু করেন সেক্ষেত্রে আপনার প্রয়োজন হবে বড় সাইজের ও অধিক ক্ষমতা সম্পন্ন এয়ার পাম্প। বড় সাইজের পাম্পগুলো কিনতে আপনার খরচ হতে পারে ৪ হাজার থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত।

    আপনি যদি না পারেন তাহলে একজন প্লাম্বারকে দিয়ে প্রতিটি কনটেইনারে এয়ার পাম্প থেকে শাখা লাইন করে এয়ার ফ্লো করতে পারেন যেন ভালোভাবে প্রতিটি জায়গায় অক্সিজেন পৌছায়।

    ধাপ-৫: এপর্যায়ে ট্যাঙ্কে পানি ঢালা হয়ে গেলে এয়ার পাম্প চালু করে দিয়ে অক্সিজেন সরবরাহ শুরু করতে হবে এবং ট্যাঙ্কের উপরভাগ কোনো স্বচ্ছ কিছু দিয়ে ঢেকে দিতে হবে যেন কোনো ময়লা, ধুলাবালি, বৃষ্টির পানি না পড়ে। চাষ পদ্ধতি মোটামুটি এ পর্যন্ত শেষ।

    এবার শুধু ভালোমতো পরিচর্যা করা সময়। এই চাষে বিশেষ কোনো পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না। মাঝে মাঝে অক্সিজেন সরবরাহ কিছুক্ষনের জন্য বন্ধ রেখে দিলে ভালো হয়। যদি বর্ষাকালে একাধারে বেশ কয়েকদিন রোদ না থাকে তাহলে ক্ষতির আশঙ্কা থাকে। আর এই আশঙ্কা থেকে মুক্তি পেতে রোদ না থাকলে এনার্জি বাল্ব জ্বালিয়ে আলো সরবরাহ করা যেতে পারে।

    স্পিরুলিনা সংগ্রহ করা ও শুকানোর নিয়ম

    পানিতে মাদার কালচার ও অন্যান মিডিয়াম দেয়ার সাধারনত ৭ দিনের মধ্যেই ভালো পরিমাণ স্পিরুলিনা জন্মায়। কি পরিমাণ উৎপাদিত হবে সেটা নির্ভর করে পানির ঘনত্বের উপর। পানি দেখতে যত বেশি ঘন হবে সেখান থেকে উৎপাদনের পরিমাণ তত বেশি পাওয়া যাবে। চলুন জেনে নেয় কীভাবে হার্ভেস্ট করতে হয় –

    # স্পিরুলিনা সংগ্রহ করা হয় পরিস্রাবণ পদ্ধতিতে। পরিস্রাবণ হলো এমন একটি পদ্ধতি যেখানে তরল পদার্থ থেকে কঠিন পদার্থকে সাকনির মাধ্যমে পৃথক করা হয়। সাকনি হিসেবে পাতলা সুতি কাপর ব্যবহার করা বুদ্ধিমানের কাজ। প্রথমে শৌবাল সহ পানি পাতলা সুতি কাপরে ঢেলে নিতে হবে এবং হাত বা অন্য কোনো উপকরণ দিয়ে অনবরত নাড়াতে হবে যেন পানি সুতোর ছিদ্র দিয়ে বের হয়ে যেতে পারে আর এগুলো গুলো কাপড়ের উপরে জমে থাকতে পারে।

    # এগুলো সংগ্রহের পরে পানিগুলো যেন বাইরে না পড়ে সেদিকে খেয়াল রাখা জরুরি। কারণ উক্ত পানি থেকে আবারো চাষ হবে। সাকনি দিয়ে দুই বার অথবা তিন বার এভাবে একই মিডিয়াম থেকে এটি সংগ্রহ করতে হবে। সংগ্রহের পরে সেগুলো ভালোভাবে কাপড় দিয়ে চিপে যতটা সম্ভব শুষ্ক করে ফেলতে হবে।

    # যখন কিছুটা শুষ্ক অবস্থায় চলে আসবে তখন একটি মোটা ছিদ্রের সিরিঞ্জে নিয়ে পরিষ্কার সমতল পাত্রে লম্বা করে লাইন বানাতে হবে। এবং সেগুলো ফ্যানের বাতাসে শুকাতে হবে। রোদের আলোতেও শুকানো যায় তবে রোদে শুকালে কিছুটা নীলাভ ধারণ করে, আর ফ্যানের বাতাসে শুকালে চিরসবুজ থাকে।

    স্পিরুলিনার দাম ও কোথায় পাওয়া যায়?

    বাংলাদেশে এর ওতটা প্রচলন নেই। তবে ধীরে ধীরে বাংলাদেশের মানুষ এটির পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানতে, অবগত হচ্ছে আর সেই সাথে বাজারেও চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সাধারণত বড় ফার্মেসির দোকান ও সুপারশপ গুলোতে এর ক্যাপসুল ও পাউডার কিনতে পাওয়া যায়।

    বাংলাদেশে জনপ্রিয় কয়েকটি ব্র্যান্ড হলো –

    ১. হামদর্দের লিনা
    ধরনঃ ক্যাপসুল
    পরিমাণঃ ৩০ পিস ক্যাপসুল, ৫০০ মিঃগ্রাঃ
    মূল্যঃ ১৮০ টাকা (প্রতিটি ক্যাপসুলের দাম ৬ টাকা)
    প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানঃ হামদর্দ বাংলাদেশ

    ২. প্রোটিন্যাভিট
    ধরনঃ ক্যাপসুল
    পরিমাণঃ ৩০ পিস ক্যাপসুল, ৫০০ মিঃগ্রাঃ
    মূল্যঃ ২৭০ টাকা (প্রতিটি ক্যাপসুলের দাম ৯ টাকা)
    প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানঃ ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস লিঃ

    ৩. হ্যাভিট
    ধরনঃ ক্যাপসুল
    পরিমাণঃ ৩০ পিস ক্যাপসুল, ৫০০ মিঃগ্রাঃ
    মূল্যঃ ২৪০ টাকা (প্রতিটি ক্যাপসুলের দাম ৮ টাকা)
    প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানঃ স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিঃ

    ৪. অ্যাকমি’স
    ধরনঃ ক্যাপসুল
    পরিমাণঃ ৩০ পিস ক্যাপসুল, ৪৫০ মিঃগ্রাঃ
    মূল্যঃ ১২০ টাকা (প্রতিটি ক্যাপসুলের দাম ৪ টাকা)
    প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানঃ অ্যাকমি ল্যাবরেটরিস লিঃ

    ৫. দিরুলিনা
    ধরনঃ ক্যাপসুল
    পরিমাণঃ ৫০ পিস ক্যাপসুল, ৫০০ মিঃগ্রাঃ
    মূল্যঃ ৩১২ টাকা (প্রতিটি ক্যাপসুলের দাম ৬.২৫ টাকা)
    প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানঃ ইবনে সিনা ফার্মাসিউটিক্যালস লিঃ

    ৬. মেডিলিনা
    ধরনঃ পাউডার
    পরিমাণঃ ১ কেজি
    মূল্যঃ ৭০০০ টাকা
    প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানঃ এনবি ল্যাবরেটরিস (ইন্ডিয়া)

    ৭. স্পিরুলিনা পাউডার
    ধরনঃ পাউডার
    পরিমাণঃ ১০০ গ্রাম
    মূল্যঃ ৮৫০ টাকা
    প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানঃ বাল্ক পাউডার (ব্র্যান্ড)

    সর্বশেষ বার্তা ও সতর্কতাঃ

    এই ছিলো আজকের স্পিরুলিনা চাষ পদ্ধতি ও আরও কিছু বিষয় সম্পর্কিত আর্টিকেল। আমরা এখানে চাষের সম্পূর্ণ পদ্ধতি উল্লেখ করিনি। আর আর্টিকেল লিখে কোনো চাষ সম্পর্কে সম্পূর্ণ ও পরিষ্কার ধারণা দেওয়া সম্ভব না। আমরা চেষ্টা করেছি চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে একটা সম্যক ধারনা দিতে, যাতে আপনারা মৌলিক বিষয়বস্তু বুঝতে পারেন।  চাষ করার পুর্বে অবশ্যই এই বিষয়ক ট্রেইনিং করে নিবেন এবং ভালোভাবে ব্যবহারিক জ্ঞানার্জন করতে নিতে হবে।

    এখন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এই চাষের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। জেলা কৃষি অধিদপ্তরে এই বিষয়ক নানা ধরনের সেমিনার হয়ে থাকে সেগুলোতে যুক্ত হতে পারেন এবং যেকোন প্রয়োজনে কৃষি অফিসে যোগাযোগ করে সাহায্য পেতে পারেন। কোনো উদ্যোগ নেওয়ার পুর্বে সেটা সম্পর্কে ভালো ধারনা থাকা অবশ্যই জরুরি আর এ সম্পর্কে একটা প্রাথমিক ধারনা দেওয়া হল

Previous Post Next Post